শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে মার্কিন আইন প্রণেতাদের আহ্বান
বাংলাদেশে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয় নিশ্চিত করতে
সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন কংগ্রেসের
ডেমোক্রেটিক পার্টির ২৪ জনের বেশি সদস্য। গতকাল শুক্রবার পিটিআইয়ের
প্রকাশিত এক খবরে এ কথা জানা গেছে। সাভারে রানা প্লাজা ধসে এক হাজার ১০০-এর
বেশি পোশাককর্মী নিহত হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা এক চিঠিতে আইনপ্রণেতারা ওই
আহ্বান জানান। চিঠিতে বলা হয়, ‘শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করা এবং আরও
দুর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন এবং প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণে
কঠোর, সমন্বিত ও আপসহীন সরকারি সমর্থনের কোনো বিকল্প নেই বলে আমরা সরল
কথায় বিশ্বাস করি।’ চিঠিতে স্বাক্ষরকারী আইনপ্রণেতাদের মধ্যে
বাংলাদেশবিষয়ক কংগ্রেশনাল ককাসের প্রতিষ্ঠাতা ও কো-চেয়ার এবং ডেমোক্রেটিক
ককাসের ভাইস চেয়ার জো ক্রাউলিও রয়েছেন। মার্কিন আইনপ্রণেতারা চিঠিতে
রানা প্লাজা বিপর্যয়ের পাশাপাশি গত বছরের নভেম্বরে তাজরীন ফ্যাশনসের
ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডসহ বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে সাম্প্রতিক বিভিন্ন দুর্ঘটনা
এবং শ্রমিকনেতা আমিনুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের অমীমাংসিত রহস্যে গভীর উদ্বেগ
প্রকাশ করেন। পিটিআই আরও জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীকে লেখা ডেমোক্র্যাট
সদস্যদের ওই চিঠি ছাড়াও আটজন প্রভাবশালী মার্কিন সিনেটরের একটি দল
বাংলাদেশ থেকে পোশাক কেনে—বিশ্বের এমন প্রধান কয়েকটি রিটেইলার (খুচরা
বিক্রেতা) প্রতিষ্ঠানকে এক চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে সিনেটররা বাংলাদেশের
পোশাক কারখানার অগ্নিনিরাপত্তা নিয়ে চুক্তি সই করার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার
আহ্বান জানান। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো ক্যাটো করপোরেশন, ওয়াল-মার্ট, সিয়ারস,
কোলস, টার্গেট, ম্যাকিস, জেসি পেনি, গ্যাপ, ম্যাংগো, জর্জ ওয়েস্টন
লিমিটেড, ভিএফ করপোরেশন, দ্য চিলড্রেনস প্লেস স্টোরস ও কোর্ট ইংগেলস।
চিঠিতে তাঁরা যুক্তি দিয়ে বলেন, নিজস্ব পর্যবেক্ষণ বা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত
পদক্ষেপ নয়, বরং মার্কিন ও ইউরোপীয় ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আইনগত
বাধ্যবাধকতা রয়েছে—এমন বৈশ্বিক চুক্তিই বাংলাদেশের শ্রমিকদের নিরাপত্তার
বিষয়টি কেবল নিশ্চিত করতে পারে। ডেমোক্রেটিক পার্টির এসব সিনেটর বলেন, এখন
থেকে ১০০ বছর আগে ট্রায়াঙ্গল শার্ট ওয়েস্ট প্রতিষ্ঠানটিতে অগ্নিকাণ্ডে
রানা প্লাজার মতোই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে
পোশাককর্মীদের অবস্থার উন্নয়ন ও তাঁদের নিরাপত্তায় সংস্কারমূলক পদক্ষেপ
নিতে বাধ্য করে। তাঁরা বলেন, এখন রানা প্লাজার ঘটনাটি বিশ্ববাসী দেখার পর
বাংলাদেশ এবং গোটা বিশ্বের শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করতে
স্পষ্ট, যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এসেছে। পোশাক আমদানিতে সুযোগ-সুবিধা
কমাতে পারে যুক্তরাষ্ট্র: পোশাকশিল্প খাতে ভয়াবহ কয়েকটি দুর্ঘটনার জের
ধরে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানিতে সুযোগ-সুবিধা কমাতে পারে
যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ উন্নত করার জন্য চাপ
সৃষ্টির প্রয়াস হিসেবে এ পদক্ষেপ নিতে পারে প্রেসিডেন্ট ওবামা প্রশাসন।
গতকাল ওয়াশিংটন পোস্ট-এর এক প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়। তবে
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক প্রবেশের ক্ষেত্রে শুল্ক বা
কোটার কোনো সুবিধা ২০০৪ সাল থেকে নেই বলে ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা
জানিয়েছেন। এ সুবিধা পেতে বাংলাদেশ অনেক দিন ধরেই চেষ্টা করছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র সফরকারী একটি দল এ
সুবিধা দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানিয়েছে।
No comments