ফের ভেঙে যেতে পারে পাকিস্তান by শরিফুল ইসলাম
পাকিস্তান ১৯৭১ সালে যে পরিস্থিতি কাটিয়েছিল আজকের পরিস্থিতি তার চেয়েও খারাপ। যদি খুব তাড়াতাড়ি সামাজিক সমস্যাগুলোর নিরসন করা না যায় তাহলে খুব দ্রুত ভেঙে যেতে পারে দেশটি।
ফের পাকিস্তান ভেঙে যাওয়ার এ ভবিষ্যৎবাণী করেছেন দেশটির আলোচিত পরমাণু বিজ্ঞানী আব্দুল কাদির খান।আন্তর্জাতিক একটি পত্রিকায় ‘১৯৭১’র ঘটনাগুলো’ শীর্ষক এক নিবন্ধে আব্দুল কাদির লিখেছেন, “১৯৭১ সালের পরিস্থিতির চেয়ে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি খারাপ। সবধরনের সামাজিক সমস্যায় জর্জরিত দেশ। যদি এসব সমস্যা দ্রুত সমাধান করা না যায়, তাহলে সেদিন আর বেশি দূরে নেই যেদিন আবারও আমরা আলাদা হয়ে যাব। সমস্যা নিরসনে আমাদের প্রথম যে কাজটি করতে হবে তা হলো বিদেশি যুদ্ধ থেকে নিজেদের সরিয়ে আনা এবং নিজ ঘর (দেশে) সামাল দেওয়া।”
আব্দুল কাদির লিখেছেন, প্রত্যেকটি জাতিকে উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় । গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়গুলোর সঙ্গে বিয়োগাত্মক ঘটনাও থাকে। জনগণ সাধারণত ধুমধাম করে ভালো ঘটনাগুলো উদযাপন করার সময় বিয়োগাত্মক ঘটনাটিকে উপেক্ষা করে ও ভুলে যায়।
তিনি বলেছেন, “সবচেয়ে দুভার্গ্যজনক হলো আমাদের অতীত বিয়োগান্তক ভুল থেকে আমরা কোন শিক্ষা নেইনি। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান ভেঙে যাওয়া সেরকমই একটি ঘটনা ছিল।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “পাকিস্তানের লাখ লাখ জনগণ ওই বিয়োগান্তকের কারণ সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত। কিন্তু এ ধরনের লজ্জাজনক অভিজ্ঞতার পরও আমাদের শাসক ও প্রভাবশালী সমাজ অচেতন বলে মনে হয়।”
ইরান, লিবিয়া ও উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু গোপন তথ্য পাচার করার কথা স্বীকার করার পর ২০০৪ সাল থেকে গৃহবন্দি রয়েছেন আব্দুল কাদির। কিন্তু পরে এ বিজ্ঞানী দাবি করেন, তাকে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) পারভেজ মোশাররফ।
নিবন্ধটিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, “দেশ ভেঙে গেছে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, ধর্ষিত হয়েছেন নারীরা এবং প্রায় ৯২ হাজার সৈন্য ও কর্মকর্তাকে বন্দি করা হয়েছে।...নিয়মিত ঘটনার মতোই এ ধরনের বড় ও বিয়োগাত্মক বিপর্যয়ের জন্য কাউকে দায়ী করা হয়নি।”
১৯৭১ সালের স্মৃতিচারণ করে আব্দুল কাদির লিখেছেন, “আমরা জানি যে, ১৯৭১ সালের জেনারেল ইয়াহিয়া খান জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানে পাঠিয়েছিলেন ‘স্বাধীনতাকামীদের’ নির্মূল করতে। আমরা দেখেছি, আমাদেরই সেনাবাহিনী আমাদের জনগণকে হত্যা করতে। এটা সবার জানা সর্বময় ক্ষমতা পেলে মানুষ নিষ্ঠুর হয়ে উঠে।”
পাকিস্তান বাহিনীর চালানো নৃশংসতার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “বিদেশি টেলিভিশনে দেখানো হয় চরম নৃশংসতার দৃশ্যগুলো (ওই সময় আমি বেলজিয়ামে ছিলাম) এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে মুসলমান, পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানিদের এমন নৃশংস অপরাধ চালানো দেখে আমি লজ্জিত হয়েছিলাম। এটা সবাই জানে যে, আমাদের পশ্চিমা বাবুরা পূর্ব পাকিস্তানকে উপনিবেশ হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন যেমনটি ব্রিটিশ আমাদের সঙ্গে করেছিল।”
“এখনকার মতো তৎকালীন শাসক ও প্রতাপশালীরা নিজেদের বিরোধীদের নির্মূল করতে পারবেন-এই মোহের ঘোরে ছিলেন। ভাড়াটে খুনিদের চেয়ে ভালো কিছু করিনি আমরা-কিছু অর্থের জন্য হত্যা করেছি নিজের জনগণকে। কিভাবে নিজের সীমান্ত ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা যায় তা আমরা ভুলে গেছি”-উল্লেখ করেন মোহসিন ই-পাকিস্তান নামে খ্যাত আব্দুল কাদির।
১৯৭১ সালের সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির ফারাক খুব বেশি নয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
পাকিস্তান ভেঙে যাওয়ার জন্য দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করলেও বেলুচিস্তান ও আজাদ কাশ্মির পাকিস্তান থেকে ছিটকে যেতে পারে।
পাঞ্জাব, সিন্ধু, খাইবার পাখতুনখওয়া ও বেলচিস্তান এই চারটি প্রদেশ, রাজধানী ইসলামবাদ ভূখণ্ড ও কেন্দ্র শাসিত উপজাতি অঞ্চল নিয়ে গঠিত পাকিস্তান।
ব্রিটিশদের কাছে স্বাধীনতা লাভের পর পাকিস্তানের সঙ্গে যোগ দেয় বেলুচিস্তান। প্রতিরক্ষা, মুদ্রা, বাজেট ও বৈদেশিক সম্পর্কের বিষয়গুলো থাকবে কেন্দ্রের হাতে, আর বাকি সব বিষয় স্বায়ত্তশাসন ভোগ করবে- এ শর্তে পাকিস্তানের সঙ্গে যোগ দেন লাকাতের খান। কিন্তু জিন্নাহর মৃত্যুর পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। যোগ দেওয়ার পর থেকেই পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয় বেলুচদের। এখন তারা স্বায়ত্তশাসন নয়, চায় স্বাধীনতা। কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে সমস্যার সমাধান করতে চেয়েছিলেন বেলুচিস্তানের স্বাধীনতাকামীরা কিন্তু সে পদক্ষেপের কোনো ফল আজও পাননি তারা। তাই সশস্ত্র সংগ্রাম চালাতে প্রস্তুত প্রদেশটির স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীগুলো।
পাকিস্তানের একটি প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যমকে সম্প্রতি দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এক স্বাধীনতাকামী মকুবল বলেছেন, “যিনি পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা করবেন, তাকেই আমরা আমাদের শত্রু মনে করব। আদর্শগত দিক থেকে আমরা আর পাকিস্তানের অংশ হিসেবে থাকতে চাই না এবং এটা (স্বাধীনতা) অর্জন করার জন্য মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লড়ে যেতে প্রস্তুত রয়েছি। তারা আমাদের যত লোক মারুক বা যে প্রস্তাবই দিক না কেন আমরা এ লড়াই থেকে পিছপা হব না।”
এদিকে কাশ্মির নিয়েও বিপাকে রয়েছে পাকিস্তান। ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান আলাদা হয়ে যাওয়ার পর কাশ্মির ইস্যু দেশটির সংঘাতের কারণ হয়ে উঠে। যুদ্ধ করে যে যার মতো দখল করে নেয় কাশ্মির বিভিন্ন অংশ। পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত অংশ আজাদ কাশ্মির নামে পরিচিত। আজাদ কাশ্মিরেও গড়ে ওঠেছে বিভিন্ন স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী।
No comments