এই আমাদের সামিন -চারদিক by তৌহিদা শিরোপা
আরে, এ তো সামিন! আমাদের সামিন! সেই সামিনের কথা বলছি, যার পদচারণে মুখর ছিল ঢাকার অলিগলি। ছুটে বেরিয়েছে এক ওয়ার্ড থেকে আরেক ওয়ার্ডে। তুলে এনেছে জীবনের গল্প। বিরামহীনভাবে তা লিখেছে পত্রিকার পাতায়। প্রথম আলোর নগর সাময়িকী ‘ঢাকায় থাকি’র অ্যাসাইনমেন্ট রিপোর্টার সাইফুল ইসলাম সামিন। অকস্মাত্ একটা দুর্ঘটনা যার জীবনে ছন্দপতন ঘটায়। কেড়ে নেয় ওর দুটি পা। সাময়িকভাবে থমকে গেছে ও। কিন্তু থেমে থাকেনি। প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী সামিন আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কাঁধে নিয়েছে দায়িত্ব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র সামিন। দুর্ঘটনার পরে যে সারা দিন বিছানায় শুয়ে কাটাত, এখন সে লিখছে। কখনো নিজের কথা, কখনো বা কবিতায় ভরে তুলছে ডায়েরির পাতাগুলো। লেখালেখির প্রতি ঝোঁক সেই ছোটবেলা থেকেই। কোনো রচনা প্রতিযোগিতা হলেই সে অংশ নিত। সেখান থেকে পুরস্কার জিতে আনা যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। রচনা প্রতিযোগিতায় এ পর্যন্ত কত পুরস্কার যে পেয়েছে, তা গুনে শেষ করা যাবে না। এ রকমই একটি রচনা প্রতিযোগিতা সামিনকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। কর্মোদ্দীপনা খুঁজে পেয়েছে। আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল’-এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল জেলা ৩১৫এ১ সেবা সপ্তাহের আয়োজন করে।
সামাজিক নানা সেবা কার্যক্রমের পাশাপাশি তারা রচনা প্রতিযোগিতারও আয়োজন করে। ‘থিংক গ্লোবালি অ্যাক্ট লোকালি’—অর্থাত্ বিশ্বায়নের এই যুগে ছুটে না বেড়িয়েও অন্যের সেবা করা যায়। স্থানীয়ভাবেই এটি করা সম্ভব। এ বিষয় নিয়েই সামিন লিখে পাঠায়। হাজারো লেখার ভিড়ে একটি লেখায় চোখ আটকে যায় বিচারকদের। এত সুন্দর বিশ্লেষণ, এত সুন্দর উপস্থাপন। মুগ্ধ হন বিচারকেরা। হঠাত্ একদিন ফোন আসে সামিনের কাছে। সরকারি বাঙলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ রেহানা বেগম ফোন করেন। এই প্রতিযোগিতার বিচারক হিসেবে তিনি ছিলেন। সামিনের সহজ-সাবলীল লেখাটি সেরা লেখা হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রথম পুরস্কারটি এবারও তার। রেহানা বেগম অভিনন্দন জানাতে ফোন করেন তাকে। তখনো জানতেন না ওর দুর্ঘটনার কথা। ‘ওকে যখন আসতে বললাম তখন বলল, ওর পা নেই। কীভাবে আসবে। শুনে এত খারাপ লাগল! কিন্তু অবাক হলাম, এমন দুর্ঘটনার পরও মানুষ কীভাবে এত সুন্দর লিখতে পারে! অনুষ্ঠানে নিয়ে আসার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করলাম।’ বলেন রেহানা বেগম। ৯ অক্টোবর এলজিইডি ভবনে সেবা সপ্তাহের সমাপনী অনুষ্ঠান হয়। এ অনুষ্ঠানে সামিনের হাতে তুলে দেওয়া হয় পুরস্কার। অনুষ্ঠানের উপস্থাপক যখন সামিনের কথা বলছিলেন, পুরো ঘরে তখন নেমে আসে পিনপতন নীরবতা। পুরস্কার নেওয়ার সময় বিপুল করতালিতে সবাই ওকে অভিনন্দন জানায়। অনেকেই দাঁড়িয়ে যায় প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী এই যুবককে এক নজর দেখার জন্য। জীবনে অনেক পুরস্কার পেলেও এবারেরটা একেবারেই আলাদা। দুর্ঘটনার পরে এটাই যে ওর প্রথম সাফল্য। ‘প্রতিদিনই বেঁচে থাকার নতুন নতুন অর্থ খুঁজি। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকার সময় ভাবতাম, অনার্সে নিশ্চয় ভালো করব। কিন্তু সামান্য কিছু নম্বরের জন্য দ্বিতীয় শ্রেণীতে দ্বিতীয় হলাম। এতেও ভেঙে পড়িনি। ভাবলাম, নতুন করে শুরু করব। তখনই এই রচনা প্রতিযোগিতার কথা শুনলাম। পাঠিয়ে দিলাম লেখা। এই পুরস্কার আমাকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। মনে হচ্ছে আমি পারব, আমাকে পারতেই হবে।’ সারাক্ষণই নিজেকে কোনো না কোনো কাজে ব্যস্ত রাখে সামিন। ব্যস্ততা অবর্ণনীয় সেই কষ্টকে মনে করতে দেয় না। হুইল চেয়ারে বসেই সামিন আবার সাংবাদিকতা শুরু করেছে। তৈরি করছে নানা প্রতিবেদন। কে বলে দুর্ঘটনা মানুষের জীবনকে স্থবির করে দেয়? মানসিক শক্তি ও প্রতিভা কি তা হতে দেয়? প্রমাণ তো আমাদের সামিন।
মানুষের ভালোবাসাই তো ওকে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে। ‘চেনা-অচেনা কত মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছি। ভালোবাসার প্রতিদানে আমারও তো কিছু করা উচিত। তাই তো সব কষ্ট-যন্ত্রণা ঝেড়ে ফেলে নতুন করে কাজ শুরু করেছি। সবার সহযোগিতা পেলে হুইল চেয়ারে বসেই সাংবাদিকতা করতে পারব। কিন্তু খুব কষ্ট হয়, যখন কেউ আমাকে প্রতিবন্ধী বলে। আমি তো ভাবতে পারি, স্বপ্ন দেখি, দেখাতে পারি, লিখতেও পারি। শুধু দুটো পা নেই বলেই কি এমন কথা শুনতে হবে?’ এ প্রশ্নের পর কোনো কথা খুঁজে পায় না এই সংগ্রামের আরেক যোদ্ধা সামিনের ছোট ভাই। ভাই কিংবা বন্ধু—সবই এখন ও। সামিনের দেখভাল সে-ই করে। তবে ওর অন্য বন্ধুরাও সব কাজে সহযোগিতা করে। মানসিক শক্তি কতটা জোরালো হলে মানুষ এভাবে উঠে আসতে পারে, তা সামিনকে দেখলেই বোঝা যায়। মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চায় ও, যেন কাজের মধ্যেই বেঁচে থাকতে পারে। মরে গেলেও সবাই যেন ওকে মনে রাখে। সামিনের চোখ-মুখের হাসিটা এ কথাই যেন বলে—
সূর্য আমি, অস্তমিত হব
তবু চিহ্ন রেখে যাব ধরনীর পরে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র সামিন। দুর্ঘটনার পরে যে সারা দিন বিছানায় শুয়ে কাটাত, এখন সে লিখছে। কখনো নিজের কথা, কখনো বা কবিতায় ভরে তুলছে ডায়েরির পাতাগুলো। লেখালেখির প্রতি ঝোঁক সেই ছোটবেলা থেকেই। কোনো রচনা প্রতিযোগিতা হলেই সে অংশ নিত। সেখান থেকে পুরস্কার জিতে আনা যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। রচনা প্রতিযোগিতায় এ পর্যন্ত কত পুরস্কার যে পেয়েছে, তা গুনে শেষ করা যাবে না। এ রকমই একটি রচনা প্রতিযোগিতা সামিনকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। কর্মোদ্দীপনা খুঁজে পেয়েছে। আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল’-এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল জেলা ৩১৫এ১ সেবা সপ্তাহের আয়োজন করে।
সামাজিক নানা সেবা কার্যক্রমের পাশাপাশি তারা রচনা প্রতিযোগিতারও আয়োজন করে। ‘থিংক গ্লোবালি অ্যাক্ট লোকালি’—অর্থাত্ বিশ্বায়নের এই যুগে ছুটে না বেড়িয়েও অন্যের সেবা করা যায়। স্থানীয়ভাবেই এটি করা সম্ভব। এ বিষয় নিয়েই সামিন লিখে পাঠায়। হাজারো লেখার ভিড়ে একটি লেখায় চোখ আটকে যায় বিচারকদের। এত সুন্দর বিশ্লেষণ, এত সুন্দর উপস্থাপন। মুগ্ধ হন বিচারকেরা। হঠাত্ একদিন ফোন আসে সামিনের কাছে। সরকারি বাঙলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ রেহানা বেগম ফোন করেন। এই প্রতিযোগিতার বিচারক হিসেবে তিনি ছিলেন। সামিনের সহজ-সাবলীল লেখাটি সেরা লেখা হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রথম পুরস্কারটি এবারও তার। রেহানা বেগম অভিনন্দন জানাতে ফোন করেন তাকে। তখনো জানতেন না ওর দুর্ঘটনার কথা। ‘ওকে যখন আসতে বললাম তখন বলল, ওর পা নেই। কীভাবে আসবে। শুনে এত খারাপ লাগল! কিন্তু অবাক হলাম, এমন দুর্ঘটনার পরও মানুষ কীভাবে এত সুন্দর লিখতে পারে! অনুষ্ঠানে নিয়ে আসার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করলাম।’ বলেন রেহানা বেগম। ৯ অক্টোবর এলজিইডি ভবনে সেবা সপ্তাহের সমাপনী অনুষ্ঠান হয়। এ অনুষ্ঠানে সামিনের হাতে তুলে দেওয়া হয় পুরস্কার। অনুষ্ঠানের উপস্থাপক যখন সামিনের কথা বলছিলেন, পুরো ঘরে তখন নেমে আসে পিনপতন নীরবতা। পুরস্কার নেওয়ার সময় বিপুল করতালিতে সবাই ওকে অভিনন্দন জানায়। অনেকেই দাঁড়িয়ে যায় প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী এই যুবককে এক নজর দেখার জন্য। জীবনে অনেক পুরস্কার পেলেও এবারেরটা একেবারেই আলাদা। দুর্ঘটনার পরে এটাই যে ওর প্রথম সাফল্য। ‘প্রতিদিনই বেঁচে থাকার নতুন নতুন অর্থ খুঁজি। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকার সময় ভাবতাম, অনার্সে নিশ্চয় ভালো করব। কিন্তু সামান্য কিছু নম্বরের জন্য দ্বিতীয় শ্রেণীতে দ্বিতীয় হলাম। এতেও ভেঙে পড়িনি। ভাবলাম, নতুন করে শুরু করব। তখনই এই রচনা প্রতিযোগিতার কথা শুনলাম। পাঠিয়ে দিলাম লেখা। এই পুরস্কার আমাকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। মনে হচ্ছে আমি পারব, আমাকে পারতেই হবে।’ সারাক্ষণই নিজেকে কোনো না কোনো কাজে ব্যস্ত রাখে সামিন। ব্যস্ততা অবর্ণনীয় সেই কষ্টকে মনে করতে দেয় না। হুইল চেয়ারে বসেই সামিন আবার সাংবাদিকতা শুরু করেছে। তৈরি করছে নানা প্রতিবেদন। কে বলে দুর্ঘটনা মানুষের জীবনকে স্থবির করে দেয়? মানসিক শক্তি ও প্রতিভা কি তা হতে দেয়? প্রমাণ তো আমাদের সামিন।
মানুষের ভালোবাসাই তো ওকে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে। ‘চেনা-অচেনা কত মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছি। ভালোবাসার প্রতিদানে আমারও তো কিছু করা উচিত। তাই তো সব কষ্ট-যন্ত্রণা ঝেড়ে ফেলে নতুন করে কাজ শুরু করেছি। সবার সহযোগিতা পেলে হুইল চেয়ারে বসেই সাংবাদিকতা করতে পারব। কিন্তু খুব কষ্ট হয়, যখন কেউ আমাকে প্রতিবন্ধী বলে। আমি তো ভাবতে পারি, স্বপ্ন দেখি, দেখাতে পারি, লিখতেও পারি। শুধু দুটো পা নেই বলেই কি এমন কথা শুনতে হবে?’ এ প্রশ্নের পর কোনো কথা খুঁজে পায় না এই সংগ্রামের আরেক যোদ্ধা সামিনের ছোট ভাই। ভাই কিংবা বন্ধু—সবই এখন ও। সামিনের দেখভাল সে-ই করে। তবে ওর অন্য বন্ধুরাও সব কাজে সহযোগিতা করে। মানসিক শক্তি কতটা জোরালো হলে মানুষ এভাবে উঠে আসতে পারে, তা সামিনকে দেখলেই বোঝা যায়। মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চায় ও, যেন কাজের মধ্যেই বেঁচে থাকতে পারে। মরে গেলেও সবাই যেন ওকে মনে রাখে। সামিনের চোখ-মুখের হাসিটা এ কথাই যেন বলে—
সূর্য আমি, অস্তমিত হব
তবু চিহ্ন রেখে যাব ধরনীর পরে।
No comments