আলোচনা- জার্নি বাই ট্রেন by মো. আবুল কালাম

বাংলাদেশ রেলওয়ে দেশের যাত্রী পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা একটি অন্যতম প্রধান মাধ্যম। ১৬ কোটি মানুষের এদেশের রেলওয়ে যাত্রী সংখ্যা অগণিত। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে দীর্ঘদিন ধরে এ সরকারি সেক্টরটি বিভিন্ন অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, প্রশাসনিক অদক্ষতার কারণে যাত্রী সেবায় বরাবরই ব্যর্থ হচ্ছে। আর এর কারণ হিসাবে নানা সীমাবদ্ধতার অযুহাত দেখিয়ে প্রতিবছর বিপুল টাকার লোকসান করেও পার পেয়ে যাচ্ছে।
টিকের স্বল্পতা, কালোবাজারে টিকেট বিক্রি, যাত্রী হয়রানি, বিলম্বে ট্রেন ছাড়া এসব অভিযোগ যাত্রীদের নিত্যদিনের যা পেপার-পত্রিকায়ও প্রায়ই ছাপানো হয়। কিন্তু কতর্ৃপক্ষের এতে কিছু যায় আসে না। এসব কিছু প্রমাণ করে যে সরকারি অতীব গুরত্বপূর্ণ এ সেক্টরটি দারুণভাবে অবহেলিত।
আজকের বাংলাদেশ রেলওয়ের সূচনা তৎকালীন বৃটিশ আমলেই। অবিভক্ত ভারতে ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর দর্শনা থেকে জগিতি পর্যন্ত প্রায় ৫৩ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন প্রথম উন্মুক্ত করা হয়। ১৮৮৫ সালে ১৫ কিলোমিটার মিটার গেজ লাইন যোগ করা হয়। এর দশ বছর পর অর্থাৎ ১৮৯৫ সালে ১ জুলাই চট্টগ্রাম থেকে কুমিলস্না পর্যন্ত প্রায় ১৫০ কিলোমিটার এবং লাকসাম থেকে চাঁদপুর প্রায় ৫১ কিলোমিটার মিটার গেজ রেলপথ চালু করা হয়। পাক ভারত বিভক্তির সময় ১৯৪৭ সালে রেলপথ ভাগ হয়ে গেলে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের অধীনে ২৬০৪ কিলোমিটার রেল পথ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সীমানা। মধ্যে এসে পড়ে। তখন এর নাম ছিল ইয়েস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে। ১৯৬১ সালে এর পুন: নামকরণ করা হয় পাকিস্তান ইয়েস্টার্ন রেলওয়ে ১৯৬২ সালে এর নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রীয় সরকার হতে প্রাদেশিক সরকারের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। ফলে আজকের বাংলাদেশ রেলওয়ে ১৫০ থেকে ১১৫ বছরের পুরাতন। পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ২০০৫ সালে বাংলাদেশের মোট রেলপথের দৈর্ঘ্য ২৮৫৫ কিলোমিটার। পূর্বে উলেস্নখ করা হয়েছে ১৯৪৭ সালে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের ভাগে পড়ে ২৬০৪ কিলোমিটার। অর্থাৎ সুদীর্ঘ ৫৮ বছরে রেলপথ বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্র ২৫১ কিলোমিটার বা ৯.৬৩%। উক্ত ২৮৫৫ কিলোমিটারের মধ্যে ১৮৩০ কিলোমিটার মিটার গেজ, ৬৬০ কিলোমিটার ব্রডগেজ এবং ৩৮৫ কিলোমিটার ডাবল লাইন।
বাংলাদেশের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। যাতায়াতের আরো উন্নত ব্যবস্থা করা হলে বিশেষ করে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন সার্ভিসের ব্যবস্থা করা হলে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত হবে বাংলাদেশের পর্যটনের প্রাণকেন্দ্র এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব প্রায় ১৫০ কিলোমিটার। তন্মধ্যে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথ বৃটিশ আমলেই তৈরী করা হয়েছে। সংস্কার না করায় উক্ত রেলপথ বর্তমানে জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত পূর্বের ন্যায় ট্রেন চলাচল করে না। দোহাজারী পর্যন্ত রেলপথ সংস্কার করা হলে এবং কক্সবাজার পর্যন্ত অবশিষ্ট পথ সম্প্রসারণ করা গেলে পর্যটন বিকাশের ক্ষেত্রে এটা হবে একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এতে দেশী-বিদেশী পর্যটকের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। সাথে সাথে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত কল্যাণ সাধিত হবে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বর্তমানে যেসব প্রকল্প হাতে নিয়েছেন তাতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ সম্প্রসারণের কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত আছে কি না আমাদের জানা নেই। যদি নাও থাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উক্ত প্রকল্প গ্রহণ করা অতীব প্রয়োজন। বাংলাদেশ রেলওয়ের বর্তমান অচলাবস্থা দূর করে যাত্রী সেবার মান উন্নত, সন্তোষজনক ও যুগোপযোগী করার জন্য এর সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণের বিকল্প নেই। বৃটিশ আমলে অর্থাৎ ১৫০ বছর পূর্বে যখন প্রথম এ রেলপথ স্থাপন করা হয় তখন এদেশের লোকসংখ্যা ছিল সম্ভবতঃ ২/১ কোটি মাত্র। আর এখন ১৬ কোটি মানুষের জন্য সেই প্রাচীন রেলপথ কতটুকুইবা উপযোগী হতে পারে। তাও আবার প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ যেখানে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে। তাই বাংলাদেশ রেলওয়েকে ঢেলে সাজাতে হবে; জরুরী ভিত্তিতে এর সম্প্রসারণ ও আধুনিকিকরণ প্রয়োজন। নিম্নে উদ্ধৃত সুপারিশসমূহ বিবেচনা ও কার্যকর করা যেতে পারে।
১। পর্যাপ্ত পরিমাণ নতুন রেল ইঞ্জিন এবং যাত্রীবাহী গাড়ি (বগি) ক্রয় করা। ২। জরাজীর্ণ রেললাইন জরুরী ভিত্তিতে সংস্কার করে নিরাপদ ট্রেন চলাচল নিশ্চিত করা। ৩। ঢাকা-চট্টগ্রাম ডাবল লাইন প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করা। ৪। চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেললাইন সংস্কারপূর্বক কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণের কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন করা। ৫। রেলওয়ে পরিচালন দক্ষতা বৃদ্ধি করা এবং যেকোন ধরনের অনিয়মের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
৬। রেল সেবা খাতে বেসরকারি অংশগ্রহণ উৎসাহিত করা। ৭। ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি করে সঠিক সময়ে ট্রেন ছাড়া নিশ্চিত করা। ৮। রেলপথ ট্রেন চলাচলের জন্য উপযোগী কিনা তা সময়ে সময়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা।
বাংলাদেশ রেলওয়ের বর্তমান মহাপরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন মোঃ তহিদুল আনোয়ার চৌধুরী। নিউজ লেটার সংখ্যা থেকে জানা যায়, ১৯৭৭ সাল থেকে বাংলাদেশ রেলওয়েতে তার কর্মময় জীবন শুরু। একজন প্রকৌশলী হিসাবে তার দীর্ঘদিনের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতা দিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়েকে আধুনিকীকরণসহ যাত্রী সেবার মান সন্তোষজনক এবং যুগোপযোগী করতে তিনি সচেষ্ট হবেন এটাই প্রত্যাশা আমাদের।
==========================
পারিষদদলে বলেঃ  চরাঞ্চলের ভূমি ব্যবস্থাপনা  সচেতন হলে শিশু প্রতিবন্ধী হয় না  স্মৃতির জানালায় বিজয়ের মাস  বিচারপতিদের সামনে যখন ‘ঘুষ’  কয়লানীতিঃ প্রথম থেকে দশম খসড়ার পূর্বাপর  শ্বাপদসংকুল পথ  মুক্তিযুদ্ধে গ্রাম  ১২ বছর আগে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে  চট্টগ্রাম ইপিজেডে সংঘর্ষে নিহত ৪  ড. ইউনূস : প্রতিটি বাংলাদেশির গৌরব  জলাভূমিবাসীদের দুনিয়ায় আবার..  আসুন, আমরা গর্বিত নাগরিক হই  স্মৃতির শহীদ মির্জা লেন  ইয়াংওয়ান গ্রুপের পোশাক কারখানা বন্ধ  ট্রানজিটে ১১ খাতের লাভ-ক্ষতির হিসাব শুরু  চট্টগ্রামের বনাঞ্চল ছাড়ছে হাতি  ট্রেন  স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে জাতীয় শিক্ষানীতি  মানবাধিকার লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধের বিচার  মানবাধিকার লঙ্ঘন দেশে দেশে  ক্ষমতা যেভাবে মানবাধিকার আর ন্যায়বিচারের পথ রুদ্ধ করে  চাক্কু মারা 'মশা' কাহিনী  উল্কির ভেলকি  এইচআইভি/এইডস্  উইকিলিকসঃ জুলিয়ান চে গুয়েভারা!  তিন কালের সাক্ষী  বাবর আলীর ইশকুল  এ মাটির মায়ায়  মধ্যবিত্তের উত্থান, না ভোক্তাশ্রেণীর উদ্ভব  হিমালয়ের পায়ের কাছেঃ গোধূলির ছায়াপথে  পতিত স্বৈরাচারের আস্ফালন ও আওয়ামী লীগের নীরবতা  ৪০ বছর পড়ে থাকা লাশটার সৎকার করতে চাই  এই কি আমাদের মানবাধিকার?  ঐতিহ্যের মধ্যে সমকাল  কেমন দেখতে চাইঃ ঢাকা আন্তর্জাতিক বইমেলা  দ্রীপ প্রতিভার দ্যুতিময় স্মারক  গল্প- বৃষ্টি


দৈনিক ইত্তেফাক এর সৌজন্যে
লেখকঃ মো. আবুল কালাম
সাবেক জি.এম, কর্ণফুলি পেপার মিলস লি


এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.