তরুণদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রন আইন শক্তিশালী করার দাবি

কিশোর-তরুণদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিদ্যমান তামাক আইন সংশোধন এবং শক্তিশালী করার দাবি জানিয়েছেন তামাকের বিরুদ্ধে সোচ্চার তরুণ সমাজ। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১১ টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নারী মৈত্রীর প্রধান কার্যালয়ে “তামাক মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তরুণীদের কণ্ঠস্বর বলিষ্ঠ” করণ শির্ষক প্রশিক্ষণের শেষে এ দাবি জানান তারা। ২০ জন তরুণীদের সমন্বয়ে এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়।

নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলির সভাপতিত্বে প্রশিক্ষণের বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোহাম্মদ আবদুস সালাম মিয়া, প্রোগ্রামস ম্যানেজার, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস বাংলাদেশ।

প্রশিক্ষণে তামাকের ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে তরুণীদের সামনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নারী মৈত্রীর প্রোজেক্ট কোঅর্ডিনেটর নাসরিন আকতার। তিনি জানান, তামাক ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে। বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন এবং কর্মক্ষেত্র, পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন লাখো মানুষ। বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল-এফসিটিসি’তে স্বাক্ষরকারী প্রথম দেশ। তামাকের মহামারী সম্পর্কিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ধুমপানমুক্ত পরিবেশ এবং তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রণোদনা নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে এখনও সর্বোত্তম মান অর্জন করতে পারেনি।তাই দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি এড়াতে বিদ্যমান ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (সংশোধিত ২০১৩)’ এখনই ডব্লিউএইচও ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোলের (এফসিটিসি) আলোকে সংশোধন করা প্রয়োজন। সংশোধীত এই প্রস্তাবিত আইন পাশ হলে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের দুর্বলতাগুলো দূর হবে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এফসিটিসি’র সুপারিশসমূহের কার্যকর বাস্তবায়ন এবং বৈশ্বিক সর্বোৎকৃষ্ট অনুশীলনের আলোকে বাংলাদেশের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি বৈশ্বিক মানদন্ডে উপনীত হবে।

বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে এফসিটিসির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত খসড়ায় যে বিষয়গুলো প্রস্তাব করা হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- অধূমপায়ীদের সুরক্ষার জন্য সব পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা,তামাক পণ্যের প্রচার বন্ধ করার জন্য বিক্রয় কেন্দ্রে তামাক পণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা,তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা,ই-সিগারেট বা ইমার্জিং হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্ট আমদানি,উৎপাদন,ব্যবহার ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা,তামাক পণ্যের সব প্রকার খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ করা ও সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা।
নারী এবং শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য তামাক অত্যন্ত ক্ষতিকর। শাহীন আকতার ডলি বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন। যেখানে নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।পরোক্ষ ধূমপানের কারণে নারীর প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস,গর্ভপাত এবং সন্তান জন্মদানে মা ও শিশু উভয়ই মৃত্যুর মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই নারী-শিশু এবং অধূমপায়ীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাসের জন্য তরুণীদের কণ্ঠস্বর বলিষ্ঠ করতে আহ্বান জানান তিনি।

তামাক কোম্পানিগুলোর নানান রকম কূটকৌশল এবং প্রচার প্রচারণা তরুণদের তামাকের প্রতি আগ্রহ তৈরি হওয়ার একটি অন্যতম কারণ। তাই সিগারেট ব্যবসায়ীদের নানান রকম অপপ্রচারের বিরুদ্ধে তরুণদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস বাংলাদেশ এর প্রোগ্রামস ম্যানেজার মোহাম্মদ আবদুস সালাম মিয়া।

তিনি বলেন “জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে তামাক কোম্পানিগুলো বিভিন্ন অপতথ্য ছড়িয়ে আইন সংশোধনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। তামাক কোম্পানি গুলোর দাবি, আইন সংশোধন হলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাবে।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.