ফ্রান্সের প্রতি তুরস্কের হুমকি

ফ্রান্সের পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ সিনেটে আর্মেনিয়া গণহত্যা বিল পাস হওয়ায় দেশটির বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়েছে তুরস্ক। সোমবার ফ্রান্সের সিনেটে ১২৭ ভোটের মধ্যে ৮৬ ভোটে পাস হয় বিলটি। এর আগে গত মাসে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে খসড়া আকারে পাস হয় ওই বিল।

এখন ফরাসি প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি বিলটিতে সই করলেই তা আইনে পরিণত হবে। মঙ্গলবার তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান এ বিলকে সাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যমূলক বলে অভিহিত করেন। এরদোগান বলেন, “সিনেটে পাস হওয়া বিলটি প্রেসিডেন্ট সারকোজির অনুমোদনের মাধ্যমে আইনে পরিণত হলে দেশটির ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।”

তিনি আরো বলেন, “ফ্রান্স বিলটি সংশোধন করবে এ ব্যাপারে আমরা এখনো আশা ছাড়িনি।”
এদিকে, তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এক লিখিত বিবৃতিতে বলেছে, “আমরা ফ্রান্সের এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।”

ফ্রান্সে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত তাহসিন বার্কোগলু বলেছেন, “ফ্রান্সের এমন স্পর্শকাতর বিল পাসের ফলে আঙ্কারা-প্যারিসের কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

তিনি আরো বলেন, “তুরস্ক এ বিল কখনো মেনে নেবে না। এ বিলের কারণে তুরস্ক, ফ্রান্স ও আর্মেনীয়দের চড়া মূল্য দিতে হবে।”

এর ফলে কূটনৈতিক সম্পর্ক দূত নয় বরং চার্জ দি অ্যাফেয়ারর্স পর্যায়ে নেমে আসবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

এদিকে, ফরাসি পার্লামেন্টে আর্মেনীয় হত্যাকাণ্ডকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় দেশটির প্রশংসা করেছে আর্মেনিয়া সরকার। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এডওয়ার্ড নালবানদিয়ান বলেন, “এ দিনটি ফরাসি ও আর্মেনিয়ার জনগণের জন্য বন্ধুত্বের দিন হিসেবে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।”

উল্লেখ্য, ২০০১ সালেই ফ্রান্স আর্মেনিয়া হত্যাকাণ্ডকে গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করে। কিন্তু গত বছরের শেষ দিকে ফরাসি পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে খসড়া আইন পাস হয় যে, ওই হত্যাকাণ্ডকে গণহত্যা বলে অস্বীকার করলে তার বিরুদ্ধে এক বছরের জেল ও আর্থিক জরিমানার ব্যবস্থা করা যাবে।

এ ঘটনার পর দুই দেশের মধ্যে টানাপড়েন শুরু হয়। প্যারিস থেকে দূত সরিয়ে নেয়াসহ রাজনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক হ্রাস করে আঙ্কারা। এছাড়া ফ্রান্সের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বন্ধের হুমকি দেয় তুরস্ক। তুরস্কের এমন হুমকি সত্ত্বেও সোমবার ফরাসি পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ সিনেটে ওই বিল পাস হলো।

সোমবার বিল পাসের আগে তুরস্ক জানায়, ফরাসি সিনেট ওই বিলটি পাস করলে প্যারিসের ওপর স্থায়ী নিষেজ্ঞা আরোপ করবে আঙ্কারা।

শনিবার তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ দ্যাভুতোগলু ওই বিলের বিরোধিতা করে বলেন, “ফ্রান্সের এ উদ্যোগ ইউরোপের রীতিনীতিবিরোধী।” এটি তুরস্ক ও আর্মেনিয়ার সহযোগিতামূলক সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এছাড়া শনিবার ফ্রান্স, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস এবং লুক্সেমবার্গে বসবাসকারী তুর্কিদের মধ্যে থেকে অন্তত ১৫ হাজার তুর্কি প্যারিসের রাস্তার ওই বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন।

অন্যদিকে, শুক্রবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি উত্তেজনা প্রশমনে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের কাছে চিঠি দেন। শুরু থেকেই এরদোগান অভিযোগ করে আসছেন যে, নির্বাচনে জয়লাভ করতেই সারকোজি এ উদ্যোগ নিয়েছেন।

আল জাজিরা জানায়, বুধবার ফরাসি সিনেট কমিটি ওই বিলটি প্রত্যাখ্যান করে। কিন্তু সোমবার সিনেটের ভোটাভোটিতে বিলটি পাস হওয়া থেকে বিরত রাখা যায়নি। বিলটির ব্যাপারে সরকারের ভেতরে আকুণ্ঠ সমর্থন না থাকলেও তা সিনেটে পাস হয়।

বিলটি আইনে পরিণত হলে তা উভয় দেশের কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে সারকোজি সরকারের কিছু মন্ত্রী আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

এছাড়া সারকোজি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যালেন জুপে এ বিলকে সময়োচিত নয় বলে অভিহিত করেছেন।

আর্মেনিয়ানদের অভিযোগ, ১৯১৫-১৯১৬ সালে তৎকালীন অটোমান সাম্রাজ্য থেকে আর্মেনীয়দের সিরিয়ান মরুভূমি ও অন্যান্য এলাকায় নির্বাসনে পাঠানো হয়। এতে ১৫ লাখের মতো আর্মেনীয় নিহত হন। তাদেরকে হত্যা করা হয় কিংবা অনাহারে ও রোগবালাইয়ে তারা মারা যান।

কিন্তু তুরস্কের বক্তব্য হলো, সেসময় তিন লাখের মতো নিহত হতে পারে। তুরস্ক অবশ্য নৃশংসতার ঘটনার কথা স্বীকার করেছে। তবে পরিকল্পিতভাবে কাউকে হত্যা করা হয়নি এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ওই সময়ে উভয়পক্ষেরই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করেছে দেশটি।

No comments

Powered by Blogger.