মনে হয় সাংবাদিকরা সব দাসানুদাস -কামাল লোহানী
প্রবীণ
সাংবাদিক কামাল লোহানী বলেছেন, দেশের সাংবাদিকতা ও সাংবাদিকদের ধস নেমেছে
মান এবং সম্মানের দিক দিয়ে। অবস্থা দেখে মনে হয় সাংবাদিকরা সব দাসানুদাস। সাপ্তাহিক নতুন কথার ৪০ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি
এসব কথা বলেন। ‘মুক্তিযুদ্ধ ও গণমাধ্যম’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নিয়ে কামাল
লোহানী বলেন, আজকে আমরা একেবারে বিকিয়ে গিয়েছি। আমাদের ধস নেমেছে। মানের
দিক থেকে এবং সম্মানের দিক থেকে। মানে যেভাবে ধস নেমেছে তেমনিভাবে
সম্মানেরও ধস নেমেছে। আজকে কোনো সম্মান সাংবাদিকরা পায় না।
আগে সাংবাদিকরা যে লেখাটি লিখতেন, উপসম্পাদকীয় অথবা সম্পাদকীয়টা লিখতেন। সেগুলো সমস্ত মালিক বা সরকারের কানে পানি যেতো। কিন্তু এখন পানি কেন, কিছুই যায় না। তারা তোয়াক্কাও করে না।
এবং মাঝে মাঝে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে দেখি এমনভাবে কথা বলেন, তাতে করে মনে হয় যে সাংবাদিকরা সব দাসানুদাস...। তার কথা শুনার জন্য সবাই গেছে। রিপোর্ট করার জন্য নয়। অদ্ভুত লাগে আমাদের কাছে, তিনি যেভাবে ধমকান। এ ধমকানোর মতো স্বভাব এটা খুব দুঃখজনক যে সাংবাদিকদের সঙ্গে এই ধরনের আচরণ করেন। অথচ তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আজকে আমি একটা অভিজ্ঞতার কথা বলি, আমরা তখন সাংবাদিক ইউনিয়ন করি। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন। নির্মল সেন, গিয়াস কামাল চৌধুরী, আমি এবং রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ কোনো এপয়নমেন্ট ছাড়া আমরা গিয়ে হাজির হয়ে যেতাম প্রধানমন্ত্রীর কাছে। এবং তিনি আমাদের জন্য দরজা খোলা রাখতেন। আর আজকে, চেষ্টা করেও, বহু কষ্ট করে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য অপেক্ষায় থাকেন।
তিনি বলেন, আজকে বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার হচ্ছে সর্বত্র। বার বার উচ্চারিত হচ্ছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বলে, জাতির জনক বলে। কিন্তু তার যে সম্মান রাখা দরকার, শ্রদ্ধা নিবেদন করা দরকার, সেটা কি করছেন যথার্থভাবে? একবার নিজেকে জিজ্ঞেস করে দেখেন তো। তিনি তো বলেছিলেন, ধর্মের নামে কোনো রাজনীতিই চলবে না, আজকে দেশে কী হচ্ছে? হেফাজতে ইসলামের যে সমাবেশ সেখানে গিয়ে আপনি জননী হয়ে গেলেন। কাওমি জননী। আমি একটু সান্ত্বনা পেলাম অন্ততপক্ষে ওরা কওমি আম্মা বলেনি। কওমি জননী বলেছে। বাংলা শব্দটা ব্যবহার করেছে। এই যে হেফাজতের কাছে আপনি এমন করে নতজানু হয়ে পাঠ্যপুস্তক থেকে অনেক লেখা বাদ দিয়ে দিলেন।
কুসম কুমারী দাসের লেখা আমরা ছোটবেলায় পড়েছি, আমাদের দেশে কবে সেই ছেলে হবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে। এই কবিতা বাদ হয়ে গেলো? আমরা ছোটবেলায় পড়েছি, আমদের ছেলেরা পড়েছে নাতিরা পড়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে সেই জিনিসটা খুঁজে পাচ্ছি না।
তিনি বলেন, আজকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যদি এটাই হয়, ধর্মনিপেক্ষতাকে নসাৎ করে দিয়ে, বিলুপ্ত করে দিয়ে হেফাজতে ইসলামের কাছে আত্মসমর্পণ করেন তাহলে কী করে চলবে? আপনি কি করে বলবেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ এই সরকার। এই রাষ্ট্র। সমাজতন্ত্রকে আপনি সমাজের ন্যায়বিচার বলছেন। সামাজিক ন্যায়বিচার আর সমাজতন্ত্র কি এক কথা হলো? সমাজতন্ত্রটা হচ্ছে আদর্শ, অমর আদর্শ, যে আদর্শের কখনোই মৃত্যু হয় না। আজকে সে আদর্শের বিরুদ্ধে আপনি সামাজিক ন্যায়বিচার করলেন। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের কথা বলবো না। বলে লাভ নেই কারণ গণতন্ত্র বলে কোনো কিছু আছে বলে আমার মনে হচ্ছে না। আর সবচাইতে বড় যে জায়গাটা, সেটা হলো গণমাধ্যমে যে আজকে প্রতিবাদের কথা, লেখার সাহস থাকা উচিত ছিল, আজ সেই সাহসটি আমাদের নেই কেন? আমরা ইয়াহিয়ার বিরুদ্ধে লিখতে পেরেছি, আইয়ুব খানের এরকম কঠিন মার্শাল ল’-এর বিরুদ্ধে আমরা সংবাদপত্রের স্বাধীনতর জন্য চিৎকার করতে পেরেছি। আমরা মাওলানা আকরাম খাঁ নিয়ে মিছিল করেছি। এখন কোথায় যায় মিছিল। এখান থেকে সেখানে যায়। আর সেই দিনকার মিছিল সাংবাদিকরা করেছিল তার সঙ্গে মানুষ জমা হয়ে প্রেসক্লাব থেকে আরম্ভ করে বায়তুল মোকারম দিয়ে সদর ঘাট হয়ে চকবাজার হয়ে শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়েছিল। ভাবতে পারেন?
আজকে কোনো রাজনৈতিক দল পর্যন্ত সেই মিছিল করে না। কেন এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে? আজকে ইউনিয়ন না থাকলে শ্রমজীবী মানুষের কাছে যাবেন কী করে? কৃষকের কাছে যাবেনটা কী করে?
তিনি বলেন, আজকে আমরা এই প্রেসক্লাবে বসে ২৩শে মার্চ ৭১ সালে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নে আমরা প্রস্তাব দিলাম, আজ থেকে মার্শাল ল’ রিজিমের কোনো সংবাদ এবং ছবি, প্রেসনোট, কোনো কিছুই সংবাদপত্রে ছাপা হবে না। আজকে ভাবতে পারেন এই কথা বলছি...। আজকের ইউনিয়নগুলো সেইভাবে কোনো শক্তিই দেখাতে পারছে না। আজকে নিজেদের লড়াইটাকে নিজেরা এমনভাবে ইয়ে করেছেন যে সংবাদপত্রের মালিক বা সরকারের কাছে তারা একেবারে নতজানু হয়ে আছে। তাই ‘মুক্তিযুদ্ধ ও গণমাধ্যম’ এই দুটোকে রিলেট করে কথা বলা বড় কষ্টকর।
কামাল লোহানী বলেন, লেলিন, স্ট্যালিন এরা যে পথ ধরে এগিয়ে ছিলেন, সেপথগুলোকে যদি আমরা একেবারই ভুলে বসে থাকি, সে পথে যদি চলবার জন্য চেষ্টা না করি তাহলে আমাদের এই অধঃপতন হবে এবং আরো ক্ষতি হবে এবং কষ্টটা বাড়তেই থাকবে।
আগে সাংবাদিকরা যে লেখাটি লিখতেন, উপসম্পাদকীয় অথবা সম্পাদকীয়টা লিখতেন। সেগুলো সমস্ত মালিক বা সরকারের কানে পানি যেতো। কিন্তু এখন পানি কেন, কিছুই যায় না। তারা তোয়াক্কাও করে না।
এবং মাঝে মাঝে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে দেখি এমনভাবে কথা বলেন, তাতে করে মনে হয় যে সাংবাদিকরা সব দাসানুদাস...। তার কথা শুনার জন্য সবাই গেছে। রিপোর্ট করার জন্য নয়। অদ্ভুত লাগে আমাদের কাছে, তিনি যেভাবে ধমকান। এ ধমকানোর মতো স্বভাব এটা খুব দুঃখজনক যে সাংবাদিকদের সঙ্গে এই ধরনের আচরণ করেন। অথচ তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আজকে আমি একটা অভিজ্ঞতার কথা বলি, আমরা তখন সাংবাদিক ইউনিয়ন করি। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন। নির্মল সেন, গিয়াস কামাল চৌধুরী, আমি এবং রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ কোনো এপয়নমেন্ট ছাড়া আমরা গিয়ে হাজির হয়ে যেতাম প্রধানমন্ত্রীর কাছে। এবং তিনি আমাদের জন্য দরজা খোলা রাখতেন। আর আজকে, চেষ্টা করেও, বহু কষ্ট করে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য অপেক্ষায় থাকেন।
তিনি বলেন, আজকে বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার হচ্ছে সর্বত্র। বার বার উচ্চারিত হচ্ছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বলে, জাতির জনক বলে। কিন্তু তার যে সম্মান রাখা দরকার, শ্রদ্ধা নিবেদন করা দরকার, সেটা কি করছেন যথার্থভাবে? একবার নিজেকে জিজ্ঞেস করে দেখেন তো। তিনি তো বলেছিলেন, ধর্মের নামে কোনো রাজনীতিই চলবে না, আজকে দেশে কী হচ্ছে? হেফাজতে ইসলামের যে সমাবেশ সেখানে গিয়ে আপনি জননী হয়ে গেলেন। কাওমি জননী। আমি একটু সান্ত্বনা পেলাম অন্ততপক্ষে ওরা কওমি আম্মা বলেনি। কওমি জননী বলেছে। বাংলা শব্দটা ব্যবহার করেছে। এই যে হেফাজতের কাছে আপনি এমন করে নতজানু হয়ে পাঠ্যপুস্তক থেকে অনেক লেখা বাদ দিয়ে দিলেন।
কুসম কুমারী দাসের লেখা আমরা ছোটবেলায় পড়েছি, আমাদের দেশে কবে সেই ছেলে হবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে। এই কবিতা বাদ হয়ে গেলো? আমরা ছোটবেলায় পড়েছি, আমদের ছেলেরা পড়েছে নাতিরা পড়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে সেই জিনিসটা খুঁজে পাচ্ছি না।
তিনি বলেন, আজকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যদি এটাই হয়, ধর্মনিপেক্ষতাকে নসাৎ করে দিয়ে, বিলুপ্ত করে দিয়ে হেফাজতে ইসলামের কাছে আত্মসমর্পণ করেন তাহলে কী করে চলবে? আপনি কি করে বলবেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ এই সরকার। এই রাষ্ট্র। সমাজতন্ত্রকে আপনি সমাজের ন্যায়বিচার বলছেন। সামাজিক ন্যায়বিচার আর সমাজতন্ত্র কি এক কথা হলো? সমাজতন্ত্রটা হচ্ছে আদর্শ, অমর আদর্শ, যে আদর্শের কখনোই মৃত্যু হয় না। আজকে সে আদর্শের বিরুদ্ধে আপনি সামাজিক ন্যায়বিচার করলেন। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের কথা বলবো না। বলে লাভ নেই কারণ গণতন্ত্র বলে কোনো কিছু আছে বলে আমার মনে হচ্ছে না। আর সবচাইতে বড় যে জায়গাটা, সেটা হলো গণমাধ্যমে যে আজকে প্রতিবাদের কথা, লেখার সাহস থাকা উচিত ছিল, আজ সেই সাহসটি আমাদের নেই কেন? আমরা ইয়াহিয়ার বিরুদ্ধে লিখতে পেরেছি, আইয়ুব খানের এরকম কঠিন মার্শাল ল’-এর বিরুদ্ধে আমরা সংবাদপত্রের স্বাধীনতর জন্য চিৎকার করতে পেরেছি। আমরা মাওলানা আকরাম খাঁ নিয়ে মিছিল করেছি। এখন কোথায় যায় মিছিল। এখান থেকে সেখানে যায়। আর সেই দিনকার মিছিল সাংবাদিকরা করেছিল তার সঙ্গে মানুষ জমা হয়ে প্রেসক্লাব থেকে আরম্ভ করে বায়তুল মোকারম দিয়ে সদর ঘাট হয়ে চকবাজার হয়ে শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়েছিল। ভাবতে পারেন?
আজকে কোনো রাজনৈতিক দল পর্যন্ত সেই মিছিল করে না। কেন এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে? আজকে ইউনিয়ন না থাকলে শ্রমজীবী মানুষের কাছে যাবেন কী করে? কৃষকের কাছে যাবেনটা কী করে?
তিনি বলেন, আজকে আমরা এই প্রেসক্লাবে বসে ২৩শে মার্চ ৭১ সালে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নে আমরা প্রস্তাব দিলাম, আজ থেকে মার্শাল ল’ রিজিমের কোনো সংবাদ এবং ছবি, প্রেসনোট, কোনো কিছুই সংবাদপত্রে ছাপা হবে না। আজকে ভাবতে পারেন এই কথা বলছি...। আজকের ইউনিয়নগুলো সেইভাবে কোনো শক্তিই দেখাতে পারছে না। আজকে নিজেদের লড়াইটাকে নিজেরা এমনভাবে ইয়ে করেছেন যে সংবাদপত্রের মালিক বা সরকারের কাছে তারা একেবারে নতজানু হয়ে আছে। তাই ‘মুক্তিযুদ্ধ ও গণমাধ্যম’ এই দুটোকে রিলেট করে কথা বলা বড় কষ্টকর।
কামাল লোহানী বলেন, লেলিন, স্ট্যালিন এরা যে পথ ধরে এগিয়ে ছিলেন, সেপথগুলোকে যদি আমরা একেবারই ভুলে বসে থাকি, সে পথে যদি চলবার জন্য চেষ্টা না করি তাহলে আমাদের এই অধঃপতন হবে এবং আরো ক্ষতি হবে এবং কষ্টটা বাড়তেই থাকবে।
No comments