দুই বাংলাতেই তিনি ছিলেন খ্যাতিমান লেখক -স্মরণ by আলপনা বেগম
তিনি বাংলা একাডেমীর পুরস্কার পেয়েছিলেন। খ্যাতিমান ছিলেন প্রাবন্ধিক, গল্পকার, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক হিসেবে। তিনি লোকসাহিত্যের সংগ্রাহক, সাহিত্যপত্র-এর সম্পাদক ছিলেন। পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন রাজনীতিবিদ। বলা হচ্ছে খালেকদাদ চৌধুরীর কথা। তবে বাংলা সাহিত্যে তাঁর যে অবদান, তা হারিয়ে যেতে বসেছে। কারণ তাঁর লেখা বইয়ের পুনর্মুদ্রণ যেমন করা হচ্ছে না, তেমনি অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপিগুলোর যথাযথ সংরক্ষণ ও প্রকাশের কোনো উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে না। নতুন প্রজন্ম পরিচিত হতে পারছে না খালেকদাদ চৌধুরীর জীবন ও কর্মের সঙ্গে। আজ তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী।
খালেকদাদ চৌধুরী ১৯০৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার চানগাঁও গ্রামে তাঁর নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। নওয়াব আলী চৌধুরী ও নজমুননেছা চৌধুরীর আট ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে খালেকদাদ চৌধুরী ছিলেন সবার বড়। তাঁর গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া উপজেলার সোনাজোড় গ্রামে। ১৯১১ সালে নাজিরগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির মধ্য দিয়ে খালেকদাদ চৌধুরীর শিক্ষাজীবন শুরু। ১৯১৬ সালে মদন উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন। এর পরের বছর তিনি জেলা শহরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দত্ত হাইস্কুলে ভর্তি হন। এই স্কুল থেকেই ১৯২৪ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করে উচ্চশিক্ষার জন্য কলকাতায় লর্ড রিপন কলেজে ভর্তি হন। পরে কলকাতারই ইসলামিয়া কলেজে ইংরেজি বিভাগে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীতে ভর্তি হন।
১৯২৭ সালে অক্টোবর মাসে খালাতো বোন হামিদা চৌধুরীকে বিয়ে করে সংসারজীবন শুরু করেন। বিয়ের মাত্র চার দিন পর বাবা নওয়াব আলী চৌধুরীর মৃত্যু হলে সংসারের সব দায়-দায়িত্ব এসে পড়ে বড় ছেলে খালেকদাদ চৌধুরীর ওপর। সংসারের প্রয়োজনে লেখাপড়া শেষ না করেই নেত্রকোনা চলে আসেন তিনি। ১৯২৯ সালে কলকাতা মিডল্যান্ড ব্যাংকের নেত্রকোনা শাখায় সুপারভাইজার হিসেবে শুরু হয় তাঁর কর্মজীবন।
ব্যাংকের কাজ ভালো লাগেনি খালেকদাদ চৌধুরীর। বরং তিনি লেখালেখিতেই বেশি আনন্দ পেতে থাকেন। তাঁর কবিতা প্রথম ছাপা হয় কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবি বন্দে আলী মিয়া বিকাশ পত্রিকায়। কবি আব্দুল কাদির ও আবুল কালাম শামসুদ্দিনের অনুপ্রেরণায় তাঁর লেখালেখি আরও গতি পায়। ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে ১৯৩০ সালে কলকাতা করপোরেশনের একটি বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। বাড়তি আয়ের জন্য আবুল মনসুর আহম্মদ সম্পাদিত দৈনিক কৃষক-এর কিশোর সাহিত্যপাতা ‘চাঁদের হাট’ শাহাদাত চৌধুরী ছদ্মনামে পরিচালনা করতেন। তখন সবার কাছেই তিনি মামা নামে পরিচিত ছিলেন।
১৯৪১ সালে সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে তিনি কাজী নজরুল ইসলামের সংস্পর্শে আসার সুযোগ পান। নজরুলের সাহিত্য আড্ডাগুলোয় নিয়মিত যোগ দিতেন খালেকদাদ চৌধুরী। নজরুল সম্পাদিত দৈনিক নবযুগ-এ তিনি সাহিত্য সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ‘আগুনের ফুলকি’ নামে কিশোর পাতা আতশবাজ ছদ্মনামে পরিচালনা করেন। এ সময়টায় তিনি বেশ পরিচিতি পান। ১৯৪৪ সালে তিনি জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসাবে সরকারী চাকরিতে যোগ দেন। ১৯৬১ সাল পর্যন্ত নেত্রকোনা সুনামগঞ্জ ও সিলেটে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। পরে নেত্রকোনা থেকে প্রকাশিত পাক্ষিক উত্তর আকাশ ও সাহিত্য সাময়িকী সৃজনী সম্পাদনা ও নিয়মিত প্রকাশ করে নবীন লেখকদের উত্সাহ দিতে থাকেন। উত্তর আকাশ ও সৃজনী সাহিত্যপত্রিকায় লিখতেন নির্মলেন্দু গুণ, রফিক আজাদ, জীবন চৌধুরী, শান্তিময় বিশ্বাষ, হেলাল হাফিজের মতো অনেকেই।
খালেকদাদ চৌধুরীর সাহিত্যকর্মে ফুটে উঠেছে নেত্রকোনার ভাটি অঞ্চলের সংগ্রামী মানুষের চিত্র। গ্রামবাংলার চিরদুঃখী মানুষের অশ্রুসজল কাহিনী নিয়ে রচিত বাস্তবভিত্তিক উপন্যাস হচ্ছে একটি আত্মার অপমৃত্যু। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থগুলো হচ্ছে একটি আত্মার অপমৃত্যু, রক্তাক্ত অধ্যায়, চাঁদ বেগের গড়, শাপ মারির অভিশাপ এবং এ মাটি রক্তে রাঙ্গা। অনুবাদ গ্রন্থ হচ্ছে মরু সাহারা, বাহার-ই-স্থান-ই গায়েবী, আল বকর দ্বীপ ও বিশ্ব সাহিত্য পরিচয়। নাটক অভিশপ্ত মসনদ। তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ শতাব্দীর দুই দিগন্ত।
খালেকদাদ চৌধুরী শুধু একজন সাহিত্যিকই ছিলেন না, তিনি দীর্ঘদিন আদর্শ শিশুকিশোর সংগঠন নেত্রকোনা মধুমাছি কঁচি-কাচার মেলার পরিচালক ও আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদকের দ্বায়িত্ব পালন করেন। তিনি নেত্রকোনায় সাধারণ গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেন। এ ছাড়া তিনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮৩ সালে খালেকদাদ চৌধুরীকে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হয়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। ১৯৮৫ সালের ১৬ অক্টোবর ৭৮ বছর বয়সে এই বরেণ্য সাহিত্যিকের জীবনাবসান ঘটে। তাঁর অবদান নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে এবং স্মৃতি রক্ষার্থে নেত্রকোনা সাহিত্যসমাজ ১৯৯৭ সাল থেকে প্রতিবছরই পয়লা ফাল্গুনে দেশবরেণ্য একজন কবি বা সাহিত্যিককে খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করে আসছে।
খালেকদাদ চৌধুরী ১৯০৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার চানগাঁও গ্রামে তাঁর নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। নওয়াব আলী চৌধুরী ও নজমুননেছা চৌধুরীর আট ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে খালেকদাদ চৌধুরী ছিলেন সবার বড়। তাঁর গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া উপজেলার সোনাজোড় গ্রামে। ১৯১১ সালে নাজিরগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির মধ্য দিয়ে খালেকদাদ চৌধুরীর শিক্ষাজীবন শুরু। ১৯১৬ সালে মদন উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন। এর পরের বছর তিনি জেলা শহরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দত্ত হাইস্কুলে ভর্তি হন। এই স্কুল থেকেই ১৯২৪ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করে উচ্চশিক্ষার জন্য কলকাতায় লর্ড রিপন কলেজে ভর্তি হন। পরে কলকাতারই ইসলামিয়া কলেজে ইংরেজি বিভাগে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীতে ভর্তি হন।
১৯২৭ সালে অক্টোবর মাসে খালাতো বোন হামিদা চৌধুরীকে বিয়ে করে সংসারজীবন শুরু করেন। বিয়ের মাত্র চার দিন পর বাবা নওয়াব আলী চৌধুরীর মৃত্যু হলে সংসারের সব দায়-দায়িত্ব এসে পড়ে বড় ছেলে খালেকদাদ চৌধুরীর ওপর। সংসারের প্রয়োজনে লেখাপড়া শেষ না করেই নেত্রকোনা চলে আসেন তিনি। ১৯২৯ সালে কলকাতা মিডল্যান্ড ব্যাংকের নেত্রকোনা শাখায় সুপারভাইজার হিসেবে শুরু হয় তাঁর কর্মজীবন।
ব্যাংকের কাজ ভালো লাগেনি খালেকদাদ চৌধুরীর। বরং তিনি লেখালেখিতেই বেশি আনন্দ পেতে থাকেন। তাঁর কবিতা প্রথম ছাপা হয় কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবি বন্দে আলী মিয়া বিকাশ পত্রিকায়। কবি আব্দুল কাদির ও আবুল কালাম শামসুদ্দিনের অনুপ্রেরণায় তাঁর লেখালেখি আরও গতি পায়। ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে ১৯৩০ সালে কলকাতা করপোরেশনের একটি বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। বাড়তি আয়ের জন্য আবুল মনসুর আহম্মদ সম্পাদিত দৈনিক কৃষক-এর কিশোর সাহিত্যপাতা ‘চাঁদের হাট’ শাহাদাত চৌধুরী ছদ্মনামে পরিচালনা করতেন। তখন সবার কাছেই তিনি মামা নামে পরিচিত ছিলেন।
১৯৪১ সালে সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে তিনি কাজী নজরুল ইসলামের সংস্পর্শে আসার সুযোগ পান। নজরুলের সাহিত্য আড্ডাগুলোয় নিয়মিত যোগ দিতেন খালেকদাদ চৌধুরী। নজরুল সম্পাদিত দৈনিক নবযুগ-এ তিনি সাহিত্য সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ‘আগুনের ফুলকি’ নামে কিশোর পাতা আতশবাজ ছদ্মনামে পরিচালনা করেন। এ সময়টায় তিনি বেশ পরিচিতি পান। ১৯৪৪ সালে তিনি জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসাবে সরকারী চাকরিতে যোগ দেন। ১৯৬১ সাল পর্যন্ত নেত্রকোনা সুনামগঞ্জ ও সিলেটে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। পরে নেত্রকোনা থেকে প্রকাশিত পাক্ষিক উত্তর আকাশ ও সাহিত্য সাময়িকী সৃজনী সম্পাদনা ও নিয়মিত প্রকাশ করে নবীন লেখকদের উত্সাহ দিতে থাকেন। উত্তর আকাশ ও সৃজনী সাহিত্যপত্রিকায় লিখতেন নির্মলেন্দু গুণ, রফিক আজাদ, জীবন চৌধুরী, শান্তিময় বিশ্বাষ, হেলাল হাফিজের মতো অনেকেই।
খালেকদাদ চৌধুরীর সাহিত্যকর্মে ফুটে উঠেছে নেত্রকোনার ভাটি অঞ্চলের সংগ্রামী মানুষের চিত্র। গ্রামবাংলার চিরদুঃখী মানুষের অশ্রুসজল কাহিনী নিয়ে রচিত বাস্তবভিত্তিক উপন্যাস হচ্ছে একটি আত্মার অপমৃত্যু। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থগুলো হচ্ছে একটি আত্মার অপমৃত্যু, রক্তাক্ত অধ্যায়, চাঁদ বেগের গড়, শাপ মারির অভিশাপ এবং এ মাটি রক্তে রাঙ্গা। অনুবাদ গ্রন্থ হচ্ছে মরু সাহারা, বাহার-ই-স্থান-ই গায়েবী, আল বকর দ্বীপ ও বিশ্ব সাহিত্য পরিচয়। নাটক অভিশপ্ত মসনদ। তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ শতাব্দীর দুই দিগন্ত।
খালেকদাদ চৌধুরী শুধু একজন সাহিত্যিকই ছিলেন না, তিনি দীর্ঘদিন আদর্শ শিশুকিশোর সংগঠন নেত্রকোনা মধুমাছি কঁচি-কাচার মেলার পরিচালক ও আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদকের দ্বায়িত্ব পালন করেন। তিনি নেত্রকোনায় সাধারণ গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেন। এ ছাড়া তিনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮৩ সালে খালেকদাদ চৌধুরীকে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হয়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। ১৯৮৫ সালের ১৬ অক্টোবর ৭৮ বছর বয়সে এই বরেণ্য সাহিত্যিকের জীবনাবসান ঘটে। তাঁর অবদান নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে এবং স্মৃতি রক্ষার্থে নেত্রকোনা সাহিত্যসমাজ ১৯৯৭ সাল থেকে প্রতিবছরই পয়লা ফাল্গুনে দেশবরেণ্য একজন কবি বা সাহিত্যিককে খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করে আসছে।
No comments