মন্ত্রীদের মানবাধিকার জ্ঞানে আমরা লজ্জিত -ক্রসফায়ার by হামিদা হোসেন, সুলতানা কামাল, শাহদীন মালিক, ইফতেখারুজ্জামান
৯ অক্টোবর ২০০৯ দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় ‘ক্রসফায়ার’ বিষয়ে দুজন মন্ত্রীর ভিন্ন ভিন্ন দুটি বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান নারায়ণগঞ্জে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এনকাউন্টারে সন্ত্রাসী নিহত হলে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় না।’ অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক ক্রসফায়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে এবং আইনের শাসন অব্যাহত রাখতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আইনানুযায়ী ক্ষমতা প্রয়োগ করবে, এটাই স্বাভাবিক।’
বর্তমান সরকার তার নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি দেয় যে তারা ক্ষমতায় গেলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করবে। নির্বাচিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী তঁদের এই প্রতিশ্রুতি একাধিকবার পুনর্ব্যক্তও করেছেন। অথচ বর্তমান দুই প্রতিমন্ত্রীসহ ইতিপূর্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইন প্রতিমন্ত্রীও ‘ক্রসফায়ার’-এর বৈধতা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন।
আমরা সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের এ ধরনের বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা ঠিক নিশ্চিত নই, মাননীয় মন্ত্রীরা কি বুঝেশুনেই এ কথাগুলো বলছেন, নাকি মানবাধিকার ও আইনের শাসন বিষয়ে এটাই তাঁদের ধারণা বা জানাশোনা। যদি সেটাই হয়ে থাকে, তবে বলতেই হচ্ছে, মানবাধিকারকর্মী ও নাগরিক হিসেবে আমাদের দেশের মন্ত্রীদের মানবাধিকার, আইনের শাসনবিষয়ক জ্ঞানে আমরা যারপরনাই লজ্জিত।
মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র; জাতিসংঘ সনদ; নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদ; অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারসংক্রান্ত সনদ, নির্যাতনবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদসহ প্রায় সব মানবাধিকার দলিলেই জীবনের অধিকারকে সর্বোচ্চ অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এবং সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, বিচারিক পদ্ধতি অবলম্বন ব্যতীত এ অধিকার কোনোভাবেই লঙ্ঘন করা যাবে না। এ কারণেই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হিসেবে স্বীকৃত। মানবাধিকার, আইনের শাসন ইত্যাদি প্রপঞ্চর একটি স্বীকৃত মানদণ্ড রয়েছে। এ বিষয়গুলো এখন আর তেমন নেই যে একজনের মতে মানবাধিকার, আইনের শাসন হবে এক রকম, অন্যজনের মতে তা হবে আরেক রকম। বাংলাদেশ এসব মানবাধিকার সনদ স্বাক্ষর বা অনুস্বাক্ষর করেছে। সুতরাং রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ কখনোই ক্রসফায়ার মানবাধিকারের লঙ্ঘন নয় বলে দাবি করতে পারে না।
‘এনকাউন্টার’, ‘বন্দুকযুদ্ধ’ অথবা ‘আত্মরক্ষার্থে গুলি’ যেভাবেই বলা হোক না কেন, ঘটনার পরম্পরা আর অন্যান্য অনুষঙ্গ বিশ্লেষণে এটা সবার কাছেই স্পষ্ট যে এগুলো ক্রসফায়ারেরই ভিন্ন নামকরণ, সেটাকে জায়েজ করার চেষ্টা। বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারেও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, আইনের আশ্রয়লাভ এবং আইনানুযায়ী ও কেবল আইনানুযায়ী ব্যবহারলাভ যেকোনো নাগরিকের অধিকার। ৩২ অনুচ্ছেদ অনুসারে, আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতা থেকে কোনো ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাবে না। আবার ৩৩ অনুচ্ছেদের বিধান হলো, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে যত শিগগির সম্ভব আদালেতের সামনে উপস্থিত করতে হবে। সংবিধানের এসব বিধান মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। গণতান্ত্রিক সরকারের দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে উপরিউক্ত মন্ত্রীদ্বয়ের এ ধরনের বক্তব্য কি তাঁদের প্রতি অর্পিত সাংবিধানিক দায়িত্বেরও লঙ্ঘন নয়?
মানবাধিকারের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো মানবাধিকারকে সম্মান করা, সুরক্ষা দেওয়া ও সমুন্নত রাখা বা পরিপূর্ণ করা। সম্প্রতি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে তথাকথিত চরমপন্থীদের হাতে সাধারণ জনগণের প্রাণনাশের ঘটনা একদিকে প্রচলিত আইনের লঙ্ঘন, অন্যদিকে মানবাধিকারেরও লঙ্ঘন। ওই কথিত চরমপন্থীরা খুন, লুণ্ঠন, ডাকাতির মাধ্যমে দেশের প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করছে। আর তাদের দমন করতে না পারার কারণে রাষ্ট্রের ভূমিকা হয়ে দাঁড়াচ্ছে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী। অর্থাত্ এ ক্ষেত্রে চরমপন্থীরা হচ্ছে আইন লঙ্ঘনকারী, রাষ্ট্র হচ্ছে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী। অন্যদিকে ওই কথিত চরমপন্থীদের কার্যকলাপ দমনের নামে তাদের বিচারবহির্ভূত পন্থায় হত্যা করা একই ঘটনায় রাষ্ট্রের দ্বিতীয় দফা মানবাধিকার লঙ্ঘন। তা ছাড়া যেকোনো মানুষের মানবাধিকারকে সম্মান দেখানো এবং রাষ্ট্র নিজে মানবাধিকার লঙ্ঘন না করার জন্য সংবিধান, দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ। অথচ ক্রসফায়ারের ক্ষেত্রে সরকার সেই অঙ্গীকারের কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে নিজেই মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে।
এটা ঠিক যে প্রচলিত বিচারব্যবস্থায় আস্থাহীন হয়ে পড়ায় জনগণের একটা অংশ এ ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন দেয়। কিন্তু আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল গণতান্ত্রিক সরকারের উচিত প্রচলিত বিচারব্যবস্থার সেই দুর্বলতা দূর করতে সচেষ্ট হওয়া, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের আপাত জনসমর্থনকে অজুহাত হিসেবে নিয়ে বিচারবহির্ভূত পন্থা অবলম্বন করা নয়। আমরা সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, এভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে প্রশ্রয় দেওয়ায় সুদূরপ্রসারী সামাজিক প্রতিক্রিয়া ভয়াবহ হতে পারে। হত্যার মতো একটি নিকৃষ্টতম অপরাধ রাষ্ট্রের প্রশ্রয়ে ঘটতে থাকলে সাধারণ মানুষের মধ্যে এ অপরাধের প্রতি ঘৃণার বোধ ধীরে ধীরে কমে যেতে থাকবে; মানবতাবোধ হারিয়ে যাবে, প্রতিশোধপরায়ণতা উত্সাহিত হবে, যার ফলাফল ভয়াবহ সামাজিক বিপর্যয়।
আমরা দেখেছি, সরকারের বাইরে থাকা অবস্থায় ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকলেও সরকারের দায়িত্ব নিয়ে সবাই এই ‘সংক্ষিপ্ত’ পদ্ধতি ব্যবহারের আপাত সুফল নিতে চায়। আমরা এই বৈপরিত্যের অবসান চাই। আমরা আশা করি, বর্তমান সরকার তাদের পূর্বসূরিদের অনুসরণের পথ নয়, বরং দিনবদলের স্লোগানকে বাস্তবে রূপ দিতে এ ক্ষেত্রেও সত্যিকারের দিনবদলের সূচনা করবে এবং জনগণ যে আশা নিয়ে তাদের নির্বাচিত করেছে, সে আশা ভঙ্গের কারণ ঘটাবে না।
হামিদা হোসেন
চেয়ারপারসন, আইন ও সালিশ কেন্দ্র।
অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল
নির্বাহী পরিচালক, আসক।
শাহদীন মালিক
অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।
ইফতেখারুজ্জামান
নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি।
নগর দর্পণ: চট্টগ্রাম
বর্তমান সরকার তার নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি দেয় যে তারা ক্ষমতায় গেলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করবে। নির্বাচিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী তঁদের এই প্রতিশ্রুতি একাধিকবার পুনর্ব্যক্তও করেছেন। অথচ বর্তমান দুই প্রতিমন্ত্রীসহ ইতিপূর্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইন প্রতিমন্ত্রীও ‘ক্রসফায়ার’-এর বৈধতা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন।
আমরা সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের এ ধরনের বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা ঠিক নিশ্চিত নই, মাননীয় মন্ত্রীরা কি বুঝেশুনেই এ কথাগুলো বলছেন, নাকি মানবাধিকার ও আইনের শাসন বিষয়ে এটাই তাঁদের ধারণা বা জানাশোনা। যদি সেটাই হয়ে থাকে, তবে বলতেই হচ্ছে, মানবাধিকারকর্মী ও নাগরিক হিসেবে আমাদের দেশের মন্ত্রীদের মানবাধিকার, আইনের শাসনবিষয়ক জ্ঞানে আমরা যারপরনাই লজ্জিত।
মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র; জাতিসংঘ সনদ; নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদ; অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারসংক্রান্ত সনদ, নির্যাতনবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদসহ প্রায় সব মানবাধিকার দলিলেই জীবনের অধিকারকে সর্বোচ্চ অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এবং সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, বিচারিক পদ্ধতি অবলম্বন ব্যতীত এ অধিকার কোনোভাবেই লঙ্ঘন করা যাবে না। এ কারণেই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হিসেবে স্বীকৃত। মানবাধিকার, আইনের শাসন ইত্যাদি প্রপঞ্চর একটি স্বীকৃত মানদণ্ড রয়েছে। এ বিষয়গুলো এখন আর তেমন নেই যে একজনের মতে মানবাধিকার, আইনের শাসন হবে এক রকম, অন্যজনের মতে তা হবে আরেক রকম। বাংলাদেশ এসব মানবাধিকার সনদ স্বাক্ষর বা অনুস্বাক্ষর করেছে। সুতরাং রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ কখনোই ক্রসফায়ার মানবাধিকারের লঙ্ঘন নয় বলে দাবি করতে পারে না।
‘এনকাউন্টার’, ‘বন্দুকযুদ্ধ’ অথবা ‘আত্মরক্ষার্থে গুলি’ যেভাবেই বলা হোক না কেন, ঘটনার পরম্পরা আর অন্যান্য অনুষঙ্গ বিশ্লেষণে এটা সবার কাছেই স্পষ্ট যে এগুলো ক্রসফায়ারেরই ভিন্ন নামকরণ, সেটাকে জায়েজ করার চেষ্টা। বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারেও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, আইনের আশ্রয়লাভ এবং আইনানুযায়ী ও কেবল আইনানুযায়ী ব্যবহারলাভ যেকোনো নাগরিকের অধিকার। ৩২ অনুচ্ছেদ অনুসারে, আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতা থেকে কোনো ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাবে না। আবার ৩৩ অনুচ্ছেদের বিধান হলো, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে যত শিগগির সম্ভব আদালেতের সামনে উপস্থিত করতে হবে। সংবিধানের এসব বিধান মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। গণতান্ত্রিক সরকারের দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে উপরিউক্ত মন্ত্রীদ্বয়ের এ ধরনের বক্তব্য কি তাঁদের প্রতি অর্পিত সাংবিধানিক দায়িত্বেরও লঙ্ঘন নয়?
মানবাধিকারের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো মানবাধিকারকে সম্মান করা, সুরক্ষা দেওয়া ও সমুন্নত রাখা বা পরিপূর্ণ করা। সম্প্রতি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে তথাকথিত চরমপন্থীদের হাতে সাধারণ জনগণের প্রাণনাশের ঘটনা একদিকে প্রচলিত আইনের লঙ্ঘন, অন্যদিকে মানবাধিকারেরও লঙ্ঘন। ওই কথিত চরমপন্থীরা খুন, লুণ্ঠন, ডাকাতির মাধ্যমে দেশের প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করছে। আর তাদের দমন করতে না পারার কারণে রাষ্ট্রের ভূমিকা হয়ে দাঁড়াচ্ছে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী। অর্থাত্ এ ক্ষেত্রে চরমপন্থীরা হচ্ছে আইন লঙ্ঘনকারী, রাষ্ট্র হচ্ছে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী। অন্যদিকে ওই কথিত চরমপন্থীদের কার্যকলাপ দমনের নামে তাদের বিচারবহির্ভূত পন্থায় হত্যা করা একই ঘটনায় রাষ্ট্রের দ্বিতীয় দফা মানবাধিকার লঙ্ঘন। তা ছাড়া যেকোনো মানুষের মানবাধিকারকে সম্মান দেখানো এবং রাষ্ট্র নিজে মানবাধিকার লঙ্ঘন না করার জন্য সংবিধান, দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ। অথচ ক্রসফায়ারের ক্ষেত্রে সরকার সেই অঙ্গীকারের কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে নিজেই মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে।
এটা ঠিক যে প্রচলিত বিচারব্যবস্থায় আস্থাহীন হয়ে পড়ায় জনগণের একটা অংশ এ ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন দেয়। কিন্তু আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল গণতান্ত্রিক সরকারের উচিত প্রচলিত বিচারব্যবস্থার সেই দুর্বলতা দূর করতে সচেষ্ট হওয়া, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের আপাত জনসমর্থনকে অজুহাত হিসেবে নিয়ে বিচারবহির্ভূত পন্থা অবলম্বন করা নয়। আমরা সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, এভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে প্রশ্রয় দেওয়ায় সুদূরপ্রসারী সামাজিক প্রতিক্রিয়া ভয়াবহ হতে পারে। হত্যার মতো একটি নিকৃষ্টতম অপরাধ রাষ্ট্রের প্রশ্রয়ে ঘটতে থাকলে সাধারণ মানুষের মধ্যে এ অপরাধের প্রতি ঘৃণার বোধ ধীরে ধীরে কমে যেতে থাকবে; মানবতাবোধ হারিয়ে যাবে, প্রতিশোধপরায়ণতা উত্সাহিত হবে, যার ফলাফল ভয়াবহ সামাজিক বিপর্যয়।
আমরা দেখেছি, সরকারের বাইরে থাকা অবস্থায় ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকলেও সরকারের দায়িত্ব নিয়ে সবাই এই ‘সংক্ষিপ্ত’ পদ্ধতি ব্যবহারের আপাত সুফল নিতে চায়। আমরা এই বৈপরিত্যের অবসান চাই। আমরা আশা করি, বর্তমান সরকার তাদের পূর্বসূরিদের অনুসরণের পথ নয়, বরং দিনবদলের স্লোগানকে বাস্তবে রূপ দিতে এ ক্ষেত্রেও সত্যিকারের দিনবদলের সূচনা করবে এবং জনগণ যে আশা নিয়ে তাদের নির্বাচিত করেছে, সে আশা ভঙ্গের কারণ ঘটাবে না।
হামিদা হোসেন
চেয়ারপারসন, আইন ও সালিশ কেন্দ্র।
অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল
নির্বাহী পরিচালক, আসক।
শাহদীন মালিক
অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।
ইফতেখারুজ্জামান
নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি।
নগর দর্পণ: চট্টগ্রাম
No comments