আইন ও নৈতিকতার এক ‘নীলমণি’ সংকট
রাজনীতিতে
এর আগে কখনও এমন বিচিত্র সংকট দেখা যায়নি। যার মুখোমুখি হয়েছেন সুলতান
মোহাম্মদ মনসুর। সংসদে তিনি তার নামকরণ করেছেন, ‘নীলমণি।’ এখন অনেকেই জানতে
চাইবেন, তিনি নিজকে নীলকণ্ঠ ভাবেন কিনা। ইতিমধ্যে কি পরিমাণ হলাহল তিনি
গলাধঃকরণ করেছেন?
টিভি টকশো ও সামাজিক মিডিয়ায় তার বর্তমান অবস্থান কিছুটা সমর্থিত হলেও বেশ জোরালোভাবে তাকে প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতার দায়ে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রতি তার সুবচনকে অনেকেই বসন্তের কোকিলের কণ্ঠে কুহু ধ্বনির সঙ্গে তুলনা করছেন। কেউ কেউ অবশ্য বলেন, সুলতান নিশ্চয় শেষ পর্যন্ত বিচক্ষণতার পরিচয় দিতেই পারেন না, তা ধরে নেয়া সমীচীন হবে না!
সংবিধান ও আইন বিশ্লেষণ করলে যা দাঁড়ায়, আবার নৈতিকতার মাপকাঠিতে ফেললে যা দাঁড়ায়, তাতে বলা যায়, তিনি এক সত্যিকারের সুলতানি সংকটে পড়েছেন। এক দল থেকে জিতে পরে দল বদলের কিছু উদাহরণ আছে। তাতে কারো আসন শূন্য হয়েছে।
কারো হয়নি। কিন্তু সুলতানের মতো বিপদে এর আগে কেউ পড়েননি। তার মতো বড় মাপের কোনো নেতাকে নিয়ে এর আগে বাংলাদেশের রাজনীতি এমন ফাঁপরে পড়েনি।
অনেকের মতে, তিনি আইনি প্রশ্নেও কাটা পড়েন। নৈতিকতার প্রশ্নেও কাটা পড়েন। রাজনীতির প্রশ্নেও কাটা পড়েন। এসব কাটাকুটির প্রশ্ন এড়ানো সম্ভব হতে পারে যদি তিনি ঘরের ছেলে ঘরে ফেরেন। কিন্তু সেটা যদি সংসদের পদ বাঁচিয়ে রাখা সাপেক্ষে হয়, তাহলে সংকট আরো বড় হয়ে উঠবে। তিনি সংসদের আসন ছেড়ে মূল দলে ফিরতে পারেন। যদিও দলের প্রতি তার যে গভীর আকুতি সেটা ক্ষমতাসীন দলের এই ভরা জোয়ারের সময় এখনও পর্যন্ত প্রকাশ্য হয়নি। তবে অনেকেই ধরে নেবেন, সংসদের পদ চলে গেলে তিনি শুধু জয় বাংলা বলতে দলে ফিরতে না-ও আগ্রহী হতে পারেন। কারণ তাকে টানা পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে। তখন কি হয় তা কে জানে? সুতরাং অনেকের মতে, সুলতান এখন যেটা করছেন, যেটা বলছেন, তার মূলে রয়েছে, সংসদে তার পদ ধরে রাখা। একূল-ওকূল দুকূল হারাতে কে-ই বা রাজি হতে পারে?
আইনের বড় প্রশ্ন হলো, তিনি এখন আর গণফোরামের পরিচয় দিতে পারবেন না। আগে স্বতন্ত্র পরিচয় দেয়ার সুযোগ ছিল। ২০০৮ সালে আইন সংশোধনের ফলে সেই সুযাগও রহিত। কারণ তিনি ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন নিয়ে ভোটে প্রার্থী হননি। তিনি সংসদে তাহলে কি পরিচয়ে কথা বলবেন? গণফোরামের পরিচয় দিলে তিনি আইনি বাধার কবলে পড়বেন। আবার আওয়ামী লীগে যোগদান করে সংসদ সদস্য থাকার পথও রুদ্ধ। অবশ্য অভিজ্ঞরা বলেন, সুলতান এতবড় ঝুঁকি যে নিলেন, সেটা নিশ্চয় হিসেব করেই নিয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, তাকে মন্ত্রিসভায় দেখার একটা গুঞ্জনও ছিল। কিন্তু সেটা প্রথম রাতে হলে না হয় একটা কথা ছিল। এখন যখন তাকে বিশ্বাসঘাতকের তকমা নিতে হচ্ছে, তখন তাকে মন্ত্রী করার মানে হবে প্রধান বিরোধী দলের প্রতি আরো একটা অবিচার করা। আর আওয়ামী লীগের বর্তমান গোলাভরা ধানের মওসুমে তেমন একটা অবস্থার খুব দরকার আছে কিংবা সেটা কতটা বাস্তবসম্মত, সেটা কম গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন নয়।
ডিবিসিসহ বিভিন্ন টকশোতে সুলতানের যোগদান বেশ রসালো আলোচনার খোরাক যুগিয়েছে। কেউ বলছেন, তিনি প্রতারণা করে থাকলে বিএনপি কি জেনেশুনে তাকে নমিনেশন দিয়ে দলের প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করেনি?
সুলতান সংসদে গিয়েই বলছেন, তার আদর্শবিচ্যুতি ঘটেনি। ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচন তো আদর্শের ওপর হয়নি। ড. কামাল হোসেন গণফোরাম করেছেন বলে কখনও দাবি করেননি যে, তিনি বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির আদর্শ বিচ্যুত হয়েছেন। বরং তিনি দল ছেড়েছিলেন প্রধানত এই কারণে যে, তিনি আওয়ামী লীগের প্রকৃত আদর্শ বিচ্যুতি মানতে পারছেন না। এই আওয়ামী লীগ তার অচেনা। তিনি সবসময় বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দীন আহমেদ, কামরুজ্জামান, সৈয়দ নাজরুল ইসলামদের আদর্শভিত্তিক রাজনীতি থেকে বহু দূরে সরে গিয়ে গণতন্ত্রহীনতা এবং আইনের শাসনের বিপরীত রাজনীতিতে গা ভাসিয়ে দেয়ার জন্য তার মূল আদর্শের দলের সমালোচনা করেন। অনেকে তাই বলছেন, সুলতান তাহলে এতদিন কি বলে আসছিলেন? আওয়ামী লীগের বর্তমান ত্রুটিপূর্ণ শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটানোই ছিল ঐক্যফ্রন্ট গঠনের মূল লক্ষ্য। এখানে যে যেখান থেকে এসেছেন, সবাই তার তার দলের পতাকা হাতেই এসেছেন।
সুলতান তুখোড় ছাত্রনেতা, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম উজ্জ্বল তারকা। এ সবই ঠিক আছে।
কিন্তু সুলতান মোহাম্মদ মনসুর জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এমন অভাবনীয় বিতর্কের মুখোমুখি হবেন, তা আশা করা যায়নি। তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে সবথেকে জোরালো প্রশ্নটি যতটা না আইনি তার থেকে অনেক বেশি নৈতিকতার।
সংসদের প্রথম দিনের উদ্বোধনী বক্তৃতায় তার জ্ঞাতসারে কিংবা অজ্ঞাতসারে একটি গভীর আকুতির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। সেই আকুতি, অনেকের চোখে, তার সংসদীয় এলাকার ধানের শীষের সমর্থক ভোটারদের চেনাজানা আবেগ অনুভূতির সঙ্গে পরিচিত নয়। তার সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় একটি মাত্র সুর অন্যসব কিছুকে ছাপিয়ে গেছে।
আর সেটি হলো তার সরাজীবনের চিন্তাচেতনা দলের প্রতি তার ব্যক্তিগত আবেগ-অনুভূতি। অনেকের মতে, সুলতানের অনেক বড় নিন্দুকও অস্বীকার করতে পারবেন না যে, সুলতানের হৃদয়ে আওয়ামী লীগের প্রতি গভীর হাহাকার বিরাজমান। প্রকারান্তরে তিনি এই আফসোসটাই করছেন যে, কেন তাকে ধানের শীষ নিয়ে ভোট করে সংসদে আসতে হলো। কেন তিনি জয় বাংলার স্লোগানধারী হয়ে তার রাজনৈতিক বিশ্বাসের প্রধান প্রতিপক্ষের প্রতীক নিয়ে জয়ী হতে হল। তিনি মরিয়া হয়ে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, আমি তো তোমাদেরই লোক। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সুলতান কতটা সতর্ক ছিলেন, তা পরিষ্কার নয়। তবে তিনি নিজকে যে এক অসাধারণ সংঘাতের মুখোমুখি করেছেন, তাতে কোনো সন্দহ নেই।
এলাকার যে মানুষেরা তাকে ভোট দিয়েছেন, তার দাবিমতে তারা অবাধে ভোট দিতে পেরেছেন। তার আসনে “সেভাবে কোনো অপ্রীতিকির ঘটনা” ঘটেনি বলে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিয়েছেন। সতর্ক সুলতান কৈফিয়ত একটি দিয়েছেন। বলেছেন, অন্য জায়গায় কী ঘটেছে, সেটা বলবে “অন্যদের বিবেকের আদালত।”
তবে অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে, দল থেকে বহিষ্কার হওয়ার কারণে তিনি সংসদ সদস্য পদ হারাবেন কিনা। এর উত্তরে অনেকেই ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগের ও পরের বাংলাদেশের বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিচ্ছেন।
তিনি ভেবেছিলেন, তিনি তার থেকে অনেক অপরিচিত একজন মোকাব্বির খানকে সঙ্গে পাবেন। কিন্তু তার সেই আশা পূরণ হয়নি। অবশ্য মোকাব্বির খান এখনও পর্যন্ত কোনো নৈতিক অবস্থান নেয়ার ঘোষণা দেননি। তিনি বলেছেন, গণফোরামের সিদ্ধান্তে তিনি ওইদিন শপথ নেননি।
রাজনীতির পূর্ব নজির বলছে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর টিকে যেতে পারেন। হজ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় দল থেকে লতিফ সিদ্দিকী বহিষ্কৃত হন। এই বিষয়ে ইসিতে শুনানি গ্রহণ করা হলেও রায় দেয়ার আগেই তিনি পদত্যাগ করেন। বর্তমান অবস্থায় গণফোরাম থেকে ওই দুজনকে বহিষ্কার করা হলে কী হবে- সেটা তাই বর্তমান ইসির ওপর নির্ভর করছে।
নবম সংসদে সাতক্ষীরা-৪ আসনের জাতীয় পার্টির এমপি এইচ এম গোলাম রেজা দল থেকে বহিষ্কৃত হন। এ-সংক্রান্ত চিঠি স্পিকারের দপ্তর হয়ে নির্বাচন কমিশনে পৌঁছায়নি। সংসদের ওয়েবসাইট বলছে তিনি এখনও জাপা এমপি।
২০০৮ সালের আগে বিএনপির দুজন সংসদ সদস্য স্বপন ও আলাউদ্দিন মন্ত্রী হওয়ার পরে তৎকালীন ইসি তাদের পদ শূন্য ঘোষণা করেছিল।
টিভি টকশো ও সামাজিক মিডিয়ায় তার বর্তমান অবস্থান কিছুটা সমর্থিত হলেও বেশ জোরালোভাবে তাকে প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতার দায়ে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রতি তার সুবচনকে অনেকেই বসন্তের কোকিলের কণ্ঠে কুহু ধ্বনির সঙ্গে তুলনা করছেন। কেউ কেউ অবশ্য বলেন, সুলতান নিশ্চয় শেষ পর্যন্ত বিচক্ষণতার পরিচয় দিতেই পারেন না, তা ধরে নেয়া সমীচীন হবে না!
সংবিধান ও আইন বিশ্লেষণ করলে যা দাঁড়ায়, আবার নৈতিকতার মাপকাঠিতে ফেললে যা দাঁড়ায়, তাতে বলা যায়, তিনি এক সত্যিকারের সুলতানি সংকটে পড়েছেন। এক দল থেকে জিতে পরে দল বদলের কিছু উদাহরণ আছে। তাতে কারো আসন শূন্য হয়েছে।
কারো হয়নি। কিন্তু সুলতানের মতো বিপদে এর আগে কেউ পড়েননি। তার মতো বড় মাপের কোনো নেতাকে নিয়ে এর আগে বাংলাদেশের রাজনীতি এমন ফাঁপরে পড়েনি।
অনেকের মতে, তিনি আইনি প্রশ্নেও কাটা পড়েন। নৈতিকতার প্রশ্নেও কাটা পড়েন। রাজনীতির প্রশ্নেও কাটা পড়েন। এসব কাটাকুটির প্রশ্ন এড়ানো সম্ভব হতে পারে যদি তিনি ঘরের ছেলে ঘরে ফেরেন। কিন্তু সেটা যদি সংসদের পদ বাঁচিয়ে রাখা সাপেক্ষে হয়, তাহলে সংকট আরো বড় হয়ে উঠবে। তিনি সংসদের আসন ছেড়ে মূল দলে ফিরতে পারেন। যদিও দলের প্রতি তার যে গভীর আকুতি সেটা ক্ষমতাসীন দলের এই ভরা জোয়ারের সময় এখনও পর্যন্ত প্রকাশ্য হয়নি। তবে অনেকেই ধরে নেবেন, সংসদের পদ চলে গেলে তিনি শুধু জয় বাংলা বলতে দলে ফিরতে না-ও আগ্রহী হতে পারেন। কারণ তাকে টানা পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে। তখন কি হয় তা কে জানে? সুতরাং অনেকের মতে, সুলতান এখন যেটা করছেন, যেটা বলছেন, তার মূলে রয়েছে, সংসদে তার পদ ধরে রাখা। একূল-ওকূল দুকূল হারাতে কে-ই বা রাজি হতে পারে?
আইনের বড় প্রশ্ন হলো, তিনি এখন আর গণফোরামের পরিচয় দিতে পারবেন না। আগে স্বতন্ত্র পরিচয় দেয়ার সুযোগ ছিল। ২০০৮ সালে আইন সংশোধনের ফলে সেই সুযাগও রহিত। কারণ তিনি ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন নিয়ে ভোটে প্রার্থী হননি। তিনি সংসদে তাহলে কি পরিচয়ে কথা বলবেন? গণফোরামের পরিচয় দিলে তিনি আইনি বাধার কবলে পড়বেন। আবার আওয়ামী লীগে যোগদান করে সংসদ সদস্য থাকার পথও রুদ্ধ। অবশ্য অভিজ্ঞরা বলেন, সুলতান এতবড় ঝুঁকি যে নিলেন, সেটা নিশ্চয় হিসেব করেই নিয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, তাকে মন্ত্রিসভায় দেখার একটা গুঞ্জনও ছিল। কিন্তু সেটা প্রথম রাতে হলে না হয় একটা কথা ছিল। এখন যখন তাকে বিশ্বাসঘাতকের তকমা নিতে হচ্ছে, তখন তাকে মন্ত্রী করার মানে হবে প্রধান বিরোধী দলের প্রতি আরো একটা অবিচার করা। আর আওয়ামী লীগের বর্তমান গোলাভরা ধানের মওসুমে তেমন একটা অবস্থার খুব দরকার আছে কিংবা সেটা কতটা বাস্তবসম্মত, সেটা কম গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন নয়।
ডিবিসিসহ বিভিন্ন টকশোতে সুলতানের যোগদান বেশ রসালো আলোচনার খোরাক যুগিয়েছে। কেউ বলছেন, তিনি প্রতারণা করে থাকলে বিএনপি কি জেনেশুনে তাকে নমিনেশন দিয়ে দলের প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করেনি?
সুলতান সংসদে গিয়েই বলছেন, তার আদর্শবিচ্যুতি ঘটেনি। ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচন তো আদর্শের ওপর হয়নি। ড. কামাল হোসেন গণফোরাম করেছেন বলে কখনও দাবি করেননি যে, তিনি বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির আদর্শ বিচ্যুত হয়েছেন। বরং তিনি দল ছেড়েছিলেন প্রধানত এই কারণে যে, তিনি আওয়ামী লীগের প্রকৃত আদর্শ বিচ্যুতি মানতে পারছেন না। এই আওয়ামী লীগ তার অচেনা। তিনি সবসময় বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দীন আহমেদ, কামরুজ্জামান, সৈয়দ নাজরুল ইসলামদের আদর্শভিত্তিক রাজনীতি থেকে বহু দূরে সরে গিয়ে গণতন্ত্রহীনতা এবং আইনের শাসনের বিপরীত রাজনীতিতে গা ভাসিয়ে দেয়ার জন্য তার মূল আদর্শের দলের সমালোচনা করেন। অনেকে তাই বলছেন, সুলতান তাহলে এতদিন কি বলে আসছিলেন? আওয়ামী লীগের বর্তমান ত্রুটিপূর্ণ শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটানোই ছিল ঐক্যফ্রন্ট গঠনের মূল লক্ষ্য। এখানে যে যেখান থেকে এসেছেন, সবাই তার তার দলের পতাকা হাতেই এসেছেন।
সুলতান তুখোড় ছাত্রনেতা, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম উজ্জ্বল তারকা। এ সবই ঠিক আছে।
কিন্তু সুলতান মোহাম্মদ মনসুর জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এমন অভাবনীয় বিতর্কের মুখোমুখি হবেন, তা আশা করা যায়নি। তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে সবথেকে জোরালো প্রশ্নটি যতটা না আইনি তার থেকে অনেক বেশি নৈতিকতার।
সংসদের প্রথম দিনের উদ্বোধনী বক্তৃতায় তার জ্ঞাতসারে কিংবা অজ্ঞাতসারে একটি গভীর আকুতির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। সেই আকুতি, অনেকের চোখে, তার সংসদীয় এলাকার ধানের শীষের সমর্থক ভোটারদের চেনাজানা আবেগ অনুভূতির সঙ্গে পরিচিত নয়। তার সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় একটি মাত্র সুর অন্যসব কিছুকে ছাপিয়ে গেছে।
আর সেটি হলো তার সরাজীবনের চিন্তাচেতনা দলের প্রতি তার ব্যক্তিগত আবেগ-অনুভূতি। অনেকের মতে, সুলতানের অনেক বড় নিন্দুকও অস্বীকার করতে পারবেন না যে, সুলতানের হৃদয়ে আওয়ামী লীগের প্রতি গভীর হাহাকার বিরাজমান। প্রকারান্তরে তিনি এই আফসোসটাই করছেন যে, কেন তাকে ধানের শীষ নিয়ে ভোট করে সংসদে আসতে হলো। কেন তিনি জয় বাংলার স্লোগানধারী হয়ে তার রাজনৈতিক বিশ্বাসের প্রধান প্রতিপক্ষের প্রতীক নিয়ে জয়ী হতে হল। তিনি মরিয়া হয়ে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, আমি তো তোমাদেরই লোক। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সুলতান কতটা সতর্ক ছিলেন, তা পরিষ্কার নয়। তবে তিনি নিজকে যে এক অসাধারণ সংঘাতের মুখোমুখি করেছেন, তাতে কোনো সন্দহ নেই।
এলাকার যে মানুষেরা তাকে ভোট দিয়েছেন, তার দাবিমতে তারা অবাধে ভোট দিতে পেরেছেন। তার আসনে “সেভাবে কোনো অপ্রীতিকির ঘটনা” ঘটেনি বলে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিয়েছেন। সতর্ক সুলতান কৈফিয়ত একটি দিয়েছেন। বলেছেন, অন্য জায়গায় কী ঘটেছে, সেটা বলবে “অন্যদের বিবেকের আদালত।”
তবে অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে, দল থেকে বহিষ্কার হওয়ার কারণে তিনি সংসদ সদস্য পদ হারাবেন কিনা। এর উত্তরে অনেকেই ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগের ও পরের বাংলাদেশের বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিচ্ছেন।
তিনি ভেবেছিলেন, তিনি তার থেকে অনেক অপরিচিত একজন মোকাব্বির খানকে সঙ্গে পাবেন। কিন্তু তার সেই আশা পূরণ হয়নি। অবশ্য মোকাব্বির খান এখনও পর্যন্ত কোনো নৈতিক অবস্থান নেয়ার ঘোষণা দেননি। তিনি বলেছেন, গণফোরামের সিদ্ধান্তে তিনি ওইদিন শপথ নেননি।
রাজনীতির পূর্ব নজির বলছে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর টিকে যেতে পারেন। হজ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় দল থেকে লতিফ সিদ্দিকী বহিষ্কৃত হন। এই বিষয়ে ইসিতে শুনানি গ্রহণ করা হলেও রায় দেয়ার আগেই তিনি পদত্যাগ করেন। বর্তমান অবস্থায় গণফোরাম থেকে ওই দুজনকে বহিষ্কার করা হলে কী হবে- সেটা তাই বর্তমান ইসির ওপর নির্ভর করছে।
নবম সংসদে সাতক্ষীরা-৪ আসনের জাতীয় পার্টির এমপি এইচ এম গোলাম রেজা দল থেকে বহিষ্কৃত হন। এ-সংক্রান্ত চিঠি স্পিকারের দপ্তর হয়ে নির্বাচন কমিশনে পৌঁছায়নি। সংসদের ওয়েবসাইট বলছে তিনি এখনও জাপা এমপি।
২০০৮ সালের আগে বিএনপির দুজন সংসদ সদস্য স্বপন ও আলাউদ্দিন মন্ত্রী হওয়ার পরে তৎকালীন ইসি তাদের পদ শূন্য ঘোষণা করেছিল।
No comments