এশিয়া এনার্জির প্রতি কেন এত অনুরাগ by ড. এম শামসুল আলম
গত ২২ অক্টোবর পত্রিকায় খবর ছিল, সরকারের পরামর্শক কমিটি শর্তসাপেক্ষে বড়পুকুরিয়া ও ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লাখনি উন্নয়নের সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে। এ খবরে আরো জানা যায়, এশিয়া এনার্জির সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী বিদেশি কম্পানি দিয়ে কয়লা তোলার পক্ষে কমিটির সদস্যদের শক্ত অবস্থান রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটেই এই নিবন্ধ।
২. ২০০৫ সালে টাটা ও এশিয়া এনার্জির দ্বারা যথাক্রমে বড়পুকুরিয়া ও ফুলবাড়ী খনির কয়লা উন্মুক্ত পদ্ধতিতে উত্তোলনের লক্ষ্যে কয়লানীতি তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরে টাটার বিনিয়োগ প্রস্তাব প্রত্যাহার হলেও সে উদ্যোগ অব্যাহত থাকে। পাশাপাশি ফুলবাড়ী খনির কয়লা উন্মুক্ত পদ্ধতিতে উত্তোলনের জন্য এশিয়া এনার্জি সরকারের কাছে পরিকল্পনা প্রস্তাব পেশ করে। ফলে এশিয়া এনার্জির চুক্তি ও কয়লানীতি গণপ্রতিরোধের মুখে পড়ে। যে লিজ বা চুক্তিবলে এশিয়া এনার্জি ওই খনি উন্নয়নের অধিকার পায়, তা সত্যিকার অর্থে বৈধ কি না? উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের যে পরিকল্পনা তারা গ্রহণ করেছে, তা-ও পরিবেশ-প্রতিবেশ ও আইনসম্মত কি না? এ পরিকল্পনা প্রস্তাবের সম্ভাব্যতা যাচাই কমিটিতে এশিয়া এনার্জির সঙ্গে আর্থিকভাবে লাভজনক কাজে জড়িত ব্যক্তিবিশেষের অন্তর্ভুক্তি কমিটির নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করেছে কি না? এসব প্রশ্ন তখন মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। এসব বিষয় অতীতে নানাভাবে আলোচনায় এলেও সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। তবে ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট ফুলবাড়ীতে এশিয়া এনার্জির অফিস ঘেরাও কর্মসূচি পালনকে কেন্দ্র করে বহু মানুষের হতাহত, গণ-অভ্যুত্থান ও ফুলবাড়ী থেকে এশিয়া এনার্জির বহিষ্কারের ঘটনাবলি এসব প্রশ্নকে তখন সামনে নিয়ে আসে। সম্প্র্রতি সরকারের পরামর্শক কমিটির উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লাখনি উন্নয়নের সুপারিশ এবং এশিয়া এনার্জির সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী কয়লা তোলার পক্ষে কমিটির সদস্যদের শক্ত অবস্থানের খবর আজ আবারও ওই সব প্রশ্নকে সামনে নিয়ে এসেছে।
৩. ১৯৯৪ সালের যে চুক্তি অনুযায়ী বিএইচপি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে ফুলবাড়ী এলাকায় চুক্তিতে বর্ণিত শর্তসাপেক্ষে কয়লাখনি অনুসন্ধান, উন্নয়ন ও কয়লা উত্তোলনের অধিকার পায়, সে চুক্তিতে যেসব অসঙ্গতি দেখা যায় তা হলো :
১. সে চুক্তির সঙ্গে সংলগ্নি হিসেবে রয়েছে এক্সিবিট 'বি' অর্থাৎ প্রসপেক্টিং লাইসেন্স। কিন্তু এ লাইসেন্সের ষষ্ঠ পাতায় লাইসেন্স মঞ্জুরির দিন ও তারিখের স্থান ফাঁকা রয়েছে।
২. এক্সিবিট 'সি' তথা মাইনিং লিজ অ্যাগ্রিমেন্ট চুক্তির সংলগ্নি হিসেবে রয়েছে। এ অ্যাগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরিত। প্রথম পাতার শুরুতেই চুক্তি স্বাক্ষরের দিনক্ষণের নির্ধারিত স্থান ফাঁকা রয়েছে। পূরণ করা হয়নি। আবার এ অ্যাগ্রিমেন্ট কার্যকর হওয়ার তারিখের নির্ধারিত স্থানও ফাঁকা।
৩. এক্সিবিট 'ডি' ইনভেস্টমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্ট, চুক্তির অপর একটি সংলগ্নি। কিন্তু এ অ্যাগ্রিমেন্ট হওয়ার দিন ও তারিখ অ্যাগ্রিমেন্টের যে স্থানে থাকবে, সে স্থান ফাঁকা রয়েছে।
৪. তা ছাড়া চুক্তির 'বি' অনুচ্ছেদের 'এফ' ও 'আই' উপানুচ্ছেদে মাইনিং লিজ ও প্রসপেক্টিং লাইসেন্স বরাদ্দের তারিখের স্থানগুলো পূরণ হয়নি, ফাঁকা রয়েছে।
৫. প্রজাতন্ত্রের পক্ষে সরকারের যথাযথ নির্দেশে এবং দাপ্তরিক আনুষ্ঠানিকতায় যদি এ চুক্তি সম্পাদিত হতো তাহলে এ ধরনের অসঙ্গতি দেখা যেত না। যেহেতু এক্সিবিটস 'বি', 'ডি' চুক্তির অবিচ্ছেদ্য অংশবিশেষ, সেহেতু মাইনিং লিজ অ্যাগ্রিমেন্ট, প্রসপেক্টিং লাইসেন্স এবং ইনভেস্টমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্টে উলি্লখিত অসংগতি বিএইচপির সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির অস্বচ্ছতার প্রমাণ। ফলে এ চুক্তি বৈধতা হারায়।
৬. ইনভেস্টমেন্ট অ্যাগিমেন্টের ৫ নম্বর অনুচ্ছেদের 'এ' উপানুচ্ছেদ মতে, কয়লা তোলার রয়্যালটি ৬ শতাংশ। খনি ও খনিজসম্পদ আইন ১৯৮৭-এর ৪ ধারা সরকার খনি ও খনিজসম্পদ বিধি ১৯৬৮-এর তৃতীয় তফসিল সংশোধন করে কয়লা উৎপাদনের ক্ষেত্রে রয়্যালটির পরিমাণ ১৯৮৭ সালের ২০ আগস্ট ২০ শতাংশ পুনর্নির্ধারণ করে। অর্থাৎ ওই তারিখ থেকে রয়্যালটি ২০ শতাংশ কার্যকর হয়। এ বিধান অনুযায়ী সরকার পেট্রোবাংলাকে ১৯৯৪ সালের ১০ জুলাই উন্নয়নের লক্ষ্যে দিনাজপুরে ৬৯ মৌজায় অবস্থিত কয়লাখনি ২০ শতাংশ রয়্যালটিতে ইজারা দেয়।
৭. বিএইচপি লিজ পায় ১৯৯৪ সালের ২০ আগস্ট। এ তারিখে রয়্যালিটি বলবৎ ছিল ২০ শতাংশ। অথচ বিএইচপিকে ৬ শতাংশ রয়্যালটিতে কয়লাখনি লিজ দেওয়া হয়। ফলে বিএইচপির সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি খনি ও খনিজসম্পদ আইন লঙ্ঘন এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী। অতএব চুক্তিটি আইনের দৃষ্টিতে অকার্যকর ও বাতিলযোগ্য না বলার সুযোগ নেই।
৮. ডিসেম্বর ১৯৯৪ বিধি সংশোধন করে রয়্যালটি নামিয়ে আনা হয় ৬ শতাংশে। ১৫ জানুয়ারি ১৯৯৫ এক সরকারি পত্রে বিএইচপিকে জানানো হয়, খনি ও খনিজসম্পদ বিধি ১৯৬৮-এর সংশ্লিষ্ট সব বিধি-বিধান এবং পরবর্তী সময়ে পরিবর্তিত বিধি-বিধান মেনে চলতে হবে। এতে স্পষ্ট বোঝা যায়, ২০ শতাংশ থেকে রয়্যালটি ৬ শতাংশে নামিয়ে এনে বিএইচপির সঙ্গে ৬ শতাংশ রয়্যালটিতে করা চুক্তিকে বৈধতা দেওয়ার ভিত্তি তৈরি করা হয়। আমার মতে, এ প্রচেষ্টাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী- আইন গণ্য না করে পারে না।
৯. এক্সিবিট 'সি' মাইনিং লিজ অ্যাগ্রিমেন্ট। এ অ্যাগ্রিমেন্টের অষ্টম ভাগের ৩৮ নম্বর অনুচ্ছেদ মতে, লিজিকে যে অধিকার দেওয়া হয়েছে, লিজি তা কোনো ব্যক্তি বা কম্পানিকে সরকারের সম্মতি ছাড়া অর্পণ (assign) করতে পারবে না। খনি ও খনিজসম্পদ বিধি ১৯৬৮-এর ১২ নম্বর বিধি মতে, খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর পরিচালকের লিখিত সম্মতি ছাড়া লিজি লিজ হস্তান্তর বা অর্পণ করতে পারবে না। সরকারের পূর্বানুমতি ছাড়া পরিচালক এ সম্মতি দিতে পারবেন না।
১০. ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮ এশিয়া এনার্জির সঙ্গে সরকারের এসাইনমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরিত হয়। সরকারের পক্ষে স্বাক্ষর করেন খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর পরিচালক এবং এশিয়া এনার্জির পক্ষে assignee হিসেবে স্বাক্ষর করেন তার চেয়ারম্যান। কিন্তু এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে হবে lessee (BHP) এবং assignee (এশিয়া এনার্জি)-এর মধ্যে। খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর পরিচালক চুক্তিতে পক্ষ হবেন না। সরকারের পূর্বানুমতিক্রমে তিনি এ চুক্তিতে সম্মতি দেবেন। অথচ তার পরিবর্তে তিনি নিজেই চুক্তিতে আবদ্ধ হন। ফলে এ চুক্তি খনি ও খনিজসম্পদ বিধি ১৯৬৮-এর ১২ নম্বর বিধি এবং মাইনিং লিজ অ্যাগ্রিমেন্টের ৩৮ নম্বর অনুচ্ছেদের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। তাই এ চুক্তি আইনের দৃষ্টিতে অকার্যকর ও অগ্রহণযোগ্য।
১১. ওই লিজ এলাকায় ফুলবাড়ী কয়লাখনি আবিষ্কার হয়। এ খনির কয়লা উন্মুক্ত পদ্ধতিতে তোলার লক্ষ্যে এশিয়া এনার্জির ফুলবাড়ী খনি উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রস্তাব ১১ সেপ্টেম্বর ২০০৫ পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পায়। ২ অক্টোবর ওই পরিকল্পনা প্রস্তাব সরকারের অনুমোদনের জন্য জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে দাখিল কর হয়। সে প্রস্তাবের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য সরকার ১১ সদস্যের একটি কারিগরি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে। এ কমিটিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাসহ এশিয়া এনার্জির লাভজনক কাজে জড়িত ব্যক্তিদের সদস্য হিসেবে রাখা হয়। তাই প্রশ্ন ওঠে, এসব সদস্যের নিরপেক্ষতা নিয়ে (১৪.০৭.০৬ সাপ্তাহিক ২০০০)। মানুষের সততা এবং নিরপেক্ষতা সীমাবদ্ধ। আমি ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষা নিতে প্রশ্ন করি, খাতা দেখি। আমার মূল্যায়নের ওপর সে পাস-ফেল করে। কিন্তু নির্দিষ্ট পরিধির মধ্যে থাকা আমার কোনো আত্মীয় সে পরীক্ষায় যদি পরীক্ষার্থী হয়, তাহলে সততা ও নিরপেক্ষতার স্বতঃসিদ্ধ সীমাবদ্ধতা প্রশ্ন করা, খাতা দেখা অর্থাৎ সার্বিক মূল্যায়ন কর্মকাণ্ড থেকে আমাকে বিরত রাখে। কিন্তু এ সীমাবদ্ধতা যদি এ কারিগরি কমিটির সদস্যদের বিরত না রাখে, তাহলে আইন তাঁদের বিরত না রেখে পারে না বলেই আমার ধারণা। পরামর্শক কমিটির সব সদস্যই কি এশিয়া এনার্জির ব্যাপারে নিরপেক্ষ? এখানেই বিপত্তি। এশিয়া এনার্জি পরিচালিত সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী বিদেশি কম্পানি দিয়ে কয়লা তোলার পক্ষে কমিটির সদস্যদের শক্ত অবস্থানের কারণ কী? এশিয়া এনার্জির প্রতি তাঁদের কেন এত অনুরাগ? এ অনুরাগে নিরপেক্ষতার সীমাবদ্ধতা বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এবং পরামর্শক কমিটিকে বিতর্কিত করেছে।
১২. পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বিতর্কিত। প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ (EIA) এবং সামাজিক প্রভাব নিরূপণ (SIA)- এ দুটি কাজই এশিয়া এনার্জি করেছে। এর ওপর ভিত্তি করে পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র দিয়েছে। এখানেই বিতর্কের সূত্রপাত। এ কাজের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ। পরিকল্পনা প্রস্তাবে বলা হয়েছে, উন্মুক্ত কয়লাখনিতে ফুলবাড়ীর স্থানীয় জনগণের সমর্থন রয়েছে। এ তথ্য সত্য নয়। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় জনসাধারণ উন্মুক্ত কয়লাখনির ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২৬ আগস্ট ২০০৬ ফুলবাড়ীতে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ঘটে। এর পরও এশিয়া এনার্জি প্রধান মি. লাই বলছেন, 'ফুলবাড়ী ও সংলগ্ন উপজেলাগুলোতে কম্পানির প্রতি সমর্থন আছে এবং কয়লাখনি একটি উন্মুক্ত ও স্ব্বচ্ছ প্রকল্প, যা স্থানীয় ও বাংলাদেশের জনগণের জন্য সুদূরপ্রসারী কল্যাণ বয়ে আনবে।' (২৮.৮.০৬ যায়যায়দিন)। এটাই হচ্ছে এশিয়া এনার্জির সামাজিক প্রভাব নিরূপণের (SIA) নমুনা। এ নিরূপণের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার অবকাশ রয়েছে বলে আমি মনে করি।
১৩. ২৩ মে, ২০০৬ আইইউসিএন আয়োজিত 'এশিয়া এনার্জির ফুলবাড়ী কয়লা প্রকল্পে পানি ব্যবস্থাপনা' শীর্ষক ওয়ার্কশপে আমি ছিলাম। প্রস্তাবিত উন্মুক্ত কয়লাখনির পানি ব্যবস্থাপনার একটি গাণিতিক মডেল সে ওয়ার্কশপে উপস্থাপন করা হয়। এ মডেলের সিমুলেটেড কিছু ফল ওয়ার্কশপে দেখানো হয়। সেসব ফল ছিল সময়ের সঙ্গে সম্পর্কহীন। অর্থাৎ সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পানি ব্যবস্থাপনায় কী পরিবর্তন আসতে পারে, মডেলটি তা দেখাতে অক্ষম। ৩০ বছর ধরে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন চলবে। ফলে ভূপৃষ্ঠের ওপরে এবং নিচে পানি প্রবাহে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে যে পরিবর্তন হবে, তা জানা ও বোঝা জরুরি। কিন্তু উপস্থাপিত মডেলটি সে পরিবর্তন দেখাতে অক্ষম। তা ছাড়া কোনো গাণিতিক মডেল বাস্তবসম্মত প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত ব্যবহার উপযোগী হতে পারে না। ফলে এ মডেল গ্রহণযোগ্য বলা চলে না। তা ছাড়া এ মডেলের বাস্তবতা যাচাই হয়নি। ওই ওয়ার্কশপে মডেলের এসব সীমাবদ্ধতা আমার বক্তব্যে তুলে ধরি, অবশ্য এর কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
১৪. আবার যাঁরা মডেল প্রণয়ন করেছেন, তাঁদের এ ধরনের মডেল তৈরি এবং ব্যবহারের পূর্বঅভিজ্ঞতা নেই বলে জানা যায়। তা সত্য হলে আতঙ্কিত না হয়ে পারা যায় না। মি. লাই উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, 'খনি উন্নয়নকালে কোনো পর্যায়েই কোনো ধরনের পানিস্বল্পতা দেখা দেবে না।' তাঁর জানা ও বোঝার উৎস যদি এই গাণিতিক মডেল হয়, তা হলে আমি নিশ্চিত বলতে পারি, তিনি পাখির মতো শেখানো বুলি আওড়ে গেছেন। বাংলাদেশের মতো পরিবেশে উন্মুক্ত খনি খনন প্রকল্পের পানিব্যবস্থাপনা সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণা নেই। এ অবস্থায় আমার শুধু একটাই প্রশ্ন, পরিবেশ অধিদপ্তর কিসের ভিত্তিতে ছাড়পত্র দিয়েছে? উন্মুক্ত খনি খননে পানি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে তারা অজ্ঞ। ফুলবাড়ী তথা সমগ্র উত্তরাঞ্চলের পানি ব্যবস্থাপনায় উন্মুক্ত খনির প্রভাব কী হতে পারে, তা তাদের না জানা দোষনীয় নয়। কিন্তু ছাড়পত্র দেওয়ার আগে পরিবেশে উন্মুক্ত খনি খননের প্রভাব নিশ্চিত না হয়ে ছাড়পত্র দেওয়া দোষনীয়।
১৫. খনি ও খনিজসম্পদ (নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন) আইন ১৯৯২-এর ৫ অনুচ্ছেদে এ আইনের আওতায় প্রণীত বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে দায়ী ব্যক্তিদের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। সে অনুযায়ী এশিয়া এনার্জির চুক্তিতে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আইনি সুযোগ আছে। উন্মুক্ত কয়লাখনি ও এশিয়া এনার্জিবিরোধী জনমত যদি পরামর্শক কমিটির বিবেচনায় আসত তাহলে এশিয়া এনার্জির ওই সব সমীক্ষা প্রতিবেদন মতে কয়লা তোলার কথা দেশবাসীকে শুনতে হতো না। জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের প্রতি জনগণের অবিশ্বাস ও অনাস্থা আরো এক ধাপ বৃদ্ধি হতো না। এ বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে যুদ্ধাপরাধীদের মতো জ্বালানি-অপরাধীদেরও ওই আইনের আওতায় বিচারের সম্মুখীন হতে হবে- তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
লেখক : জ্বালানি বিশেষজ্ঞ
৩. ১৯৯৪ সালের যে চুক্তি অনুযায়ী বিএইচপি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে ফুলবাড়ী এলাকায় চুক্তিতে বর্ণিত শর্তসাপেক্ষে কয়লাখনি অনুসন্ধান, উন্নয়ন ও কয়লা উত্তোলনের অধিকার পায়, সে চুক্তিতে যেসব অসঙ্গতি দেখা যায় তা হলো :
১. সে চুক্তির সঙ্গে সংলগ্নি হিসেবে রয়েছে এক্সিবিট 'বি' অর্থাৎ প্রসপেক্টিং লাইসেন্স। কিন্তু এ লাইসেন্সের ষষ্ঠ পাতায় লাইসেন্স মঞ্জুরির দিন ও তারিখের স্থান ফাঁকা রয়েছে।
২. এক্সিবিট 'সি' তথা মাইনিং লিজ অ্যাগ্রিমেন্ট চুক্তির সংলগ্নি হিসেবে রয়েছে। এ অ্যাগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরিত। প্রথম পাতার শুরুতেই চুক্তি স্বাক্ষরের দিনক্ষণের নির্ধারিত স্থান ফাঁকা রয়েছে। পূরণ করা হয়নি। আবার এ অ্যাগ্রিমেন্ট কার্যকর হওয়ার তারিখের নির্ধারিত স্থানও ফাঁকা।
৩. এক্সিবিট 'ডি' ইনভেস্টমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্ট, চুক্তির অপর একটি সংলগ্নি। কিন্তু এ অ্যাগ্রিমেন্ট হওয়ার দিন ও তারিখ অ্যাগ্রিমেন্টের যে স্থানে থাকবে, সে স্থান ফাঁকা রয়েছে।
৪. তা ছাড়া চুক্তির 'বি' অনুচ্ছেদের 'এফ' ও 'আই' উপানুচ্ছেদে মাইনিং লিজ ও প্রসপেক্টিং লাইসেন্স বরাদ্দের তারিখের স্থানগুলো পূরণ হয়নি, ফাঁকা রয়েছে।
৫. প্রজাতন্ত্রের পক্ষে সরকারের যথাযথ নির্দেশে এবং দাপ্তরিক আনুষ্ঠানিকতায় যদি এ চুক্তি সম্পাদিত হতো তাহলে এ ধরনের অসঙ্গতি দেখা যেত না। যেহেতু এক্সিবিটস 'বি', 'ডি' চুক্তির অবিচ্ছেদ্য অংশবিশেষ, সেহেতু মাইনিং লিজ অ্যাগ্রিমেন্ট, প্রসপেক্টিং লাইসেন্স এবং ইনভেস্টমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্টে উলি্লখিত অসংগতি বিএইচপির সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির অস্বচ্ছতার প্রমাণ। ফলে এ চুক্তি বৈধতা হারায়।
৬. ইনভেস্টমেন্ট অ্যাগিমেন্টের ৫ নম্বর অনুচ্ছেদের 'এ' উপানুচ্ছেদ মতে, কয়লা তোলার রয়্যালটি ৬ শতাংশ। খনি ও খনিজসম্পদ আইন ১৯৮৭-এর ৪ ধারা সরকার খনি ও খনিজসম্পদ বিধি ১৯৬৮-এর তৃতীয় তফসিল সংশোধন করে কয়লা উৎপাদনের ক্ষেত্রে রয়্যালটির পরিমাণ ১৯৮৭ সালের ২০ আগস্ট ২০ শতাংশ পুনর্নির্ধারণ করে। অর্থাৎ ওই তারিখ থেকে রয়্যালটি ২০ শতাংশ কার্যকর হয়। এ বিধান অনুযায়ী সরকার পেট্রোবাংলাকে ১৯৯৪ সালের ১০ জুলাই উন্নয়নের লক্ষ্যে দিনাজপুরে ৬৯ মৌজায় অবস্থিত কয়লাখনি ২০ শতাংশ রয়্যালটিতে ইজারা দেয়।
৭. বিএইচপি লিজ পায় ১৯৯৪ সালের ২০ আগস্ট। এ তারিখে রয়্যালিটি বলবৎ ছিল ২০ শতাংশ। অথচ বিএইচপিকে ৬ শতাংশ রয়্যালটিতে কয়লাখনি লিজ দেওয়া হয়। ফলে বিএইচপির সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি খনি ও খনিজসম্পদ আইন লঙ্ঘন এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী। অতএব চুক্তিটি আইনের দৃষ্টিতে অকার্যকর ও বাতিলযোগ্য না বলার সুযোগ নেই।
৮. ডিসেম্বর ১৯৯৪ বিধি সংশোধন করে রয়্যালটি নামিয়ে আনা হয় ৬ শতাংশে। ১৫ জানুয়ারি ১৯৯৫ এক সরকারি পত্রে বিএইচপিকে জানানো হয়, খনি ও খনিজসম্পদ বিধি ১৯৬৮-এর সংশ্লিষ্ট সব বিধি-বিধান এবং পরবর্তী সময়ে পরিবর্তিত বিধি-বিধান মেনে চলতে হবে। এতে স্পষ্ট বোঝা যায়, ২০ শতাংশ থেকে রয়্যালটি ৬ শতাংশে নামিয়ে এনে বিএইচপির সঙ্গে ৬ শতাংশ রয়্যালটিতে করা চুক্তিকে বৈধতা দেওয়ার ভিত্তি তৈরি করা হয়। আমার মতে, এ প্রচেষ্টাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী- আইন গণ্য না করে পারে না।
৯. এক্সিবিট 'সি' মাইনিং লিজ অ্যাগ্রিমেন্ট। এ অ্যাগ্রিমেন্টের অষ্টম ভাগের ৩৮ নম্বর অনুচ্ছেদ মতে, লিজিকে যে অধিকার দেওয়া হয়েছে, লিজি তা কোনো ব্যক্তি বা কম্পানিকে সরকারের সম্মতি ছাড়া অর্পণ (assign) করতে পারবে না। খনি ও খনিজসম্পদ বিধি ১৯৬৮-এর ১২ নম্বর বিধি মতে, খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর পরিচালকের লিখিত সম্মতি ছাড়া লিজি লিজ হস্তান্তর বা অর্পণ করতে পারবে না। সরকারের পূর্বানুমতি ছাড়া পরিচালক এ সম্মতি দিতে পারবেন না।
১০. ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮ এশিয়া এনার্জির সঙ্গে সরকারের এসাইনমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরিত হয়। সরকারের পক্ষে স্বাক্ষর করেন খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর পরিচালক এবং এশিয়া এনার্জির পক্ষে assignee হিসেবে স্বাক্ষর করেন তার চেয়ারম্যান। কিন্তু এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে হবে lessee (BHP) এবং assignee (এশিয়া এনার্জি)-এর মধ্যে। খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর পরিচালক চুক্তিতে পক্ষ হবেন না। সরকারের পূর্বানুমতিক্রমে তিনি এ চুক্তিতে সম্মতি দেবেন। অথচ তার পরিবর্তে তিনি নিজেই চুক্তিতে আবদ্ধ হন। ফলে এ চুক্তি খনি ও খনিজসম্পদ বিধি ১৯৬৮-এর ১২ নম্বর বিধি এবং মাইনিং লিজ অ্যাগ্রিমেন্টের ৩৮ নম্বর অনুচ্ছেদের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। তাই এ চুক্তি আইনের দৃষ্টিতে অকার্যকর ও অগ্রহণযোগ্য।
১১. ওই লিজ এলাকায় ফুলবাড়ী কয়লাখনি আবিষ্কার হয়। এ খনির কয়লা উন্মুক্ত পদ্ধতিতে তোলার লক্ষ্যে এশিয়া এনার্জির ফুলবাড়ী খনি উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রস্তাব ১১ সেপ্টেম্বর ২০০৫ পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পায়। ২ অক্টোবর ওই পরিকল্পনা প্রস্তাব সরকারের অনুমোদনের জন্য জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে দাখিল কর হয়। সে প্রস্তাবের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য সরকার ১১ সদস্যের একটি কারিগরি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে। এ কমিটিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাসহ এশিয়া এনার্জির লাভজনক কাজে জড়িত ব্যক্তিদের সদস্য হিসেবে রাখা হয়। তাই প্রশ্ন ওঠে, এসব সদস্যের নিরপেক্ষতা নিয়ে (১৪.০৭.০৬ সাপ্তাহিক ২০০০)। মানুষের সততা এবং নিরপেক্ষতা সীমাবদ্ধ। আমি ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষা নিতে প্রশ্ন করি, খাতা দেখি। আমার মূল্যায়নের ওপর সে পাস-ফেল করে। কিন্তু নির্দিষ্ট পরিধির মধ্যে থাকা আমার কোনো আত্মীয় সে পরীক্ষায় যদি পরীক্ষার্থী হয়, তাহলে সততা ও নিরপেক্ষতার স্বতঃসিদ্ধ সীমাবদ্ধতা প্রশ্ন করা, খাতা দেখা অর্থাৎ সার্বিক মূল্যায়ন কর্মকাণ্ড থেকে আমাকে বিরত রাখে। কিন্তু এ সীমাবদ্ধতা যদি এ কারিগরি কমিটির সদস্যদের বিরত না রাখে, তাহলে আইন তাঁদের বিরত না রেখে পারে না বলেই আমার ধারণা। পরামর্শক কমিটির সব সদস্যই কি এশিয়া এনার্জির ব্যাপারে নিরপেক্ষ? এখানেই বিপত্তি। এশিয়া এনার্জি পরিচালিত সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী বিদেশি কম্পানি দিয়ে কয়লা তোলার পক্ষে কমিটির সদস্যদের শক্ত অবস্থানের কারণ কী? এশিয়া এনার্জির প্রতি তাঁদের কেন এত অনুরাগ? এ অনুরাগে নিরপেক্ষতার সীমাবদ্ধতা বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এবং পরামর্শক কমিটিকে বিতর্কিত করেছে।
১২. পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বিতর্কিত। প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ (EIA) এবং সামাজিক প্রভাব নিরূপণ (SIA)- এ দুটি কাজই এশিয়া এনার্জি করেছে। এর ওপর ভিত্তি করে পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র দিয়েছে। এখানেই বিতর্কের সূত্রপাত। এ কাজের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ। পরিকল্পনা প্রস্তাবে বলা হয়েছে, উন্মুক্ত কয়লাখনিতে ফুলবাড়ীর স্থানীয় জনগণের সমর্থন রয়েছে। এ তথ্য সত্য নয়। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় জনসাধারণ উন্মুক্ত কয়লাখনির ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২৬ আগস্ট ২০০৬ ফুলবাড়ীতে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ঘটে। এর পরও এশিয়া এনার্জি প্রধান মি. লাই বলছেন, 'ফুলবাড়ী ও সংলগ্ন উপজেলাগুলোতে কম্পানির প্রতি সমর্থন আছে এবং কয়লাখনি একটি উন্মুক্ত ও স্ব্বচ্ছ প্রকল্প, যা স্থানীয় ও বাংলাদেশের জনগণের জন্য সুদূরপ্রসারী কল্যাণ বয়ে আনবে।' (২৮.৮.০৬ যায়যায়দিন)। এটাই হচ্ছে এশিয়া এনার্জির সামাজিক প্রভাব নিরূপণের (SIA) নমুনা। এ নিরূপণের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার অবকাশ রয়েছে বলে আমি মনে করি।
১৩. ২৩ মে, ২০০৬ আইইউসিএন আয়োজিত 'এশিয়া এনার্জির ফুলবাড়ী কয়লা প্রকল্পে পানি ব্যবস্থাপনা' শীর্ষক ওয়ার্কশপে আমি ছিলাম। প্রস্তাবিত উন্মুক্ত কয়লাখনির পানি ব্যবস্থাপনার একটি গাণিতিক মডেল সে ওয়ার্কশপে উপস্থাপন করা হয়। এ মডেলের সিমুলেটেড কিছু ফল ওয়ার্কশপে দেখানো হয়। সেসব ফল ছিল সময়ের সঙ্গে সম্পর্কহীন। অর্থাৎ সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পানি ব্যবস্থাপনায় কী পরিবর্তন আসতে পারে, মডেলটি তা দেখাতে অক্ষম। ৩০ বছর ধরে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন চলবে। ফলে ভূপৃষ্ঠের ওপরে এবং নিচে পানি প্রবাহে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে যে পরিবর্তন হবে, তা জানা ও বোঝা জরুরি। কিন্তু উপস্থাপিত মডেলটি সে পরিবর্তন দেখাতে অক্ষম। তা ছাড়া কোনো গাণিতিক মডেল বাস্তবসম্মত প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত ব্যবহার উপযোগী হতে পারে না। ফলে এ মডেল গ্রহণযোগ্য বলা চলে না। তা ছাড়া এ মডেলের বাস্তবতা যাচাই হয়নি। ওই ওয়ার্কশপে মডেলের এসব সীমাবদ্ধতা আমার বক্তব্যে তুলে ধরি, অবশ্য এর কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
১৪. আবার যাঁরা মডেল প্রণয়ন করেছেন, তাঁদের এ ধরনের মডেল তৈরি এবং ব্যবহারের পূর্বঅভিজ্ঞতা নেই বলে জানা যায়। তা সত্য হলে আতঙ্কিত না হয়ে পারা যায় না। মি. লাই উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, 'খনি উন্নয়নকালে কোনো পর্যায়েই কোনো ধরনের পানিস্বল্পতা দেখা দেবে না।' তাঁর জানা ও বোঝার উৎস যদি এই গাণিতিক মডেল হয়, তা হলে আমি নিশ্চিত বলতে পারি, তিনি পাখির মতো শেখানো বুলি আওড়ে গেছেন। বাংলাদেশের মতো পরিবেশে উন্মুক্ত খনি খনন প্রকল্পের পানিব্যবস্থাপনা সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণা নেই। এ অবস্থায় আমার শুধু একটাই প্রশ্ন, পরিবেশ অধিদপ্তর কিসের ভিত্তিতে ছাড়পত্র দিয়েছে? উন্মুক্ত খনি খননে পানি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে তারা অজ্ঞ। ফুলবাড়ী তথা সমগ্র উত্তরাঞ্চলের পানি ব্যবস্থাপনায় উন্মুক্ত খনির প্রভাব কী হতে পারে, তা তাদের না জানা দোষনীয় নয়। কিন্তু ছাড়পত্র দেওয়ার আগে পরিবেশে উন্মুক্ত খনি খননের প্রভাব নিশ্চিত না হয়ে ছাড়পত্র দেওয়া দোষনীয়।
১৫. খনি ও খনিজসম্পদ (নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন) আইন ১৯৯২-এর ৫ অনুচ্ছেদে এ আইনের আওতায় প্রণীত বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে দায়ী ব্যক্তিদের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। সে অনুযায়ী এশিয়া এনার্জির চুক্তিতে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আইনি সুযোগ আছে। উন্মুক্ত কয়লাখনি ও এশিয়া এনার্জিবিরোধী জনমত যদি পরামর্শক কমিটির বিবেচনায় আসত তাহলে এশিয়া এনার্জির ওই সব সমীক্ষা প্রতিবেদন মতে কয়লা তোলার কথা দেশবাসীকে শুনতে হতো না। জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের প্রতি জনগণের অবিশ্বাস ও অনাস্থা আরো এক ধাপ বৃদ্ধি হতো না। এ বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে যুদ্ধাপরাধীদের মতো জ্বালানি-অপরাধীদেরও ওই আইনের আওতায় বিচারের সম্মুখীন হতে হবে- তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
লেখক : জ্বালানি বিশেষজ্ঞ
No comments