বুয়েটে জুনিয়রদের ভয়ঙ্কর রাত by মরিয়ম চম্পা
বাংলাদেশ
প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) দু’দিনের সাপ্তাহিক ছুটি শুরু হয়
বৃহস্পতিবার থেকে। সারা সপ্তাহ ক্লাস শেষে বৃহস্পতি এবং শুক্রবার দু’দিন
তাদের সাপ্তাহিক ছুটি। বুধবার সন্ধ্যা থেকে দু’দিনের জন্য ক্লাস-পরীক্ষার
চাপ কমে যায়। কিন্তু এই বুধবার রাতই বিভিন্ন হলের জুনিয়র শিক্ষার্থীদের
কাছে আতঙ্ক হয়ে আসে। কারণ এই রাতেই হলের ছাত্রলীগ নেতা বা সিনিয়রদের কাছে
জুনিয়র শিক্ষার্থীদের নানা নির্যাতনের শিকার হতে হয়। এ বিষয়ে শেরে বাংলা
হলের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী বলেন, বুয়েটে মূলত সে সকল
শিক্ষার্থীরাই চান্স পেয়ে থাকেন যাদের মাথা ঠান্ডা। কারণ মাথা গরম
শিক্ষার্থী কখনোই ইঞ্জিনিয়ারিং এর মতো বিষয়ে পড়তে পারে না। আমাদের ক্লাসের
পড়া থেকে শুরু করে জীবনের সব সিদ্ধান্তগুলোই ঠান্ডা মাথায় নিতে হয়।
সপ্তাহে ছুটির দুদিন শিক্ষার্থীদের কাছে অনেকটা ঈদের মতো। কারণ এই সময়টাতে আমরা নিজেদের মতো করে সময় কাটাই। আর সাপ্তাহিক ছুটি মানে আমরা বুধবার রাত থেকে হিসাব করি। কিন্তু এই রাতটিই আমাদের কাছে ভয়ের এবং আতঙ্কের। কারণ হলের সিনিয়র ভাইয়েরা বিশেষ করে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা এই রাতটিকে তাদের টর্চার বা র্যাগিংয়ের উপযুক্ত রাত হিসেবে ব্যবহার করে। এই রাতে তারা মদসহ যাবতীয় নেশা করে এক্সট্রা পেনিক হিসেবে জুনিয়রদের পিটিয়ে বাড়তি আনন্দ পায়।
একই হলের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমি যখন প্রথম বর্ষে তখন আমার ভাগ্যে এই ভয়ংকর বুধবার রাতটি একবার এসেছিল। হলের প্রতিটি রুমে মূলত চারজন করে শিক্ষার্থী থাকে। আমাদের রুমে বাকী দুজন রুম মেটের মাথা ঠান্ডা থাকলেও আমার আর আমার পাশের বেডের রুম মেট উত্তপ্ত মেজাজের। কোনো অন্যায় দেখলে মুখ বন্ধ করে থাকতে পারি না। আমরা নিজেদের মতো করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে নিজেদের মতামত প্রকাশ করতাম। কিন্তু এটার জন্য যে বড় ভাইদের ভয়ংকর র্যাগিংয়ের শিকার হব সেটা বুঝতে পারিনি।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে কোনো এক বুধবার রাতে আমি আর আমার রুমমেটের ডাক আসে। যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্ট্যাম্প দিয়ে আমাদের পিঠে আর নিতম্বে এলোমেলো ভাবে পিটানো শুরু করে। এরপর আমাদের মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। আমাদের দোষ ছিল একটাই আমরা তখন সমসাময়িক রাজনৈতিক কোনো একটা বিষয় নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম।
তিতুমীর হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি এখনো রাতে ভালো ঘুমাতে পারিনা। প্রায় রাতেই ঘুম ভেঙ্গে যায়। হলে আসার পর বড় ভাই এবং তাদের দলের নেতাদের সঙ্গে কেন রুমে গিয়ে দেখা করিনি। সালাম-আদাব দেইনি। অজান্তে কোনো এক বড় ভাইয়ের সামনে দিয়ে তার আগে হেঁটে গিয়েছিলাম। এটাই ছিল আমার দোষ। হঠাৎ এক ছুটির দিন রাতে আমাকে ডাকা হয়। গণরুমে গিয়ে বড়ভাইদের সালাম দেয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজটি না করাতে মূলত আমাকে ডাকা হয়। যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমাকে বললো, রাখি সাওয়ান্তের মতো নেচে দেখা। আমি লজ্জায় কেঁদে ফেলি। এসময় হঠাৎ একজন এসে আমাকে পেছন থেকে লাথি মেরে ফেলে দেয়। সেও জুনিয়র ছিল। উঠে দাঁড়ালাম। এরপরে কি হয়েছে মনে করতে চাই না।
সোহরাওয়াার্দী হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, এসব ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় জুনিয়রদের দিয়ে জুনিয়রদের পিটানো হয়। কারণ, হলে আসার পরেই যে সকল জুনিয়ররা রাজনীতিতে যোগ দেয় তারা প্রথম দিকে একটু ভীতু প্রকৃতির থাকে। ভয় ভাঙ্গানো, হাত পাকানো এবং সাহস বাড়াতে তাদের দিয়ে জুনিয়রদের পিটানো হয়। এসময় বড় ভাইরা পাশ থেকে বলেন, ভালো করে হাত পাকা। ভবিষ্যতে কাউকে মারতে যেন হাত বা বুক না কাপে। আমরা আছি। চালিয়ে যা। এভাবে জুনিয়রদের দিয়ে জুনিয়রদের পেটানো হয়।
ড. এম. এ. রশীদ হলের একজন শিক্ষার্থী বলেন, ক্যাম্পাসের হলগুলোতে জুনিয়রদের র্যাগিং-এর বিষয়টি খুবই কমন। আবাসিক হলে আছে অথচ ছোট বড় র্যাগিং এর শিকার হয় নি এমনটা নেই বললেই চলে। চড়-থাপ্পড়, কিল-ঘুষি, বাজে গালি শোনা এগুলো নিত্য নৈমত্যিক। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে হলে ভিন্নমতাদর্শী বিকল্প কোনো ছাত্র সংগঠন নেই। ফলে একচোটিয়াভাবে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন রাজত্ব করে যাচ্ছে। কাজেই হলে থেকে তাদের মতাদর্শের বাইরে গিয়ে কেউ কোনো কথা বলার দুঃসাহস দেখানো প্রায় অসম্ভব। যারা কোনো রকমের দলাদলি এড়িয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে পড়াশোনা করতে চায়, তারাই মূলত ছাত্রলীগ নেতাদের রোষানল এবং নির্যাতনের শিকার বেশি হন। কেউ নিয়মিত নামাজ-রোজা করলেই তাকে ‘শিবিরকর্মী’ ট্যাগ দেয়া হয়। সে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান হলেও।
আহসান উল্লাহ হলের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, যখন প্রথম বর্ষে তখন বড় ভাইদের দ্বারা র্যাগিং এর শিকার হয়েছি। এখন সিনিয়র হয়েছি। কিন্তু কাউকে তো কখনো র্যাগিং করিনি। এটা সম্পূর্ণরূপে কুরুচিপূর্ণ একটি কাজ। এটা যারা করে তারা একধরনের পৈশাচিক আনন্দ পাওয়ার জন্যই মূলত করে। বুয়েটে পড়ালেখার এতো চাপ থাকা সত্বেও তারা এসব করার সময় পায় কখন ভেবে পাই না।
সপ্তাহে ছুটির দুদিন শিক্ষার্থীদের কাছে অনেকটা ঈদের মতো। কারণ এই সময়টাতে আমরা নিজেদের মতো করে সময় কাটাই। আর সাপ্তাহিক ছুটি মানে আমরা বুধবার রাত থেকে হিসাব করি। কিন্তু এই রাতটিই আমাদের কাছে ভয়ের এবং আতঙ্কের। কারণ হলের সিনিয়র ভাইয়েরা বিশেষ করে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা এই রাতটিকে তাদের টর্চার বা র্যাগিংয়ের উপযুক্ত রাত হিসেবে ব্যবহার করে। এই রাতে তারা মদসহ যাবতীয় নেশা করে এক্সট্রা পেনিক হিসেবে জুনিয়রদের পিটিয়ে বাড়তি আনন্দ পায়।
একই হলের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমি যখন প্রথম বর্ষে তখন আমার ভাগ্যে এই ভয়ংকর বুধবার রাতটি একবার এসেছিল। হলের প্রতিটি রুমে মূলত চারজন করে শিক্ষার্থী থাকে। আমাদের রুমে বাকী দুজন রুম মেটের মাথা ঠান্ডা থাকলেও আমার আর আমার পাশের বেডের রুম মেট উত্তপ্ত মেজাজের। কোনো অন্যায় দেখলে মুখ বন্ধ করে থাকতে পারি না। আমরা নিজেদের মতো করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে নিজেদের মতামত প্রকাশ করতাম। কিন্তু এটার জন্য যে বড় ভাইদের ভয়ংকর র্যাগিংয়ের শিকার হব সেটা বুঝতে পারিনি।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে কোনো এক বুধবার রাতে আমি আর আমার রুমমেটের ডাক আসে। যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্ট্যাম্প দিয়ে আমাদের পিঠে আর নিতম্বে এলোমেলো ভাবে পিটানো শুরু করে। এরপর আমাদের মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। আমাদের দোষ ছিল একটাই আমরা তখন সমসাময়িক রাজনৈতিক কোনো একটা বিষয় নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম।
তিতুমীর হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি এখনো রাতে ভালো ঘুমাতে পারিনা। প্রায় রাতেই ঘুম ভেঙ্গে যায়। হলে আসার পর বড় ভাই এবং তাদের দলের নেতাদের সঙ্গে কেন রুমে গিয়ে দেখা করিনি। সালাম-আদাব দেইনি। অজান্তে কোনো এক বড় ভাইয়ের সামনে দিয়ে তার আগে হেঁটে গিয়েছিলাম। এটাই ছিল আমার দোষ। হঠাৎ এক ছুটির দিন রাতে আমাকে ডাকা হয়। গণরুমে গিয়ে বড়ভাইদের সালাম দেয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজটি না করাতে মূলত আমাকে ডাকা হয়। যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমাকে বললো, রাখি সাওয়ান্তের মতো নেচে দেখা। আমি লজ্জায় কেঁদে ফেলি। এসময় হঠাৎ একজন এসে আমাকে পেছন থেকে লাথি মেরে ফেলে দেয়। সেও জুনিয়র ছিল। উঠে দাঁড়ালাম। এরপরে কি হয়েছে মনে করতে চাই না।
সোহরাওয়াার্দী হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, এসব ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় জুনিয়রদের দিয়ে জুনিয়রদের পিটানো হয়। কারণ, হলে আসার পরেই যে সকল জুনিয়ররা রাজনীতিতে যোগ দেয় তারা প্রথম দিকে একটু ভীতু প্রকৃতির থাকে। ভয় ভাঙ্গানো, হাত পাকানো এবং সাহস বাড়াতে তাদের দিয়ে জুনিয়রদের পিটানো হয়। এসময় বড় ভাইরা পাশ থেকে বলেন, ভালো করে হাত পাকা। ভবিষ্যতে কাউকে মারতে যেন হাত বা বুক না কাপে। আমরা আছি। চালিয়ে যা। এভাবে জুনিয়রদের দিয়ে জুনিয়রদের পেটানো হয়।
ড. এম. এ. রশীদ হলের একজন শিক্ষার্থী বলেন, ক্যাম্পাসের হলগুলোতে জুনিয়রদের র্যাগিং-এর বিষয়টি খুবই কমন। আবাসিক হলে আছে অথচ ছোট বড় র্যাগিং এর শিকার হয় নি এমনটা নেই বললেই চলে। চড়-থাপ্পড়, কিল-ঘুষি, বাজে গালি শোনা এগুলো নিত্য নৈমত্যিক। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে হলে ভিন্নমতাদর্শী বিকল্প কোনো ছাত্র সংগঠন নেই। ফলে একচোটিয়াভাবে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন রাজত্ব করে যাচ্ছে। কাজেই হলে থেকে তাদের মতাদর্শের বাইরে গিয়ে কেউ কোনো কথা বলার দুঃসাহস দেখানো প্রায় অসম্ভব। যারা কোনো রকমের দলাদলি এড়িয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে পড়াশোনা করতে চায়, তারাই মূলত ছাত্রলীগ নেতাদের রোষানল এবং নির্যাতনের শিকার বেশি হন। কেউ নিয়মিত নামাজ-রোজা করলেই তাকে ‘শিবিরকর্মী’ ট্যাগ দেয়া হয়। সে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান হলেও।
আহসান উল্লাহ হলের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, যখন প্রথম বর্ষে তখন বড় ভাইদের দ্বারা র্যাগিং এর শিকার হয়েছি। এখন সিনিয়র হয়েছি। কিন্তু কাউকে তো কখনো র্যাগিং করিনি। এটা সম্পূর্ণরূপে কুরুচিপূর্ণ একটি কাজ। এটা যারা করে তারা একধরনের পৈশাচিক আনন্দ পাওয়ার জন্যই মূলত করে। বুয়েটে পড়ালেখার এতো চাপ থাকা সত্বেও তারা এসব করার সময় পায় কখন ভেবে পাই না।
No comments