আমাদের দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া আহত হৃদয়গুলো -অরুন্ধতী রায়ের কাশ্মির বিশ্লেষণ
বুকারজয়ী
লেখক অরুন্ধতী রায় কেবল একজন বিশ্বখ্যাত উপন্যাসিক নন, সমতাভিত্তিক
ন্যায়পরায়ণ পৃথিবীর পথে তিনি একজন নিবেদিতপ্রাণ অ্যাকটিভিস্ট। কাশ্মির
প্রশ্নে তিনি সবসময়ই বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। সেখানকার ভূখণ্ডকে কোনোভাবেই ভারতের
অংশ মনে করেন না অরুন্ধতী। কাশ্মিরবাসীর আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের প্রশ্নে
সবসময় সোচ্চার তিনি। ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ নিপীড়িত মানুষের পক্ষে কথা বলার
দায়ে মোদি সরকার তাকে রাষ্ট্রবিরোধী তকমাও দিয়েছে; তবুও ভয়ে থেমে যাননি
তিনি। মাওবাদী গেরিলাদের সঙ্গেও পথ হেঁটেছেন, গোপন জঙ্গল থেকে খুঁজে আনতে
চেয়েছেন জীবনের সত্য। ভারত-পাকিস্তান উত্তোজনার প্রেক্ষাপটে হাফিংটন পোস্টে
লেখা সাম্প্রতিক এক নিবন্ধে অরুন্ধতী তুলে এনেছেন কাশ্মিরবাসীর
দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া হৃদয়ের আর্তি। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নিপীড়নে
পঙ্গুত্ব-অন্ধত্ব আর গুম কিংবা খুনের শিকার হওয়া কাশ্মিরি তরুণদের হৃদয়ে
জন্ম নেওয়া স্বাধীনতার আর্তি কেমন করে জঙ্গিবাদে উন্মত্ত হয়, কেমন করে তা
সমস্ত কাশ্মিরবাসীর আহত হৃদয়কে আন্দোলিত করে; ছোট্ট নিবন্ধে সেই কথাগুলোই
বলেছেন অরুন্ধতী। দেখিয়েছেন, সংকট নিরসন প্রচেষ্টার নামে সামরিক বলপ্রয়োগ
জোরালো করার মধ্য দিয়ে কী করে নরেন্দ্র মোদির সরকার ভবিষ্যতের সমাজকে সেই
ভগ্ন হৃদয়ের উন্মত্ত তারুণ্যের হাতে তুলে দিচ্ছে প্রতিদিন। বাংলা ট্রিবিউনের পাঠকদের জন্য 'আওয়ার ক্যাপচারড ওন্ডেড হার্টস' শিরোনামে হাফিংটন পোস্টে প্রকাশিত সেই নিবন্ধের ভাষান্তর। ভাষান্তর: বাধন অধিকারী
দশকের পর দশক জুড়ে ভারতের পূর্ববর্তী শাসকেরা যে পথে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন; 'আক্রান্ত হওয়ার' অজুহাতে পাকিস্তানের বালকোটে নির্বিচারি বিমান হামলা চালিয়ে সেই পথ থেকে নিজের অজান্তেই সরে গেছেন নরেন্দ্র মোদি।সেই ১৯৪৭ সাল থেকেই কাশ্মিরের সংঘাতকে অভ্যন্তরীণ বিষয় দাবি করে ভারত আন্তর্জাতিক মধ্যস্ততার যে কোনও প্রস্তাবের প্রতি তাদের উন্নাসিকতা দেখিয়ে আসছে। পাকিস্তানকে পাল্টা হামলায় তাড়িত করে এবং পারমাণবিক অস্ত্রসমৃদ্ধ দু’টি দেশ হিসেবে পারস্পারিক বোমা বর্ষণের নতুন ইতিহাস সৃষ্টির মধ্য দিয়ে মোদি কাশ্মির বিতর্কের আন্তর্জাতীকরণ করেছেন। বিশ্বের সামনে তিনি কাশ্মিরকে হাজির করেছেন পরমাণু যুদ্ধের আশঙ্কাপূর্ণ সবথেকে ঝুঁকিপূর্ণ এক অঞ্চল হিসেবে। [সে কারণে] পরমাণু যুদ্ধের ভয়াবহতা নিয়ে যাদের ভাবনা-চিন্তা আছে, এমন প্রত্যেক ব্যক্তি, রাষ্ট্র কিংবা সংগঠনেরই [কাশ্মিরে] হস্তক্ষেপের অধিকারের প্রশ্নটি সামনে এসেছে, [সামনে এসেছে পরমাণু যুদ্ধ] রোধ করতে সামর্থের সবটুকু ব্যবহার করার প্রশ্ন।
২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মিরের পুলওয়ামায় আধা-সামরিক বাহিনীর ২৫০০ সদস্যের এক গাড়িবহরে হামলা হয়। পাকিস্তানভিত্তিক জইশ-ই-মুহাম্মদের হয়ে হামলার দায় স্বীকার করে কাশ্মিরের ২০ বছর বয়সী আত্মঘাতী তরুণ আদিল আহমেদ দার। ৪০ মানুষের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে উন্মোচিত হয় কাশ্মির ট্রাজেডির আরেক অধ্যায়। সেই ১৯৯০ সাল থেকে কাশ্মিরের সংঘাতে ৭০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, গুম হয়েছে হাজার হাজার, লাখ লাখ মানুষ নিপীড়নের শিকার হয়েছে, ছররা গুলির আঘাতে বিকলাঙ্গ ও অন্ধ হয়ে গেছে হাজার হাজার তরুণ। ২০০৯ সালের পর গত ১২ মাসে সেখানে মৃতের সংখ্যা সর্বোচ্চতে পৌঁছেছে। অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি) তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ২৬০ জন ‘জঙ্গি’, ১৬০ জন বেসামরিক ছাড়াও রয়েছে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ১৬০ সদস্য, যারা কর্তব্যরত অবস্থায় প্রাণ হারিয়েছে।
কাশ্মিরের সংঘাত বিবেচনার ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী সেখানকার বিদ্রোহী যোদ্ধাদের কেউ কেউ ‘সন্ত্রাসী’ আর ‘জঙ্গি’ নামে ডাকে। কেউ কেউ আবার তাদের ‘মুক্তিযোদ্ধা’ কিংবা ‘মুজাহিদ’ হিসেবে দেখে। তবে কমবেশি সব কাশ্মিরির চোখেই তারা মুজাহিদ। তাদের [লড়াইয়ের] পদ্ধতির সঙ্গে একমত হোক কিংবা ভিন্নমত পোষণ করুক; হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেই শতসহস্র কাশ্মিরি তাদের শেষকৃত্যে যোগ দেয় বিদায় ও শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। গত বছর প্রাণ হারানো বেসামরিকদের বেশিরভাগই সেইসব মানুষ, যারা ভারতীয় সেনাদের অভিযান চলাকালে জঙ্গিদের পালানোর সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে গিয়েই নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন।
[কাশ্মিরে] সুদীর্ঘ সময় ধরে জারি থাকা এই রক্তাক্ত আখ্যানে, হতাহতের বিবেচনায় পুলওয়ামার হামলা সবথেকে ভয়াবহ। এদিকে হাজারে হাজারে না হলেও কাশ্মিরে আদিল আহমেদ দারের মতো শত শত তরুণের জন্ম হয়েছে যুদ্ধাবস্থার মধ্যে। এমন এক ভীতির সংস্কৃতিতে তারা বাস করেন, যে স্বাধীনতার উন্মত্ত বাসনায় আত্মঘাতীও হয়ে উঠতে পারেন। যে কোনও দিন তাই আবারও পুলওয়ামার থেকে দুর্বল কিংবা শক্তিশালী আরও একটি হামলা হতে পারে। সরকার কি আত্মঘাতী এইসব তরুণের হাতে দেশসহ সমগ্র উপমহাদেশের ভবিষ্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা তুলে দিতে চাইছে? নাটুকে আর অন্তসারশূন্য প্রতিক্রিয়া জানানোর মধ্য দিয়ে নরেন্দ্র মোদি কিন্তু সেই কাজটাই করেছেন। তিনি আসলে ওই স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায় আত্মাহুতিতে উন্মত্ত তরুণদের হাতেই আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা তুলে দিয়েছেন। পুলওয়ামার তরুণ আত্মঘাতী বোমাবাজদের সম্পর্কে আর কিছু জানার চেষ্টা করা হয়নি।
ভারতীয়রা ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে স্বাধীন হওয়ার নিজস্ব সংগ্রামকে খুবই গুরুত্ব দেয়। স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রনায়কদের এরা কার্যত দেবতাজ্ঞানে পূজা করে। তবে খুবই অদ্ভূত যে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাশ্মিরের স্বাধীনতাকামীদের তেমন করে দেখা হয় না, যারা একই [স্বাধীনতার] লড়াই করে যাচ্ছে। পাকিস্তান (একসময় রাষ্ট্রীয়ভাবে, এখন বিশেষত অরাষ্ট্রীয় ক্রীড়ানকদের দিয়ে ) অস্ত্র, জনবল ও সরঞ্জাম দিয়ে সেখানে যে সশস্ত্র গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে তার মধ্যে গোপন কিছু নেই। তবে স্থানীয়দের প্রত্যক্ষ সমর্থন ছাড়া যে কাশ্মিরের মতো একটা যুদ্ধক্ষেত্রে জঙ্গি অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব নয়, সেটাও তো আর গোপন নেই।
সুস্থ মস্তিষ্কের কোনও মানুষটা চিন্তা করবে যে, নারকীয়-জটিল-নৃশংস যুদ্ধ নিরসন কিংবা উত্তেজনা প্রশমিত হতে পারে এককালীন দ্রুততর নাটুকে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মাধ্যমে? এই সার্জিক্যাল স্ট্রাইট মোটেও ততোটা লক্ষ্যভেদী নয়, যতোটা বলা হয়। ২০১৬ সালে উরির হামলার পর এরকম একটা অভিযান পরিচালিত হয়েছিল, যা দিয়ে বলিউডকে অ্যাকশন চলচ্চিত্র বানাতে উৎসাহিত করার চেয়ে বেশি কিছু করা যায়নি। বালাকোটের হামলাও যেন একই সেই চলচ্চিত্রেরই অনুপ্রেরণা। এখন সংবাদমাধ্যম খবর লিখছে, পরবর্তী চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রজেক্টের অংশ হিসেবে ‘বালাকোট’ নামের কপিরাইট পেতে বলিউডের প্রযোজকরা এরইমধ্যে লাইন ধরেছে। সবমিলে, বলা দরকার, অদ্ভূত এই হামলার আগ্রহটি যতোটা না আক্রমণ ঠেকানোর পূর্ব কৌশল, তার চেয়ে বেশি 'প্রাক নির্বাচনি কৌশল'।
কোনও দেশের প্রধানমন্ত্রীর জন্য দেশের শক্তিশালী বিমানবাহিনীকে বিপজ্জনক নাটুকে অভিযানের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঘটনা অসম্মানজনক। আর দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আমাদের উপমহাদেশে যখন এই দায়িত্বজ্ঞানহীন পারমাণবিক উত্তেজনার খেলা চলছে, যুক্তরাষ্ট্র তখন তালেবানদের সঙ্গে আলোচনায় ব্যস্ত; যাদের সঙ্গে ১৭ বছর ধরে যুদ্ধ চালিয়েও কোনও ফল আসেনি। উপমহাদেশের এই পেঁচানো সহিংস বাস্তবতা ততোটাই রক্তমুখর, যতখানি দৃশ্যত হাজির আছে। কিন্তু আসলেই এতোটা সরলভাবে দেখার সুযোগ আছে কী?
দশকের পর দশক জুড়ে ভারতের পূর্ববর্তী শাসকেরা যে পথে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন; 'আক্রান্ত হওয়ার' অজুহাতে পাকিস্তানের বালকোটে নির্বিচারি বিমান হামলা চালিয়ে সেই পথ থেকে নিজের অজান্তেই সরে গেছেন নরেন্দ্র মোদি।সেই ১৯৪৭ সাল থেকেই কাশ্মিরের সংঘাতকে অভ্যন্তরীণ বিষয় দাবি করে ভারত আন্তর্জাতিক মধ্যস্ততার যে কোনও প্রস্তাবের প্রতি তাদের উন্নাসিকতা দেখিয়ে আসছে। পাকিস্তানকে পাল্টা হামলায় তাড়িত করে এবং পারমাণবিক অস্ত্রসমৃদ্ধ দু’টি দেশ হিসেবে পারস্পারিক বোমা বর্ষণের নতুন ইতিহাস সৃষ্টির মধ্য দিয়ে মোদি কাশ্মির বিতর্কের আন্তর্জাতীকরণ করেছেন। বিশ্বের সামনে তিনি কাশ্মিরকে হাজির করেছেন পরমাণু যুদ্ধের আশঙ্কাপূর্ণ সবথেকে ঝুঁকিপূর্ণ এক অঞ্চল হিসেবে। [সে কারণে] পরমাণু যুদ্ধের ভয়াবহতা নিয়ে যাদের ভাবনা-চিন্তা আছে, এমন প্রত্যেক ব্যক্তি, রাষ্ট্র কিংবা সংগঠনেরই [কাশ্মিরে] হস্তক্ষেপের অধিকারের প্রশ্নটি সামনে এসেছে, [সামনে এসেছে পরমাণু যুদ্ধ] রোধ করতে সামর্থের সবটুকু ব্যবহার করার প্রশ্ন।
২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মিরের পুলওয়ামায় আধা-সামরিক বাহিনীর ২৫০০ সদস্যের এক গাড়িবহরে হামলা হয়। পাকিস্তানভিত্তিক জইশ-ই-মুহাম্মদের হয়ে হামলার দায় স্বীকার করে কাশ্মিরের ২০ বছর বয়সী আত্মঘাতী তরুণ আদিল আহমেদ দার। ৪০ মানুষের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে উন্মোচিত হয় কাশ্মির ট্রাজেডির আরেক অধ্যায়। সেই ১৯৯০ সাল থেকে কাশ্মিরের সংঘাতে ৭০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, গুম হয়েছে হাজার হাজার, লাখ লাখ মানুষ নিপীড়নের শিকার হয়েছে, ছররা গুলির আঘাতে বিকলাঙ্গ ও অন্ধ হয়ে গেছে হাজার হাজার তরুণ। ২০০৯ সালের পর গত ১২ মাসে সেখানে মৃতের সংখ্যা সর্বোচ্চতে পৌঁছেছে। অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি) তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ২৬০ জন ‘জঙ্গি’, ১৬০ জন বেসামরিক ছাড়াও রয়েছে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ১৬০ সদস্য, যারা কর্তব্যরত অবস্থায় প্রাণ হারিয়েছে।
কাশ্মিরের সংঘাত বিবেচনার ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী সেখানকার বিদ্রোহী যোদ্ধাদের কেউ কেউ ‘সন্ত্রাসী’ আর ‘জঙ্গি’ নামে ডাকে। কেউ কেউ আবার তাদের ‘মুক্তিযোদ্ধা’ কিংবা ‘মুজাহিদ’ হিসেবে দেখে। তবে কমবেশি সব কাশ্মিরির চোখেই তারা মুজাহিদ। তাদের [লড়াইয়ের] পদ্ধতির সঙ্গে একমত হোক কিংবা ভিন্নমত পোষণ করুক; হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেই শতসহস্র কাশ্মিরি তাদের শেষকৃত্যে যোগ দেয় বিদায় ও শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। গত বছর প্রাণ হারানো বেসামরিকদের বেশিরভাগই সেইসব মানুষ, যারা ভারতীয় সেনাদের অভিযান চলাকালে জঙ্গিদের পালানোর সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে গিয়েই নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন।
[কাশ্মিরে] সুদীর্ঘ সময় ধরে জারি থাকা এই রক্তাক্ত আখ্যানে, হতাহতের বিবেচনায় পুলওয়ামার হামলা সবথেকে ভয়াবহ। এদিকে হাজারে হাজারে না হলেও কাশ্মিরে আদিল আহমেদ দারের মতো শত শত তরুণের জন্ম হয়েছে যুদ্ধাবস্থার মধ্যে। এমন এক ভীতির সংস্কৃতিতে তারা বাস করেন, যে স্বাধীনতার উন্মত্ত বাসনায় আত্মঘাতীও হয়ে উঠতে পারেন। যে কোনও দিন তাই আবারও পুলওয়ামার থেকে দুর্বল কিংবা শক্তিশালী আরও একটি হামলা হতে পারে। সরকার কি আত্মঘাতী এইসব তরুণের হাতে দেশসহ সমগ্র উপমহাদেশের ভবিষ্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা তুলে দিতে চাইছে? নাটুকে আর অন্তসারশূন্য প্রতিক্রিয়া জানানোর মধ্য দিয়ে নরেন্দ্র মোদি কিন্তু সেই কাজটাই করেছেন। তিনি আসলে ওই স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায় আত্মাহুতিতে উন্মত্ত তরুণদের হাতেই আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা তুলে দিয়েছেন। পুলওয়ামার তরুণ আত্মঘাতী বোমাবাজদের সম্পর্কে আর কিছু জানার চেষ্টা করা হয়নি।
ভারতীয়রা ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে স্বাধীন হওয়ার নিজস্ব সংগ্রামকে খুবই গুরুত্ব দেয়। স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রনায়কদের এরা কার্যত দেবতাজ্ঞানে পূজা করে। তবে খুবই অদ্ভূত যে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাশ্মিরের স্বাধীনতাকামীদের তেমন করে দেখা হয় না, যারা একই [স্বাধীনতার] লড়াই করে যাচ্ছে। পাকিস্তান (একসময় রাষ্ট্রীয়ভাবে, এখন বিশেষত অরাষ্ট্রীয় ক্রীড়ানকদের দিয়ে ) অস্ত্র, জনবল ও সরঞ্জাম দিয়ে সেখানে যে সশস্ত্র গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে তার মধ্যে গোপন কিছু নেই। তবে স্থানীয়দের প্রত্যক্ষ সমর্থন ছাড়া যে কাশ্মিরের মতো একটা যুদ্ধক্ষেত্রে জঙ্গি অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব নয়, সেটাও তো আর গোপন নেই।
সুস্থ মস্তিষ্কের কোনও মানুষটা চিন্তা করবে যে, নারকীয়-জটিল-নৃশংস যুদ্ধ নিরসন কিংবা উত্তেজনা প্রশমিত হতে পারে এককালীন দ্রুততর নাটুকে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মাধ্যমে? এই সার্জিক্যাল স্ট্রাইট মোটেও ততোটা লক্ষ্যভেদী নয়, যতোটা বলা হয়। ২০১৬ সালে উরির হামলার পর এরকম একটা অভিযান পরিচালিত হয়েছিল, যা দিয়ে বলিউডকে অ্যাকশন চলচ্চিত্র বানাতে উৎসাহিত করার চেয়ে বেশি কিছু করা যায়নি। বালাকোটের হামলাও যেন একই সেই চলচ্চিত্রেরই অনুপ্রেরণা। এখন সংবাদমাধ্যম খবর লিখছে, পরবর্তী চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রজেক্টের অংশ হিসেবে ‘বালাকোট’ নামের কপিরাইট পেতে বলিউডের প্রযোজকরা এরইমধ্যে লাইন ধরেছে। সবমিলে, বলা দরকার, অদ্ভূত এই হামলার আগ্রহটি যতোটা না আক্রমণ ঠেকানোর পূর্ব কৌশল, তার চেয়ে বেশি 'প্রাক নির্বাচনি কৌশল'।
কোনও দেশের প্রধানমন্ত্রীর জন্য দেশের শক্তিশালী বিমানবাহিনীকে বিপজ্জনক নাটুকে অভিযানের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঘটনা অসম্মানজনক। আর দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আমাদের উপমহাদেশে যখন এই দায়িত্বজ্ঞানহীন পারমাণবিক উত্তেজনার খেলা চলছে, যুক্তরাষ্ট্র তখন তালেবানদের সঙ্গে আলোচনায় ব্যস্ত; যাদের সঙ্গে ১৭ বছর ধরে যুদ্ধ চালিয়েও কোনও ফল আসেনি। উপমহাদেশের এই পেঁচানো সহিংস বাস্তবতা ততোটাই রক্তমুখর, যতখানি দৃশ্যত হাজির আছে। কিন্তু আসলেই এতোটা সরলভাবে দেখার সুযোগ আছে কী?
অরুন্ধতী রায়ের পরিচিতি
ন্যায়, সমতা আর মুক্ত পৃথিবীর পক্ষে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর অরুন্ধতী রায় বুদ্ধিজীবী হিসেবে বিশ্বজুড়ে এক পরিচিত নাম। জন্ম ১৯৬১ সালের ২৪ নভেম্বর ভারতের আসাম রাজ্যের শিলংয়ে। সিরিয়ান খ্রিস্টান মা ম্যারি রায়ও একজন নারী অধিকারকর্মী ছিলেন। শৈশবের দিনগুলোতে কেরালার আয়মানাম এলাকায় ছিলেন। সেখানকার কর্পাস ক্রিস্টি বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। স্থাপত্যবিদ্যার পাঠ নেন দিল্লির পরিকল্পনা ও স্থাপত্য বিদ্যালয়ে। ১৯৯৭ সালে রচিত প্রথম উপন্যাস ‘গড অব স্মল থিংস’-এর জন্য বুকার পুরস্কার পান অরুন্ধতী। মানবাধিকারের পক্ষে সোচ্চার অবস্থানের জন্য সিডনি শান্তি পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি।
ভারত থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের সব পরাক্রমশালী রাষ্ট্রের আগ্রাসী নীতির বিপক্ষে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর অরুন্ধতী। ইরাক-আফগানিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির বিরুদ্ধে অরুন্ধতী বলেছেন সোজাসাপ্টাভাবে। কাশ্মিরের জনতার আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের প্রশ্নে অরুন্ধতী দাঁড়িয়েছেন নিজ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। ভারতের মাওবাদী আন্দোলন নিয়ে মূলধারার বুদ্ধিজীবী এবং এস্টাবলিশমেন্টের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অবস্থান নিয়েছেন তিনি। পেয়েছেন ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা’র খেতাব। এসব বিভিন্ন বিষয়ে লেখা তার বহু রচনা নিয়ে বই প্রকাশিত হয়েছে। বিপুল পরিমাণ পাঠক তা সাদরে গ্রহণও করেছেন। তবে ৯৭’ র ‘গড অফ স্মল থিংস’-এর পর উপন্যাসের পথে হাঁটেননি আর, যেন থমকে ছিলেন ২০০৬ পর্যন্ত। ১০ বছরের বিরতি দিয়ে তিনি ২০০৭ এ লিখতে শুরু করেছিলেন দ্বিতীয় উপন্যাস ‘দ্য মিনিস্ট্রি অফ আটমোস্ট হ্যাপিনেস’। তার এই দ্বিতীয় উপন্যাসে বহু বছরের কাহিনী আবর্তিত হয় পুরনো দিল্লি থেকে শুরু করে অগ্নিকুণ্ড কাশ্মির হয়ে মধ্যভারতে। যেখানে যুদ্ধই শান্তি, অথবা শান্তিই যুদ্ধ। যেখানে কখনও কখনও ‘স্থিতাবস্থা’ ঘোষণা করা হয়।
গত বছর জুনে এই বই নিয়ে বিবিসির সাংবাদিক ইভান ডেভিসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অরুন্ধতী বলেন, ‘আমার মতো মানুষকে ভারতবিরোধী-জাতিবিরোধী আখ্যা দেওয়াটা একটা বড় রকমের তামাশা। অথচ আমরাই এই ভূখণ্ডকে ভালবাসি। একটা জাতি হিসেবে কিংবা সরকারের কিছু নীতি-পরিকল্পনার সমর্থক হিসেবে নয়।' মানবতার পক্ষে সোচ্চার এই অ্যাকটিভিস্ট বলেছিলেন, ‘আমরা ভালোবাসি এখানকার গান-কবিতা-নদী। আমরা লড়ছি এখানকার নদী-পাহাড়-মানুষ আর বৈচিত্র্যের জন্য, যা ভারতকে সুন্দর করে তুলেছে।’ অরুন্ধতী বলেন, ‘ভারতের জন্য তার মতো মানুষদের লড়াই সেই ভালোবাসারই সাক্ষ্য। লড়াই ছাড়া আমাদের আর কোনও পথ নাই। যা আমরা ভালোবাসি, তার সুরক্ষা নিশ্চিত করার লড়াইটাই বড় কথা।’
ন্যায়, সমতা আর মুক্ত পৃথিবীর পক্ষে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর অরুন্ধতী রায় বুদ্ধিজীবী হিসেবে বিশ্বজুড়ে এক পরিচিত নাম। জন্ম ১৯৬১ সালের ২৪ নভেম্বর ভারতের আসাম রাজ্যের শিলংয়ে। সিরিয়ান খ্রিস্টান মা ম্যারি রায়ও একজন নারী অধিকারকর্মী ছিলেন। শৈশবের দিনগুলোতে কেরালার আয়মানাম এলাকায় ছিলেন। সেখানকার কর্পাস ক্রিস্টি বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। স্থাপত্যবিদ্যার পাঠ নেন দিল্লির পরিকল্পনা ও স্থাপত্য বিদ্যালয়ে। ১৯৯৭ সালে রচিত প্রথম উপন্যাস ‘গড অব স্মল থিংস’-এর জন্য বুকার পুরস্কার পান অরুন্ধতী। মানবাধিকারের পক্ষে সোচ্চার অবস্থানের জন্য সিডনি শান্তি পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি।
ভারত থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের সব পরাক্রমশালী রাষ্ট্রের আগ্রাসী নীতির বিপক্ষে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর অরুন্ধতী। ইরাক-আফগানিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির বিরুদ্ধে অরুন্ধতী বলেছেন সোজাসাপ্টাভাবে। কাশ্মিরের জনতার আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের প্রশ্নে অরুন্ধতী দাঁড়িয়েছেন নিজ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। ভারতের মাওবাদী আন্দোলন নিয়ে মূলধারার বুদ্ধিজীবী এবং এস্টাবলিশমেন্টের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অবস্থান নিয়েছেন তিনি। পেয়েছেন ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা’র খেতাব। এসব বিভিন্ন বিষয়ে লেখা তার বহু রচনা নিয়ে বই প্রকাশিত হয়েছে। বিপুল পরিমাণ পাঠক তা সাদরে গ্রহণও করেছেন। তবে ৯৭’ র ‘গড অফ স্মল থিংস’-এর পর উপন্যাসের পথে হাঁটেননি আর, যেন থমকে ছিলেন ২০০৬ পর্যন্ত। ১০ বছরের বিরতি দিয়ে তিনি ২০০৭ এ লিখতে শুরু করেছিলেন দ্বিতীয় উপন্যাস ‘দ্য মিনিস্ট্রি অফ আটমোস্ট হ্যাপিনেস’। তার এই দ্বিতীয় উপন্যাসে বহু বছরের কাহিনী আবর্তিত হয় পুরনো দিল্লি থেকে শুরু করে অগ্নিকুণ্ড কাশ্মির হয়ে মধ্যভারতে। যেখানে যুদ্ধই শান্তি, অথবা শান্তিই যুদ্ধ। যেখানে কখনও কখনও ‘স্থিতাবস্থা’ ঘোষণা করা হয়।
গত বছর জুনে এই বই নিয়ে বিবিসির সাংবাদিক ইভান ডেভিসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অরুন্ধতী বলেন, ‘আমার মতো মানুষকে ভারতবিরোধী-জাতিবিরোধী আখ্যা দেওয়াটা একটা বড় রকমের তামাশা। অথচ আমরাই এই ভূখণ্ডকে ভালবাসি। একটা জাতি হিসেবে কিংবা সরকারের কিছু নীতি-পরিকল্পনার সমর্থক হিসেবে নয়।' মানবতার পক্ষে সোচ্চার এই অ্যাকটিভিস্ট বলেছিলেন, ‘আমরা ভালোবাসি এখানকার গান-কবিতা-নদী। আমরা লড়ছি এখানকার নদী-পাহাড়-মানুষ আর বৈচিত্র্যের জন্য, যা ভারতকে সুন্দর করে তুলেছে।’ অরুন্ধতী বলেন, ‘ভারতের জন্য তার মতো মানুষদের লড়াই সেই ভালোবাসারই সাক্ষ্য। লড়াই ছাড়া আমাদের আর কোনও পথ নাই। যা আমরা ভালোবাসি, তার সুরক্ষা নিশ্চিত করার লড়াইটাই বড় কথা।’
No comments