রাজপথে অহিংস পিকেটিং, জনমনে স্বস্তি by শামীম খান ও মেহেদী হাসান পিয়াস
এর আগে এমন হরতাল কেউ দেখেছে কি না জানা নেই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জামায়াত-শিবিরসহ সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, জনজীবনের সঙ্কট নিরসন, তাজরীন গার্মেন্টে অগ্নিকাণ্ডে নিহত শতাধিক শ্রমিকের করুণ মৃত্যুর জন্য দায়ী গার্মেন্টস মালিকসহ অন্যদের গ্রেফতার,
দেশের স্বার্ভভৌমত্বের উপর সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আধিপত্য বন্ধের দাবিতে মঙ্গলবার ভোর থেকেই সিপিবি-বাসদসহ হরতাল আহ্বানকারী অপরাপর বামপন্থী দলের নেতা-কর্মীরা রাজপথে নামে দলীয় পতাকা ও জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে।বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্লোগানে, মিছিলে, গানে মুখর হয়ে উঠে পুরানা পল্টন, দৈনিক বাংলা, জিপিও, প্রেসক্লাব, কাকরাইল এলাকা। ভোর ৬টা থেকে সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ, বাসদের সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান, সিপিবি’র প্রেসিডিয়াম লক্ষ্মী চক্রবর্তী, আহসান লাবলু, কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, অ্যাডভোকেট মন্টু ঘোষ, বাসদের বজলুর রশিদ ফিরোজ, রাজেকুজ্জামান রতনের নেতৃত্বে মিছিল শুরু হয়।
এছাড়াও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের নেতা জোনায়েদ সাকির নেতৃত্বে তোপখানা থেকে গণতান্ত্রিক বামমোর্চা মিছিল বের করে।
এখনো খণ্ড খণ্ড মিছিল মিছিল চলছে। বামপন্থি নেতা-কর্মীরা পল্টন মোড়ে অবস্থান নিয়ে পিকেটিং করছেন।
বিগত সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে ডাকা হরতালে যে ধরনের সহিংসতা লক্ষ্য করা যায় পুলিশ এবং হরতালকারীদের মধ্যে, তার ছিঁটেফোঁটাও ঘটেনি এখন পর্যন্ত। বাকি বেলায় তা ঘটবে কি না সন্দেহ আছে।
পল্টন, মতিঝিল, দৈনিক বাংলা, কাকরাইল, শান্তিনগর, জিপিও এবং প্রেসক্লাব এলাকায় দায়িত্বরত একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার কাছে হরতালের সার্বিক পরিস্থিতি জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, যেসব দাবি নিয়ে বামপন্থিরা হরতাল আহ্বান করেছে এবং যে উপায়ে হরতাল পালন করছে তাতে আমাদের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের বাধা সৃষ্টি করার প্রশ্নই আসে না। আর এমন শান্তিপূর্ণ হরতাল এ দেশের রাজনীতিতে উদাহরণ হয়ে উঠুক।
তারা বলেন, এখন পর্যন্ত হরতাল আহ্বানকারী দলের নেতা-কর্মীদের মাঝে উগ্র কোনো আচরণ আমরা লক্ষ্য করিনি।
হরতাল কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে সিপিবি সাধারণ সম্পাদক কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, “গতকাল (সোমবার) এক প্রেসব্রিফিংয়ে আমরা বলেছি, সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে সারাদেশে এ হরতালটি আমরা করতে চাই।”
তিনি বলেন, “দাবি আদায়ের, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম হাতিয়ার হরতাল এখন জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। আর তার জন্য দায়ী হলো গত দুই দশক ধরে চলে আসা বুর্জোয়া দলগুলোর ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি।”
আবু জাফর বলেন, “এসব রাজনেতিক দল দলীয় ও অনেক সময় ব্যক্তি স্বার্থে ‘হরতাল’ নামের এই কর্মসূচিটিকে ব্যবহার করে সন্ত্রাস করে। রাজনীতিতে এসব নেতিবাচক সংস্কৃতির বিপক্ষে দাঁড়িয়ে জনগণের দাবি নিয়ে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে এ কর্মসূচিটিকে সফল করতে চাই।
হরতালে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা সম্পর্কে জাফর বলেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার বাধা দেয়নি। তাদের সহযোগিতাও আমরা আশা করি।”
সহিংসতা, সন্ত্রাসের মাধ্যমে বিগত সময়ে হরতালের আগে আতঙ্ক সৃষ্টি করলেও হরতালের সময় কিছু যানবাহন রাস্তায় চলতে দেখা যায়। কিন্তু এ হরতালে রাস্তায় যানবাহন নেই বললেই চলে। এমনকি বিআরটিসি বাসও চলাচল করতে দেখা যায়নি এখন পর্যন্ত। যারা রিকশা বা পায়ে হেঁটে চলাচল করছেন তাদের মধ্যে ভীত-সন্ত্রস্ততা লক্ষ্য করা যায়নি। কেউ কেউ রিকশায় না উঠেও হরতালে সমর্থন ব্যক্ত করছেন।
অব্যাহত মিছিল, পিকেটিংয়ে সকাল সাড়ে ৯টায় যোগ হয় ভিন্ন মাত্রা। হরতালের সমর্থনে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পী-কর্মীরা সংগঠনের ব্যানার, প্ল্যাকার্ড নিয়ে গণসঙ্গীত গাইতে গাইতে তোপখানা রোডের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আসেন রাস্তায়।
এসময় তারা প্রেসক্লাব, পুরানা পল্টন, দৈনিকবাংলা এলাকার রাস্তায় সম্মিলিতভাবে সা¤্রাজ্যবাদ, সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী গণসঙ্গীত গাইতে থাকে। এরপর উদীচীর শিল্পী, কর্মীরা পল্টন মোড়ে জড়ো হয়ে সমাবেশ করে। এখনো তারা সেখানে অবস্থান নিয়ে গণসঙ্গীত, আবৃত্তির মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানাচ্ছেন।
উদীচীর মিছিল সমাবেশে নেতৃত্ব দিচ্ছেন উদীচী কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুল আলম, সহ-সম্পাদক জমসেদ আনোয়ার তপন, সঙ্গীতা ইমাম।
বেলা ১০টার দিকে পল্টন মোড়ে অবস্থান নেওয়া সিপিবি-বাসদের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে এসে যোগ দেন সিপিবি সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। এসময় নেতা-কর্মীরা মিলে হরতালের পক্ষে মিছিল করে।
এসময় সেলিম সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “দেশের সর্বস্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালন করছে। এতে বোঝা যায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ। তারা সাম্প্রদায়িক রাজনীতি এদেশে দেখতে চায় না, জামাত-শিবিরকে দেখতে চায় না।”
No comments