ভারতকে ভুটানের কড়া চপেটাঘাত by এনপি উপাধ্যায়
পরিবেশ
সচেতন শিশু ভুটান মনে হচ্ছে এখন কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ১৯৪৯ সালের চাপিয়ে
দেয়া চুক্তির আলোকে কার্যত ভারতীয় শাসনে সুরক্ষিত দেশটি ইঙ্গিত দিয়েছে,
তারা ভারতীয় শাসনের বিরতিহীন মুষ্ঠি থেকে নিজেকে মুক্ত করার ইচ্ছা প্রকাশ
করতে যাচ্ছে।
এসব ইঙ্গিত আর কেউ নয়, খোদ ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে সেরিংই দিয়েছেন। গত ১৬ জুন দি হিন্দুকে দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি যেসব কথা বলেছেন, তাতে আঞ্চলিক পরাশক্তির বিরুদ্ধে সূক্ষ্ম যে বার্তাটি যায় তা হলো ভারতের পছন্দের বিমসটেকের চেয়ে সার্কের প্রতিই বেশি অনুকূল ভুটান।
দ্রুক নিয়ামরুপ শোগপার সভাপতি ডা. লোটে বেশ সূক্ষ্মভাবেই ভারতীয় আধিপত্য থেকে স্বস্তিদায়ক দূরত্ব বজায় রাখতে চাচ্ছেন।
প্রধানত তরুণ জাতীয়তাবাদীদের নিয়ে গঠিত গতিশীল সিভিল সোসাইটি নীরবে জানাচ্ছে যে ভুটানকে সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে বৈচিত্র্যপূর্ণ হতে হবে। অর্থাৎ চীন ও অন্যান্য দেশের সাথেও সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যাতে তারা ভারতের ওপর খুব বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল না হয়।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ডা. লোটের আগমনের প্রেক্ষাপটেই ভুটান গোপনে এই নাটকীয় পরিবর্তনের দিকে যাচ্ছে।
একজন আলোকিত নেতা জাতিকে বদলে দিতে পারেন। ডা. লোটের অধীনে ভুটানও হতে পারে একটি উদাহরণ, যাতে নেপালের ভারত-পছন্দ রাজনৈতিক প্রাণিগুলো শিখতে পারে।
অত্যন্ত যোগ্যতাসম্পন্ন চিকিৎসাবিদ ডা. লোটে তার নিজস্ব পন্থায় ভুটানি তরুণদেরকে উজ্জীবিত করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ডা. লোটের হাত দুটি বাঁধা এবং রাজা বিশেষভাবে ভারতের দিকে ঝুঁকে আছেন। ফলে ভারতের টেনে দেয়া কূটনৈতিক সীমা তিনি অতিক্রম করতে পারেন না। তবে তিনি এসব ইস্যুতে এমনসব কথা বলার সাহস করেছেন যা তার পূর্বসূরীরা কোনো পরিস্থিতিতেই চিন্তা পর্যন্ত করতে সাহসী হতেন না।
ভুটানি প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে বলেন, সার্ককে বিদায় বলা বা একে অপ্রাসঙ্গিক বা এটি টিকে থাকতে সক্ষম নয়, বলার সময় এখনো আসেনি। সার্কের রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস এবং আমাদের সবার আবেগের সাথে তা সম্পৃক্ত। আমি মনে করি, দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের সবাইকে একসাথে কাজ করা দরকার। ভৌগোলিকভাবে আমরা একই গ্রুপে থাকলেও অর্থনৈতিকভাবে ভালো করছি না।
ডা. লোটে কূটনৈতিকভাবে ১৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বার্তা পাঠিয়েছেন যে সার্কের ভূগোলই এখানকার দেশগুলোকে একত্রিত করেছে। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, সার্কের স্থলাভিষিক্ত হতে পারে না বিমসটেক। ভারতের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিমসটেক ভৌগোলিকভাবে ভিন্ন এলাকায় অবস্থিত।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি এটি ডা. লোটের সরাসরি বার্তা বলেই নেপালের রাজনৈতিক মহল বিশ্বাস করে।
ডা. লোটে বলেছেন, সার্কের একটি দীর্ঘ ইতিহাস রচনা করেছে। এর মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চাইছেন যে ভুটানও বিশ্বাস করে যে বিমসটেক হলো সদ্য গঠিত একটি সংস্থা, সার্কের যেমন গভীর শেকড় আছে, তেমনটি নেই বিমসটেকের।
সার্কে যে মুষ্টিমেয় দেশ প্রথম যোগ দিয়েছিল, ভুটান তাদের অন্যতম। ভুটানকে এই সংস্থায় যোগ দিতে বলেছিলেন নেপালের রাজা বীরেন্দ্র ও প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। বর্তমানে প্রায় বাতিলের পর্যায়ে চলে যাওয়া সার্কের প্রতিষ্ঠাতা এ দুজনই। পরে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আবদুল গাইয়ুম ও শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট জয়াবর্ধনে সংস্থাটিকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করেছিলেন।
রাজা জিগমে ওয়াঙচুক ও অন্যান্য সার্ক নেতা বছরের পর বছর ধরে এ ধরনের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব সৃষ্টি করেছিলেন। এসব নেতা সার্কভুক্ত দেশগুলোর রাজধানীতে প্রতি বছর মিলিত হতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন।
কিন্তু তবুও সার্ক শীর্ষ সম্মেলনগুলোতে ভুটানের রাজা দৃশ্যত ভারতকে ভয় পেতেন। ১৯৪৯ সালের ভুটান-ভারত চুক্তির কারণে এমনটি হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল।
ভারতের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবেশী দেশ গেলে, তাকে সাথে সাথেই ‘কঠিন শিক্ষা’ পেতে হতো। রাজীব গান্ধীর ১৯৮৯ সালে নেপালের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করাটা এর একটি উদাহরণ।
ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন সার্ক গঠনের বিরুদ্ধে। তিনি মনে করতেন, ছোট প্রতিবেশীগুলো সবাই চীনের পরিকল্পনায় ভারতের বিরুদ্ধে এক জোট হবে।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে এখানেই থেমে থাকেননি। তিনি আরো বলেন, ভারত ও পাকিস্তান যদি এই অঞ্চলে একসাথে কাজ না করে, তবে কোনো কিছুই এগুতে পারবে না।
তিনি বলেন দক্ষিণ এশিয়ার দুই গুরুত্বপূর্ণ দেশ পাকিস্তান ও ভারতকে অবশ্যই বন্ধুপ্রতীম হতে হবে যদি সার্ককে সক্রিয় রাখতে হয়। এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলেও তিনি আশায় বুক বেঁধেছেন।
পাকিস্তানের নাম উচ্চারণ করে কি ভুটান কোনো অপরাধ করেছে? পাকিস্তানের কথা বলার কারণে ভারত কি ভুটানের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেবে? অপেক্ষা করে দেখা যাক, কী হয়।
এই কথাগুলো পাঠ করে যে কেউ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেন যে তিনি ভারতকে বলছেন সার্ককে এগিয়ে নিতে। তিনি এ কথাও বলে দিলেন, যেহেতু পাকিস্তানের কোনো ঔদ্ধত্যপনা নেই, কাজেই সার্ককে অচল করার প্রধান খলনায়ক হলো ভারতই?
সাক্ষাতকারে তিনি অনেক না-বলা কথা বলে দিয়েছেন। আর এর মাধ্যমে ভারত সরকারের প্রতি অনেক ইঙ্গিত দিয়েছেন।
বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের উচিত হবে তার মূল্যায়ন করা। পাকিস্তান কি তার কথা শুনছে?
পাকিস্তানের স্মার্ট কূটনীতি থাকলে এখন সে সার্কের পক্ষে কথা বলতে পারে। কিন্তু পাকিস্তানের কূটনীতি এখনো পরিণত হয়নি।
নেপালের প্রধানমন্ত্রী ওলিকে নেপালি রাজনৈতিক মহলে ভারতের লোক বলে মনে করা হতো। তিনিও গত ১ জুন সার্কের পক্ষে কথা বলেছেন। তার ভাষা আর ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সুর একই।
এখন ওলি ও লোটে একসাথে কথা বলছেন। তারা কি চীন ও পাকিস্তানের বক্তব্যই প্রকাশ করছেন?
এসব কথা বলার কারণে নেপাল ও ভুটান কি তাদের ঘোষিত অনিষ্ঠকর প্রভুর কাছ থেকে বিপর্যয়ের মুখে পড়বে? অবরোধ আরোপ করা হবে? ভারত ছাড়া আর কে জানবে তা? অথচ দুই দেশই ভারতের বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত বন্ধু।
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টও সার্ক প্রক্রিয়া আবার শুরু করার পক্ষে কথা বলেছেন।
ভারতের জন্য আরেকটি অস্বস্তির বিষয় হলো, ডা. লোটে ভুটান-চীন সম্পর্কের কথা বলে দাবি করেছেন, আমাদের উভয়ের উচিত হবে একে অপরকে আরো ভালোভাবে জানা।
এর মানে হলো, ভুটান চায় থিম্পু-বেইজিং সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উঠুক। তিনি সম্ভবত দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী এমন এক সময় এই সাক্ষাতকার দিলেন, যখন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর প্রথম বিদেশ সফর হিসেবে থিম্পু সফর করতে যাচ্ছিলেন।
বলা নিষ্প্রয়োজন, লজ্জাজনক ১৯৪৯ সালের চুক্তির বলেই চীনের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল ভারত। তবে যুদ্ধ এড়ানো গিয়েছিল। আর এর মাধ্যমে ভারত আরেকটি বিপর্যয়কর পরাজয় এড়াতে পেরেছে।
ভুটানের মনের ব্যথা চীন বোঝে। তবে ১৯৪৯ সালের চুক্তির কারণে চীনের কাছে সুযোগ আছে খুবই কম।
অবশ্য চীন ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য প্রতিবেশীর স্থল পরিবেষ্ঠিত ভুটানের প্রতি বিপুল সহানুভূতি রয়েছে। ভারতের মুঠো থেকে আরো স্বাধীনতা দাবি করার জন্য ভুটানি তরুণদের সোচ্চার হওয়ার সময় এসেছে।
এসব ইঙ্গিত আর কেউ নয়, খোদ ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে সেরিংই দিয়েছেন। গত ১৬ জুন দি হিন্দুকে দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি যেসব কথা বলেছেন, তাতে আঞ্চলিক পরাশক্তির বিরুদ্ধে সূক্ষ্ম যে বার্তাটি যায় তা হলো ভারতের পছন্দের বিমসটেকের চেয়ে সার্কের প্রতিই বেশি অনুকূল ভুটান।
দ্রুক নিয়ামরুপ শোগপার সভাপতি ডা. লোটে বেশ সূক্ষ্মভাবেই ভারতীয় আধিপত্য থেকে স্বস্তিদায়ক দূরত্ব বজায় রাখতে চাচ্ছেন।
প্রধানত তরুণ জাতীয়তাবাদীদের নিয়ে গঠিত গতিশীল সিভিল সোসাইটি নীরবে জানাচ্ছে যে ভুটানকে সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে বৈচিত্র্যপূর্ণ হতে হবে। অর্থাৎ চীন ও অন্যান্য দেশের সাথেও সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যাতে তারা ভারতের ওপর খুব বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল না হয়।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ডা. লোটের আগমনের প্রেক্ষাপটেই ভুটান গোপনে এই নাটকীয় পরিবর্তনের দিকে যাচ্ছে।
একজন আলোকিত নেতা জাতিকে বদলে দিতে পারেন। ডা. লোটের অধীনে ভুটানও হতে পারে একটি উদাহরণ, যাতে নেপালের ভারত-পছন্দ রাজনৈতিক প্রাণিগুলো শিখতে পারে।
অত্যন্ত যোগ্যতাসম্পন্ন চিকিৎসাবিদ ডা. লোটে তার নিজস্ব পন্থায় ভুটানি তরুণদেরকে উজ্জীবিত করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ডা. লোটের হাত দুটি বাঁধা এবং রাজা বিশেষভাবে ভারতের দিকে ঝুঁকে আছেন। ফলে ভারতের টেনে দেয়া কূটনৈতিক সীমা তিনি অতিক্রম করতে পারেন না। তবে তিনি এসব ইস্যুতে এমনসব কথা বলার সাহস করেছেন যা তার পূর্বসূরীরা কোনো পরিস্থিতিতেই চিন্তা পর্যন্ত করতে সাহসী হতেন না।
ভুটানি প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে বলেন, সার্ককে বিদায় বলা বা একে অপ্রাসঙ্গিক বা এটি টিকে থাকতে সক্ষম নয়, বলার সময় এখনো আসেনি। সার্কের রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস এবং আমাদের সবার আবেগের সাথে তা সম্পৃক্ত। আমি মনে করি, দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের সবাইকে একসাথে কাজ করা দরকার। ভৌগোলিকভাবে আমরা একই গ্রুপে থাকলেও অর্থনৈতিকভাবে ভালো করছি না।
ডা. লোটে কূটনৈতিকভাবে ১৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বার্তা পাঠিয়েছেন যে সার্কের ভূগোলই এখানকার দেশগুলোকে একত্রিত করেছে। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, সার্কের স্থলাভিষিক্ত হতে পারে না বিমসটেক। ভারতের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিমসটেক ভৌগোলিকভাবে ভিন্ন এলাকায় অবস্থিত।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি এটি ডা. লোটের সরাসরি বার্তা বলেই নেপালের রাজনৈতিক মহল বিশ্বাস করে।
ডা. লোটে বলেছেন, সার্কের একটি দীর্ঘ ইতিহাস রচনা করেছে। এর মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চাইছেন যে ভুটানও বিশ্বাস করে যে বিমসটেক হলো সদ্য গঠিত একটি সংস্থা, সার্কের যেমন গভীর শেকড় আছে, তেমনটি নেই বিমসটেকের।
সার্কে যে মুষ্টিমেয় দেশ প্রথম যোগ দিয়েছিল, ভুটান তাদের অন্যতম। ভুটানকে এই সংস্থায় যোগ দিতে বলেছিলেন নেপালের রাজা বীরেন্দ্র ও প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। বর্তমানে প্রায় বাতিলের পর্যায়ে চলে যাওয়া সার্কের প্রতিষ্ঠাতা এ দুজনই। পরে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আবদুল গাইয়ুম ও শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট জয়াবর্ধনে সংস্থাটিকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করেছিলেন।
রাজা জিগমে ওয়াঙচুক ও অন্যান্য সার্ক নেতা বছরের পর বছর ধরে এ ধরনের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব সৃষ্টি করেছিলেন। এসব নেতা সার্কভুক্ত দেশগুলোর রাজধানীতে প্রতি বছর মিলিত হতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন।
কিন্তু তবুও সার্ক শীর্ষ সম্মেলনগুলোতে ভুটানের রাজা দৃশ্যত ভারতকে ভয় পেতেন। ১৯৪৯ সালের ভুটান-ভারত চুক্তির কারণে এমনটি হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল।
ভারতের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবেশী দেশ গেলে, তাকে সাথে সাথেই ‘কঠিন শিক্ষা’ পেতে হতো। রাজীব গান্ধীর ১৯৮৯ সালে নেপালের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করাটা এর একটি উদাহরণ।
ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন সার্ক গঠনের বিরুদ্ধে। তিনি মনে করতেন, ছোট প্রতিবেশীগুলো সবাই চীনের পরিকল্পনায় ভারতের বিরুদ্ধে এক জোট হবে।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে এখানেই থেমে থাকেননি। তিনি আরো বলেন, ভারত ও পাকিস্তান যদি এই অঞ্চলে একসাথে কাজ না করে, তবে কোনো কিছুই এগুতে পারবে না।
তিনি বলেন দক্ষিণ এশিয়ার দুই গুরুত্বপূর্ণ দেশ পাকিস্তান ও ভারতকে অবশ্যই বন্ধুপ্রতীম হতে হবে যদি সার্ককে সক্রিয় রাখতে হয়। এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলেও তিনি আশায় বুক বেঁধেছেন।
পাকিস্তানের নাম উচ্চারণ করে কি ভুটান কোনো অপরাধ করেছে? পাকিস্তানের কথা বলার কারণে ভারত কি ভুটানের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেবে? অপেক্ষা করে দেখা যাক, কী হয়।
এই কথাগুলো পাঠ করে যে কেউ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেন যে তিনি ভারতকে বলছেন সার্ককে এগিয়ে নিতে। তিনি এ কথাও বলে দিলেন, যেহেতু পাকিস্তানের কোনো ঔদ্ধত্যপনা নেই, কাজেই সার্ককে অচল করার প্রধান খলনায়ক হলো ভারতই?
সাক্ষাতকারে তিনি অনেক না-বলা কথা বলে দিয়েছেন। আর এর মাধ্যমে ভারত সরকারের প্রতি অনেক ইঙ্গিত দিয়েছেন।
বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের উচিত হবে তার মূল্যায়ন করা। পাকিস্তান কি তার কথা শুনছে?
পাকিস্তানের স্মার্ট কূটনীতি থাকলে এখন সে সার্কের পক্ষে কথা বলতে পারে। কিন্তু পাকিস্তানের কূটনীতি এখনো পরিণত হয়নি।
নেপালের প্রধানমন্ত্রী ওলিকে নেপালি রাজনৈতিক মহলে ভারতের লোক বলে মনে করা হতো। তিনিও গত ১ জুন সার্কের পক্ষে কথা বলেছেন। তার ভাষা আর ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সুর একই।
এখন ওলি ও লোটে একসাথে কথা বলছেন। তারা কি চীন ও পাকিস্তানের বক্তব্যই প্রকাশ করছেন?
এসব কথা বলার কারণে নেপাল ও ভুটান কি তাদের ঘোষিত অনিষ্ঠকর প্রভুর কাছ থেকে বিপর্যয়ের মুখে পড়বে? অবরোধ আরোপ করা হবে? ভারত ছাড়া আর কে জানবে তা? অথচ দুই দেশই ভারতের বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত বন্ধু।
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টও সার্ক প্রক্রিয়া আবার শুরু করার পক্ষে কথা বলেছেন।
ভারতের জন্য আরেকটি অস্বস্তির বিষয় হলো, ডা. লোটে ভুটান-চীন সম্পর্কের কথা বলে দাবি করেছেন, আমাদের উভয়ের উচিত হবে একে অপরকে আরো ভালোভাবে জানা।
এর মানে হলো, ভুটান চায় থিম্পু-বেইজিং সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উঠুক। তিনি সম্ভবত দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী এমন এক সময় এই সাক্ষাতকার দিলেন, যখন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর প্রথম বিদেশ সফর হিসেবে থিম্পু সফর করতে যাচ্ছিলেন।
বলা নিষ্প্রয়োজন, লজ্জাজনক ১৯৪৯ সালের চুক্তির বলেই চীনের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল ভারত। তবে যুদ্ধ এড়ানো গিয়েছিল। আর এর মাধ্যমে ভারত আরেকটি বিপর্যয়কর পরাজয় এড়াতে পেরেছে।
ভুটানের মনের ব্যথা চীন বোঝে। তবে ১৯৪৯ সালের চুক্তির কারণে চীনের কাছে সুযোগ আছে খুবই কম।
অবশ্য চীন ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য প্রতিবেশীর স্থল পরিবেষ্ঠিত ভুটানের প্রতি বিপুল সহানুভূতি রয়েছে। ভারতের মুঠো থেকে আরো স্বাধীনতা দাবি করার জন্য ভুটানি তরুণদের সোচ্চার হওয়ার সময় এসেছে।
No comments