অ্যান্টিবায়োটিকের রঙ লাল করার পরামর্শ by ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
দেশে
অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার বাড়ছে। আর অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিকের
কারণে এটি মানবদেহের জন্য খুবই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। তাই অ্যান্টিবায়োটিকের
রঙ লাল করার পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল
বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা.
মো. সায়েদুর রহমান। তিনি মানবজমিরনকে বলেন, এটা করে সাধারণ মানুষকে বোঝাতে
হবে যে, এই লাল রঙ আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনোভাবেই খাবেন না।
অ্যান্টিবায়োটিককে এক প্যাকেটে রাখতে হবে।
এর গায়ে নিয়ম লিখা থাকবে যে ৮ ঘণ্টা পর পর এটি খাবেন। অ্যান্টিবায়োটিকের গুরুত্ব, ভয়াবহতা ও করণীয় সম্পর্কে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞান বিষয়ের পাঠ্যপুস্তুকে এক পাতায় শিক্ষার্থীদের জন্য লিখতে হবে। এসব শ্রেণীতে প্রতিটি চূড়ান্ত পরীক্ষায় এই সংক্রান্ত একটি প্রশ্ন রাখার পরামর্শ দেন এই বিশেষজ্ঞ। ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দেন দোকানদার।
যার মধ্যে ৯০ ভাগ অপ্রয়োজনীয়। প্রয়োজন হলেও তারা চিকিৎসক না হওয়ায় অ্যান্টিবায়োটিকের সঠিক ডোজটা দিতে পারছেন না বা সম্পূর্ণ ডোজ দিচ্ছেন না। চিকিৎসক নন কিন্তু চিকিৎসা করেন এমন প্যারামেডিকস, পল্লী চিকিৎসকরাও ভুল ডোজে অ্যান্টিবায়োটিক দিচ্ছেন।
চিকিৎসক নন কিন্তু নিজেদের চিকিৎসক দাবি করেন এমন লোকের সংখ্যা দেশে লক্ষাধিক। যারা নামের আগে ডাক্তার লিখেন। লোকেও মনে করে তারা ডাক্তার। তাদের আমরা বলি কোয়াক। এরা পল্লী চিকিৎসক। এদের নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। সারা দেশে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ লাখ অ্যান্টিবায়োটিক আড়াই লাখ দোকান থেকে দেয়া হয়। দিনে যদি তারা চার থেকে পাঁচজনকে অ্যান্টিবায়োটিক দেয় তাহলে আনুমানিক উল্লিখিত অ্যান্টিবায়োটিক একদিনে দেয়া হচ্ছে। যাদের এ সম্পর্কে ভাল ধারণা নেই। এটা বন্ধ করতে হবে। এছাড়া মুরগি ও মাছকে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ কোটি অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো হয়। তাও বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, দেশে মুরগি, গরু এবং ছাগলের মাংস থেকেও মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করছে। এ অবস্থা অবশ্যই আতঙ্কজনক। এ চিকিৎসক বলেন, অ্যান্টিবায়োটিকের বিষয়ে প্রথম কথা হচ্ছে ‘সাধারণত রেজিস্ট্যান্সের ড্রাইভিং ফোর্স কত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় তার উপর দেখা হয়। কারণ ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে দেখা হলে ব্যাকটেরিয়ার একটা স্থিতি তৈরি হয় এবং সেই স্থিতিটাই আসলে রেজিস্ট্যান্স। ব্যাকটেরিয়া বাঁচার পদ্ধতিটা শিখে ফেলে। যেহেতু প্রতিদিন এই রকম লাখ লাখ অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হচ্ছে তাই ব্যাকটেরিয়াগুলোর সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর দেখা হচ্ছে এবং ব্যাকটেরিয়াগুলো অ্যান্টিবায়োটিককে চিনে ফেলছে। তাদের মধ্যে কোনও কোনও ব্যাকটেরিয়া বাঁচার একটা নিয়ম শিখে ফেলছে এবং তারা যখন লাখ লাখ কোটি কোটি হয়ে যায় তখন আর অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না। তখন আর ব্যাকটেরিয়াগুলো সেই অ্যান্টিবায়োটিকে মারা যায় না। যতবেশি অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার হবে তত বেশি সমস্যা বাড়ে। বাংলাদেশে যেহেতু কোনও প্রয়োজন ছাড়াই বেশি ব্যবহার হচ্ছে তাই আমাদের এই ড্রাইভিং ফোর্সটাকে প্রথমে কমাতে হবে। দ্বিতীয়ত বাংলাদেশে মুরগি পালনে অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে। প্রায় ২৪টার মতো অ্যান্টিবায়োটিক আছে যা মুরগি পালনে ব্যবহার হচ্ছে।
এর মধ্যে তিন ধরনের কোলিস্টিন, সিপ্রোফক্সাসিন, এজিথ্রোমাইসিন মুরগিকে প্রতিদিন খাওয়ানো হচ্ছে। বড় প্রাণীর ক্ষেত্রেও মাঝে মাঝেই দেয়া হচ্ছে। মুরগিকে অ্যান্টিবায়োটিক সকাল বেলায় পানির সঙ্গে দেয়া হয় যেন মুরগির ইনফেকশন না হয়। মানে মুরগির যেন মহামারি না লাগে। সুস্থ মুরগিকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো হচ্ছে যেন অসুস্থ না হয়। এর ফলে সেই মুরগি অসুস্থ হয় না, মুরগির মলমূত্রের সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক পানিতে যায় এবং পানির সঙ্গে থাকা ব্যাকটেরিয়াগুলোর সঙ্গে দেখা হয় এবং তারাও রেজিস্ট্যান্স হয়ে যায়। ওরা এরপরে জিন পাঠিয়ে দেয় মানুষকে যে ব্যাকটেরিয়াগুলো আক্রমণ করবে সেই ব্যাকটেরিয়াকে। ফলে সেই ব্যাকটেরিয়াগুলো মানুষকে পরবর্তীতে আক্রমণ করে। কিন্তু মুরগিতে ব্যবহার করার কারণে সেই মানুষটি যখন আক্রান্ত হলো তখন সেই ব্যাকটেরিয়া দিয়ে আর সিপ্রোফক্সাসিন, কোলিস্টিন কাজ করবে না। দেশের কোটি কোটি মুরগিকে সকাল বেলা পানির সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হচ্ছে। এটাকে আমরা বলি সিলেক্টিভ প্রেসার। দুর্বল ব্যাকটেরিয়াগুলো মারা যায় এবং সবল ব্যাকটেরিয়াগুলো বেঁচে যায়। তাই অন্তত এই তিনটি অ্যান্টিবায়োটিক মুরগিকে দেয়া বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, কোনও ব্যাকটেরিয়ার সেনসিটিভিটি কেমন তার টেস্ট হয় দেশের মাত্র ১০ থেকে ১২টা জায়গায়। এর ফলে যেটা হচ্ছে প্রায় ৫০টা জেলায় কোনও ব্যাকটেরিয়ার সেনসিটিভিটি কেমন সেটা না জেনে ডাক্তারদের বই থেকে পড়া জ্ঞান দিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক রোগীকে দিতে হয়। এতে ব্যাকটেরিয়ার রেজিস্ট্যান্স প্রতিদিন বদল হয়। কিন্তু ডাক্তাররা এটার ব্যাপারে সচেতন নয়। তারা ধরে নেন মানুষ তো আগে অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে এসেছে। তারা অকারণে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি শক্তিশালী নতুন বা ঝুঁকিপূর্ণ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করেন। তারা যে কারণটা বলেন যে, আগে অ্যান্টিবায়োটিক খেয়েছে। এটা আসলে খুবই ভুল যুক্তি। এই যুক্তিতে কখনও অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া যায় না। দেখা উচিত ছিল সেনসিটিভিটি। তাই দেশের ন্যূনতম সব জেলা সদর হাসপাতালে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সি পরীক্ষা করা প্রয়োজন। অন্তত অঞ্চলভিত্তিক মেডিকেল কলেজগুলোতে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হোক। কিংবা যেসব ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা হচ্ছে সেই তথ্য প্রকাশ করতে হবে। তাহলে চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন কোনটা এখন রেজিস্ট্যান্স হয়ে গেছে, কোনটা এখন ব্যবহার করতে হবে।
ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, চিকিৎসকের পড়ার ক্ষেত্রে মাত্র দুই ভাগ অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে পড়ানো হয়। এটা বাড়িয়ে ২৫ ভাগ করলে চিকিৎসকরা সচেতন হবেন। মেডিক্যাল কারিকুলামে আন্ডারগ্রাজুয়েট এবং পোস্ট গ্রাজুয়েটে এটার গুরুত্ব বাড়ানো উচিত। একই সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের নীতিমালা সবখানে করতে হবে।
আইসিইউ (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) রোগীর ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে শঙ্কার বিষয়ে তিনি বলেন, দেশের বেসরকারি হাসপাতাল থেকে বিএসএমএমইউতে যেসব রোগী আসেন তাদের লিভার ও হার্ট ফেইলিয়র থাকে। রোগীর মৃত্যুর আশঙ্কা আগে থেকেই তৈরি হয়। তার কমেপ্রামাইজ ফাংশনের কারণে রোগী যখন ব্যাকটেরিয়া দিয়ে ইনফেকটেড হয় তখন সেই ব্যাকটেরিয়াগুলো তিনি অন্য হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসেন। আইসিইউতে ৩ থেকে ৭ দিন থেকে টাকার অভাবে এখানে আসেন রোগী। জটিলতম কেস। আইসিইউ সবসময় ঝুঁকিপূর্ণ তবে বলা যাবে না যে এই ব্যাকটেরিয়ার কারণে রোগী মারা গেছেন। কিন্তু তাদের ব্যাকটেরিয়ার কালচার যদি আমরা দেখি, দেখা যাবে যে ওই সময় ড্রাগের বিরুদ্ধে ৮০ ভাগ রেজিন্ট্যান্স ছিল। যতজন মারা যায়, তার মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ রেজিস্ট্যান্ট পাওয়া যাবে সেটা হয়তো বেশিরভাগই এই ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত। তবে এই ব্যাকটেরিয়ার কারণেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে এটা বলা যাবে না। কারণ আগে থেকেই রোগী ঝুঁকিতে ছিল। তিনি বলেন, আইসিইউতে মারা যাওয়া প্রতি ১০ জনের আটজনের ক্ষেত্রে দেখা যাবে, নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া রেজিস্ট্যান্স ছিল।
এর গায়ে নিয়ম লিখা থাকবে যে ৮ ঘণ্টা পর পর এটি খাবেন। অ্যান্টিবায়োটিকের গুরুত্ব, ভয়াবহতা ও করণীয় সম্পর্কে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞান বিষয়ের পাঠ্যপুস্তুকে এক পাতায় শিক্ষার্থীদের জন্য লিখতে হবে। এসব শ্রেণীতে প্রতিটি চূড়ান্ত পরীক্ষায় এই সংক্রান্ত একটি প্রশ্ন রাখার পরামর্শ দেন এই বিশেষজ্ঞ। ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দেন দোকানদার।
যার মধ্যে ৯০ ভাগ অপ্রয়োজনীয়। প্রয়োজন হলেও তারা চিকিৎসক না হওয়ায় অ্যান্টিবায়োটিকের সঠিক ডোজটা দিতে পারছেন না বা সম্পূর্ণ ডোজ দিচ্ছেন না। চিকিৎসক নন কিন্তু চিকিৎসা করেন এমন প্যারামেডিকস, পল্লী চিকিৎসকরাও ভুল ডোজে অ্যান্টিবায়োটিক দিচ্ছেন।
চিকিৎসক নন কিন্তু নিজেদের চিকিৎসক দাবি করেন এমন লোকের সংখ্যা দেশে লক্ষাধিক। যারা নামের আগে ডাক্তার লিখেন। লোকেও মনে করে তারা ডাক্তার। তাদের আমরা বলি কোয়াক। এরা পল্লী চিকিৎসক। এদের নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। সারা দেশে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ লাখ অ্যান্টিবায়োটিক আড়াই লাখ দোকান থেকে দেয়া হয়। দিনে যদি তারা চার থেকে পাঁচজনকে অ্যান্টিবায়োটিক দেয় তাহলে আনুমানিক উল্লিখিত অ্যান্টিবায়োটিক একদিনে দেয়া হচ্ছে। যাদের এ সম্পর্কে ভাল ধারণা নেই। এটা বন্ধ করতে হবে। এছাড়া মুরগি ও মাছকে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ কোটি অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো হয়। তাও বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, দেশে মুরগি, গরু এবং ছাগলের মাংস থেকেও মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করছে। এ অবস্থা অবশ্যই আতঙ্কজনক। এ চিকিৎসক বলেন, অ্যান্টিবায়োটিকের বিষয়ে প্রথম কথা হচ্ছে ‘সাধারণত রেজিস্ট্যান্সের ড্রাইভিং ফোর্স কত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় তার উপর দেখা হয়। কারণ ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে দেখা হলে ব্যাকটেরিয়ার একটা স্থিতি তৈরি হয় এবং সেই স্থিতিটাই আসলে রেজিস্ট্যান্স। ব্যাকটেরিয়া বাঁচার পদ্ধতিটা শিখে ফেলে। যেহেতু প্রতিদিন এই রকম লাখ লাখ অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হচ্ছে তাই ব্যাকটেরিয়াগুলোর সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর দেখা হচ্ছে এবং ব্যাকটেরিয়াগুলো অ্যান্টিবায়োটিককে চিনে ফেলছে। তাদের মধ্যে কোনও কোনও ব্যাকটেরিয়া বাঁচার একটা নিয়ম শিখে ফেলছে এবং তারা যখন লাখ লাখ কোটি কোটি হয়ে যায় তখন আর অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না। তখন আর ব্যাকটেরিয়াগুলো সেই অ্যান্টিবায়োটিকে মারা যায় না। যতবেশি অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার হবে তত বেশি সমস্যা বাড়ে। বাংলাদেশে যেহেতু কোনও প্রয়োজন ছাড়াই বেশি ব্যবহার হচ্ছে তাই আমাদের এই ড্রাইভিং ফোর্সটাকে প্রথমে কমাতে হবে। দ্বিতীয়ত বাংলাদেশে মুরগি পালনে অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে। প্রায় ২৪টার মতো অ্যান্টিবায়োটিক আছে যা মুরগি পালনে ব্যবহার হচ্ছে।
এর মধ্যে তিন ধরনের কোলিস্টিন, সিপ্রোফক্সাসিন, এজিথ্রোমাইসিন মুরগিকে প্রতিদিন খাওয়ানো হচ্ছে। বড় প্রাণীর ক্ষেত্রেও মাঝে মাঝেই দেয়া হচ্ছে। মুরগিকে অ্যান্টিবায়োটিক সকাল বেলায় পানির সঙ্গে দেয়া হয় যেন মুরগির ইনফেকশন না হয়। মানে মুরগির যেন মহামারি না লাগে। সুস্থ মুরগিকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো হচ্ছে যেন অসুস্থ না হয়। এর ফলে সেই মুরগি অসুস্থ হয় না, মুরগির মলমূত্রের সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক পানিতে যায় এবং পানির সঙ্গে থাকা ব্যাকটেরিয়াগুলোর সঙ্গে দেখা হয় এবং তারাও রেজিস্ট্যান্স হয়ে যায়। ওরা এরপরে জিন পাঠিয়ে দেয় মানুষকে যে ব্যাকটেরিয়াগুলো আক্রমণ করবে সেই ব্যাকটেরিয়াকে। ফলে সেই ব্যাকটেরিয়াগুলো মানুষকে পরবর্তীতে আক্রমণ করে। কিন্তু মুরগিতে ব্যবহার করার কারণে সেই মানুষটি যখন আক্রান্ত হলো তখন সেই ব্যাকটেরিয়া দিয়ে আর সিপ্রোফক্সাসিন, কোলিস্টিন কাজ করবে না। দেশের কোটি কোটি মুরগিকে সকাল বেলা পানির সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হচ্ছে। এটাকে আমরা বলি সিলেক্টিভ প্রেসার। দুর্বল ব্যাকটেরিয়াগুলো মারা যায় এবং সবল ব্যাকটেরিয়াগুলো বেঁচে যায়। তাই অন্তত এই তিনটি অ্যান্টিবায়োটিক মুরগিকে দেয়া বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, কোনও ব্যাকটেরিয়ার সেনসিটিভিটি কেমন তার টেস্ট হয় দেশের মাত্র ১০ থেকে ১২টা জায়গায়। এর ফলে যেটা হচ্ছে প্রায় ৫০টা জেলায় কোনও ব্যাকটেরিয়ার সেনসিটিভিটি কেমন সেটা না জেনে ডাক্তারদের বই থেকে পড়া জ্ঞান দিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক রোগীকে দিতে হয়। এতে ব্যাকটেরিয়ার রেজিস্ট্যান্স প্রতিদিন বদল হয়। কিন্তু ডাক্তাররা এটার ব্যাপারে সচেতন নয়। তারা ধরে নেন মানুষ তো আগে অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে এসেছে। তারা অকারণে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি শক্তিশালী নতুন বা ঝুঁকিপূর্ণ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করেন। তারা যে কারণটা বলেন যে, আগে অ্যান্টিবায়োটিক খেয়েছে। এটা আসলে খুবই ভুল যুক্তি। এই যুক্তিতে কখনও অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া যায় না। দেখা উচিত ছিল সেনসিটিভিটি। তাই দেশের ন্যূনতম সব জেলা সদর হাসপাতালে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সি পরীক্ষা করা প্রয়োজন। অন্তত অঞ্চলভিত্তিক মেডিকেল কলেজগুলোতে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হোক। কিংবা যেসব ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা হচ্ছে সেই তথ্য প্রকাশ করতে হবে। তাহলে চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন কোনটা এখন রেজিস্ট্যান্স হয়ে গেছে, কোনটা এখন ব্যবহার করতে হবে।
ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, চিকিৎসকের পড়ার ক্ষেত্রে মাত্র দুই ভাগ অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে পড়ানো হয়। এটা বাড়িয়ে ২৫ ভাগ করলে চিকিৎসকরা সচেতন হবেন। মেডিক্যাল কারিকুলামে আন্ডারগ্রাজুয়েট এবং পোস্ট গ্রাজুয়েটে এটার গুরুত্ব বাড়ানো উচিত। একই সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের নীতিমালা সবখানে করতে হবে।
আইসিইউ (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) রোগীর ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে শঙ্কার বিষয়ে তিনি বলেন, দেশের বেসরকারি হাসপাতাল থেকে বিএসএমএমইউতে যেসব রোগী আসেন তাদের লিভার ও হার্ট ফেইলিয়র থাকে। রোগীর মৃত্যুর আশঙ্কা আগে থেকেই তৈরি হয়। তার কমেপ্রামাইজ ফাংশনের কারণে রোগী যখন ব্যাকটেরিয়া দিয়ে ইনফেকটেড হয় তখন সেই ব্যাকটেরিয়াগুলো তিনি অন্য হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসেন। আইসিইউতে ৩ থেকে ৭ দিন থেকে টাকার অভাবে এখানে আসেন রোগী। জটিলতম কেস। আইসিইউ সবসময় ঝুঁকিপূর্ণ তবে বলা যাবে না যে এই ব্যাকটেরিয়ার কারণে রোগী মারা গেছেন। কিন্তু তাদের ব্যাকটেরিয়ার কালচার যদি আমরা দেখি, দেখা যাবে যে ওই সময় ড্রাগের বিরুদ্ধে ৮০ ভাগ রেজিন্ট্যান্স ছিল। যতজন মারা যায়, তার মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ রেজিস্ট্যান্ট পাওয়া যাবে সেটা হয়তো বেশিরভাগই এই ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত। তবে এই ব্যাকটেরিয়ার কারণেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে এটা বলা যাবে না। কারণ আগে থেকেই রোগী ঝুঁকিতে ছিল। তিনি বলেন, আইসিইউতে মারা যাওয়া প্রতি ১০ জনের আটজনের ক্ষেত্রে দেখা যাবে, নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া রেজিস্ট্যান্স ছিল।
No comments