দেশে প্রতি ২ ঘণ্টায় একজন মায়ের মৃত্যু হচ্ছে
বাংলাদেশে
প্রতিবছর ৫ হাজার ৪৭৫ জন মা গর্ভজনিত মৃত্যুবরণ করছেন। প্রতিদিন মারা
যাচ্ছেন ১৪ থেকে ১৫ জন মা। আর প্রতি দু’ঘণ্টায় মারা যান একজন। বেশির ভাগ
গর্ভজনিত মৃত্যুই বাড়িতে হয়। ডেলিভারির ক্ষেত্রে ৫৪ শতাংশ মা বাড়িতে মারা
যান। আর রক্তক্ষরণের কারণে মারা যান ৩১ শতাংশ। ২৬ মে বাংলাদেশ মেডিকেল
এসোসিয়েশন (বিএমএ) ভবনে আয়োজিত ‘নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস-২০১৯’ উপলক্ষে মিডিয়া
ওরিন্টেশন সভায় স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যা বিশেষজ্ঞরা এসব তথ্য জানান।
অবসটেট্রিক্যাল এন্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি) এ
অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ২৮শে মে নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। এবারের
দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে-‘মর্যাদা ও অধিকার, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসূতি
সেবার অঙ্গীকার।’ অনুষ্ঠানে ওজিএসবি’র সভাপতি অধ্যাপক ডা. সামিনা চৌধুরী
তার মূল প্রবন্ধে বলেন, মাতৃমৃত্যুর প্রধান কারণ দু’টি। একটি হলো
রক্তক্ষরণ। এ কারণে মারা যান ৩১ শতাংশ মা। আরেকটি হলো একলামশিয়া (খিচুনি)।
এই হার ২৪ শতাংশ। মাতৃমৃত্যুর এই দু’টি কারণ সম্পূর্ণভাবে প্রতিরোধযোগ্য।
উল্লেখযোগ্যভাবে গর্ভপাতের কারণে মাতৃমৃত্যুর হার আগের তুলনায় অনেক হারে
বেড়েছে। মাতৃমৃত্যুর পরোক্ষ কারণ যেমন উচ্চরক্তচাপ ডায়াবেটিস নারী সহিংসতা
এসবের কারণে আগের তুলনায় মাতৃমৃত্যুর হার বৃদ্ধি পেয়েছে। গর্ভপাতে ৭ শতাংশ,
প্রত্যক্ষ ৭ শতাংশ এবং পরোক্ষ ২০ শতাংশ মায়ের মৃত্যুবরণ করছেন।
মাতৃমৃত্যুর স্থান চিহ্নিত করে ওজিএসবি’র সভাপতি বলেন, ৫৪ শতাংশ মায়ের
মৃত্যু হচ্ছে বাড়িতে। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও প্রাইভেট ক্লিনিকে ১৪ শতাংশ
মায়ের মৃত্যু হচ্ছে। স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যা এই বিশেষজ্ঞ আরও জানান,
প্রসব পরবর্তী সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সকল মাতৃমৃত্যুর ৫৫ ভাগ মৃত্যুই
২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংঘটিত হয়। দেশে বর্তমানে প্রতি লাখ জীবিত জন্মে ১৭২ জন
মৃত্যুবরণ করে (এসভিআরএস ২০১৭)। জাতিসংঘের অনুমান অনুযায়ী ২০১৫ সালে এমএমআর
প্রতি লাখে জীবিত জন্মে ১৭৬ জন। স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যা বিশেষজ্ঞরা মনে
করেন এটা সম্ভব হয়েছে মূলত নিম্নমুখী প্রজনন সক্ষমতা, উন্নততর যত্ন গ্রহণের
চর্চা এবং উচ্চতর সেবা গ্রহণের উন্নত সুবিধার ফলে। ডা. সামিনা চৌধুরী
বলেন, ৩৭ ভাগ মা বর্তমানে কমপক্ষে চারটি প্রসবপূর্ব সেবা গ্রহণ করে। দেশে
এখন প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি করানোর হার ৪৭ শতাংশ। প্রসবের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে
প্রসব পরবর্তী সেবা গ্রহণে হার ৩২ শতাংশ। গর্ভধারণ এবং প্রসবজনিত জটিলতায়
প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ৩ লাখ ৩০ হাজার নারীর মৃত্যু হয় এবং ২৬ লাখ
মৃতজন্মসহ ৩০ লাখ নবজাতক অকাল মৃত্যুবরণ করে। বিশ্বে প্রতিদিন ৮৩০ জন মা
মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বলেন, কোনো দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান এবং
আত্ম-সামাজিক অবস্থার প্রতিফলন ঘটে ওই দেশে মাতৃমৃত্যু এবং শিশুমৃত্যুর
হারের উপর। ১৯৯৭ সাল থেকে দেশে ২৮শে মে ‘নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস’ পালন করে
আসছে ওজিএসবি। সংগঠনটির মহাসচিব অধ্যাপক ডা. সালেহা বেগম চৌধুরী বলেন,
স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্য বিশেষজ্ঞগণের এই সমিতির সদস্য দুই হাজার এবং ১৩টি
শাখা রয়েছে। এগুলো গুরুত্বপূর্ণ জেলা শহরে অবস্থিত। ফলে দেশের প্রত্যন্ত
অঞ্চলে আমাদের সদস্যরা দেশের মায়েদের সেবা প্রদানে তাদের দক্ষতার প্রমাণ
রাখতে সক্ষম হয়েছে। সদস্যদের পরিচালনায় ঢাকার মিরপুর-১ এবং মিরপুর-১৩
নম্বরে দুটি হাসপাতাল অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে সেবা প্রদান করছে। ওজিএসবি
প্রতিবছর নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালন করে থাকে। সেখানে মায়েদের সম্পূর্ণ
বিনামূল্যে চিকিৎসা, ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অপারেশন করা হয়ে থাকে বলে
তিনি উল্লেখ করেন। স্ত্রীরোগ ও ধাত্রীবিদ্যা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সায়বা
আক্রার বলেন, আমাদের সচেতন হতে হবে। তাহলে মাতৃমৃত্যুর হার কমে আসবে।
এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা রয়েছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডা.
লায়লা আঞ্জুমান বানু, অধ্যাপক ডা. ফেরদৌসী বেগম, অধ্যাপক ডা.ফারহানা
দেওয়ান, অধ্যাপক ডা. রওশন আক্তার প্রমুখ।
No comments