ইয়েমেন থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সেনা প্রত্যাহারের নেপথ্য কারণ: পর্ব-এক
আপনারা
হয়তো এরই মধ্যে শুনেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাত ইয়েমেনের বিরুদ্ধে চলমান
যুদ্ধে বিভিন্ন ঘাঁটিতে মোতায়েন তাদের সেনা পুরোপুরি প্রত্যাহার কিংবা সেনা
সংখ্যা কমিয়ে আনার পদক্ষেপ নিয়েছে। ইয়েমেনের এ ঘোষণায় আন্তর্জাতিক সংবাদ ও
রাজনৈতিক মহলে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
ইয়েমেন থেকে সেনা প্রত্যাহারে আমিরাতের সিদ্ধান্তের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে চারটি কারণের কথা উল্লেখ করা যায়। প্রথমত, আমিরাতের অভ্যন্তরীণ সংকট, দ্বিতীয়ত, ইয়েমেন বিরোধী জোটের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, তৃতীয়ত যুদ্ধের ময়দানে প্রতিকুল পরিস্থিতি এবং চতুর্থ কারণ হচ্ছে আঞ্চলিক রাজনৈতিক পরিবর্তিত পরিস্থিতি।
সাতটি অঙ্গরাজ্য নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত গঠিত। বিভিন্ন ইস্যুতে এই অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে যেমন মতবিরোধ রয়েছে তেমনি ইয়েমেন বিষয়েও তাদের মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য বিরাজ করছে। শারজা, দুবাই ও রাআস আল খেইমে অঙ্গরাজ্যগুলো প্রথম থেকেই ইয়েমেন যুদ্ধের বিরোধিতা করে এসেছে। তারা এখন ইয়েমেন যুদ্ধের অবসান ঘটানোর জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন যায়েদের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেছে। যুদ্ধের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থানের প্রধান কারণ হচ্ছে, ইয়েমেনে রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের কারণে আর্থিক দিক দিয়ে তারা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ইয়েমেন থেকে সেনা প্রত্যাহার কিংবা সেনা সংখ্যা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্তের পেছনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে, ইয়েমেনবিরোধী সামরিক জোটের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং ইয়েমেন যুদ্ধের ব্যাপারে রিয়াদের সঙ্গে আবু ধাবির তীব্র মতপার্থক্য। যুদ্ধ শুরুর পর সর্বশেষ গত দুই বছর ধরে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ চলে আসছে। ইয়েমেনের পদত্যাগী সরকারের প্রধানমন্ত্রী খালেদ বাহারের অপসারণকে কেন্দ্র করে মূলত এই বিরোধের সূচনা হয়। খালেদ বাহা সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের খুব ঘনিষ্ঠ ও কাছের মানুষ। কিন্তু সৌদি আরব ইয়েমেনের পদত্যাগী সরকারের প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মানসুর হাদির ওপর প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে খালেদ বাহাকে অপসারণ করে এবং তার জায়গায় ইয়েমেনের পদত্যাগী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আহমাদ বিন দাগারকে নিয়োগ দেয়। এ থেকে বোঝা যায়, ইয়েমেন সরকারের গঠন কাঠামো ও দেশটিকে নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য বিরাজ করছে।
২০১৭ সালের মে মাসে ইয়েমেন ইস্যুতে সৌদি আরব ও আমিরাতের মধ্যকার মতবিরোধের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। বিশেষ করে ইয়েমেনের পদত্যাগী সরকারের প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মানসুর হাদি ২০১৭ সালের মে মাসে এডেনের গভর্নর ইদ্রিস আয যাবিদি ও তার সহকারীকে অপসারণ করলে রিয়াদ ও আবুধাবির মধ্যে তীব্র বিরোধের সৃষ্টি হয়। কারণ ওই অপসারণের ফলে ইদ্রিস আয যাবিদির সমর্থকরা বিক্ষোভ করে এবং তারা ইদ্রিস আয যাবিদির নিয়ন্ত্রণে দক্ষিণ ইয়েমেনের অন্তর্বর্তী পরিষদ গঠন করে যার নেতৃত্ব থাকবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের হাতে। আমিরাতের সমর্থকদের এ পদক্ষেপ ও ইয়েমেন থেকে আমিরাতের সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের ফলে আমিরাত সমর্থক যাবিদির সমর্থকদের সঙ্গে সৌদি সমর্থক মানসুর হাদির মিলিশিয়া বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সংঘাত ও বিরোধ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, আমিরাত সমর্থক দক্ষিণ ইয়েমেনের অন্তর্বর্তী পরিষদের অনুগত বাহিনী মানসুর হাদির অনুগত সেনাবাহিনীকে সন্ত্রাসী ও দখলদার হিসেবে উল্লেখ করেছে।
ইয়েমেনবিরোধী সামরিক জোটে যদিও সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রধান ভূমিকা পালন করছে কিন্তু এ দুই দেশের মধ্যে ব্যাপক রাজনৈতিক মতবিরোধ রয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ইয়েমেনে তৎপর 'ইখওয়ানি আল এসলাহ' দলকে পছন্দ না করলেও সৌদি আরব এ দলটির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে এবং তাদেরকে ইয়েমেন সরকারের অংশীদার করতে চায়। এ অবস্থায় সৌদিপন্থী আল কায়দা ও তালেবানের মতো অন্যান্য সব সালাফি গোষ্ঠীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দলগুলোর বিরোধীদের প্রতি সমর্থন দিচ্ছে আমিরাত।
ইরান ইস্যুতেও রিয়াদ ও আবু ধাবির মধ্যে রাজনৈতিক মতপার্থক্য রয়েছে। আমিরাত বাহ্যিকভাবে ইরান বিরোধী অবস্থান নিলেও বাস্তবে তেহরানের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রয়েছে। কিন্তু ইরান-আমিরাতের এ সম্পর্ক সৌদি আরবের মোটেই পছন্দ নয়। সংযুক্ত আরব আমিরাত ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে চাইলেও সৌদি আরব সেই সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক অধ্যাপক স্যামুয়েল রামানি এ ব্যাপারে বলেছেন, "আমিরাত ও সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল রয়েছে বলে মনে হলেও বাস্তবতা হচ্ছে স্বার্থগত বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য রয়েছে এমনকি তাদের মধ্যে আদর্শিক মিলও নেই। এ ছাড়া, মধ্যপ্রাচ্য এলাকার ব্যবস্থাপনা নিয়েও রিয়াদ ও আবু ধাবির মধ্যে প্রকাশ্য বিরোধ চলে আসছে। সৌদি আরব এ অঞ্চলে তাদের প্রভাব বিস্তারকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করে থাকে এবং এ কারণে তারা ইরান ও ইরান সমর্থক গোষ্ঠীগুলোকে নিজেদের জন্য হুমকি বলে মনে করে। কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাত সৌদি আরবের এ নীতির সঙ্গে একমত নয়।"
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে. কোনো কোনো সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত সম্মানের সঙ্গে ইয়েমেনের চোরাবালি থেকে উদ্ধারের জন্য ইরানের কাছে সাহায্য চেয়েছে। লেবাননের দৈনিক আল আখবার এ ব্যাপারে লিখেছে, "ধারণা করা হচ্ছে ইয়েমেন যুদ্ধের আগুন আমিরাতের ভেতরেও ছড়িয়ে পড়ায় আবু ধাবি কর্তৃপক্ষ নীতি পাল্টিয়েছেন এবং এ থেকে উদ্ধারের জন্য তারা তেহরান ও মস্কোর শরণাপন্ন হয়েছে।"
এ ভাবে ইরান ও ইয়েমেন ইস্যুতে তীব্র বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আমিরাত। এ ছাড়া, আরব বিশ্বে সুন্নি মুসলমানদের নেতা বা অভিভাবক হওয়ার জন্য সৌদি আরব ও আমিরাতের মধ্যে বহুদিন ধরেই প্রতিযোগিতা চলে আসছে এবং এ নিয়ে রাজনৈতিক বিরোধ এখন তুঙ্গে। সাংবাদিক ডেভিড হেরাতয বার্তা সংস্থা মিডিলইস্ট আই এ এক প্রতিবেদনে লিখেছেন, "সুন্নি বিশ্বকে নেতৃত্ব দেয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে আমিরাত ও সৌদি আরব।"
ইয়েমেন থেকে আমিরাতের সেনা প্রত্যাহারের পেছনে আরেকটি কারণ হচ্ছে যুদ্ধের ময়দানে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট সুবিধা করতে পারছে না। এর কারণ হচ্ছে, ইয়েমেনের সরকারী ও আনসারুল্লাহ বাহিনী এখন পাল্টা আঘাত হানা শুরু করেছে। যুদ্ধের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে আনসারুল্লাহ নেতা আব্দুল মালেক আল হুথি বলেছেন, "পঞ্চম বছরের যুদ্ধ আমাদের জন্য বিজয় এনে দেবে।" তাই সংযুক্ত আরব আমিরাত বুঝতে পেরেছে ইয়েমেন যুদ্ধে তারা অচলাবস্থার সম্মুখীন হয়েছে এবং নিশ্চিত পরাজয় বরণ করতে হবে। ইয়েমেনিরা যেভাবে সৌদি আরবের তেল স্থাপনা ও বিমান বন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালানো শুরু করেছে তাতে আমিরাত আরো বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এসব কারণে আমিরাত শেষ পর্যন্ত ইয়েমেন যুদ্ধ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইয়েমেন থেকে সেনা প্রত্যাহারে আমিরাতের সিদ্ধান্তের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে চারটি কারণের কথা উল্লেখ করা যায়। প্রথমত, আমিরাতের অভ্যন্তরীণ সংকট, দ্বিতীয়ত, ইয়েমেন বিরোধী জোটের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, তৃতীয়ত যুদ্ধের ময়দানে প্রতিকুল পরিস্থিতি এবং চতুর্থ কারণ হচ্ছে আঞ্চলিক রাজনৈতিক পরিবর্তিত পরিস্থিতি।
সাতটি অঙ্গরাজ্য নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত গঠিত। বিভিন্ন ইস্যুতে এই অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে যেমন মতবিরোধ রয়েছে তেমনি ইয়েমেন বিষয়েও তাদের মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য বিরাজ করছে। শারজা, দুবাই ও রাআস আল খেইমে অঙ্গরাজ্যগুলো প্রথম থেকেই ইয়েমেন যুদ্ধের বিরোধিতা করে এসেছে। তারা এখন ইয়েমেন যুদ্ধের অবসান ঘটানোর জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন যায়েদের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেছে। যুদ্ধের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থানের প্রধান কারণ হচ্ছে, ইয়েমেনে রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের কারণে আর্থিক দিক দিয়ে তারা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ইয়েমেন থেকে সেনা প্রত্যাহার কিংবা সেনা সংখ্যা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্তের পেছনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে, ইয়েমেনবিরোধী সামরিক জোটের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং ইয়েমেন যুদ্ধের ব্যাপারে রিয়াদের সঙ্গে আবু ধাবির তীব্র মতপার্থক্য। যুদ্ধ শুরুর পর সর্বশেষ গত দুই বছর ধরে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ চলে আসছে। ইয়েমেনের পদত্যাগী সরকারের প্রধানমন্ত্রী খালেদ বাহারের অপসারণকে কেন্দ্র করে মূলত এই বিরোধের সূচনা হয়। খালেদ বাহা সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের খুব ঘনিষ্ঠ ও কাছের মানুষ। কিন্তু সৌদি আরব ইয়েমেনের পদত্যাগী সরকারের প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মানসুর হাদির ওপর প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে খালেদ বাহাকে অপসারণ করে এবং তার জায়গায় ইয়েমেনের পদত্যাগী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আহমাদ বিন দাগারকে নিয়োগ দেয়। এ থেকে বোঝা যায়, ইয়েমেন সরকারের গঠন কাঠামো ও দেশটিকে নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য বিরাজ করছে।
২০১৭ সালের মে মাসে ইয়েমেন ইস্যুতে সৌদি আরব ও আমিরাতের মধ্যকার মতবিরোধের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। বিশেষ করে ইয়েমেনের পদত্যাগী সরকারের প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মানসুর হাদি ২০১৭ সালের মে মাসে এডেনের গভর্নর ইদ্রিস আয যাবিদি ও তার সহকারীকে অপসারণ করলে রিয়াদ ও আবুধাবির মধ্যে তীব্র বিরোধের সৃষ্টি হয়। কারণ ওই অপসারণের ফলে ইদ্রিস আয যাবিদির সমর্থকরা বিক্ষোভ করে এবং তারা ইদ্রিস আয যাবিদির নিয়ন্ত্রণে দক্ষিণ ইয়েমেনের অন্তর্বর্তী পরিষদ গঠন করে যার নেতৃত্ব থাকবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের হাতে। আমিরাতের সমর্থকদের এ পদক্ষেপ ও ইয়েমেন থেকে আমিরাতের সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের ফলে আমিরাত সমর্থক যাবিদির সমর্থকদের সঙ্গে সৌদি সমর্থক মানসুর হাদির মিলিশিয়া বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সংঘাত ও বিরোধ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, আমিরাত সমর্থক দক্ষিণ ইয়েমেনের অন্তর্বর্তী পরিষদের অনুগত বাহিনী মানসুর হাদির অনুগত সেনাবাহিনীকে সন্ত্রাসী ও দখলদার হিসেবে উল্লেখ করেছে।
ইয়েমেনবিরোধী সামরিক জোটে যদিও সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রধান ভূমিকা পালন করছে কিন্তু এ দুই দেশের মধ্যে ব্যাপক রাজনৈতিক মতবিরোধ রয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ইয়েমেনে তৎপর 'ইখওয়ানি আল এসলাহ' দলকে পছন্দ না করলেও সৌদি আরব এ দলটির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে এবং তাদেরকে ইয়েমেন সরকারের অংশীদার করতে চায়। এ অবস্থায় সৌদিপন্থী আল কায়দা ও তালেবানের মতো অন্যান্য সব সালাফি গোষ্ঠীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দলগুলোর বিরোধীদের প্রতি সমর্থন দিচ্ছে আমিরাত।
ইরান ইস্যুতেও রিয়াদ ও আবু ধাবির মধ্যে রাজনৈতিক মতপার্থক্য রয়েছে। আমিরাত বাহ্যিকভাবে ইরান বিরোধী অবস্থান নিলেও বাস্তবে তেহরানের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রয়েছে। কিন্তু ইরান-আমিরাতের এ সম্পর্ক সৌদি আরবের মোটেই পছন্দ নয়। সংযুক্ত আরব আমিরাত ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে চাইলেও সৌদি আরব সেই সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক অধ্যাপক স্যামুয়েল রামানি এ ব্যাপারে বলেছেন, "আমিরাত ও সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল রয়েছে বলে মনে হলেও বাস্তবতা হচ্ছে স্বার্থগত বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য রয়েছে এমনকি তাদের মধ্যে আদর্শিক মিলও নেই। এ ছাড়া, মধ্যপ্রাচ্য এলাকার ব্যবস্থাপনা নিয়েও রিয়াদ ও আবু ধাবির মধ্যে প্রকাশ্য বিরোধ চলে আসছে। সৌদি আরব এ অঞ্চলে তাদের প্রভাব বিস্তারকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করে থাকে এবং এ কারণে তারা ইরান ও ইরান সমর্থক গোষ্ঠীগুলোকে নিজেদের জন্য হুমকি বলে মনে করে। কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাত সৌদি আরবের এ নীতির সঙ্গে একমত নয়।"
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে. কোনো কোনো সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত সম্মানের সঙ্গে ইয়েমেনের চোরাবালি থেকে উদ্ধারের জন্য ইরানের কাছে সাহায্য চেয়েছে। লেবাননের দৈনিক আল আখবার এ ব্যাপারে লিখেছে, "ধারণা করা হচ্ছে ইয়েমেন যুদ্ধের আগুন আমিরাতের ভেতরেও ছড়িয়ে পড়ায় আবু ধাবি কর্তৃপক্ষ নীতি পাল্টিয়েছেন এবং এ থেকে উদ্ধারের জন্য তারা তেহরান ও মস্কোর শরণাপন্ন হয়েছে।"
এ ভাবে ইরান ও ইয়েমেন ইস্যুতে তীব্র বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আমিরাত। এ ছাড়া, আরব বিশ্বে সুন্নি মুসলমানদের নেতা বা অভিভাবক হওয়ার জন্য সৌদি আরব ও আমিরাতের মধ্যে বহুদিন ধরেই প্রতিযোগিতা চলে আসছে এবং এ নিয়ে রাজনৈতিক বিরোধ এখন তুঙ্গে। সাংবাদিক ডেভিড হেরাতয বার্তা সংস্থা মিডিলইস্ট আই এ এক প্রতিবেদনে লিখেছেন, "সুন্নি বিশ্বকে নেতৃত্ব দেয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে আমিরাত ও সৌদি আরব।"
ইয়েমেন থেকে আমিরাতের সেনা প্রত্যাহারের পেছনে আরেকটি কারণ হচ্ছে যুদ্ধের ময়দানে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট সুবিধা করতে পারছে না। এর কারণ হচ্ছে, ইয়েমেনের সরকারী ও আনসারুল্লাহ বাহিনী এখন পাল্টা আঘাত হানা শুরু করেছে। যুদ্ধের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে আনসারুল্লাহ নেতা আব্দুল মালেক আল হুথি বলেছেন, "পঞ্চম বছরের যুদ্ধ আমাদের জন্য বিজয় এনে দেবে।" তাই সংযুক্ত আরব আমিরাত বুঝতে পেরেছে ইয়েমেন যুদ্ধে তারা অচলাবস্থার সম্মুখীন হয়েছে এবং নিশ্চিত পরাজয় বরণ করতে হবে। ইয়েমেনিরা যেভাবে সৌদি আরবের তেল স্থাপনা ও বিমান বন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালানো শুরু করেছে তাতে আমিরাত আরো বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এসব কারণে আমিরাত শেষ পর্যন্ত ইয়েমেন যুদ্ধ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
No comments