৩-২ নিয়ে ফেরা যাবে তো
খেলাধুলায় জয় হলো সর্বরোগহর সেই ওষুধ, যা রাতারাতি একটা দলের চেহারা পাল্টে দেয়। আর সেই জয় যদি আসে পাঁচ মাসে টানা নয় পরাজয়ের পর, তাহলে তো কথাই নেই। জিম্বাবুয়ে সফরে প্রথম জয়টা এমনই এক কারামুক্তির আনন্দ হয়ে এসেছে বাংলাদেশ দলে।
সেই বিশ্বকাপে হল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের পর হারতে হারতে অবস্থাটা এমনই হয়েছিল যে ‘কারামুক্তি’ দিয়েও ঠিক বোঝানো যাচ্ছে না স্বস্তিটা। বরং বলুন, রাষ্ট্রপতির বিশেষ অনুকম্পায় ফাঁসির আসামির মুক্তি পাওয়ার মতো আনন্দ।
আজ ওয়ানডে সিরিজের পঞ্চম ও শেষ ম্যাচ কী নিয়ে অপেক্ষা করছে, সেটি শুধু ক্রিকেট-বিধাতাই জানেন। তবে একটা জয়ের টনিকেই দুই দিন আগেও ৫-০ বিভীষিকা দেখা সাকিব আল হাসান এখন ম্যাচ শুরুর আগেই ৩-২ দেখছেন।
বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে টেস্টের সময় ক্রিকইনফোতে এক পাঠক মন্তব্য করেছিলেন, তথাকথিত এক ‘মার্কি’ সিরিজের চেয়ে অনেক বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাময় ক্রিকেট হচ্ছে এখানে। ইংল্যান্ড-ভারত সেই ‘মার্কি’ সিরিজ একপেশে হতে হতে এখন দর্শকদের বিরক্তির কারণ। বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়েও তেমনই হয়ে যাচ্ছিল প্রায়। ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচটা প্রথম অন্য সুরে গান গাইল। চতুর্থ ম্যাচে তো বিপুল বিক্রমেই ফিরে এল বাংলাদেশ। মনে মনে কী বলছেন, তা অনুমান করাই যায়। হ্যাঁ, বাংলাদেশ ফিরেছে বটে, তবে সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়ার পর!
যা হয়ে গেছে, সেটি তো আর বদলানো যাবে না। এই সফর থেকে বড়জোর ওয়ানডে সিরিজে ৩-২-এর সান্ত্বনাই পেতে পারে বাংলাদেশ। সেটি পেলেই সবাই খুব খুশিতে আটখানা হয়ে যাবেন, তা নয়। তবে অখুশির মাত্রাটায় হেরফের তো হবেই। ৫-০-এর চেয়ে তো বটেই; ৪-১-এর চেয়েও ৩-২ অনেক ভালো দেখায়!
চতুর্থ ম্যাচে বাংলাদেশ যখন নিশ্চিত জয়ের পথে, প্রেসবক্সে বাংলাদেশের সাংবাদিকের রসিকতায় জিম্বাবুইয়ানরাও খুব মজা পেলেন। একটা নির্দোষ প্রস্তাব—সফরে আসলে দুটি আলাদা ওয়ানডে সিরিজ হচ্ছে। হারারেতে তিন ম্যাচের সিরিজে জিম্বাবুয়ে ৩-০ জিতেছে। বুলাওয়েতে দুই ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ১-০-তে এগিয়ে। শেষ ম্যাচটাও জিতলে ওয়ানডে সিরিজ আসলে ১-১ ড্র!
ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ ৩-০ হয়ে যাওয়ার পর ইংলিশ অফ স্পিনার গ্রায়েম সোয়ান একটা দলের জয় আর পরাজয়ের মধ্যে থাকা পার্থক্যটা খুব সুন্দর তুলে ধরেছিলেন। টানা জয়ের মধ্যে থাকা একটা দল মহা বিপদে পড়েও ভাবে, আরে কোনো ব্যাপার নাকি, এই ম্যাচ আমরাই জিতব। আর টানা পরাজয়ে থাকা দলের খেলোয়াড়দের সামান্যতম সমস্যায় পড়লেই মনে হয়, হায় রে, এই ম্যাচটাও হারছি!
এই সিরিজেও তা-ই হয়ে আসছিল। ওয়ানডে সিরিজের চতুর্থ ম্যাচ গল্পটা বদলে দিয়েছে। তবে পঞ্চম ম্যাচটাতেও গল্পের ধারাবাহিকতা থাকবে কি না, সেটি খুব জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। জয়ের আবরণ ভেদ করেও যে বাংলাদেশের এই দলের দগদগে ক্ষতগুলো প্রবলভাবে দৃশ্যমান। তামিম তামিমের রূপে দেখা দিয়েছেন। কিন্তু টপ-অর্ডারে আর কারও ব্যাটে ভরসা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ইমরুল কায়েস টানা ব্যর্থতার পরও দলে আছেন তামিমের সঙ্গে তাঁর উদ্বোধনী জুটির অতীত সাফল্যের নস্টালজিয়ার কারণে।
জুনায়েদ সিদ্দিককে প্রস্তুতি ম্যাচেই ছন্নছাড়া লেগেছিল। তার পরও দুটি ম্যাচ খেলে ফেললেন অন্যদের ব্যর্থতায়। নিজে আরও ব্যর্থ। মোহাম্মদ আশরাফুল ও শাহরিয়ার নাফীসের ওপর কোপটা একটু তাড়াতাড়িই পড়েছিল কি না, এই প্রশ্নও তাই উঠে গেছে। কিন্তু জুনায়েদকে বাদ দিলে তো ওই দুজনের কাউকেই ফেরাতে হবে। ব্যর্থ বলে অভিহিত কারও ফেরা হবে আরেকজন ‘আরও ব্যর্থ’ বলে। এই সফরে বাংলাদেশের একাদশ নিয়ে ‘রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা জড়িত’ এমন বিষয়ের মতো গোপনীয়তা। তবে আভাসে ইঙ্গিতে যা বোঝা গেল, এই তিতে বড়িটা হয়তো গিলতে যাচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্ট।
বোলিংয়ের অবস্থাও সুবিধার নয়। দুই পেসার রুবেল ও শফিউল ভালো করছেন। তবে মূল দুই স্পিনার সাকিব ও রাজ্জাককে স্বচ্ছন্দে খেলে দিচ্ছে জিম্বাবুইয়ানরা। বুলাওয়ের উইকেট একটু মুখ তুলে তাকিয়েছে বলে স্পিনাররা চতুর্থ ম্যাচে তা-ও একটু মন্দের ভালো। তবে ম্যাচ তো জেতালেন রুবেল হোসেনই।
ওয়ানডে সিরিজের চার ম্যাচে ১০ উইকেট। আজও তাই বাংলাদেশের তুরুপের তাস এই পেসারই। তবে ব্যাটসম্যানরা বড় রান না করলে তাঁর জন্যও কাজটা অসাধ্য হয়ে যাবে। প্রতি ম্যাচেই তো আর জিম্বাবুয়ে ১৬ রানে শেষ ৬ উইকেট হারাবে না। গত পরশুর ম্যাচটা আসলে ব্যতিক্রম। নইলে বুলাওয়েতে কোনো দল ২৬০-৭০ করার পরও অধিনায়ককে ভাবতে হয়, বোলিংটা যদি ভালো হয় তাহলে জিতব।
সফরের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ দলের আরেকটা সমস্যাও থাকে। মনে মনে সবাই দেশে ফেরার বিমানে উঠে যায়। এবার তো সেই বিমানে ওঠার আগেও অনেক ঝক্কি। এয়ার জিম্বাবুয়ের পাইলটদের ধর্মঘটের কারণে বুলাওয়ে থেকে জোহানেসবার্গে যাওয়া হচ্ছে না। বাসে হারারে গিয়ে সেখান থেকে উঠতে হবে বিমানে। শেষ পর্যন্ত পুরো দল যে একসঙ্গে যেতে পারছে, সেটিই বড় স্বস্তি।
সেই স্বস্তিতে আচ্ছন্ন সাকিবরা দেশে ফেরার তাড়ায় ৩-২-এর মাহাত্ম্যটা ভুলে না গেলেই হয়!
সেই বিশ্বকাপে হল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের পর হারতে হারতে অবস্থাটা এমনই হয়েছিল যে ‘কারামুক্তি’ দিয়েও ঠিক বোঝানো যাচ্ছে না স্বস্তিটা। বরং বলুন, রাষ্ট্রপতির বিশেষ অনুকম্পায় ফাঁসির আসামির মুক্তি পাওয়ার মতো আনন্দ।
আজ ওয়ানডে সিরিজের পঞ্চম ও শেষ ম্যাচ কী নিয়ে অপেক্ষা করছে, সেটি শুধু ক্রিকেট-বিধাতাই জানেন। তবে একটা জয়ের টনিকেই দুই দিন আগেও ৫-০ বিভীষিকা দেখা সাকিব আল হাসান এখন ম্যাচ শুরুর আগেই ৩-২ দেখছেন।
বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে টেস্টের সময় ক্রিকইনফোতে এক পাঠক মন্তব্য করেছিলেন, তথাকথিত এক ‘মার্কি’ সিরিজের চেয়ে অনেক বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাময় ক্রিকেট হচ্ছে এখানে। ইংল্যান্ড-ভারত সেই ‘মার্কি’ সিরিজ একপেশে হতে হতে এখন দর্শকদের বিরক্তির কারণ। বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়েও তেমনই হয়ে যাচ্ছিল প্রায়। ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচটা প্রথম অন্য সুরে গান গাইল। চতুর্থ ম্যাচে তো বিপুল বিক্রমেই ফিরে এল বাংলাদেশ। মনে মনে কী বলছেন, তা অনুমান করাই যায়। হ্যাঁ, বাংলাদেশ ফিরেছে বটে, তবে সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়ার পর!
যা হয়ে গেছে, সেটি তো আর বদলানো যাবে না। এই সফর থেকে বড়জোর ওয়ানডে সিরিজে ৩-২-এর সান্ত্বনাই পেতে পারে বাংলাদেশ। সেটি পেলেই সবাই খুব খুশিতে আটখানা হয়ে যাবেন, তা নয়। তবে অখুশির মাত্রাটায় হেরফের তো হবেই। ৫-০-এর চেয়ে তো বটেই; ৪-১-এর চেয়েও ৩-২ অনেক ভালো দেখায়!
চতুর্থ ম্যাচে বাংলাদেশ যখন নিশ্চিত জয়ের পথে, প্রেসবক্সে বাংলাদেশের সাংবাদিকের রসিকতায় জিম্বাবুইয়ানরাও খুব মজা পেলেন। একটা নির্দোষ প্রস্তাব—সফরে আসলে দুটি আলাদা ওয়ানডে সিরিজ হচ্ছে। হারারেতে তিন ম্যাচের সিরিজে জিম্বাবুয়ে ৩-০ জিতেছে। বুলাওয়েতে দুই ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ১-০-তে এগিয়ে। শেষ ম্যাচটাও জিতলে ওয়ানডে সিরিজ আসলে ১-১ ড্র!
ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ ৩-০ হয়ে যাওয়ার পর ইংলিশ অফ স্পিনার গ্রায়েম সোয়ান একটা দলের জয় আর পরাজয়ের মধ্যে থাকা পার্থক্যটা খুব সুন্দর তুলে ধরেছিলেন। টানা জয়ের মধ্যে থাকা একটা দল মহা বিপদে পড়েও ভাবে, আরে কোনো ব্যাপার নাকি, এই ম্যাচ আমরাই জিতব। আর টানা পরাজয়ে থাকা দলের খেলোয়াড়দের সামান্যতম সমস্যায় পড়লেই মনে হয়, হায় রে, এই ম্যাচটাও হারছি!
এই সিরিজেও তা-ই হয়ে আসছিল। ওয়ানডে সিরিজের চতুর্থ ম্যাচ গল্পটা বদলে দিয়েছে। তবে পঞ্চম ম্যাচটাতেও গল্পের ধারাবাহিকতা থাকবে কি না, সেটি খুব জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। জয়ের আবরণ ভেদ করেও যে বাংলাদেশের এই দলের দগদগে ক্ষতগুলো প্রবলভাবে দৃশ্যমান। তামিম তামিমের রূপে দেখা দিয়েছেন। কিন্তু টপ-অর্ডারে আর কারও ব্যাটে ভরসা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ইমরুল কায়েস টানা ব্যর্থতার পরও দলে আছেন তামিমের সঙ্গে তাঁর উদ্বোধনী জুটির অতীত সাফল্যের নস্টালজিয়ার কারণে।
জুনায়েদ সিদ্দিককে প্রস্তুতি ম্যাচেই ছন্নছাড়া লেগেছিল। তার পরও দুটি ম্যাচ খেলে ফেললেন অন্যদের ব্যর্থতায়। নিজে আরও ব্যর্থ। মোহাম্মদ আশরাফুল ও শাহরিয়ার নাফীসের ওপর কোপটা একটু তাড়াতাড়িই পড়েছিল কি না, এই প্রশ্নও তাই উঠে গেছে। কিন্তু জুনায়েদকে বাদ দিলে তো ওই দুজনের কাউকেই ফেরাতে হবে। ব্যর্থ বলে অভিহিত কারও ফেরা হবে আরেকজন ‘আরও ব্যর্থ’ বলে। এই সফরে বাংলাদেশের একাদশ নিয়ে ‘রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা জড়িত’ এমন বিষয়ের মতো গোপনীয়তা। তবে আভাসে ইঙ্গিতে যা বোঝা গেল, এই তিতে বড়িটা হয়তো গিলতে যাচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্ট।
বোলিংয়ের অবস্থাও সুবিধার নয়। দুই পেসার রুবেল ও শফিউল ভালো করছেন। তবে মূল দুই স্পিনার সাকিব ও রাজ্জাককে স্বচ্ছন্দে খেলে দিচ্ছে জিম্বাবুইয়ানরা। বুলাওয়ের উইকেট একটু মুখ তুলে তাকিয়েছে বলে স্পিনাররা চতুর্থ ম্যাচে তা-ও একটু মন্দের ভালো। তবে ম্যাচ তো জেতালেন রুবেল হোসেনই।
ওয়ানডে সিরিজের চার ম্যাচে ১০ উইকেট। আজও তাই বাংলাদেশের তুরুপের তাস এই পেসারই। তবে ব্যাটসম্যানরা বড় রান না করলে তাঁর জন্যও কাজটা অসাধ্য হয়ে যাবে। প্রতি ম্যাচেই তো আর জিম্বাবুয়ে ১৬ রানে শেষ ৬ উইকেট হারাবে না। গত পরশুর ম্যাচটা আসলে ব্যতিক্রম। নইলে বুলাওয়েতে কোনো দল ২৬০-৭০ করার পরও অধিনায়ককে ভাবতে হয়, বোলিংটা যদি ভালো হয় তাহলে জিতব।
সফরের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ দলের আরেকটা সমস্যাও থাকে। মনে মনে সবাই দেশে ফেরার বিমানে উঠে যায়। এবার তো সেই বিমানে ওঠার আগেও অনেক ঝক্কি। এয়ার জিম্বাবুয়ের পাইলটদের ধর্মঘটের কারণে বুলাওয়ে থেকে জোহানেসবার্গে যাওয়া হচ্ছে না। বাসে হারারে গিয়ে সেখান থেকে উঠতে হবে বিমানে। শেষ পর্যন্ত পুরো দল যে একসঙ্গে যেতে পারছে, সেটিই বড় স্বস্তি।
সেই স্বস্তিতে আচ্ছন্ন সাকিবরা দেশে ফেরার তাড়ায় ৩-২-এর মাহাত্ম্যটা ভুলে না গেলেই হয়!
No comments