তালিকায় সরকারি ও বিরোধী দলের শতাধিক নেতা by রোজিনা ইসলাম
৫ মের ‘ঢাকা অবরোধ’ কর্মসূচি পালনে হেফাজতে ইসলামকে অর্থসহায়তা দিয়েছেন ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের শতাধিক নেতা। এ ছাড়া ৪০টির মতো আর্থিক ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান অর্থ, খাদ্য ও পরিবহনসুবিধা দিয়ে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক এই সংগঠনটিকে সহায়তা করেছে।
সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছিল অবরোধ কর্মসূচির ঠিক আগে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আওয়ামী লীগের ঢাকার বাইরের পাঁচ নেতা, বিএনপির ৩৪, জামায়াতে ইসলামীর ৪১, জাতীয় পার্টির দুজন, চার পরিবহন ব্যবসায়ী ও একজন শিক্ষক এবং ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন দলের ২৫ নেতা হেফাজতে ইসলামকে সহায়তা করেছেন।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগের ওই পাঁচ নেতার বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও সুপারিশ করা হয়েছিল। তবে হেফাজতকে অর্থ দেওয়ার বিষয়টি প্রথম আলোর কাছে অস্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, ‘শুধু অর্থ দিয়ে নয়, হেফাজতে ইসলামকে সমর্থন দিয়ে নানাভাবে উসকে দেওয়ার প্রমাণও আমাদের হাতে এসেছে। যাঁরা এসব করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলের কেউ জড়িত থাকলেও ছাড় দেওয়া হবে না।’
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা থেকে হেফাজতে ইসলামকে অর্থ ও খাদ্যসহায়তা দিয়েছেন ঢাকা মহানগর বিএনপির একজন নেতা এবং জামায়াতের ঢাকা মহানগরের একজন নেতা। হেফাজতকে সহায়তা করার তালিকায় রয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মীর মোহাম্মদ নাছিরউদ্দিনসহ চট্টগ্রামের বিএনপি ও জামায়াতের ১২ নেতা ও প্রতিষ্ঠান। আরও আছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াহিদুল আলম, রাজা মিয়া, ইসলামী ঐক্যজোটের হাটহাজারী শাখার সভাপতি নাসির উদ্দিন মনিরী।
জানতে চাইলে মীর নাছিরউদ্দিন বলেন, ‘ওদের টাকা দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ডাহা মিথ্যা কথা। হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে আমার যোগাযোগ নেই।’ কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে আমাদের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। হেফাজতে ইসলামকে আমি পছন্দ করি না।’ যশোর জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ও সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলীও হেফাজতকে অর্থ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন।
নড়াইল জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র জুলফিকার আলী মণ্ডল বলেন, ‘বিএনপি করি বলেই যে হেফাজতে ইসলামকে সহায়তা করব, তা ঠিক নয়।’ বাগেরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ ছালাম বলেন, বাগেরহাটে হেফাজতের সঙ্গে বিএনপির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল শেখ আ. ওয়াদুদ বলেন, ‘ওই সংগঠনকে সহায়তা করার কোনো সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত আমাদের নেই।’ জয়পুরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি মোজাহার আলী বলেন, ‘আমার কাছে কেউ টাকা চায়নি, দেইনি। আমার আর্থিক সামর্থ্যও নেই।’
দিনাজপুরের জিল্লুর রহমান পরিবহন দিয়ে সহায়তা করেছেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। তবে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমার চারটি রেইনবো গাড়ি আছে। কিন্তু আমি কাউকে গাড়ি দিইনি।’
এ ছাড়া রাজবাড়ী, মাদারীপুর, জামালপুর, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, রাজশাহী. সিরাজগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও কুমিল্লা জেলার শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতার বিরুদ্ধে হেফাজতকে অর্থ দেওয়ার কথা প্রতিবেদনে রয়েছে।
আওয়ামী লীগ সমর্থক ও নেতাদের নাম: ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফেনী পৌরসভার মেয়র নিজাম উদ্দিন হাজারীর নামও আছে তালিকায়। জানতে চাইলে তিনি বলেন, অর্থসহায়তা দেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ বানোয়াট।
ফেনী জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘হেফাজতের স্থানীয় অনেক নেতার সঙ্গে আমার পরিচয় আছে। তবে সমাবেশের দিন হেফাজতের কর্মীরা গাড়ি না পেয়ে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির সময় আমি বাধা দিয়েছি। কিন্তু অর্থসহায়তা করিনি।’
কক্সবাজারের রামুর সাংসদ আবদুর রহমানের ছোট ভাই ও টেকনাফ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং প্যানেল মেয়র মজিবর রহমানও হেফাজতকে টাকা দিয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে। তিনি অবশ্য বলেন, কেউ প্রমাণ দিতে পারলে যেকোনো শাস্তি মাথা পেতে নেবেন।
আওয়ামী লীগের সমর্থক খুলনার জেড এম এ জব্বার হেফাজতে ইসলামকে অর্থসহায়তা করেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে প্রথম আলোকে জব্বার বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে কীভাবে এ ধরনের অর্থসহায়তা দিতে পারি!’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা কুতুবউদ্দিনের নামও আছে প্রতিবেদনে। যোগাযোগ করা হলে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
অর্থসহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন: হেফাজতকে অর্থসহায়তা দেওয়া উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলো হচ্ছে ইসলামী ব্যাংক, রাবেতা আল ইসলামী, ইবনে সিনা ট্রাস্ট, কেয়ারি গ্রুপ, মাকান গ্রুপ, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, চট্টগ্রামের আল আমিন ফাউন্ডেশন, কেয়ারি বাংলাদেশ, খুলনার হ্যামকো ব্যাটারি, আল আমিন জুয়েলার্স, তামান্না ট্রেডিং, মৌ-মার্কেট, রেটিনা, যশোরের এস এহসান মাল্টিপারপাস কোম্পানি সোসাইটি লিমিটেড, হাজী শরীয়তউল্লাহ ফাউন্ডেশন, আঁকাবা ফাউন্ডেশন এবং জেলা ইত্তেফাকুল উলামা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোট, এমদাদুল উলুম মাদ্রাসা।
বক্তব্য জানতে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল মান্নানের বাসায় ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাঁর স্ত্রী জানান, তিনি দেশের বাইরে আছেন। এরপর ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবু নাসের মোহাম্মদ আবদুজ জাহেরের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একরামুল আমিন বলেন, ‘সরকারের কোনো সংস্থা যদি মনে করে, আমরা হেফাজতকে অর্থ দিয়েছি তাহলে তারা প্রতিষ্ঠানে এসে তদন্ত করে দেখতে পারে।’
হেফাজত সম্পর্কে সতর্কতা: ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএনপি ও জামায়াত-শিবির হেফাজতের সঙ্গে সংঘবদ্ধভাবে মতিঝিল, বায়তুল মোকাররম, পল্টন, প্রেসক্লাব, সচিবালয় ও শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দাবি না মানা পর্যন্ত অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করবে। এ ছাড়া বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের তিন থেকে চার হাজার সশস্ত্র কর্মী অবরোধের দিন পরিকল্পিতভাবে হেফাজতের নেতা-কর্মীদের লাশ ফেলে এর দায়ভার সরকারের ওপর চাপিয়ে ঢাকা মহানগরে ব্যাপক ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালাতে পারে।
অবরোধ কর্মসূচিতে বাধা পেলে হেফাজতের ব্যানারে বিএনপি-জামায়াতের কর্মী-সমর্থকেরা সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আক্রমণ, যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের আশঙ্কা করা হয় প্রতিবেদনে।
প্রসঙ্গত, ৫ মে রাজধানীতে হেফাজতে ইসলামের সন্ত্রাসী তাণ্ডব সেই আশঙ্কাকে বাস্তবে প্রমাণ করেছে। অন্যদিকে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতের রাতে অবস্থান ও এদের প্রতি বিএনপির প্রকাশ্য সমর্থনও সে তথ্য প্রমাণ করে। এ ছাড়া নানা সূত্রে এটিও নিশ্চিত হওয়া গেছে যে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরাও ওই ধ্বংসযজ্ঞে অংশ নিয়েছিলেন।
সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছিল অবরোধ কর্মসূচির ঠিক আগে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আওয়ামী লীগের ঢাকার বাইরের পাঁচ নেতা, বিএনপির ৩৪, জামায়াতে ইসলামীর ৪১, জাতীয় পার্টির দুজন, চার পরিবহন ব্যবসায়ী ও একজন শিক্ষক এবং ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন দলের ২৫ নেতা হেফাজতে ইসলামকে সহায়তা করেছেন।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগের ওই পাঁচ নেতার বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও সুপারিশ করা হয়েছিল। তবে হেফাজতকে অর্থ দেওয়ার বিষয়টি প্রথম আলোর কাছে অস্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, ‘শুধু অর্থ দিয়ে নয়, হেফাজতে ইসলামকে সমর্থন দিয়ে নানাভাবে উসকে দেওয়ার প্রমাণও আমাদের হাতে এসেছে। যাঁরা এসব করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলের কেউ জড়িত থাকলেও ছাড় দেওয়া হবে না।’
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা থেকে হেফাজতে ইসলামকে অর্থ ও খাদ্যসহায়তা দিয়েছেন ঢাকা মহানগর বিএনপির একজন নেতা এবং জামায়াতের ঢাকা মহানগরের একজন নেতা। হেফাজতকে সহায়তা করার তালিকায় রয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মীর মোহাম্মদ নাছিরউদ্দিনসহ চট্টগ্রামের বিএনপি ও জামায়াতের ১২ নেতা ও প্রতিষ্ঠান। আরও আছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াহিদুল আলম, রাজা মিয়া, ইসলামী ঐক্যজোটের হাটহাজারী শাখার সভাপতি নাসির উদ্দিন মনিরী।
জানতে চাইলে মীর নাছিরউদ্দিন বলেন, ‘ওদের টাকা দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ডাহা মিথ্যা কথা। হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে আমার যোগাযোগ নেই।’ কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে আমাদের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। হেফাজতে ইসলামকে আমি পছন্দ করি না।’ যশোর জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ও সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলীও হেফাজতকে অর্থ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন।
নড়াইল জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র জুলফিকার আলী মণ্ডল বলেন, ‘বিএনপি করি বলেই যে হেফাজতে ইসলামকে সহায়তা করব, তা ঠিক নয়।’ বাগেরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ ছালাম বলেন, বাগেরহাটে হেফাজতের সঙ্গে বিএনপির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল শেখ আ. ওয়াদুদ বলেন, ‘ওই সংগঠনকে সহায়তা করার কোনো সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত আমাদের নেই।’ জয়পুরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি মোজাহার আলী বলেন, ‘আমার কাছে কেউ টাকা চায়নি, দেইনি। আমার আর্থিক সামর্থ্যও নেই।’
দিনাজপুরের জিল্লুর রহমান পরিবহন দিয়ে সহায়তা করেছেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। তবে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমার চারটি রেইনবো গাড়ি আছে। কিন্তু আমি কাউকে গাড়ি দিইনি।’
এ ছাড়া রাজবাড়ী, মাদারীপুর, জামালপুর, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, রাজশাহী. সিরাজগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও কুমিল্লা জেলার শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতার বিরুদ্ধে হেফাজতকে অর্থ দেওয়ার কথা প্রতিবেদনে রয়েছে।
আওয়ামী লীগ সমর্থক ও নেতাদের নাম: ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফেনী পৌরসভার মেয়র নিজাম উদ্দিন হাজারীর নামও আছে তালিকায়। জানতে চাইলে তিনি বলেন, অর্থসহায়তা দেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ বানোয়াট।
ফেনী জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘হেফাজতের স্থানীয় অনেক নেতার সঙ্গে আমার পরিচয় আছে। তবে সমাবেশের দিন হেফাজতের কর্মীরা গাড়ি না পেয়ে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির সময় আমি বাধা দিয়েছি। কিন্তু অর্থসহায়তা করিনি।’
কক্সবাজারের রামুর সাংসদ আবদুর রহমানের ছোট ভাই ও টেকনাফ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং প্যানেল মেয়র মজিবর রহমানও হেফাজতকে টাকা দিয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে। তিনি অবশ্য বলেন, কেউ প্রমাণ দিতে পারলে যেকোনো শাস্তি মাথা পেতে নেবেন।
আওয়ামী লীগের সমর্থক খুলনার জেড এম এ জব্বার হেফাজতে ইসলামকে অর্থসহায়তা করেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে প্রথম আলোকে জব্বার বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে কীভাবে এ ধরনের অর্থসহায়তা দিতে পারি!’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা কুতুবউদ্দিনের নামও আছে প্রতিবেদনে। যোগাযোগ করা হলে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
অর্থসহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন: হেফাজতকে অর্থসহায়তা দেওয়া উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলো হচ্ছে ইসলামী ব্যাংক, রাবেতা আল ইসলামী, ইবনে সিনা ট্রাস্ট, কেয়ারি গ্রুপ, মাকান গ্রুপ, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, চট্টগ্রামের আল আমিন ফাউন্ডেশন, কেয়ারি বাংলাদেশ, খুলনার হ্যামকো ব্যাটারি, আল আমিন জুয়েলার্স, তামান্না ট্রেডিং, মৌ-মার্কেট, রেটিনা, যশোরের এস এহসান মাল্টিপারপাস কোম্পানি সোসাইটি লিমিটেড, হাজী শরীয়তউল্লাহ ফাউন্ডেশন, আঁকাবা ফাউন্ডেশন এবং জেলা ইত্তেফাকুল উলামা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোট, এমদাদুল উলুম মাদ্রাসা।
বক্তব্য জানতে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল মান্নানের বাসায় ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাঁর স্ত্রী জানান, তিনি দেশের বাইরে আছেন। এরপর ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবু নাসের মোহাম্মদ আবদুজ জাহেরের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একরামুল আমিন বলেন, ‘সরকারের কোনো সংস্থা যদি মনে করে, আমরা হেফাজতকে অর্থ দিয়েছি তাহলে তারা প্রতিষ্ঠানে এসে তদন্ত করে দেখতে পারে।’
হেফাজত সম্পর্কে সতর্কতা: ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএনপি ও জামায়াত-শিবির হেফাজতের সঙ্গে সংঘবদ্ধভাবে মতিঝিল, বায়তুল মোকাররম, পল্টন, প্রেসক্লাব, সচিবালয় ও শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দাবি না মানা পর্যন্ত অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করবে। এ ছাড়া বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের তিন থেকে চার হাজার সশস্ত্র কর্মী অবরোধের দিন পরিকল্পিতভাবে হেফাজতের নেতা-কর্মীদের লাশ ফেলে এর দায়ভার সরকারের ওপর চাপিয়ে ঢাকা মহানগরে ব্যাপক ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালাতে পারে।
অবরোধ কর্মসূচিতে বাধা পেলে হেফাজতের ব্যানারে বিএনপি-জামায়াতের কর্মী-সমর্থকেরা সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আক্রমণ, যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের আশঙ্কা করা হয় প্রতিবেদনে।
প্রসঙ্গত, ৫ মে রাজধানীতে হেফাজতে ইসলামের সন্ত্রাসী তাণ্ডব সেই আশঙ্কাকে বাস্তবে প্রমাণ করেছে। অন্যদিকে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতের রাতে অবস্থান ও এদের প্রতি বিএনপির প্রকাশ্য সমর্থনও সে তথ্য প্রমাণ করে। এ ছাড়া নানা সূত্রে এটিও নিশ্চিত হওয়া গেছে যে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরাও ওই ধ্বংসযজ্ঞে অংশ নিয়েছিলেন।
No comments