এবং সমাধান খুঁজতে হবে সংলাপের পথে
এখন প্রশ্ন হলো, এই সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কী? স্বাভাবিক শান্তিপূর্ণ পরিবেশের জন্য রাষ্ট্র ও সমাজের বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে যে ন্যূনতম কর্মসম্পর্ক থাকা অপরিহার্য, তা গড়ে তোলা যাবে কীভাবে? উত্তরটা আমাদের সবারই জানা: আলোচনায় বসতে হবে, কথা বলতে হবে। কিন্তু সরকারি দলকে এটা মনে রাখতে হবে, এবারের সংলাপে সরকারি দলের দায় স্মরণকালের অন্যান্য সংকটের চেয়ে অনেক বেশি। কারণ, তারা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ভুল ব্যাখ্যা করে একতরফা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত করে দিয়ে এক গভীর সংকট ও শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। একথা সত্য যে, অব্যাহত আলোচনা ও চর্চার মাধ্যমেই গণতন্ত্র শক্তিশালী হয়। অন্যান্য রাজনৈতিক দর্শন থেকে গণতন্ত্রের ফারাক হলো, এই ব্যবস্থায় সংলাপের অগ্রাধিকার রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে দীর্ঘদিন গণতান্ত্রিক কাঠামো বহাল থাকলেও সংলাপের অনুশীলন ও চর্চা তেমনটি হয়নি। বর্তমানে দেশে যে রাজনৈতিক সংকট চলছে, তার মূলেও রয়েছে পারস্পরিক অনাস্থা ও সন্দেহ। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, সেই সন্দেহ ও অবিশ্বাসের দেয়ালটি রাজনীতির ক্ষেত্র ছাড়িয়ে বিভিন্ন সামাজিক স্তরেও প্রসারিত হচ্ছে। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী ও জনগোষ্ঠীর মধ্যে আন্তসংযোগের অভাবই এর কারণ। আজ যদি সংসদীয় গণতন্ত্র কার্যকর থাকত, তাহলে হেফাজতে ইসলামের এ ধরনের অবরোধ চাপিয়ে দিতে পারত কি না, তা নিয়ে বেশ জোরালো প্রশ্ন তোলা চলে। এই অবস্থায় সব রাজনৈতিক পক্ষের উচিত, তাদের রাজনৈতিক মতপার্থক্যের বিষয়টি নিয়ে অবিলম্বে আলোচনায় বসা। কোনো কিছু গায়ের জোরে চাপিয়ে দেওয়ার ফল যে ভালো হয় না, নিকট-অতীতে তার বহু নজির আছে। সমাজে একজন লোকও যদি একটি মতের অনুসারী হন, তাঁর কথা শোনাই হলো গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত। নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে, আলোচনার মাধ্যমেই তার সমাধান হতে হবে। বিরোধীদলীয় নেতার ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম এবং তাকে দ্রুত নাকচ করার রাজনীতি দেশে শান্তি আনবে না। সরকারের উচিত এ মুহূর্তে আলোচনার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেওয়া। যতটুকু নমনীয়তা তারা এখন দেখিয়েছে, তা যথেষ্ট নয়। অন্তর্বর্তীকালীন বা নির্বাচনকালীন সরকারের একটি রূপরেখা তাদের দিতে হবে। এই সরকারের প্রধান কে হবেন, সে বিষয়ে বিরোধী দলকেও সরকারি দলের মনোভাব মনে রেখেই সাড়া দিতে হবে। অপরাজনীতি সামলাতে হলে নির্বাচনকালীন সরকারের আশু ফয়সালা কাম্য।
No comments