যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ এশীয় মুসলিমদের অভিবাসনের ইতিহাস নিয়ে আসছে ‘বেঙ্গলি হারলেম’
চলচ্চিত্র
নির্মাতা ও লেখক বিবেক বল্ডের সঙ্গে আলাদ্দিন উল্লাহর প্রথম দেখা হয় এই
শতকের শুরুর দিকে। উল্লাহর পরিবারের কাহিনী বিবেককে তাৎক্ষণিকভাবে টেনে
ধরেছিল। অভিনেতা ও কমেডিয়ান উল্লাহ জানান, তার বাবা হাবিবের জন্ম বর্তমান
বাংলাদেশে। তিনি গত শতকের দ্বিতীয় দশকে নিউ ইয়র্কে অভিবাসন করেন। তিনি ও
অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় কয়েকজন পুরুষ একটি বৃটিশ বাষ্পচালিত জাহাজের কর্মী
ছিলেন। ওই জাহাজে করেই নিউ ইয়র্কে পৌঁছান তিনি।
বল্ড বলেন, তার বাবার গল্প শোনার পর আমার মনে একগাদা ঐতিহাসিক প্রশ্ন জেগেছিল। তার বাবা কি দক্ষিণ এশীয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে কোনো বড় অভিবাসনের অংশ ছিল- বিশেষ করে দক্ষিণ এশীয় মুসলিমদের- যাদের কথা ইতিহাসের পাতায় লেখা নেই?
উল্লাহ আর বল্ডের এই অন্বেষণের ইতিহাস নিয়ে লেখা হয়েছে বই- ‘বেঙ্গলি হারলেম’। ১৯৯৪ সালে বল্ডের তৈরি ডকুমেন্টরি ট্যাক্সি-ভালাতেও নিউ ইয়র্কে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রমিকদের জীবন নিয়ে বলা হয়েছে।
হাবিব উল্লাহর গল্পটি নাটকীয় ছিল শুধু এ কারণেই তিনি এটি পছন্দ করেননি। এর পেছনে আরেকটি কারণ হচ্ছে, তার বাবা এমন একটি সময় যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন যখন সেখানে এশীয় বিরোধী মনোভাব সর্বত্রই বিস্তার লাভ করেছিল। ১৯১৭ সালের অভিবাসন আইনে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে অভিবাসন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এর আগে ১৮৮২ সালে চীনাদের যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নিষিদ্ধ হয়। ফলে কার্যত সমগ্র এশিয়া থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন ছিল নিষিদ্ধ। বল্ড বলেন, এর মানে হচ্ছে আলাদ্দিনের বাবার যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ ছিল ১৯১৭ সালের আইনের লঙ্ঘন। তিনি তার জীবনের বেশির ভাগ সময় (১৯১৭-১৯৬৫ সাল) যুক্তরাষ্ট্রেই অবস্থান করেছেন।
কিন্তু বল্ড যখন আলাদ্দিনকে নিয়ে ডকুমেন্টরি তৈরি করছিলেন তার মনে হলো দক্ষিণ এশিয়ার অভিবাসীদের নিয়ে ঐতিহাসিক কিছু তথ্য তার অজানা রয়েছে। তাই এ গবেষণার জন্য তিনি নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি ডক্টরেট ডিগ্রি নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। বল্ড বলেন, কয়েক বছর বসে আমি শুধু একটি প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজেছি। আসলেই কি আলাদ্দিনের পিতা বড় কোনো ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের অংশ ছিল?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই ২০১৫ সালে তার বেঙ্গলি হারলেম এন্ড দ্য লস্ট হিস্টোরিস অব সাউথ এশিয়ান আমেরিকা বইটির কাজ শুরু হয়। বল্ড বলেন, আলাদ্দিনের পিতার মতো যে মুসলিম ও বাঙালি জাহাজ শ্রমিকদের যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের ইতিহাস সেটি আমার কাছে সপষ্ট হচ্ছিল তখন। সেসময় বাংলাদেশি মুসলিম বাঙালিদের জাহাজে নিযুক্ত করত বৃটিশ সরকার। সেসময় জাহাজে কাজ করা ছিল ব্যাপক ভয়াবহ। তাদেরকে কয়লা ভাঙতে হতো। তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা জাহাজের মধ্যে কয়লা ভাঙতো। সেখানকার তাপমাত্রা ছিল ১০০ ডিগ্রিরও বেশি।
বল্ডের গবেষণায় বেরিয়ে আসে যে, সেসময় জাহাজে কর্মরত শ্রমিকদের প্রায় সবাই-ই ছিল তরুণ। কারো কারো বয়স ছিল ১৪ বছরও। এই নির্মম পরিস্থিতির কারণে তাদের অনেকেই জাহাজ থেকে পালিয়ে যেত। আর সেসময় নিউ ইয়র্ক তাদের সাহায্য করেছিল। তার ধারণা, ১৯২০ থেকে ১৯৫০ সালের মধ্যে ৭০০ থেকে ১০০০ জাহাজ শ্রমিক যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বাস করতে শুরু করে। তবে সেসময় যুক্তরাষ্ট্রে চলা কঠিন আইনের কারণে তাদেরকে আফ্রিকান আমেরিকান বা পুয়ের্তোরিকার নারীদের বিয়ে করতে হয়েছিল। কেউ কেউ এরপর যুক্তরাষ্ট্রের অটো শিল্পে যুক্ত হয়েছিলেন। আলাদ্দিনের গল্প থেকে সত্যি বের করে আনাটাও ছিল বল্ডের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, আলাদ্দিনের যখন জন্ম হয় তখন তার পিতার বয়স ৫০ বছরেরও বেশি। এবং যখন তিনি মারা যান তখন আলাদ্দিন কিশোর বয়সে পরেছেন মাত্র। আলাদ্দিনের ভাষ্য থেকে বল্ড ধারণা করে নিয়েছেন, তার পিতা হাবিব উল্লাহ তরুণ বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন এবং তার জন্ম হয়েছিল ১৯০০ সালে।
গবেষণার জন্য বল্ড সেসময়কার বিভিন্ন নথিপত্র ঘেটে বেরিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে পুরোনো রেকর্ড, অভিবাসন পত্র ও নানা আর্কাইভ। বল্ডের কাছে আরেকটি চ্যালেঞ্জ ছিল দক্ষিণ এশিয়ার এই অভিবাসীদের খুঁজে বের করা। তবে এ ক্ষেত্রে বল্ড দেখেন তখনকার মুসলিম বাঙালিরা যুক্তরাষ্ট্রে এসে আফ্রিকান আমেরিকান বা পুয়ের্তোরিকান নারীদের বিয়ে করেছেন। এরপর তারা তাদের সমাজেই নিজেদের মানিয়ে নিয়েছেন। ফলে তাদের ইতিহাসও আফ্রিকান আমেরিকানদের সঙ্গে মিশে গেছে।
তবে প্রায় এক দশক ধরে নানা সাক্ষাৎকার ও গবেষণার পর এখন বেঙালি হারলেম ডকুমেন্টরির কাজ প্রায় শেষের দিকে। এর মধ্যে রয়েছে সেসময়কার বেশ কয়েকজন জাহাজ পলাতক শ্রমিক। হাবিব উল্লাহর সময়ের সর্বশেষ বেঁচে থাকা দক্ষিণ এশীয় জাহাজ পলাতক তারা। মাসুদ চৌধুরী নামের একজন বল্ডের সঙ্গে বেশ কয়েকবার কথা বলেছেন। তবে ২০১০ সালে তিনি মারা যান।
সবশেষে, বল্ড তার ডকুমেন্টরি নিয়ে আশাবাদী। তিনি বিশ্বাস করেন, তার এই কাজ মার্কিনীদের দক্ষিণ এশীয়দের অভিবাসন নিয়ে নতুন করে ভাবাবে। গত ১৫০ বছর ধরে তারা যেভাবে অভিবাসনকে দেখে এসেছে তার পরিবর্তন ঘটাবে। তিনি বলেন, এই অভিবাসন সমপর্কে অতি অল্পই লেখা হয়েছিল। দক্ষিণ এশীয়দের যুক্তরাষ্ট্রে আগমনের গল্প ছিল অসমপূর্ণ। আমি এমন একটি ইতিহাসকে তুলে এনেছি যেখানে দেখা যাবে মুসলিম ও শিখরা কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হয়ে এসেছেন।
বল্ড বলেন, তার বাবার গল্প শোনার পর আমার মনে একগাদা ঐতিহাসিক প্রশ্ন জেগেছিল। তার বাবা কি দক্ষিণ এশীয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে কোনো বড় অভিবাসনের অংশ ছিল- বিশেষ করে দক্ষিণ এশীয় মুসলিমদের- যাদের কথা ইতিহাসের পাতায় লেখা নেই?
উল্লাহ আর বল্ডের এই অন্বেষণের ইতিহাস নিয়ে লেখা হয়েছে বই- ‘বেঙ্গলি হারলেম’। ১৯৯৪ সালে বল্ডের তৈরি ডকুমেন্টরি ট্যাক্সি-ভালাতেও নিউ ইয়র্কে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রমিকদের জীবন নিয়ে বলা হয়েছে।
হাবিব উল্লাহর গল্পটি নাটকীয় ছিল শুধু এ কারণেই তিনি এটি পছন্দ করেননি। এর পেছনে আরেকটি কারণ হচ্ছে, তার বাবা এমন একটি সময় যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন যখন সেখানে এশীয় বিরোধী মনোভাব সর্বত্রই বিস্তার লাভ করেছিল। ১৯১৭ সালের অভিবাসন আইনে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে অভিবাসন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এর আগে ১৮৮২ সালে চীনাদের যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নিষিদ্ধ হয়। ফলে কার্যত সমগ্র এশিয়া থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন ছিল নিষিদ্ধ। বল্ড বলেন, এর মানে হচ্ছে আলাদ্দিনের বাবার যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ ছিল ১৯১৭ সালের আইনের লঙ্ঘন। তিনি তার জীবনের বেশির ভাগ সময় (১৯১৭-১৯৬৫ সাল) যুক্তরাষ্ট্রেই অবস্থান করেছেন।
কিন্তু বল্ড যখন আলাদ্দিনকে নিয়ে ডকুমেন্টরি তৈরি করছিলেন তার মনে হলো দক্ষিণ এশিয়ার অভিবাসীদের নিয়ে ঐতিহাসিক কিছু তথ্য তার অজানা রয়েছে। তাই এ গবেষণার জন্য তিনি নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি ডক্টরেট ডিগ্রি নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। বল্ড বলেন, কয়েক বছর বসে আমি শুধু একটি প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজেছি। আসলেই কি আলাদ্দিনের পিতা বড় কোনো ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের অংশ ছিল?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই ২০১৫ সালে তার বেঙ্গলি হারলেম এন্ড দ্য লস্ট হিস্টোরিস অব সাউথ এশিয়ান আমেরিকা বইটির কাজ শুরু হয়। বল্ড বলেন, আলাদ্দিনের পিতার মতো যে মুসলিম ও বাঙালি জাহাজ শ্রমিকদের যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের ইতিহাস সেটি আমার কাছে সপষ্ট হচ্ছিল তখন। সেসময় বাংলাদেশি মুসলিম বাঙালিদের জাহাজে নিযুক্ত করত বৃটিশ সরকার। সেসময় জাহাজে কাজ করা ছিল ব্যাপক ভয়াবহ। তাদেরকে কয়লা ভাঙতে হতো। তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা জাহাজের মধ্যে কয়লা ভাঙতো। সেখানকার তাপমাত্রা ছিল ১০০ ডিগ্রিরও বেশি।
বল্ডের গবেষণায় বেরিয়ে আসে যে, সেসময় জাহাজে কর্মরত শ্রমিকদের প্রায় সবাই-ই ছিল তরুণ। কারো কারো বয়স ছিল ১৪ বছরও। এই নির্মম পরিস্থিতির কারণে তাদের অনেকেই জাহাজ থেকে পালিয়ে যেত। আর সেসময় নিউ ইয়র্ক তাদের সাহায্য করেছিল। তার ধারণা, ১৯২০ থেকে ১৯৫০ সালের মধ্যে ৭০০ থেকে ১০০০ জাহাজ শ্রমিক যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বাস করতে শুরু করে। তবে সেসময় যুক্তরাষ্ট্রে চলা কঠিন আইনের কারণে তাদেরকে আফ্রিকান আমেরিকান বা পুয়ের্তোরিকার নারীদের বিয়ে করতে হয়েছিল। কেউ কেউ এরপর যুক্তরাষ্ট্রের অটো শিল্পে যুক্ত হয়েছিলেন। আলাদ্দিনের গল্প থেকে সত্যি বের করে আনাটাও ছিল বল্ডের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, আলাদ্দিনের যখন জন্ম হয় তখন তার পিতার বয়স ৫০ বছরেরও বেশি। এবং যখন তিনি মারা যান তখন আলাদ্দিন কিশোর বয়সে পরেছেন মাত্র। আলাদ্দিনের ভাষ্য থেকে বল্ড ধারণা করে নিয়েছেন, তার পিতা হাবিব উল্লাহ তরুণ বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন এবং তার জন্ম হয়েছিল ১৯০০ সালে।
গবেষণার জন্য বল্ড সেসময়কার বিভিন্ন নথিপত্র ঘেটে বেরিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে পুরোনো রেকর্ড, অভিবাসন পত্র ও নানা আর্কাইভ। বল্ডের কাছে আরেকটি চ্যালেঞ্জ ছিল দক্ষিণ এশিয়ার এই অভিবাসীদের খুঁজে বের করা। তবে এ ক্ষেত্রে বল্ড দেখেন তখনকার মুসলিম বাঙালিরা যুক্তরাষ্ট্রে এসে আফ্রিকান আমেরিকান বা পুয়ের্তোরিকান নারীদের বিয়ে করেছেন। এরপর তারা তাদের সমাজেই নিজেদের মানিয়ে নিয়েছেন। ফলে তাদের ইতিহাসও আফ্রিকান আমেরিকানদের সঙ্গে মিশে গেছে।
তবে প্রায় এক দশক ধরে নানা সাক্ষাৎকার ও গবেষণার পর এখন বেঙালি হারলেম ডকুমেন্টরির কাজ প্রায় শেষের দিকে। এর মধ্যে রয়েছে সেসময়কার বেশ কয়েকজন জাহাজ পলাতক শ্রমিক। হাবিব উল্লাহর সময়ের সর্বশেষ বেঁচে থাকা দক্ষিণ এশীয় জাহাজ পলাতক তারা। মাসুদ চৌধুরী নামের একজন বল্ডের সঙ্গে বেশ কয়েকবার কথা বলেছেন। তবে ২০১০ সালে তিনি মারা যান।
সবশেষে, বল্ড তার ডকুমেন্টরি নিয়ে আশাবাদী। তিনি বিশ্বাস করেন, তার এই কাজ মার্কিনীদের দক্ষিণ এশীয়দের অভিবাসন নিয়ে নতুন করে ভাবাবে। গত ১৫০ বছর ধরে তারা যেভাবে অভিবাসনকে দেখে এসেছে তার পরিবর্তন ঘটাবে। তিনি বলেন, এই অভিবাসন সমপর্কে অতি অল্পই লেখা হয়েছিল। দক্ষিণ এশীয়দের যুক্তরাষ্ট্রে আগমনের গল্প ছিল অসমপূর্ণ। আমি এমন একটি ইতিহাসকে তুলে এনেছি যেখানে দেখা যাবে মুসলিম ও শিখরা কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হয়ে এসেছেন।
No comments