আসামের মুসলমানদের বঞ্চনার কথা লিখে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কবিরা
ভারতের
আসাম রাজ্যে উপভাষায় লেখা কবিতাকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বেশ
উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। ‘মিঞা কবিতা’ নামে পরিচিত ওই কাব্যরীতি বছর কয়েক হলো
চালু করেছেন আসামের বাংলাভাষী মুসলিমরা। কবিতাগুলোতে তারা আসামে তাদের
সামাজিক বঞ্চনা ও নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরছেন।
তবে ‘মিঞা কবিতা’ ঘৃণা ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিচ্ছে বলে কয়েকদিন আগে অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর রাজ্য পুলিশ এখন কয়েকজন কবিকে খুঁজছে।
জানা গেছে, সেই কবিরা এখন গা ঢাকা দিয়ে আছেন। এদিকে মিঞা কবিদের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন আসামের বহু চিন্তাবিদ ও শাসক দল বিজেপির নেতারাও। তবে জাতিস্বত্তার দ্বন্দ্বে বিদীর্ণ ভারতের এই রাজ্যে ‘মিঞা কবিতা’ কেন আচমকা এই বিতর্কের কেন্দ্রে?
আসামের রেহানা সুলতানা বেশ কিছুদিন হলো ‘মিঞা কবিতা’ লিখছেন, নানা জায়গায় আবৃত্তিও করছেন। উর্দুতে ‘মিঞা’ বলতে বোঝায় সম্ভ্রান্ত মুসলিম ব্যক্তিকে, কিন্তু আসামে এই শব্দটি আসলে একটি বর্ণবাদী গালাগাল; যা অবৈধ অভিবাসী বা বাংলাদেশীদের বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
যদিও আসামের বাংলাভাষী কিছু মুসলিম, যারা অনেকেই ব্রহ্মপুত্রের চর অঞ্চলের বাসিন্দা, তাদের ধর্মীয় ও ভাষাগত পরিচয়কে নতুন করে যেন আবিষ্কার করতে শুরু করেছেন এই মিঞা কবিতার হাত ধরে। ২০১৬ সালে প্রথম মিঞা কবিতা লিখেছিলেন হাফিজ আহমেদ।
জাতীয় নাগরিক তালিকা তৈরি করাকে কেন্দ্র করে বাঙালি মুসলিমরা যে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, তারই প্রতিবাদ ছিল হাফিজ আহমেদের কবিতায়। তারপর এ ঘরানার কবিতা লেখা দ্রুত জনপ্রিয় হতে থাকে, নেলির গণহত্যা থেকে ধর্ষিতা মুসলিম নারীর কাহিনী কবিতার বিষয়বস্তু হিসেবে উঠে আসে।
মিঞা কবি হিসেবে বেশ পরিচিত হয়ে ওঠেন দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াে গবেষক শালিম হোসেন। সেই হোসেন বলছিলেন, ইংরেজি-হিন্দির পাশাপাশি বিভিন্ন ডায়ালেক্টেও এই কবিতা লেখা হয়।
তিনি আরো বলেন, এই ডায়ালেক্টগুলোর উৎস ময়মনসিংহ, পাবনা, ঢাকাসহ নানা অঞ্চলে, যার ভেতরে মিশে যায় অসমিয়া ও আরো নানা স্থানীয় ভাষা। এই মিঞা কবিতা চলতে থাকে একটা চেইনের মতো, কেউ হয়তো একটা কবিতা লিখল, তার রেশ ধরে আরেকজন লিখল; এইভাবে এগিয়ে যায়।
কিন্তু কেন এরা বিশুদ্ধ অসমিয়ায় কবিতা না-লিখে এ ধরনের উপভাষায় কবিতা লিখবেন, আসামের বিশিষ্ট দার্শনিক হীরেন গোঁহাই-এর মতো ব্যক্তিরাও সে প্রশ্ন তুলতে শুরু করার পর মিঞা কবিতার বিরুদ্ধে জনমত তীব্র হয়েছে।
রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র অপরাজিতা ভুঁইঞা বলেন, মিঞারা এই সব কবিতায় সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা বলছেন। সবাই জানে, এই মিঁয়াদের হাতেই রাজ্যে ধর্ষণ ঘটছে, অপরাধ বেড়ে চলেছে। তার পরেও আমরা তাদের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গীতেই দেখে থাকি। কিন্তু এরা এতো নির্লজ্জ, বাইরের জগতে একটা ভুল ছবি তুলে ধরার জন্য এসব আজেবাজে লিখে চলেছে।
মিঞা কবিরা বলছেন, নিজেদের মনের কথা বলার জন্য এমন একটা দারুণ মাধ্যমকে কেন তারা ব্যবহার করবেন না?
আসামের তিনসুকিয়া কলেজের বাংলা ভাষা বিভাগের অধ্যাপক সুশান্ত কর মনে করেন, বিষয়বস্তু আর ভাষার কারণেই আসলে মিঞা কবিতা নিয়ে এত বিতর্ক।
তার কথায়, এর আধেয় যেমন অহমিয়া শভিনিজমকে চ্যালেঞ্জ করছে, তেমনি এর ভাষার মধ্যেও লুকিয়ে আছে আসামের ভাষা রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। আসামের এই তথাকথিত মিঞারা একটা সময় মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল তারা অসমিয়া হয়েই আসামে থাকবে।
তিনি আরো বলেন, ফলে ময়মনসিংয়ের বাংলা ডায়লেক্ট-কেও অসমিয়ারই একটা ডায়লেক্ট বলে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, যদিও ভাষাগতভাবে তার কখনোই কোনো ভিত্তি ছিল না। রাজনৈতিক স্বার্থে অসমিয়াদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দেখানোর জন্য এটা করা হয়েছিল বটে, কিন্তু এই বাংলাভাষী মুসলিমরা মন থেকে এটা কোনো দিনই মেনে নেননি।
সে কারণে এত বছর পর নিজস্ব ভাষা বা জবান নিয়ে তাদের পুঞ্জীভূত ক্ষোভই মিঞা কবিতার রূপে বেরিয়ে আসছে বলে অধ্যাপক কর মনে করেন। এদিকে এ মাসের শেষেই আসামে প্রকাশ হতে যাচ্ছে বিতর্কিত নাগরিক তালিকার চূড়ান্ত তালিকা, যাতে লাখ লাখ বাঙালি মুসলমান ভারতের নাগরিকত্ব খোয়াতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সেই তালিকা প্রকাশের ঠিক আগে মিঞা কবিতা নিয়ে বিতর্ক উত্তেজনাকেই আরো অনেকগুণ বাড়িয়ে তুলেছে।
তবে ‘মিঞা কবিতা’ ঘৃণা ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিচ্ছে বলে কয়েকদিন আগে অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর রাজ্য পুলিশ এখন কয়েকজন কবিকে খুঁজছে।
জানা গেছে, সেই কবিরা এখন গা ঢাকা দিয়ে আছেন। এদিকে মিঞা কবিদের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন আসামের বহু চিন্তাবিদ ও শাসক দল বিজেপির নেতারাও। তবে জাতিস্বত্তার দ্বন্দ্বে বিদীর্ণ ভারতের এই রাজ্যে ‘মিঞা কবিতা’ কেন আচমকা এই বিতর্কের কেন্দ্রে?
আসামের রেহানা সুলতানা বেশ কিছুদিন হলো ‘মিঞা কবিতা’ লিখছেন, নানা জায়গায় আবৃত্তিও করছেন। উর্দুতে ‘মিঞা’ বলতে বোঝায় সম্ভ্রান্ত মুসলিম ব্যক্তিকে, কিন্তু আসামে এই শব্দটি আসলে একটি বর্ণবাদী গালাগাল; যা অবৈধ অভিবাসী বা বাংলাদেশীদের বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
যদিও আসামের বাংলাভাষী কিছু মুসলিম, যারা অনেকেই ব্রহ্মপুত্রের চর অঞ্চলের বাসিন্দা, তাদের ধর্মীয় ও ভাষাগত পরিচয়কে নতুন করে যেন আবিষ্কার করতে শুরু করেছেন এই মিঞা কবিতার হাত ধরে। ২০১৬ সালে প্রথম মিঞা কবিতা লিখেছিলেন হাফিজ আহমেদ।
জাতীয় নাগরিক তালিকা তৈরি করাকে কেন্দ্র করে বাঙালি মুসলিমরা যে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, তারই প্রতিবাদ ছিল হাফিজ আহমেদের কবিতায়। তারপর এ ঘরানার কবিতা লেখা দ্রুত জনপ্রিয় হতে থাকে, নেলির গণহত্যা থেকে ধর্ষিতা মুসলিম নারীর কাহিনী কবিতার বিষয়বস্তু হিসেবে উঠে আসে।
মিঞা কবি হিসেবে বেশ পরিচিত হয়ে ওঠেন দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াে গবেষক শালিম হোসেন। সেই হোসেন বলছিলেন, ইংরেজি-হিন্দির পাশাপাশি বিভিন্ন ডায়ালেক্টেও এই কবিতা লেখা হয়।
তিনি আরো বলেন, এই ডায়ালেক্টগুলোর উৎস ময়মনসিংহ, পাবনা, ঢাকাসহ নানা অঞ্চলে, যার ভেতরে মিশে যায় অসমিয়া ও আরো নানা স্থানীয় ভাষা। এই মিঞা কবিতা চলতে থাকে একটা চেইনের মতো, কেউ হয়তো একটা কবিতা লিখল, তার রেশ ধরে আরেকজন লিখল; এইভাবে এগিয়ে যায়।
কিন্তু কেন এরা বিশুদ্ধ অসমিয়ায় কবিতা না-লিখে এ ধরনের উপভাষায় কবিতা লিখবেন, আসামের বিশিষ্ট দার্শনিক হীরেন গোঁহাই-এর মতো ব্যক্তিরাও সে প্রশ্ন তুলতে শুরু করার পর মিঞা কবিতার বিরুদ্ধে জনমত তীব্র হয়েছে।
রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র অপরাজিতা ভুঁইঞা বলেন, মিঞারা এই সব কবিতায় সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা বলছেন। সবাই জানে, এই মিঁয়াদের হাতেই রাজ্যে ধর্ষণ ঘটছে, অপরাধ বেড়ে চলেছে। তার পরেও আমরা তাদের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গীতেই দেখে থাকি। কিন্তু এরা এতো নির্লজ্জ, বাইরের জগতে একটা ভুল ছবি তুলে ধরার জন্য এসব আজেবাজে লিখে চলেছে।
মিঞা কবিরা বলছেন, নিজেদের মনের কথা বলার জন্য এমন একটা দারুণ মাধ্যমকে কেন তারা ব্যবহার করবেন না?
আসামের তিনসুকিয়া কলেজের বাংলা ভাষা বিভাগের অধ্যাপক সুশান্ত কর মনে করেন, বিষয়বস্তু আর ভাষার কারণেই আসলে মিঞা কবিতা নিয়ে এত বিতর্ক।
তার কথায়, এর আধেয় যেমন অহমিয়া শভিনিজমকে চ্যালেঞ্জ করছে, তেমনি এর ভাষার মধ্যেও লুকিয়ে আছে আসামের ভাষা রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। আসামের এই তথাকথিত মিঞারা একটা সময় মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল তারা অসমিয়া হয়েই আসামে থাকবে।
তিনি আরো বলেন, ফলে ময়মনসিংয়ের বাংলা ডায়লেক্ট-কেও অসমিয়ারই একটা ডায়লেক্ট বলে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, যদিও ভাষাগতভাবে তার কখনোই কোনো ভিত্তি ছিল না। রাজনৈতিক স্বার্থে অসমিয়াদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দেখানোর জন্য এটা করা হয়েছিল বটে, কিন্তু এই বাংলাভাষী মুসলিমরা মন থেকে এটা কোনো দিনই মেনে নেননি।
সে কারণে এত বছর পর নিজস্ব ভাষা বা জবান নিয়ে তাদের পুঞ্জীভূত ক্ষোভই মিঞা কবিতার রূপে বেরিয়ে আসছে বলে অধ্যাপক কর মনে করেন। এদিকে এ মাসের শেষেই আসামে প্রকাশ হতে যাচ্ছে বিতর্কিত নাগরিক তালিকার চূড়ান্ত তালিকা, যাতে লাখ লাখ বাঙালি মুসলমান ভারতের নাগরিকত্ব খোয়াতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সেই তালিকা প্রকাশের ঠিক আগে মিঞা কবিতা নিয়ে বিতর্ক উত্তেজনাকেই আরো অনেকগুণ বাড়িয়ে তুলেছে।
No comments