ফাগুনের কাছে খোলা চিঠি by কাকন রেজা
সোহেল
তাজের ভাগনে ফিরে এসেছে। বাবা-মা এতেই খুশি, ফিরে তো এসেছে। নাও তো ফিরতে
পারতো। অসংখ্য সন্তান ঘরে ফিরে আসেনি, আসেনি পিতা, ভাই। আমার নিখোঁজ
সন্তানও ফিরেছে তবে তার ঘরে ঠাঁই হয়নি, হয়েছে মাটির কবরে। ওর একটি সুন্দর
ঘরের খুব শখ ছিল, মিলেছে মাটির কামরা, অন্ধকার। অথচ অন্ধকারে ওর ছিল বড় ভয়।
এই অন্ধকার কবরের অন্ধকার নয়, এই অন্ধকার আমাদের ভেতর ছড়িয়ে যাওয়া অন্ধকার। ভয়ের অন্ধকার, চারিদিকে রাত্রি, জয়ের আলো নেই, নেই ভোরের চিহ্ন। মানুষ মাতৃজঠর থেকে যে অনুভূতি বয়ে আনে, ভয়ের অনুভূতি। কবর আর মায়ের জঠর দুটোই অন্ধকার। সেই অন্ধকারের অনুভূতি বয়ে চলেছে মানুষ। যেন আছে মাতৃজঠরে, নয় মাটির ঘরে। ভয়ের আঁধারে।
ফাগুন, বাবারে আমি তোর নাদান পিতা। অক্ষমতো নিশ্চিত বলতে পারিস। তোকে রক্ষা করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। তোকে দেয়া সম্ভব হয়নি একটি নিশ্চিত জীবন। হয়নি, মালোয়েশিয়া কিংবা কানাডায় সেকেন্ড হোম। দেয়া হয়নি, দেশি ‘পশ’ জীবনও। যেহেতু কখনো আপোষ করা হয়নি আমার। তুইও তো জীবনের শুরুতেই ছিলি আপোষহীন। আমাদের হতো না রে। তুই থাকলেও হতো না। তারচেয়ে এই ভালো চলে গিয়েছিস।
বড় আফসোস ছিল তোর। কেনো গরীব মানুষদের এত কষ্ট। একটা বিপদে পড়া কিংবা অসুস্থ মানুষ, এমনকি পশুও- তোর সেবার বাইরে যেতো না কেউ। এত নরম মন নিয়ে, এত ভালো মানুষি নিয়ে তুই বড় অচল ছিলি এই সমাজে- দেশে। এখানে মন শক্ত করতে হয়। মানুষ রাস্তায় পড়ে কাতরালেও পাশ কাটিয়ে যেতে হয়। যেমন, আহত হয়ে পড়ে থাকার পরও কেউ তোকে হাসপাতালে নেয়নি। তেমনি, এ দেশে থাকলে অমানুষ হতে হয়। কে মরলো, কে বাঁচলো পশুতো দূরের কথা, মানুষের কথাও ভাবতে নেই। তুই তো মানুষ শুধু নয়, পশুদের কথাও ভাবতি। সত্যিই, তুই বড় বেমানান ছিলি এমন সময়ে-সমাজে।
মনে আছে, বাদামী রঙের বেড়ালটার কথা। রক্তাক্ত, লেজটা কাটা, ছোট্ট একটা বাচ্চা। তুই সইতে পারিসনি। তুলে এনেছিলি বাসায়। তোর মা ও তোর দিনরাতের সেবায় বেঁচে গিয়েছিল সেই বেড়াল বাচ্চাটা। তুই কেনো মরে গেলি বাবা? তোকে কেনো কেউ তুলে এনে বাঁচালো না। কেনো তোর মত কোন দেবদূত সেই বেড়াল বাচ্চাটার মত তোকে তুলে নিলো না। কেনো তোর মা’র আর আমার বুক খালি হলো? কেনো রে বাবা?
প্রতিদিন নিজেকে প্রশ্ন করি, কী দোষ ছিলো তোর কিংবা আমার। কেউ তো আমাদের কাছে এসে ফিরে যায়নি। অসুস্থ মানুষ, বিপদগ্রস্ত মানুষ, এমনকি পশুও। নিজের বুক পেতে দিয়ে আশ্রয় দিয়েছি, যতটুকু পেরেছি সেবা করেছি। তুই তো অস্থির ছিলি, মানুষের জন্য।
ছোট ভাইটার বন্ধু ব্যথা পেয়েছিল। তুই ধমকাচ্ছিল ওকে, দ্বিতীয়বার দেখতে যায়নি বলে। তোকেও এখন কেউ দেখতে যায় না রে। তোর ওই অন্ধকার ঘর কারো পছন্দ না। আমি, তোর মা, ভাই যাই। আরেকজন প্রতিদিন যেতে না পারলেও অনুভব করে। হাতেগোনা কজন মাঝেমধ্যে যায়। এক সময় হয়তো কেউ যাবে না। হয়তো আমরা তিনজনই যাবো। কেউ না যাক, আমরা তিনজন মিলেই পরম করুণাময়ের কাছে হাত তুলে চাবো, অন্য আরেক জীবনে তুই যেন থাকিস আমাদের সাথে অনন্তকাল। তখন তো আর কেউ সরিয়ে নিতে পারবে না তোকে এই বুকের খাঁচা শূন্য করে।
ভালো থাকিস বাবা, ক্ষমা করিস তোর এই অক্ষম বাবাকে।
এই অন্ধকার কবরের অন্ধকার নয়, এই অন্ধকার আমাদের ভেতর ছড়িয়ে যাওয়া অন্ধকার। ভয়ের অন্ধকার, চারিদিকে রাত্রি, জয়ের আলো নেই, নেই ভোরের চিহ্ন। মানুষ মাতৃজঠর থেকে যে অনুভূতি বয়ে আনে, ভয়ের অনুভূতি। কবর আর মায়ের জঠর দুটোই অন্ধকার। সেই অন্ধকারের অনুভূতি বয়ে চলেছে মানুষ। যেন আছে মাতৃজঠরে, নয় মাটির ঘরে। ভয়ের আঁধারে।
ফাগুন, বাবারে আমি তোর নাদান পিতা। অক্ষমতো নিশ্চিত বলতে পারিস। তোকে রক্ষা করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। তোকে দেয়া সম্ভব হয়নি একটি নিশ্চিত জীবন। হয়নি, মালোয়েশিয়া কিংবা কানাডায় সেকেন্ড হোম। দেয়া হয়নি, দেশি ‘পশ’ জীবনও। যেহেতু কখনো আপোষ করা হয়নি আমার। তুইও তো জীবনের শুরুতেই ছিলি আপোষহীন। আমাদের হতো না রে। তুই থাকলেও হতো না। তারচেয়ে এই ভালো চলে গিয়েছিস।
বড় আফসোস ছিল তোর। কেনো গরীব মানুষদের এত কষ্ট। একটা বিপদে পড়া কিংবা অসুস্থ মানুষ, এমনকি পশুও- তোর সেবার বাইরে যেতো না কেউ। এত নরম মন নিয়ে, এত ভালো মানুষি নিয়ে তুই বড় অচল ছিলি এই সমাজে- দেশে। এখানে মন শক্ত করতে হয়। মানুষ রাস্তায় পড়ে কাতরালেও পাশ কাটিয়ে যেতে হয়। যেমন, আহত হয়ে পড়ে থাকার পরও কেউ তোকে হাসপাতালে নেয়নি। তেমনি, এ দেশে থাকলে অমানুষ হতে হয়। কে মরলো, কে বাঁচলো পশুতো দূরের কথা, মানুষের কথাও ভাবতে নেই। তুই তো মানুষ শুধু নয়, পশুদের কথাও ভাবতি। সত্যিই, তুই বড় বেমানান ছিলি এমন সময়ে-সমাজে।
মনে আছে, বাদামী রঙের বেড়ালটার কথা। রক্তাক্ত, লেজটা কাটা, ছোট্ট একটা বাচ্চা। তুই সইতে পারিসনি। তুলে এনেছিলি বাসায়। তোর মা ও তোর দিনরাতের সেবায় বেঁচে গিয়েছিল সেই বেড়াল বাচ্চাটা। তুই কেনো মরে গেলি বাবা? তোকে কেনো কেউ তুলে এনে বাঁচালো না। কেনো তোর মত কোন দেবদূত সেই বেড়াল বাচ্চাটার মত তোকে তুলে নিলো না। কেনো তোর মা’র আর আমার বুক খালি হলো? কেনো রে বাবা?
প্রতিদিন নিজেকে প্রশ্ন করি, কী দোষ ছিলো তোর কিংবা আমার। কেউ তো আমাদের কাছে এসে ফিরে যায়নি। অসুস্থ মানুষ, বিপদগ্রস্ত মানুষ, এমনকি পশুও। নিজের বুক পেতে দিয়ে আশ্রয় দিয়েছি, যতটুকু পেরেছি সেবা করেছি। তুই তো অস্থির ছিলি, মানুষের জন্য।
ছোট ভাইটার বন্ধু ব্যথা পেয়েছিল। তুই ধমকাচ্ছিল ওকে, দ্বিতীয়বার দেখতে যায়নি বলে। তোকেও এখন কেউ দেখতে যায় না রে। তোর ওই অন্ধকার ঘর কারো পছন্দ না। আমি, তোর মা, ভাই যাই। আরেকজন প্রতিদিন যেতে না পারলেও অনুভব করে। হাতেগোনা কজন মাঝেমধ্যে যায়। এক সময় হয়তো কেউ যাবে না। হয়তো আমরা তিনজনই যাবো। কেউ না যাক, আমরা তিনজন মিলেই পরম করুণাময়ের কাছে হাত তুলে চাবো, অন্য আরেক জীবনে তুই যেন থাকিস আমাদের সাথে অনন্তকাল। তখন তো আর কেউ সরিয়ে নিতে পারবে না তোকে এই বুকের খাঁচা শূন্য করে।
ভালো থাকিস বাবা, ক্ষমা করিস তোর এই অক্ষম বাবাকে।
No comments