ধিক্কার বিশ্বজিতের নির্মম হত্যাকাণ্ডকে by অ্যাডভোকেট শেখ সালাহ্উদ্দিন আহমেদ
৯ ডিসেম্বরের অবরোধে ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও ও সহিংসতার দৃশ্যে এই উদ্বেগ বড় হয়ে উঠেছে যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা-সংলাপ না হলে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বিপন্ন হতে পারে।
৯ তারিখের অবরোধের সময় এক তরুণের নৃশংস হত্যাসহ চারজনের প্রাণহানি ঘটেছে। এই চারটি প্রাণের দায় কার?
ক্ষমতাসীন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এ প্রশ্ন সমানভাবে প্রযোজ্য। রাজপথভিত্তিক প্রায় সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি এখন পরিণত হয়েছে ধ্বংসযজ্ঞ ও সহিংসতার উৎসবে। বিরোধী দলগুলো মুখে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির কথা বলে, কিন্তু কার্যত যেকোনো কর্মসূচিকে ‘সফল’ করার জন্য তাদের কর্মী-সমর্থকদের জ্বালাও-পোড়াও কর্মকাণ্ডে দেখা যাচ্ছে।
অন্যদিকে বিরোধী দলের কর্মসূচিকে জননিরাপত্তা ও শান্তি-শৃঙ্খলার জন্য হুমকি আখ্যা দিয়ে তাতে বাধাদানে সরকার শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করেই তুষ্ট নয়; ক্ষমতাসীন দল ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদেরও নামিয়ে দিচ্ছে রাস্তায়।
অবরোধের সময় পুরান ঢাকায় বিশ্বজিৎ দাস নামের এক তরুণকে ছাত্রলীগের কিছু কর্মী যে নৃশংসতায় খুন করেছেন, তা এই প্রক্রিয়ার এক ভয়ংকর পরিণতির দৃষ্টান্ত। বিশ্বজিৎ দাসের নৃশংস খুনের জবাব কি সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের কাছে আছে?
সহিংস রাজনীতি কেড়ে নিল বিশ্বজিৎকে। ২৪ বছরের তরতাজা তরুণ বিশ্বজিৎ রাজনীতির সাতপাঁচে ছিলেন না।
ছোট একটি টেইলার্স দোকান চালাতেন তিনি। বিরোধী দলের অবরোধ কর্মসূচির দিনে দোকানটি তিনি বন্ধ রেখেছিলেন। কিন্তু এক গ্রাহকের ফোন পেয়ে তিনি তার ঋষিকেশ দাস লেনের বাসা থেকে শাঁখারীবাজারের দোকানে যাচ্ছিলেন। ভেবেছিলেন গ্রাহককে তার পোশাক দিয়েই বাসায় ফিরে আসবেন।
কিন্তু ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানবরা মাঝপথেই কেড়ে নিল তার প্রাণ। একদিকে ছাত্রলীগ অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত সমর্থকদের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে বিশ্বজিৎ ভয়ে আতঙ্কে পাশের একটি ডেন্টাল ক্লিনিকে আশ্রয় নেন।
বিশ্বজিৎকে জামায়াত-শিবিরকর্মী সন্দেহে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা । প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়েছে, বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত আইনজীবীদের একটি মিছিল ভিক্টোরিয়া পার্কের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। বিপরীত দিক থেকে এ সময় ছাত্রলীগের একটি মিছিলও আসছিল। তারা আইনজীবীদের ধাওয়া করে।
এ অপ্রীতিকর অবস্থায় পড়ে পথচারী বিশ্বজিৎ ছুটে আশ্রয় নেন পাশের এক ক্লিনিকে।
এ সময় ছাত্রলীগ ক্যাডাররা তাকে প্রতিপক্ষের লোক ভেবে হত্যা করে। বিশ্বজিৎ প্রাণ বাঁচাতে নিজের পরিচয় দিলেও উন্মত্ত দানবদের হাত থেকে রক্ষা পাননি।
দেশের সাধারণ মানুষ সহিংস রাজনীতির কাছে সত্যিকার অর্থে এখন জিম্মি। শুধু জিম্মি করা নয়, নিছক সন্দেহের বশে তাদের প্রাণও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।
অবরোধের মতো কর্মসূচি যদি মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে, নিরীহ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়, যানবাহন ভস্মীভূত করে, আতঙ্ক ছড়ায়, তা হলে এমন রাজনৈতিক কর্মসূচি তা গণতন্ত্রে যতই স্বীকৃত হোক, কারও কাম্য হতে পারে না।
আমরা অতীতেও হরতাল, অবরোধ দেখেছি; কিন্তু এমন নৃশংসতা খুব কমই দেখা গেছে। বিশেষ করে প্রকাশ্য দিবালোকে বিশ্বজিৎ নামের এক পথচারী তরুণকে নৃশংসভাবে হত্যার দৃশ্য আমাদের শঙ্কিত করেছে।
এ হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই আমরা। আমার মতে, ১৮ দলীয় জোট কর্মসূচি দিতেই পারে। সরকারি দলেরও কর্মসূচির রাজনৈতিক বিরোধিতার অধিকার আছে। কিন্তু সে জন্য রাজপথে কেন সরকারি দলের সমর্থকরা রক্তারক্তি, সংঘাতে লিপ্ত হবে?
বিশ্বজিতের মতো নিরীহ পথচারী তরুণ কেন নৃশংস বলি হবে রাজনীতির। দেশের বিভিন্ন দৈনিকে তাকে হত্যার যে মর্মান্তিক বিবরণ ছাপা হয়েছে, যে করুণ দৃশ্য টিভি চ্যানেলে দেখা গেছে, তা অগণিত মানুষকে অশ্র“সিক্ত করেছে। এ রকম নিরীহ তরুণকে হত্যার দায় কি সরকারও এড়াতে পারে! রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান এমন হিংসাত্মক কর্মসূচি হতে পারে না।
সংকট যত গভীর হোক, আলাপ-আলোচনার মধ্যেই আছে তার সমাধান। কোন প্রক্রিয়ায় সবার গ্রহণযোগ্য একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যায়, সেই পন্থা উদ্ভাবন হরতালে নয়, আলোচনাতেই সম্ভব।
অতীতেও হরতালে-অবরোধে কোনো নির্বাচিত সরকারের পতন হয়নি। তাহলে কেন দুর্ভোগের হরতাল! দেশে এ মুহূর্তে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাতে আমরা শঙ্কিত। কদিন আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মীদের রাজপথে প্রতিরোধে নামতে আহ্বান জানিয়েছেন, যা মোটেই সমর্থনযোগ্য নয়।
আগুন জ্বালানো সহজ। নেভানো কঠিন। আমরা গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার স্বার্থেই শান্তিতে বিশ্বাসী।
আমরা সাধারণ মানুষ। আমাদের ছোট ছোট স্বপ্ন কেন রাজনীতির নিষ্ঠুরতার কাছে হেরে যাবে? আমরা মনে করি, এ প্রশ্ন বিশ্বজিতের বোনের, বাবা-মা বা ভাইয়ের নয়, সারা জাতির।
অবরোধের নামে ৯ তারিখে বিএনপি-জামায়াত সমর্থকরা সারা দেশে যে তাণ্ডব চালিয়েছে তা যেমন দুর্ভাগ্যজনক, তেমন ছাত্রলীগ নামের নব্য ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানবদের অস্ত্র হাতে প্রকাশ্যে পাঁয়তারা, চাপাতি দিয়ে মানুষ খুনের নৃশংসতাও নিন্দনীয়। অপরাজনীতির হাতে আÍদানকারী বিশ্বজিতের নির্মম হত্যাকাণ্ডকে আমরা ধিক্কার জানাই। ধিক মানুষ হত্যার রাজনীতিকে।
লেখকঃ শেখ সালাহ্উদ্দিন আহমেদ, অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ও সভাপতি, সাউথ এশিয়ান ল’ ইয়ার্স ফোরাম
অন্যদিকে বিরোধী দলের কর্মসূচিকে জননিরাপত্তা ও শান্তি-শৃঙ্খলার জন্য হুমকি আখ্যা দিয়ে তাতে বাধাদানে সরকার শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করেই তুষ্ট নয়; ক্ষমতাসীন দল ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদেরও নামিয়ে দিচ্ছে রাস্তায়।
অবরোধের সময় পুরান ঢাকায় বিশ্বজিৎ দাস নামের এক তরুণকে ছাত্রলীগের কিছু কর্মী যে নৃশংসতায় খুন করেছেন, তা এই প্রক্রিয়ার এক ভয়ংকর পরিণতির দৃষ্টান্ত। বিশ্বজিৎ দাসের নৃশংস খুনের জবাব কি সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের কাছে আছে?
সহিংস রাজনীতি কেড়ে নিল বিশ্বজিৎকে। ২৪ বছরের তরতাজা তরুণ বিশ্বজিৎ রাজনীতির সাতপাঁচে ছিলেন না।
ছোট একটি টেইলার্স দোকান চালাতেন তিনি। বিরোধী দলের অবরোধ কর্মসূচির দিনে দোকানটি তিনি বন্ধ রেখেছিলেন। কিন্তু এক গ্রাহকের ফোন পেয়ে তিনি তার ঋষিকেশ দাস লেনের বাসা থেকে শাঁখারীবাজারের দোকানে যাচ্ছিলেন। ভেবেছিলেন গ্রাহককে তার পোশাক দিয়েই বাসায় ফিরে আসবেন।
কিন্তু ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানবরা মাঝপথেই কেড়ে নিল তার প্রাণ। একদিকে ছাত্রলীগ অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত সমর্থকদের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে বিশ্বজিৎ ভয়ে আতঙ্কে পাশের একটি ডেন্টাল ক্লিনিকে আশ্রয় নেন।
বিশ্বজিৎকে জামায়াত-শিবিরকর্মী সন্দেহে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা । প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়েছে, বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত আইনজীবীদের একটি মিছিল ভিক্টোরিয়া পার্কের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। বিপরীত দিক থেকে এ সময় ছাত্রলীগের একটি মিছিলও আসছিল। তারা আইনজীবীদের ধাওয়া করে।
এ অপ্রীতিকর অবস্থায় পড়ে পথচারী বিশ্বজিৎ ছুটে আশ্রয় নেন পাশের এক ক্লিনিকে।
এ সময় ছাত্রলীগ ক্যাডাররা তাকে প্রতিপক্ষের লোক ভেবে হত্যা করে। বিশ্বজিৎ প্রাণ বাঁচাতে নিজের পরিচয় দিলেও উন্মত্ত দানবদের হাত থেকে রক্ষা পাননি।
দেশের সাধারণ মানুষ সহিংস রাজনীতির কাছে সত্যিকার অর্থে এখন জিম্মি। শুধু জিম্মি করা নয়, নিছক সন্দেহের বশে তাদের প্রাণও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।
অবরোধের মতো কর্মসূচি যদি মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে, নিরীহ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়, যানবাহন ভস্মীভূত করে, আতঙ্ক ছড়ায়, তা হলে এমন রাজনৈতিক কর্মসূচি তা গণতন্ত্রে যতই স্বীকৃত হোক, কারও কাম্য হতে পারে না।
আমরা অতীতেও হরতাল, অবরোধ দেখেছি; কিন্তু এমন নৃশংসতা খুব কমই দেখা গেছে। বিশেষ করে প্রকাশ্য দিবালোকে বিশ্বজিৎ নামের এক পথচারী তরুণকে নৃশংসভাবে হত্যার দৃশ্য আমাদের শঙ্কিত করেছে।
এ হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই আমরা। আমার মতে, ১৮ দলীয় জোট কর্মসূচি দিতেই পারে। সরকারি দলেরও কর্মসূচির রাজনৈতিক বিরোধিতার অধিকার আছে। কিন্তু সে জন্য রাজপথে কেন সরকারি দলের সমর্থকরা রক্তারক্তি, সংঘাতে লিপ্ত হবে?
বিশ্বজিতের মতো নিরীহ পথচারী তরুণ কেন নৃশংস বলি হবে রাজনীতির। দেশের বিভিন্ন দৈনিকে তাকে হত্যার যে মর্মান্তিক বিবরণ ছাপা হয়েছে, যে করুণ দৃশ্য টিভি চ্যানেলে দেখা গেছে, তা অগণিত মানুষকে অশ্র“সিক্ত করেছে। এ রকম নিরীহ তরুণকে হত্যার দায় কি সরকারও এড়াতে পারে! রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান এমন হিংসাত্মক কর্মসূচি হতে পারে না।
সংকট যত গভীর হোক, আলাপ-আলোচনার মধ্যেই আছে তার সমাধান। কোন প্রক্রিয়ায় সবার গ্রহণযোগ্য একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যায়, সেই পন্থা উদ্ভাবন হরতালে নয়, আলোচনাতেই সম্ভব।
অতীতেও হরতালে-অবরোধে কোনো নির্বাচিত সরকারের পতন হয়নি। তাহলে কেন দুর্ভোগের হরতাল! দেশে এ মুহূর্তে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাতে আমরা শঙ্কিত। কদিন আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মীদের রাজপথে প্রতিরোধে নামতে আহ্বান জানিয়েছেন, যা মোটেই সমর্থনযোগ্য নয়।
আগুন জ্বালানো সহজ। নেভানো কঠিন। আমরা গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার স্বার্থেই শান্তিতে বিশ্বাসী।
আমরা সাধারণ মানুষ। আমাদের ছোট ছোট স্বপ্ন কেন রাজনীতির নিষ্ঠুরতার কাছে হেরে যাবে? আমরা মনে করি, এ প্রশ্ন বিশ্বজিতের বোনের, বাবা-মা বা ভাইয়ের নয়, সারা জাতির।
অবরোধের নামে ৯ তারিখে বিএনপি-জামায়াত সমর্থকরা সারা দেশে যে তাণ্ডব চালিয়েছে তা যেমন দুর্ভাগ্যজনক, তেমন ছাত্রলীগ নামের নব্য ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানবদের অস্ত্র হাতে প্রকাশ্যে পাঁয়তারা, চাপাতি দিয়ে মানুষ খুনের নৃশংসতাও নিন্দনীয়। অপরাজনীতির হাতে আÍদানকারী বিশ্বজিতের নির্মম হত্যাকাণ্ডকে আমরা ধিক্কার জানাই। ধিক মানুষ হত্যার রাজনীতিকে।
লেখকঃ শেখ সালাহ্উদ্দিন আহমেদ, অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ও সভাপতি, সাউথ এশিয়ান ল’ ইয়ার্স ফোরাম
No comments