রাজশাহীতে ব্যবসায়ী হত্যা-কেন এ নিষ্ঠুরতা?
রাজশাহী মহানগরীতে হোটেল মালিক ও ঠিকাদার আমিনুল হকের নির্মম হত্যাকাণ্ড যে কাউকেই শঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন না করে পারে না। তিনি নিখোঁজ ছিলেন এবং পরিবারের সদস্যদের দাবি অনুযায়ী মুক্তিপণ নিয়েও অপহরণকারীরা তাকে খুন করে টুকরো টুকরো করে। নতুন বছরের প্রথম দিনে সংবাদপত্রের মাধ্যমে দেশবাসী আটক ঘাতকদের বক্তব্যও জেনেছে।
তাদের দাবি : আমিনুল হকের কাছে তাদের অর্থ পাওনা ছিল। তাকে আটক করে বেঁধে রেখে পরিবারের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা আদায় করা হয়। কিন্তু বেঁধে রাখার কারণে তার মৃত্যু হলে লাশ টুকরো টুকরো করা হয় নদীতে ফেলে দেওয়ার জন্য। কিন্তু এর আগেই পুলিশের হাতে তারা ধরা পড়ে যায়। এ ঘটনাটি হয়তোবা বিচ্ছিন্ন। এমন বর্বরতা প্রতিদিন ঘটে না। কিন্তু কেন এমন নির্মমতা? সংবাদপত্রে খুন-জখমের ঘটনা প্রতিদিনই থাকছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো, এমন দাবি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী প্রায় প্রতিদিনই করে থাকেন। দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতায় কখনও এর সত্য মেলে, কখনও মেলে না। কিন্তু এমন পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড যখন ঘটে তখন সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে যায়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজও তখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়। সন্দেহ নেই, রাজশাহীর এ ব্যবসায়ী অপহৃত হওয়ার ঘটনা জানার পর পুলিশ খুব দ্রুতই ঘাতকদের পাকড়াও করতে সক্ষম হয়। তারা যদি সময়মতো ঘটনা জানত, তাহলে এমন করুণ মৃত্যু হয়তোবা এড়ানোও যেতে পারত। পরিবারের সদস্যরা ২০ লাখ টাকা পরিশোধের পরই কেবল পুলিশকে ঘটনা জানায়। একজন ব্যবসায়ীকে অপহরণ করার পরও পরিবারের দিক থেকে সময়মতো কেন পুলিশকে অবগত করা হলো না, সেটা নিশ্চয়ই জরুরি প্রশ্ন এবং এর উত্তর খুঁজে বের করা সম্ভব। কিন্তু অপরাধীদের এমন বেপরোয়া মনোভাব কেন? পাওনা অর্থ সময়মতো পরিশোধ না করায় তাদের ক্ষোভ-রোষ হতেই পারে। কিন্তু তাই বলে এমন নিষ্ঠুরতা? আইনের হাত যে কত লম্বা হতে পারে সে বিষয়ে তাদের কোনো ধারণা নেই, এমনটি হতেই পারে। কিংবা এটাও হতে পারে যে, তাদের মনে হয়েছে, গুরুতর অপরাধ করেও আইনের হাত থেকে নিষ্কৃতি লাভ সম্ভব। আর এখানেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা। শান্তিকামী মানুষ যেমন তাদের ওপর নিরাপত্তার বিষয়ে ভরসা-আস্থা রাখতে পারে না, তেমনি অপরাধীরাও মনে করে যে তাদের কেউ কিছু করতে পারবে না। এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটলেই সমাজের শান্তি ও স্বস্তি।
No comments