আসামের বাঙালিদের জন্য দুঃস্বপ্ন ‘এনআরসি’ by বরুন দাস গুপ্তা
আসামের
বাঙালিদের জন্য (হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের) ২০১৯ সালটি ভয়ঙ্কর বছর
হতে যাচ্ছে। আগামী ৩১ জুলাই প্রকাশিত হতে যাচ্ছে জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন
(এনআরসি)। দুই তালিকা থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪১.০৯ লাখ বাঙালি নাগরিককে
বাদ রাখা হয়েছে।
তাদেরকে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশী ঘোষণা করা হবে। কিন্তু বাংলাদেশ তাদের কাউকে গ্রহণ করবে না। ফলে ভারতে (আসামে) জন্মগ্রহণকারী তাদের সন্তান, নাতি-নাতনি ও তাদের সন্তানরা কখনো ভারতের নাগরিকত্ব পাবে না। ফলে তারা রাষ্ট্রহীন জনগোষ্ঠীতে পরিণত হবে। এতে করে তারা স্কুলে ভর্তি হতে পারবে না, চাকরি পাবে না, এমনকি অসুস্থ হলে হাসপাতালগুলোতে পর্যন্ত চিকিৎসা পাবে না। অনুপ্রবেশকারী মুক্ত করতে চালানো এই মিশনে নাগরিকত্ব হারানোর উদ্বেগে এখন পর্যন্ত ৫০ ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন। বাস্তবতা হলো, মুসলিমদের চেয়ে হিন্দুরাই বেশি আত্মহত্যা করেছে।
কত সংখ্যক অনুপ্রবেশকারীকে বহিষ্কার করা হবে, তা কেউ অনুমান করতে পারছে না। তবে এনআরসি তালিকায় নাম না থাকাদের বহিষ্কার নিয়ে বেশ লাভজনক ঘুষ বাণিজ্য হবে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এনআরসিতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা এক থেকে তিন হাজার রুপি করে নিচ্ছেন।
এনআরসিতে নাম বাদ পড়া ছাড়াও আরো কয়েক হাজার সন্দেহজনক ভোটারকে রাখা হয়েছে আটক কেন্দ্রগুলোতে। বর্তমানে আটক কেন্দ্র রয়েছে ছয়টি। তবে শিগগিরই এই সংখ্যা হবে ১০। নাগরিকত্বের বিষয়টি ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত এসব লোক ভোট দিতে পারবেন না।
এখানে আরেকটি খেলা দেখা যাচ্ছে। তা হলো এনআরসি থেকে সত্যিকারের ভারতীয় নাগরিকদের নাম বাদ দেয়া। বিজেপির অনেক সিনিয়র নেতা সন্দেহভাজন বাংলাদেশীদের বিরুদ্ধে আপত্তি দিতে স্থানীয়দের উস্কানি দিচ্ছে।
নির্বিচারে আপত্তি উত্থাপনের ফলে অনেক সময় আপত্তিকারীর জন্য অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। উদলগুরি অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন শাখার সাধারণ সম্পাদকের কথা বলা যেতে পারে। তিনি বেশ কয়েকজন কথিত বাংলাদেশীর নামে আপত্তি দিয়েছিলেন। এদের একজনের ব্যাপারে অনুসন্ধানে দেখা যায় যে তিনি স্বাধীনতা যোদ্ধা সিদ্দিক আলীর ছেলে।
আবার অনেক প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবীর এনআরসি-কে সমর্থন বেশ বিস্ময়ের সৃষ্টি করে। এদের একজন হলেন ড. হিরেন গোহাইন। তার যুক্তি বেশ খেলো মনে হয়েছে।
এনআরসি ইস্যু কেবল আসামিয় ও বাঙালিদের মধ্যেই নয়, বাঙালি হিন্দু ও বাঙালি মুসলিমদের মধ্যেও বিভক্তি সৃষ্টি করেছে। কারণ বিজেপি সরকার বাংলাদেশ থেকে যাওয়া বাঙালি হিন্দুদের উদ্বাস্তু ও মুসলিমদেরকে অবৈধ প্রবেশকারী হিসেবে অভিহিত করছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি আনা হয়েছিল অমুসলিমদের নাগরিকত্ব প্রদান করার কাজটি সহজ করার জন্য। কিন্তু রাজ্য সভায় তা পাস হয়নি। তবে এবারের নির্বাচনের পর বিজেপি রাজ্য সভাতেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফলে তারা বিলটি আবার সামনে আনতে পারে।
ভুয়া খবর, ভুয়া ছবি, ভুয়া আপত্তির এই যুগে অল আসাম মাইনরিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অভিযোগ করছে, কিছু সংগঠন ভাষা ও ধর্মের কারণে মিথ্যা আপত্তি উত্থাপন করে পরিস্থিতি জটিল করছে। অনেক সময় জোর করেও আপত্তি উত্থাপন করা হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ভালুকজোরায় এক বোড়ো গ্রামবাসী অভিযোগ করেছেন যে বোড়ো ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা তাকে ১০টি আপত্তিপত্রে সই করতে বাধ্য করেছে। এখন তিনি আপত্তিপত্রগুলো প্রত্যাহার করতে চান। এ ধরনের আরো অনেক খবর সামনেই আসছে না।
আসামের ৪০ লাখ লোক বিনিদ্র রজনী অতিবাহিত করছে, ৩১ জুলাই তাদের ভাগ্য কী ঘটতে যাচ্ছে, তা নিয়ে ভেবে মরছে। তারা যে দেশে জন্মগ্রহণ করেছে, কয়েক প্রজন্ম ধরে থাকছে, সেই দেশ তাদের ত্যাগ করবে? তাদেরকে কি তাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা হবে?
তাদেরকে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশী ঘোষণা করা হবে। কিন্তু বাংলাদেশ তাদের কাউকে গ্রহণ করবে না। ফলে ভারতে (আসামে) জন্মগ্রহণকারী তাদের সন্তান, নাতি-নাতনি ও তাদের সন্তানরা কখনো ভারতের নাগরিকত্ব পাবে না। ফলে তারা রাষ্ট্রহীন জনগোষ্ঠীতে পরিণত হবে। এতে করে তারা স্কুলে ভর্তি হতে পারবে না, চাকরি পাবে না, এমনকি অসুস্থ হলে হাসপাতালগুলোতে পর্যন্ত চিকিৎসা পাবে না। অনুপ্রবেশকারী মুক্ত করতে চালানো এই মিশনে নাগরিকত্ব হারানোর উদ্বেগে এখন পর্যন্ত ৫০ ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন। বাস্তবতা হলো, মুসলিমদের চেয়ে হিন্দুরাই বেশি আত্মহত্যা করেছে।
কত সংখ্যক অনুপ্রবেশকারীকে বহিষ্কার করা হবে, তা কেউ অনুমান করতে পারছে না। তবে এনআরসি তালিকায় নাম না থাকাদের বহিষ্কার নিয়ে বেশ লাভজনক ঘুষ বাণিজ্য হবে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এনআরসিতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা এক থেকে তিন হাজার রুপি করে নিচ্ছেন।
এনআরসিতে নাম বাদ পড়া ছাড়াও আরো কয়েক হাজার সন্দেহজনক ভোটারকে রাখা হয়েছে আটক কেন্দ্রগুলোতে। বর্তমানে আটক কেন্দ্র রয়েছে ছয়টি। তবে শিগগিরই এই সংখ্যা হবে ১০। নাগরিকত্বের বিষয়টি ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত এসব লোক ভোট দিতে পারবেন না।
এখানে আরেকটি খেলা দেখা যাচ্ছে। তা হলো এনআরসি থেকে সত্যিকারের ভারতীয় নাগরিকদের নাম বাদ দেয়া। বিজেপির অনেক সিনিয়র নেতা সন্দেহভাজন বাংলাদেশীদের বিরুদ্ধে আপত্তি দিতে স্থানীয়দের উস্কানি দিচ্ছে।
নির্বিচারে আপত্তি উত্থাপনের ফলে অনেক সময় আপত্তিকারীর জন্য অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। উদলগুরি অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন শাখার সাধারণ সম্পাদকের কথা বলা যেতে পারে। তিনি বেশ কয়েকজন কথিত বাংলাদেশীর নামে আপত্তি দিয়েছিলেন। এদের একজনের ব্যাপারে অনুসন্ধানে দেখা যায় যে তিনি স্বাধীনতা যোদ্ধা সিদ্দিক আলীর ছেলে।
আবার অনেক প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবীর এনআরসি-কে সমর্থন বেশ বিস্ময়ের সৃষ্টি করে। এদের একজন হলেন ড. হিরেন গোহাইন। তার যুক্তি বেশ খেলো মনে হয়েছে।
এনআরসি ইস্যু কেবল আসামিয় ও বাঙালিদের মধ্যেই নয়, বাঙালি হিন্দু ও বাঙালি মুসলিমদের মধ্যেও বিভক্তি সৃষ্টি করেছে। কারণ বিজেপি সরকার বাংলাদেশ থেকে যাওয়া বাঙালি হিন্দুদের উদ্বাস্তু ও মুসলিমদেরকে অবৈধ প্রবেশকারী হিসেবে অভিহিত করছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি আনা হয়েছিল অমুসলিমদের নাগরিকত্ব প্রদান করার কাজটি সহজ করার জন্য। কিন্তু রাজ্য সভায় তা পাস হয়নি। তবে এবারের নির্বাচনের পর বিজেপি রাজ্য সভাতেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফলে তারা বিলটি আবার সামনে আনতে পারে।
ভুয়া খবর, ভুয়া ছবি, ভুয়া আপত্তির এই যুগে অল আসাম মাইনরিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অভিযোগ করছে, কিছু সংগঠন ভাষা ও ধর্মের কারণে মিথ্যা আপত্তি উত্থাপন করে পরিস্থিতি জটিল করছে। অনেক সময় জোর করেও আপত্তি উত্থাপন করা হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ভালুকজোরায় এক বোড়ো গ্রামবাসী অভিযোগ করেছেন যে বোড়ো ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা তাকে ১০টি আপত্তিপত্রে সই করতে বাধ্য করেছে। এখন তিনি আপত্তিপত্রগুলো প্রত্যাহার করতে চান। এ ধরনের আরো অনেক খবর সামনেই আসছে না।
আসামের ৪০ লাখ লোক বিনিদ্র রজনী অতিবাহিত করছে, ৩১ জুলাই তাদের ভাগ্য কী ঘটতে যাচ্ছে, তা নিয়ে ভেবে মরছে। তারা যে দেশে জন্মগ্রহণ করেছে, কয়েক প্রজন্ম ধরে থাকছে, সেই দেশ তাদের ত্যাগ করবে? তাদেরকে কি তাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা হবে?
No comments