জাতীয় পতাকা হাতে জামায়াত নিষিদ্ধের হরতাল মঙ্গলবার by ইসমাইল হোসেন
স্বাধীনতার একচল্লিশ বছরে দেশের স্বাধীনতার বিরোধীতাকারীদের নিষিদ্ধ ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্নের দাবিতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) ও বাম মোর্চার হরতাল মঙ্গলবার।
জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে রাজপথে নেমে সকাল-সন্ধ্যা এ হরতাল সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন নেতারা।সিপিবি-বাসদ গত ৭ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জামায়াত-শিবিরসহ সব সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন ও শাস্তি প্রদানসহ বিভিন্ন দাবিতে হরতাল ডাকে।
তাদের অন্য দাবিগুলো হলো- আশুলিয়ার তাজরীন গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ডের জন্য দায়ী মালিক পক্ষ ও সরকারি কর্মকর্তাদের গ্রেফতার ও শাস্তি প্রদান, গার্মেন্টসহ সব শিল্প-কারখানায় আইন অনুযায়ী কর্মস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার ও ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা, বিদ্যুৎ বিল, গাড়ি ভাড়াসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমানো ও বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পাঁয়তারা বন্ধ করা।
হরতালের সমর্থনে সোমবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ ও মিছিল করেছে সিপিবি-বাসদ।
সমাবেশে নেতারা বলেন, জ্বালাও-পোড়াও করে ভয় দেখিয়ে হরতাল পালন নয়। জনগণের দাবির সমর্থনে জনগণই এ হরতাল পালন করবে। কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে নয়, বরং রাজনীতিতে ধর্মের অপব্যবহার বন্ধের দাবিতে এ হরতাল। বিভিন্ন মহল হরতালের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিমুলক প্রচারণা চালাচ্ছে উল্লেখ করে নেতারা জনগণের এ হরতালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে মাঠে নামার আহ্বান জানান।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য শামছুজ্জামান সেলিম, সাজ্জাদ জহির চন্দন, বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ প্রমুখ।
এর আগে পুরানা পল্টনে সংবাদ সম্মেলনে নেতারা বলেন, সিপিবি-বাসদ ও বাম মোর্চা হরতাল আহ্বান করলেও তা সফল করার দায়িত্ব দেশপ্রেমিক সব ব্যক্তি ও শক্তির। সম্মেলনে হরতালের নেতিবাচক ধারণা থেকে বেরিয়ে জাতীয় পতাকা হাতে রাজপথে শান্তিপূর্ণ হরতাল পালন করে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার চেষ্টা ও জামায়াতের সহিংস সন্ত্রাসের জবাব দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
মঙ্গলবারের হরতালের বিরুদ্ধে কয়েকটি ইসলামী দলের পাল্টা হরতাল কর্মসূচি প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আমাদের দাবি কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে নয়, আমাদের দাবি রাজনীতিতে পবিত্র ধর্মকে ব্যবহারের বিরুদ্ধে।
কেবল রাজাকাররাই আগামীকালের হরতালে গাড়ি নামাতে ও দোকান খুলতে চেষ্টা করতে পারে বলে দাবি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এরই মধ্যে ৩০টি গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠন, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট, প্রগতিশীল ছাত্রজোট, যুব সংগঠন, কৃষক-ক্ষেতমজুর সংগঠন, সাংস্কৃতিক সংগঠন, নারী সংগঠন, চিকিৎসক-প্রকৌশলী-আইনজীবীসহ শতাধিক সংগঠন কর্মসূচিতে সমর্থন দিয়েছে।
সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, আন্তঃজেলা যানবাহন সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, ঢাকা জেলা অটোটেম্পু শ্রমিক ইউনিয়ন, ঢাকা জেলা যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়ন, সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ, ঢাকা জেলা সড়ক পরিবহন সমিতি, ঢাকা জেলা বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন আমাদের সব দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে।
হরতালের সমর্থনে সারাদেশে কয়েক লাখ প্রচারপত্র, হ্যান্ডবিল, পোস্টার বিলি, গণসংযোগ, পদযাত্রা, মিছিল, জনসভা, পথসভা, মাইকিং করা হয়েছে।
অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, জরুরি বিদ্যুৎ সরবরাহ, হাসপাতাল, ওষুধের দোকান, সংবাদপত্র, মিডিয়া, কাঁচাবাজার, হোটেল হরতালের আওতামুক্ত থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য রাখেন বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাজ্জাদ জহির চন্দন, আহসান হাবিব লাবলু, বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ, রাজেকুজ্জামান রতন, সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন, বাসদ নেতা খালেকুজ্জামান লিপন প্রমুখ।
সিপিবি ও বাসদের পাশাপাশি প্রায় একই দাবিতে মঙ্গলবার হরতাল ডেকেছে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা। সোমবার তোপখানা রোডে এক সংবাদ সম্মেলনে মোর্চার নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে তাদের সাত দফা দাবি তুলে ধরে হরতাল সফলের আহ্বান জানান।
তাদের দাবির মধ্যে আছে, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা প্রত্যাহার, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি বন্ধ, শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী সব মালিক ও কর্মকর্তাদের গ্রেফতার করে সব কারখানায় নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত ও ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করা, যুদ্ধাপরাধীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত ও ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধ, বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ ও রেল এবং গাড়ি ভাড়া কমানো, দুর্নীতি বন্ধ করে লোপাট করা অর্থ উদ্ধার, সম্পদ পাচারকারী ও দুর্নীতিবাজদের বিচার নিশ্চিত করা, সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বন্ধ, রামপাল বিদ্যুত প্রকল্প বাতিল ও এশিয়া এনার্জিকে বহিষ্কার করে ফুলবাড়ি চুক্তি বাস্তবায়ন ইত্যাদি।
সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।
সিপিবি-বাসদ মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় মুক্তিভবনে হরতালের কর্মসূচি প্রসঙ্গে প্রেস ব্রিফিং করবে।
No comments