মুখোমুখি যুক্তরাষ্ট্র-ভেনেজুয়েলা, নজিরবিহীন যুদ্ধের হুমকি

ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি কার্যত অচল করে দিতে দেশটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক’ অবরোধের নির্দেশ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই ঘোষণাকে সরাসরি ‘যুদ্ধোন্মাদ হুমকি’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে ভেনেজুয়েলা সরকার। খবর বিবিসির।

মঙ্গলবার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প দাবি করেন, প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর নেতৃত্বাধীন ভেনেজুয়েলা সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তার অভিযোগ, এই সরকার মাদক পাচার, মানব পাচারসহ নানা অপরাধে জড়িত।

এই ঘোষণার কয়েক দিন আগেই ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছে একটি তেলবাহী জাহাজ জব্দ করে যুক্তরাষ্ট্র, যা দেশটির জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ ভেনেজুয়েলার অর্থনীতি প্রায় পুরোপুরি তেলনির্ভর। এরপর আরও ৬টি জাহাজের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ওয়াশিংটন।

ট্রাম্প তার পোস্টে লেখেন, ভেনেজুয়েলা এখন দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাসে ‘সবচেয়ে বড় নৌবহর’ দিয়ে ঘেরা অবস্থায় রয়েছে, যা ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী করা হবে। তার ভাষায়, ‘এটা এমন কিছু হবে, যা তারা আগে কখনো দেখেনি।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও অভিযোগ করেন, মাদুরো সরকার ‘চুরি করা তেল’ বিক্রি করে মাদক সন্ত্রাস, মানব পাচার, হত্যা ও অপহরণে অর্থ জোগাচ্ছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে কোনো প্রমাণ দেয়নি যে সাম্প্রতিক অভিযানে লক্ষ্যবস্তু হওয়া নৌযানগুলো সত্যিই মাদক বহন করছিল। উল্লেখ্য, ফেন্টানিলের প্রধান উৎপাদনকেন্দ্র মেক্সিকো, ভেনেজুয়েলা নয়।

গত সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত ভেনেজুয়েলার কাছাকাছি সমুদ্রপথে চালানো অভিযানে অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। একই সময়ে ক্যারিবীয় সাগরে হাজার হাজার সেনা ও বিশ্বের বৃহত্তম যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

ভেনেজুয়েলা পাল্টা অভিযোগ করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ লুট করতে চাইছে। জব্দ হওয়া ‘স্কিপার’ নামের জাহাজটি নিয়ে মাদুরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র জাহাজটি চুরি করেছে এবং নাবিকদের অপহরণ করেছে।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান জোয়াকিন কাস্ত্রো ট্রাম্পের ঘোষণাকে ‘সরাসরি যুদ্ধের শামিল’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ভেনেজুয়েলার সঙ্গে শত্রুতা বন্ধে প্রেসিডেন্টকে নির্দেশ দিতে কংগ্রেসে একটি প্রস্তাবের ওপর ভোট হবে।

দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র মাদুরো সরকারকে অবৈধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী বলে অভিযোগ করে আসছে। গত বছরের নির্বাচনকেও ভেনেজুয়েলার বিরোধী দল ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বহু দেশ ভুয়া বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রমাণিত তেল মজুত থাকা সত্ত্বেও উৎপাদন সীমিত রাখা ভেনেজুয়েলা এখন নতুন করে বড় আন্তর্জাতিক চাপের মুখে। এই অবরোধ বাস্তবে কীভাবে কার্যকর হবে এবং এর পরিণতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তা নিয়েই এখন বিশ্বজুড়ে কৌতূহল ও উদ্বেগ। 

ছবি : সংগৃহীত

No comments

Powered by Blogger.