বিক্ষোভ, আল্টিমেটাম রাজনীতিকে শিক্ষক সমিতির ‘না’
আবরার
হত্যাকাণ্ডের পর প্রতিবাদে উত্তাল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়
ক্যাম্পাস। আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়েছে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও। বিক্ষোভ
প্রতিবাদ কর্মসূচিতে দাবি উঠেছে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের। এমন
দাবির মধ্যেই গতকাল বুয়েট শিক্ষক সমিতি শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা
দিয়েছে। বুয়েটে ছাত্র এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনীতি বন্ধেও দ্রুত
ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন তারা। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এবং বর্তমান
শিক্ষার্থীদের মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছে দেশসেরা এ বিদ্যাপীঠকে
রাজনীতিমুক্ত করার। আগের দিন পেশ করা বুয়েট শিক্ষার্থীদের আট দফা দাবি
গতকাল ১০ দফায় ঠেকেছে। দিনভর বিক্ষোভের পর সন্ধ্যায় মোমবাতি প্রজ্জ্বলন
কর্মসূচি পালন করেন তারা।
দাবি পূরণে প্রশাসনকে সাত দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে মানববন্ধন ও মৌন মিছিল করেছে বুয়েট শিক্ষক সমিতি। এসময় তারাও পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করেন। বুয়েট শিক্ষক সমিতি শিক্ষকদের সকল প্রকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে। এছাড়া ছাত্র ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়েও শিগগিরই প্রশাসনের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানানো হয়। এদিকে বুয়েট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনও সাত দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। বুয়েটের সাবেক-বর্তমান ও শিক্ষক সমিতি ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করণের দাবি জানিয়েছেন। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ ভিসি অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলামের পদত্যাগও দাবি করা হয়। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে বিকালে নিজের ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করেন শের-ই বাংলা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল খান। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সন্ত্রাসবিরোধী রাজু স্মারক ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এসময় তারা আবরার হত্যার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে হত্যাকারী ছাত্রলীগ নেতাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। মানববন্ধন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী কালো পতাকা মিছিল নিয়ে বুয়েটের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছেন।
পৃথকভাবে বিক্ষোভ করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও ছাত্র ফেডারেশন।
আবরার হত্যার প্রতিবাদ ও হত্যাকারী ছাত্রলীগ নেতাদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গতকাল তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকে দিনভর চলে এ বিক্ষোভ। এসময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা প্রশাসনকে ১০ দফা দাবিতে সাত দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয়। দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা একটি প্রতিবাদী মিছিল নিয়ে বুয়েট ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেন। এসময় তারা পলাশী এবং চানখারপুল সংযোগ রাস্তা বন্ধ করে দেন। এ সময় তারা ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে, ‘শিক্ষা সন্ত্রাস একসঙ্গে চলে না’, ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই খুনিদের ফাঁসি চাই’, ‘ভিসি তুমি নীরব কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘খুনিদের ঠিকানা এই ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘সন্ত্রাসীদের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। আন্দোলনকারীরা এসময় তাদের সব দাবিগুলো না মানা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন।
শিক্ষার্থীদের দশ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- খুনিদের শানাক্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত; খুনিদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১১ অক্টোবরের মধ্যে আজীবন বহিষ্কার; আবরার হত্যা মামলার সব খরচ এবং ক্ষতিপূরণ বিশ্ববিদ্যালয়কে বহন করা; মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের অধীন স্বল্পতম সময়ে নিস্পত্তি করা; অবিলম্বে চার্জশিটের কপিসহ অফিসিয়াল নোটিশ দেয়া; বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা; ঘটনার পর ভিসি কেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হননি এবং ৩৮ ঘন্টা পর গিয়ে কোনো প্রশ্নের উত্তর না দেয়ায় বুধবার দুপুর ২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের কাছে তার জবাব দেয়া; আবাসিক হলগুলোতে র্যাগ এর নামে এবং ভিন্নমত দমানোর নামে নির্যাতন বন্ধে প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করা; এ ধরণের ঘটনা প্রকাশে একটি কমন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা; নিরাপত্তার জন্য সব হলের উইংয়ের দুই পাশে সিসি ক্যামেরা বসানো এবং ১১ই অক্টোবরের মধ্যে শেরে বাংলা হলের প্রভোস্টকে প্রত্যাহার করা। এদিকে, আন্দোলন চলাকালীন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন বুয়েটের ডিরেক্টর অফ স্টুডেন্ট ওয়েলফারের পরিচালক (ডিএসডব্লিউ) অধ্যাপক মিজানুর রহমান। এসময় শিক্ষার্থীরা কার নির্দেশে ক্যাম্পাসে পুলিশ আসলো এবং কার নির্দেশে গেলো এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, পলিটিক্যাল স্টুডেন্টদের ক্ষমতা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি। আমাদের কোনো কাজে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রয়োজন হলে আমরা নম্বর সংগ্রহ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরকে জানাই। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আমাদের তেমন একটা সখ্যতা নাই যতটা পলিটিক্যাল ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে সখ্যতা রয়েছে।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও ক্রমাগত চাপের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন বুয়েট শেরেবাংলা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল খান। পৌনে তিনটার দিকে বুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি একে মাসুদ সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভার সর্বসম্মতিক্রমে হলের ভিতরে বিভিন্ন ধরনের দোকান বন্ধ, বিভিন্ন টর্চার সেল বন্ধ, ছাত্ররাজনীতি বন্ধ, সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের প্রভাব বন্ধ, বহিরাগত ছাত্রদের হলে প্রবেশ নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে। একইসঙ্গে আমরা আগে এগুলো যে নিষিদ্ধ করতে পারিনি সেই দায় নেন শিক্ষকরা।
শের-ই বাংলা হলের প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ: এদিকে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে পদত্যাগ করেছেন বুয়েটের শের-ই বাংলা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাফর ইকবাল খান। গতকাল দুপুরে তিনি বুয়েট ভিসি, রেজিস্ট্রার ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালক বরাবর নিজের পদত্যাগপত্র জমা দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ কে এম মাসুদ। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে প্রভোস্ট পদত্যাগপত্র তিন জায়গায় জমা দিয়েছেন।
শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ, শিগগিরই ছাত্র রাজনীতির ব্যপারে সিদ্ধান্ত: বুয়েটে শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে শিক্ষক সমিতি। গতকাল ৩০০ শিক্ষকের উপস্থিতিতে বুয়েট শিক্ষক সমিতির এক সভা থেকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভা শেষে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে ১০ দফা দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন। এরপর শিক্ষকরা আবরার হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন ও ক্যাম্পাসে মৌণ মিছিল করেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে শিক্ষক সমিতি ভিসি অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের পদত্যাগ দাবি করেন। আর ছাত্র রাজনীতি ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনীতি শিগগিরই প্রশাসনের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক একে এম মাসুদ এসব তথ্য জানান। শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে তিনি বলেন, আবরারের পরিবারের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। এ হত্যার পেছনে কর্তৃপক্ষেরও দায় রয়েছে। এই দায় আমরাও শিকার করছি, আমরাও এর দায় নিচ্ছি। দোষী ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে শিক্ষক সমিতি বলছে, আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হত্যাকারী ছাত্রদের আজীবন বহিষ্কার করতে হবে। আবাসিক হলগুলো থেকে বহিরাগতের সরাতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা। তিনি বলেন, আমরা বুয়েটে সকল প্রকার প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জরুরি ভিত্তিতে র্যাগিং এবং নির্যাতনের শাস্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে ওয়েবসাইটে কম্পেইন করার ব্যবস্থা করেছি। তিনি আরও বলেন, ভিসি যদি নিজে থেকে পদত্যাগ না করেন তবে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।
ভিসির পদত্যাগ ও ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের: এদিকে দ্বিতীয় দিনের মতো আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদ জানিয়েছে বুয়েট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন। গতকাল বুয়েটে এক প্রতিবাদ সমাবেশে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন সাত দফা দাবি করে। যেখানে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ ভিসি অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলামের পদত্যাগ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি করা হয়। বুয়েট অ্যালামনাইয়ের সভাপতি অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী এই সাত দফা দাবি পেশ করেন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- হত্যার সঙ্গে জড়িত সকলকে বিশেষ বিচার ট্রাাইব্যুনাল এর আওতায় এনে দ্রুততম সময়ে বিচার করা; জড়িত সকল ছাত্রকে অনতিবিলম্বে বুয়েট থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার; বুয়েট ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক দলসমূহের অঙ্গ সংগঠন ভিত্তিক ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মচারীদের সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড অবিলম্বে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা; বুয়েট প্রশাসনকে ঐতিহ্য পরিপন্থী যে কোনো ধরনের রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব ও প্রভাব মুক্ত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ; অতীতে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন অপরাধ কার্যক্রম এর তদন্ত, বিচার ও শাস্তি প্রদান এর ক্ষেত্রে ভিসিসহ বুয়েট প্রশাসনের ধারাবাহিক অবহেলা ও ব্যর্থতা এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের মদদ জুগিয়েছে- তাই অবিলম্বে ভিসির অপসারণসহ প্রশাসনের আমূল পরিবর্তন করে এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের মান অতীতের মত সমুন্নত রাখতে সুযোগ্য, নির্ভীক ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের পদায়ন করা; র্যাগিং এবং অন্যান্য অজুহাতে ছাত্র-ছাত্রী নির্যাতন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা ও ক্যাম্পাসে সকল ছাত্রের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং আবরার হত্যাসহ ইতিপূর্বে সাংঘটিত অন্যান্য ছাত্র নির্যাতনের ঘটনাবলির ক্ষেত্রে অসম্পূর্ণ বিচার কার্য অবিলম্বে সম্পন্ন করে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।
গণতদন্ত কমিশন গঠন করবে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা: বাংলাদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে নির্যাতনের বিষয়ে গণতদন্ত কমিশন গঠন করে রিপোর্ট প্রকাশ করার ঘোষণা দিয়েছে নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে নিপীড়নবিরোধী অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ব্যানারে প্রতিবাদ সমাবেশে একথা জানান অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের নির্যাতনের কারণে অনেক শিক্ষার্থী আমাকে তদন্ত কমিটি গঠন করে নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরার কথা বলেছে। কিন্তু আমি ঘোষণা করতে চাই শুধু শিক্ষার্থীরা নয়, পাশাপাশি এ কমিটিতে শিক্ষকরাও অংশ নেবেন। কমিটি নির্যাতনের চিত্র সারাদেশের মানুষের সামনে তুলে ধরবে। ঢাবি অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, আমরা সবাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গেস্টরুম-গণরুমের কথা জানি। বুয়েটে প্রায় প্রতিদিন রাতেই কাউকে না কাউকে টর্চার সেলে অত্যাচার করা হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও একই অবস্থা। আমরা জানি, এই সমাবেশের পর গণরুম-গেস্টরুম বন্ধ হবে না। ঢাবিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও প্রক্টর বিন্দুমাত্র বিচলিত হবেন না। তারা সরকারের কথা অনুযায়ীই চলবেন। সমাবেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অংশ নেন।
ঢাবি সাদা দলের মৌন অবস্থান: এদিকে আবরার ফাহাদকে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে মৌন অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামাতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এসময় সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, আবরারের হত্যায় আজ আমরা স্তম্ভিত। জাতি স্তম্ভিত। বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরারকে পাঁচ ঘণ্টা পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এজন্য আমরা লজ্জিত। তিনি বলেন, আমাদের একটা ছেলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য আজকে সে তার জীবন দিতে হয়েছে। আমরা মনে করি এ জীবন হচ্ছে স্বাধীনতার জন্য। সে শহীদের মর্যাদা পাবে। আমরা তার হত্যার বিচার দাবি জানাচ্ছি।
ঢাবি শিক্ষার্থীদের কালো পাতাকা মিছিল: আবরার ফাহাদের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে কালো পতাকা মিছিল করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুরে ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে একটি কালো পতাকা মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু হয়ে বুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানায়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, বর্তমানে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনই নয়, বরং দেশের সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের দলকানা প্রশাসন দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। মানুষকে কোনো কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। যখনই ছাত্ররা টুকটাক কথা বলছে, তখনই এটা স্বৈরাচারদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নিরপেক্ষভাবে গড়ে তুলতে হবে। বুয়েট শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা কোনোভাবেই আন্দোলন বন্ধ করবেন না। এ ধরনের আন্দোলনের ক্ষেত্রে অতীতে দেখা গেছে, প্রশাসন মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেয়। পরে আর কোনো ফলাফল পাওয়া যায় না। আপনারা ভয় পাবেন না। আমরা সবসময় আপনাদের সঙ্গে আছি।
আবরার হত্যার শাস্তি দাবি ছাত্রলীগের: আবরার হত্যার সঙ্গে জাড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ‘আবরার হত্যার দ্রুত বিচারের’ দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করে সংগঠনটি। এসময় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিজেদের নেয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন সংগঠনটির সভাপতি। অন্যদিকে ঘটনাকে পুঁজি করে কেউ ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইলে তাদের মোকাবিলা করারও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ঘটনার পরপরই বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের ১১ জনকে বহিষ্কার করি। দ্রুততম সময়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৩ জনকে গ্রেফতার করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই। পলাতকদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতারের আহ্বান জানাই। একইসঙ্গে এজাহারের বাইরে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসারও আহ্বান জানাই। এক্ষেত্রে ছাত্রলীগ সব ধরনের সহযোগিতা করবে। জয় বলেন, সাংগঠনিকভাবে ছাত্রলীগ কখনোই কোনও প্রকার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় কিংবা উৎসাহ প্রদান করে না। সংগঠনের পরিচয় ব্যবহার করে অতি উৎসাহী কোনও কর্মকাণ্ডকে ছাত্রলীগ অতীতের মতো ভবিষ্যতেও প্রশ্রয় দেবে না। সমপ্রতি আবরার হত্যাকাণ্ডের ছাত্রলীগের পদক্ষেপে আবারও তা প্রমাণ পেয়েছে। এসময় তিনি বলেন, আমরাও বুয়েটের শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একমত। অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি। তবে বুয়েটের শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনাকে কেউ কেউ ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। যদি কেউ এ ঘটনাকে পুঁজি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায় তাহলে ছাত্র সমাজ তার মোকাবিলা করবে। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, আমরা আবরার হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার দাবি করছি। আপনারা দেখেছেন, শুরু থেকেই আমরা অপরাধীদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছি। কারণ আমরা বলেছি কোনও অপরাধীর স্থান বাংলাদেশ ছাত্রলীগে হবে না। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আমরা দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা ১১ জনকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছি। আপনারা জানেন, কোনও ঘটনার জন্য এই প্রথম এতো দ্রুত অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি এবং সাংগঠনিকভাব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য আমরা লজ্জা প্রকাশ করছি।
ছাত্রদলের মৌন মিছিল: এদিকে আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডের ঘটনায় হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে মুখে কালো কাপড় বেধে মৌন মিছিল করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ভবন থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে অপরাজেয় বাংলায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়। এসময় তারা ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের ত্রাসের রাজনীতি বন্ধের দাবি করে আবরার হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের জোর দাবি করে। এসময় উপস্থিত ছিলেন, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার প্রমুখ।
প্রগতিশীলদের বিক্ষোভ: ফাহাদ হত্যার বিচার দাবিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচি করে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। বুধবার মধুর ক্যান্টিন থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এতে নেতৃত্ব দেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন প্রিন্স, ঢাবি শাখার সাধার সাধারণ সম্পাদক সুজন, ছাত্রমৈত্রীর ইকবাল কবীর প্রমূখ। এছাড়া বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনও ঢাবি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
দাবি পূরণে প্রশাসনকে সাত দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে মানববন্ধন ও মৌন মিছিল করেছে বুয়েট শিক্ষক সমিতি। এসময় তারাও পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করেন। বুয়েট শিক্ষক সমিতি শিক্ষকদের সকল প্রকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে। এছাড়া ছাত্র ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়েও শিগগিরই প্রশাসনের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানানো হয়। এদিকে বুয়েট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনও সাত দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। বুয়েটের সাবেক-বর্তমান ও শিক্ষক সমিতি ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করণের দাবি জানিয়েছেন। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ ভিসি অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলামের পদত্যাগও দাবি করা হয়। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে বিকালে নিজের ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করেন শের-ই বাংলা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল খান। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সন্ত্রাসবিরোধী রাজু স্মারক ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এসময় তারা আবরার হত্যার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে হত্যাকারী ছাত্রলীগ নেতাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। মানববন্ধন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী কালো পতাকা মিছিল নিয়ে বুয়েটের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছেন।
পৃথকভাবে বিক্ষোভ করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও ছাত্র ফেডারেশন।
আবরার হত্যার প্রতিবাদ ও হত্যাকারী ছাত্রলীগ নেতাদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গতকাল তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকে দিনভর চলে এ বিক্ষোভ। এসময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা প্রশাসনকে ১০ দফা দাবিতে সাত দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয়। দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা একটি প্রতিবাদী মিছিল নিয়ে বুয়েট ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেন। এসময় তারা পলাশী এবং চানখারপুল সংযোগ রাস্তা বন্ধ করে দেন। এ সময় তারা ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে, ‘শিক্ষা সন্ত্রাস একসঙ্গে চলে না’, ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই খুনিদের ফাঁসি চাই’, ‘ভিসি তুমি নীরব কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘খুনিদের ঠিকানা এই ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘সন্ত্রাসীদের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। আন্দোলনকারীরা এসময় তাদের সব দাবিগুলো না মানা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন।
শিক্ষার্থীদের দশ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- খুনিদের শানাক্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত; খুনিদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১১ অক্টোবরের মধ্যে আজীবন বহিষ্কার; আবরার হত্যা মামলার সব খরচ এবং ক্ষতিপূরণ বিশ্ববিদ্যালয়কে বহন করা; মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের অধীন স্বল্পতম সময়ে নিস্পত্তি করা; অবিলম্বে চার্জশিটের কপিসহ অফিসিয়াল নোটিশ দেয়া; বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা; ঘটনার পর ভিসি কেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হননি এবং ৩৮ ঘন্টা পর গিয়ে কোনো প্রশ্নের উত্তর না দেয়ায় বুধবার দুপুর ২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের কাছে তার জবাব দেয়া; আবাসিক হলগুলোতে র্যাগ এর নামে এবং ভিন্নমত দমানোর নামে নির্যাতন বন্ধে প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করা; এ ধরণের ঘটনা প্রকাশে একটি কমন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা; নিরাপত্তার জন্য সব হলের উইংয়ের দুই পাশে সিসি ক্যামেরা বসানো এবং ১১ই অক্টোবরের মধ্যে শেরে বাংলা হলের প্রভোস্টকে প্রত্যাহার করা। এদিকে, আন্দোলন চলাকালীন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন বুয়েটের ডিরেক্টর অফ স্টুডেন্ট ওয়েলফারের পরিচালক (ডিএসডব্লিউ) অধ্যাপক মিজানুর রহমান। এসময় শিক্ষার্থীরা কার নির্দেশে ক্যাম্পাসে পুলিশ আসলো এবং কার নির্দেশে গেলো এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, পলিটিক্যাল স্টুডেন্টদের ক্ষমতা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি। আমাদের কোনো কাজে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রয়োজন হলে আমরা নম্বর সংগ্রহ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরকে জানাই। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আমাদের তেমন একটা সখ্যতা নাই যতটা পলিটিক্যাল ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে সখ্যতা রয়েছে।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও ক্রমাগত চাপের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন বুয়েট শেরেবাংলা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল খান। পৌনে তিনটার দিকে বুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি একে মাসুদ সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভার সর্বসম্মতিক্রমে হলের ভিতরে বিভিন্ন ধরনের দোকান বন্ধ, বিভিন্ন টর্চার সেল বন্ধ, ছাত্ররাজনীতি বন্ধ, সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের প্রভাব বন্ধ, বহিরাগত ছাত্রদের হলে প্রবেশ নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে। একইসঙ্গে আমরা আগে এগুলো যে নিষিদ্ধ করতে পারিনি সেই দায় নেন শিক্ষকরা।
শের-ই বাংলা হলের প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ: এদিকে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে পদত্যাগ করেছেন বুয়েটের শের-ই বাংলা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাফর ইকবাল খান। গতকাল দুপুরে তিনি বুয়েট ভিসি, রেজিস্ট্রার ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালক বরাবর নিজের পদত্যাগপত্র জমা দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ কে এম মাসুদ। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে প্রভোস্ট পদত্যাগপত্র তিন জায়গায় জমা দিয়েছেন।
শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ, শিগগিরই ছাত্র রাজনীতির ব্যপারে সিদ্ধান্ত: বুয়েটে শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে শিক্ষক সমিতি। গতকাল ৩০০ শিক্ষকের উপস্থিতিতে বুয়েট শিক্ষক সমিতির এক সভা থেকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভা শেষে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে ১০ দফা দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন। এরপর শিক্ষকরা আবরার হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন ও ক্যাম্পাসে মৌণ মিছিল করেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে শিক্ষক সমিতি ভিসি অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের পদত্যাগ দাবি করেন। আর ছাত্র রাজনীতি ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনীতি শিগগিরই প্রশাসনের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক একে এম মাসুদ এসব তথ্য জানান। শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে তিনি বলেন, আবরারের পরিবারের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। এ হত্যার পেছনে কর্তৃপক্ষেরও দায় রয়েছে। এই দায় আমরাও শিকার করছি, আমরাও এর দায় নিচ্ছি। দোষী ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে শিক্ষক সমিতি বলছে, আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হত্যাকারী ছাত্রদের আজীবন বহিষ্কার করতে হবে। আবাসিক হলগুলো থেকে বহিরাগতের সরাতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা। তিনি বলেন, আমরা বুয়েটে সকল প্রকার প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জরুরি ভিত্তিতে র্যাগিং এবং নির্যাতনের শাস্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে ওয়েবসাইটে কম্পেইন করার ব্যবস্থা করেছি। তিনি আরও বলেন, ভিসি যদি নিজে থেকে পদত্যাগ না করেন তবে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।
ভিসির পদত্যাগ ও ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের: এদিকে দ্বিতীয় দিনের মতো আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদ জানিয়েছে বুয়েট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন। গতকাল বুয়েটে এক প্রতিবাদ সমাবেশে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন সাত দফা দাবি করে। যেখানে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ ভিসি অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলামের পদত্যাগ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি করা হয়। বুয়েট অ্যালামনাইয়ের সভাপতি অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী এই সাত দফা দাবি পেশ করেন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- হত্যার সঙ্গে জড়িত সকলকে বিশেষ বিচার ট্রাাইব্যুনাল এর আওতায় এনে দ্রুততম সময়ে বিচার করা; জড়িত সকল ছাত্রকে অনতিবিলম্বে বুয়েট থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার; বুয়েট ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক দলসমূহের অঙ্গ সংগঠন ভিত্তিক ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মচারীদের সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড অবিলম্বে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা; বুয়েট প্রশাসনকে ঐতিহ্য পরিপন্থী যে কোনো ধরনের রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব ও প্রভাব মুক্ত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ; অতীতে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন অপরাধ কার্যক্রম এর তদন্ত, বিচার ও শাস্তি প্রদান এর ক্ষেত্রে ভিসিসহ বুয়েট প্রশাসনের ধারাবাহিক অবহেলা ও ব্যর্থতা এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের মদদ জুগিয়েছে- তাই অবিলম্বে ভিসির অপসারণসহ প্রশাসনের আমূল পরিবর্তন করে এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের মান অতীতের মত সমুন্নত রাখতে সুযোগ্য, নির্ভীক ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের পদায়ন করা; র্যাগিং এবং অন্যান্য অজুহাতে ছাত্র-ছাত্রী নির্যাতন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা ও ক্যাম্পাসে সকল ছাত্রের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং আবরার হত্যাসহ ইতিপূর্বে সাংঘটিত অন্যান্য ছাত্র নির্যাতনের ঘটনাবলির ক্ষেত্রে অসম্পূর্ণ বিচার কার্য অবিলম্বে সম্পন্ন করে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।
গণতদন্ত কমিশন গঠন করবে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা: বাংলাদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে নির্যাতনের বিষয়ে গণতদন্ত কমিশন গঠন করে রিপোর্ট প্রকাশ করার ঘোষণা দিয়েছে নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে নিপীড়নবিরোধী অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ব্যানারে প্রতিবাদ সমাবেশে একথা জানান অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের নির্যাতনের কারণে অনেক শিক্ষার্থী আমাকে তদন্ত কমিটি গঠন করে নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরার কথা বলেছে। কিন্তু আমি ঘোষণা করতে চাই শুধু শিক্ষার্থীরা নয়, পাশাপাশি এ কমিটিতে শিক্ষকরাও অংশ নেবেন। কমিটি নির্যাতনের চিত্র সারাদেশের মানুষের সামনে তুলে ধরবে। ঢাবি অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, আমরা সবাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গেস্টরুম-গণরুমের কথা জানি। বুয়েটে প্রায় প্রতিদিন রাতেই কাউকে না কাউকে টর্চার সেলে অত্যাচার করা হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও একই অবস্থা। আমরা জানি, এই সমাবেশের পর গণরুম-গেস্টরুম বন্ধ হবে না। ঢাবিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও প্রক্টর বিন্দুমাত্র বিচলিত হবেন না। তারা সরকারের কথা অনুযায়ীই চলবেন। সমাবেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অংশ নেন।
ঢাবি সাদা দলের মৌন অবস্থান: এদিকে আবরার ফাহাদকে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে মৌন অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামাতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এসময় সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, আবরারের হত্যায় আজ আমরা স্তম্ভিত। জাতি স্তম্ভিত। বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরারকে পাঁচ ঘণ্টা পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এজন্য আমরা লজ্জিত। তিনি বলেন, আমাদের একটা ছেলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য আজকে সে তার জীবন দিতে হয়েছে। আমরা মনে করি এ জীবন হচ্ছে স্বাধীনতার জন্য। সে শহীদের মর্যাদা পাবে। আমরা তার হত্যার বিচার দাবি জানাচ্ছি।
ঢাবি শিক্ষার্থীদের কালো পাতাকা মিছিল: আবরার ফাহাদের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে কালো পতাকা মিছিল করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুরে ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে একটি কালো পতাকা মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু হয়ে বুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানায়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, বর্তমানে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনই নয়, বরং দেশের সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের দলকানা প্রশাসন দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। মানুষকে কোনো কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। যখনই ছাত্ররা টুকটাক কথা বলছে, তখনই এটা স্বৈরাচারদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নিরপেক্ষভাবে গড়ে তুলতে হবে। বুয়েট শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা কোনোভাবেই আন্দোলন বন্ধ করবেন না। এ ধরনের আন্দোলনের ক্ষেত্রে অতীতে দেখা গেছে, প্রশাসন মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেয়। পরে আর কোনো ফলাফল পাওয়া যায় না। আপনারা ভয় পাবেন না। আমরা সবসময় আপনাদের সঙ্গে আছি।
আবরার হত্যার শাস্তি দাবি ছাত্রলীগের: আবরার হত্যার সঙ্গে জাড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ‘আবরার হত্যার দ্রুত বিচারের’ দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করে সংগঠনটি। এসময় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিজেদের নেয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন সংগঠনটির সভাপতি। অন্যদিকে ঘটনাকে পুঁজি করে কেউ ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইলে তাদের মোকাবিলা করারও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ঘটনার পরপরই বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের ১১ জনকে বহিষ্কার করি। দ্রুততম সময়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৩ জনকে গ্রেফতার করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই। পলাতকদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতারের আহ্বান জানাই। একইসঙ্গে এজাহারের বাইরে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসারও আহ্বান জানাই। এক্ষেত্রে ছাত্রলীগ সব ধরনের সহযোগিতা করবে। জয় বলেন, সাংগঠনিকভাবে ছাত্রলীগ কখনোই কোনও প্রকার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় কিংবা উৎসাহ প্রদান করে না। সংগঠনের পরিচয় ব্যবহার করে অতি উৎসাহী কোনও কর্মকাণ্ডকে ছাত্রলীগ অতীতের মতো ভবিষ্যতেও প্রশ্রয় দেবে না। সমপ্রতি আবরার হত্যাকাণ্ডের ছাত্রলীগের পদক্ষেপে আবারও তা প্রমাণ পেয়েছে। এসময় তিনি বলেন, আমরাও বুয়েটের শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একমত। অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি। তবে বুয়েটের শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনাকে কেউ কেউ ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। যদি কেউ এ ঘটনাকে পুঁজি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায় তাহলে ছাত্র সমাজ তার মোকাবিলা করবে। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, আমরা আবরার হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার দাবি করছি। আপনারা দেখেছেন, শুরু থেকেই আমরা অপরাধীদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছি। কারণ আমরা বলেছি কোনও অপরাধীর স্থান বাংলাদেশ ছাত্রলীগে হবে না। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আমরা দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা ১১ জনকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছি। আপনারা জানেন, কোনও ঘটনার জন্য এই প্রথম এতো দ্রুত অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি এবং সাংগঠনিকভাব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য আমরা লজ্জা প্রকাশ করছি।
ছাত্রদলের মৌন মিছিল: এদিকে আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডের ঘটনায় হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে মুখে কালো কাপড় বেধে মৌন মিছিল করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ভবন থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে অপরাজেয় বাংলায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়। এসময় তারা ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের ত্রাসের রাজনীতি বন্ধের দাবি করে আবরার হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের জোর দাবি করে। এসময় উপস্থিত ছিলেন, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার প্রমুখ।
প্রগতিশীলদের বিক্ষোভ: ফাহাদ হত্যার বিচার দাবিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচি করে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। বুধবার মধুর ক্যান্টিন থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এতে নেতৃত্ব দেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন প্রিন্স, ঢাবি শাখার সাধার সাধারণ সম্পাদক সুজন, ছাত্রমৈত্রীর ইকবাল কবীর প্রমূখ। এছাড়া বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনও ঢাবি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
No comments