ইউক্রেনের দখল করা ভূখণ্ড নিয়ে কোনো আপস নয়: বছরের শেষ সংবাদ সম্মেলনে পুতিন

ইউক্রেনের দখল করা ভূখণ্ড নিয়ে কোনো আপস করা হবে না বলে নিজেদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। গতকাল শুক্রবার মস্কোয় চলতি বছরের সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে পুতিন এ মন্তব্য করেন।

পুতিন বলেন, ‘জেলেনস্কির বিভিন্ন বক্তব্য থেকে আমরা জানি, তিনি ভূখণ্ড-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত নন।’ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি স্পষ্ট করে বলেছেন, তাঁদের সংবিধানে ভূখণ্ড হস্তান্তর নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

পুতিন দাবি করেন, তাঁর দেশের সেনারা ইউক্রেনের যে চারটি অঞ্চলের ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে, সেগুলো রাশিয়ার কাছে ছেড়ে দিতে হবে। পাশাপাশি ২০১৪ সালে দখল করে নিজেদের দেশের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত করা ক্রিমিয়ার দাবিও ইউক্রেনকে ছেড়ে দিতে হবে।

রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম আরটির প্রতিবেদনে বলা হয়, আজ মস্কোর ‘গস্তিনি দভর প্রদর্শনী হল’–এর সংবাদ সম্মেলনে পুতিন প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা কথা বলেন। দেশ-বিদেশের ৭০টির বেশি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে বিদেশি গণমাধ্যমের সাংবাদিকেরাও অংশ নেন।

সাংবাদিকের পাশাপাশি পুতিন ফোনে রুশ নাগরিকদের বিভিন্ন প্রশ্নেরও উত্তর দেন। ফোন, খুদে বার্তা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করা ২০ লাখের বেশি রুশ নাগরিক পুতিনকে প্রশ্ন করেছিলেন। সেখান থেকে বিষয়ভিত্তিক কিছু প্রশ্ন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে পুতিন সেগুলোর উত্তর দেন।

ভূখণ্ডের পাশাপাশি পুতিনের আরও কিছু দাবি রয়েছে। তাঁর দাবি, দনবাসের যেসব এলাকা রুশ সেনারা এখনো দখল করতে পারেনি, তা-ও রাশিয়ার কাছে হস্তান্তর করতে হবে।

দনবাসের এসব এলাকায় তীব্র লড়াই চলছে। এখানে যেসব ভূখণ্ড এখনো নিজেদের দখলে রয়েছে, তা রাশিয়ার কাছে হস্তান্তরের দাবি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে কিয়েভ।

‘যুদ্ধের কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ এখনো সম্পূর্ণ রাশিয়ার’ সেনাদের হাতে দাবি করে পুতিন বলেন, চলতি বছর শেষ হওয়ার আগে তাঁদের সেনারা আরও ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণে নেবে।

পশ্চিমাদের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৫ সালের সাম্প্রতিক কয়েক মাসে রাশিয়ার সেনাবাহিনী রণক্ষেত্রে নিয়মিতভাবে অল্প অল্প করে এগোচ্ছে। প্রতিদিন তারা প্রায় ১২ থেকে ১৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করছে।

পুতিনের এই বার্ষিক সংবাদ সম্মেলন বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ। পশ্চিমা কর্মকর্তারা এটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। পুতিন রাশিয়ার জনগণের কাছে পরিস্থিতি কীভাবে তুলে ধরছেন, তাঁরা তা বোঝার চেষ্টা করেন।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সর্বাত্মক হামলা শুরু করে রাশিয়ার সেনারা। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের মতে, যুদ্ধে উভয় পক্ষের সেনাসহ ২০ লাখের বেশি মানুষ হতাহত ও নিখোঁজ হয়েছেন। তবে কোনো পক্ষই হতাহত ও নিখোঁজের নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রকাশ করেনি।

বছরের সর্বশেষ সম্মেলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মস্কোর ‘গস্তিনি দভর প্রদর্শনী হলে’, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫
বছরের সর্বশেষ সম্মেলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মস্কোর ‘গস্তিনি দভর প্রদর্শনী হলে’, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ছবি: রয়টার্স

No comments

Powered by Blogger.