‘ক্রীতদাসের জীবন ছিল বাংলাদেশিদের’
ব্রাজিলে অবৈধভাবে অবস্থান করা ৮০ বাংলাদেশিকে উদ্ধার
করেছে সে দেশের পুলিশ। তবে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। পাচারকারীদের
মাধ্যমে তাঁরা ব্রাজিলে গিয়েছিলেন।ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়ার কাছে
সামামবাইয়া শহরে অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশিদের উদ্ধার করা হয়। সেখানকার
আটটি বাড়িতে তাঁরা ছিলেন। তাঁদের দিয়ে ক্রীতদাসের মতো বিভিন্ন কাজ করাত
পাচারকারীরা। পাচারকারীদের একটি আন্তর্জাতিক চক্রের সন্ধানও পেয়েছে পুলিশ।
এদের মধ্যে বাংলাদেশিও আছে।বিবিসির খবরে বলা হয়, পাচারকারীরা মাসে দেড়
হাজার মার্কিন ডলার আয় করার প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশিদের ব্রাজিলে নিয়ে
আসে। এ জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে তারা নেয় ১০ হাজার ডলার। ব্রাজিলের
প্রতিবেশী দেশ পেরু, বলিভিয়া ও গায়ানা হয়ে তাঁরা ব্রাজিলে
ঢোকেন।বাংলাদেশিদের উদ্ধারের খবরে বিস্ময় প্রকাশ করেছে ব্রাজিলে বাংলাদেশ
দূতাবাস। তবে ঘটনা তদন্তে সে দেশের কর্তৃপক্ষকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে দূতাবাসের পক্ষ থেকে।ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়ার
এক খবরে বলা হয়েছে, উদ্ধার করা বাংলাদেশিদের গ্রেপ্তার না করে শরণার্থী
হিসেবে আশ্রয় প্রার্থনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ব্রাজিলের শরণার্থীবিষয়ক
জাতীয় পরিষদ এখন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।ব্রাজিলের বিচারবিষয়কমন্ত্রী
পল আবরাম জানান, ব্রাজিলের আইন অনুযায়ী মানব পাচারের শিকার এবং দুর্বিষহ
পরিবেশে কাজ করছেন এমন মানুষকে মানবিক বিবেচনায় ব্রাজিলে আবাসিক ভিসা
দেওয়া হয়। যাঁরা সব মেনে কোনো কোম্পানিতে কাজ করছেন তাঁদের কাজের ভিসা
দেওয়া হবে এবং মানবিক কারণে অন্যদের দেশে থাকতে দেওয়া হবে।
ব্রাজিলে সম্প্রতি বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা বেড়ে
যাওয়ায় গত বুধবার ‘ফ্রিডম’ নামে অভিযান শুরু করে দেশটির কেন্দ্রীয়
পুলিশ। ২০১০ সালে দেশটিতে আশ্রয় চেয়েছিলেন ৩৯ জন বাংলাদেশি। পরের বছর এই
সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১১১। আর গত বছর এই সংখ্যা এত বেড়ে যায় যে সংখ্যার
দিক ব্রাজিলে আশ্রয় প্রার্থনা মানুষের মধ্যে চতুর্থ অবস্থানে চলে যায়
বাংলাদেশ। পুলিশ জানায়, উদ্ধার করা লোকজনের প্রায় সবাই মানবেতর জীবনযাপন
করছিলেন। এর মধ্যে ২০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে একটি কক্ষ থেকে। তাঁদের কারও
কোনো কাজ ছিল না, নির্মাণ খাতে কাজ খুঁজছিলেন। তাঁদের একজন মিলাদ আহমেদ।
ব্রাজিলের স্থানীয় একটি পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘আমি দেশে ফিরে যাব না।
সেখানে আমার কোনো কাজ ছিল না। এখানে আমি নির্মাণ খাতে, কসাইখানায় বা
ভারতীয় রেস্তোরাঁয় কাজ করতে পারি। আমি যেকোনো কাজ করতে পারব। কিন্তু আমি
যদি দেশে ফিরে যাই, পুলিশ আমার সমস্যা করবে।’
No comments