বাড়তি ভর্তি ফি-'বোঝার ওপর শাকের আঁটি'

শিক্ষাবর্ষের শুরুতে পছন্দের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্তানদের ভর্তি করার চিন্তা ও চেষ্টা মা-বাবার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। সবাই চান তাঁর সন্তান সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হোক। রাজধানীর পাশাপাশি সারা দেশের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তির জন্য তীব্র প্রতিযোগিতাও লক্ষ করা যায়।


সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের লেখাপড়ার মান যেমন এক নয়, তেমনি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার ফলও সন্তোষজনক নয়। অভিভাবকরা চান, তাঁদের সন্তানরা সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা লাভ করে কৃতিত্বের সঙ্গে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হোক। আর এ সুযোগে অনেক সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই ভর্তির প্রতিযোগিতাকে ব্যবসায়িক পুঁজি বানিয়েছে। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কথা আলাদা। কিন্তু রাজধানীর বেশ কিছু বেসরকারি নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভর্তি পরীক্ষার নামে যা করে আসছে, তাকে এক অর্থে ভর্তি-বাণিজ্যই বলা যেতে পারে। নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি অভিভাবকদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো ভর্তি ফরম ও প্রসপেক্টাসের দাম বেশি রাখার পাশাপাশি আকাশচুম্বী ভর্তি ফি নিচ্ছে। এই চাহিদা মেটাতে গিয়ে অনেক অভিভাবকই আর্থিক কষ্টের সম্মুখীন হচ্ছেন। অসচ্ছল অভিভাবকরা ভর্তি ফি জোগাড় করতে না পারায় অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পছন্দের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারে না। শিক্ষাজীবনের শুরুতে একজন নবীন শিক্ষার্থীর কোমল প্রাণে দুর্ভাগ্যজনক অভিজ্ঞতার যে ছাপ পড়ে, তা তার পরবর্তী শিক্ষাজীবনে বেদনার ক্ষত সৃষ্টি করে। এভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক লোভের শিকার হতে হয় অসংখ্য কোমলমতি শিশু-কিশোরকে।
রাজধানীর প্রায় সব নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারের বেঁধে দেওয়া অঙ্কের চেয়ে পাঁচ থেকে ছয় গুণ দামে ভর্তি ফরম বিক্রি করে। ভর্তি ফরম বিক্রি থেকেও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাড়তি আয় করে থাকে। বাড়তি খরচের কথা বলে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই বছরের পর বছর সেই অনৈতিক কাজটি করে যাচ্ছে। অথচ একসময় শিক্ষকতা যতটা না পেশা ছিল, তার চেয়েও বেশি ছিল ব্রত। সেই ব্রত সাধনে অনৈতিকতার কোনো স্থান না থাকলেও আজ শিক্ষা বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে। গত বছরও ভর্তিতে বাড়তি টাকা নিয়েছে এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বাড়তি টাকা ফেরত দেওয়া বা বেতনের সঙ্গে সমন্বয়ের কথা বলা হলেও তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে রীতিমতো 'বুড়ো আঙুল' দেখিয়ে চলেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হতে পারে, সরকারের চেয়ে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটি বেশি শক্তিশালী।
এ কথা মানতে হবে, একটি মানসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। এটাও সত্য, ব্যয় সংকুলানের জন্য টাকার প্রয়োজন। প্রতিযোগিতামূলক এই সময়ে অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে অবশ্যই শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে হয়। শিক্ষকদের বাড়তি বেতন দিতে হয়ে। পাশাপাশি যাতায়াত ও শিক্ষা উপকরণের দামও বেড়েছে। একজন অভিভাবক এই বাড়তি টাকার চাপ কেমন করে সংকুলান করবেন, সে বিষয়টিও ভাবতে হবে। বাড়তি ব্যয়ের কারণে কোনো শিক্ষার্থী ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে না পারলে তাতে সেই শিক্ষার্থীর অধিকার ক্ষুণ্ন হয়। টাকাই ভর্তির মাপকাঠি হতে পারে না। কিন্তু মানসম্পন্ন শিক্ষাপ্রাপ্তি ও সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির যোগ্যতা যেন এখন টাকার মানদণ্ডেই নিরূপণ হচ্ছে। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ ব্যাপারে সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপ কাম্য।

No comments

Powered by Blogger.