গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান দুর্বল হওয়ায় কর্তৃত্ববাদ চেপে বসেছে -জাতীয় অধ্যাপক ড.আনিসুজ্জামান
দেশে
গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্ত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায়
কর্তৃত্ববাদী শাসন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। মুক্তিযুদ্ধের নামে দেশে অনেক কিছু
ঘটে, তা কাঙ্ক্ষিত নয়। জাতীয় প্রেস ক্লাবে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে
সাপ্তাহিক ‘নতুন কথা’র ৪০তম বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে আয়োজিত ‘মুক্তিযুদ্ধ এবং
গণমাধ্যম’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট
শিক্ষাবিদ জাতীয় অধ্যাপক ড.আনিসুজ্জামান এসব কথা বলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের অব্যবহিত পর গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ সমাজতন্ত্রকে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর সামরিক ও স্বৈরাচারী শাসকরা রাষ্ট্রীয় মূলনীতিতে এমনকি সংবিধানেও কুঠারাঘাত করে। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা হয়। যা সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থি। রাষ্ট্রধর্ম ও ধর্মনিরপেক্ষতা একসঙ্গে চলতে পারে না। কার্যকর জাতীয় সংসদ ও বিরোধী দল ছাড়া গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে না।
নির্বাচন বর্জন, সংসদ বর্জন এবং জাতীয় সংসদকে একটি কার্যকর প্রতিষ্ঠানে রূপ না দেয়ায় রাষ্ট্রের অন্যান্য অঙ্গসমূহ যেমন বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ আজও জনবান্ধব হয়ে ওঠেনি।
অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর কিছু মানুষ তাদের ব্যক্তিস্বার্থ লাভের আশায় ব্যস্ত রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের নাম করে ভ্রান্ত ধারণা যেন আমাদের মধ্যে তৈরি না হয়। মনে রাখতে হবে এতে অকল্যাণ বয়ে আনবে।
আমাদের কল্যাণ রাষ্ট্রের কথা ভাবতে হবে। প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানেই মুক্তিযুদ্ধের কোটা থাকতে হবে- এমনটা না। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর এসে কোটা সংরক্ষণের প্রয়োজন আছে মনি করি না। অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, গণমাধ্যমের অগ্রসর হতে হবে মানুষের কল্যাণে এবং এই গণমাধ্যমেই মুক্তিযুদ্ধের প্রতিফলন ঘটবে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সম্মান যে জায়গাতে যাওয়া দরকার সেখানে নেই, এখানে গণমাধ্যমের বড় ভূমিকা থাকা দরকার। নানা কারণে আজ মুক্তিযুদ্ধের নামে অনেক কিছু ঘটছে যা আমাদের কাম্য নয়। গণমাধ্যম কি এসব জায়গা থেকে সরে যাচ্ছে সেটা দেখতে হবে। ড. আনিসুজ্জামান বলেন, নৃ-গোষ্ঠীর অধিকার কতটুকু বাস্তবায়ন, তারা কি তাদের মাতৃভাষায় কথা বলতে পারছেন। রাষ্ট্রের উচিত তাদের মাতৃভাষাকে সংরক্ষণ করা। সমাজের শুধু উন্নয়ন করলেই হবে না- এর বৈষম্য কমাতে হবে।
প্রবীণ সাংবাদিক কামাল লোহানী বলেন, বঙ্গবন্ধুই বলেছেন, ধর্মের নামে রাজনীতি করা যাবে না। অথচ আজ হেফাজতের পরামর্শে পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রগতিশীল ও মুক্তচিন্তার পথ রুদ্ধ করা হচ্ছে। ফলে সমাজে প্রতিক্রিয়াশীল সাম্প্রদায়িক ভাবধারা শেকড় গেড়ে বসেছে। ধর্মনিরপেক্ষতাকে নস্যাৎ করে মুক্তিযুুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। সম্প্রতি গণমাধ্যমও যেন তাদের সাহস হারিয়ে ফেলছে। তারা সরকার ও মালিকপক্ষের নিকট নতজানু হয়ে পড়ছে।
সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি বলেন, আজকের বাস্তবতায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জায়গায় গণমাধ্যম আছে কিনা সেটাও তাদের দেখতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সাইবার নিরাপত্তা জরুরি। কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কিছু ধারা রয়েছে যা অপপ্রয়োগ করা সহজ এবং হচ্ছেও তাই। ফলে গণমাধ্যম নিজেদের ওপর এক ধরনের ‘ সেল্ফ সেন্সর’ আরোপ করে রেখেছে। আজ আমরা ঋণখেলাপিদের টাকার অঙ্কটা জানি, কিন্তু তাদের নাম জানি না। গণমাধ্যম সামাজিক সাম্য, সমতা, ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা এবং বৈষম্য, দুর্নীতি, নিপীড়ন রোধে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
মানবজমিন-এর প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম আজ সেখান থেকে বিচ্যুতি ঘটেছে কিনা সেটাই আমাদের প্রধান প্রশ্ন, সব থেকে বড় উদ্বেগ। তিনি বলেন, অমর্ত্য সেন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। তার যে কথাটি আমরা অনেকেই উদ্ধৃত করি, সেটি আজও মিথ্যা হয়ে যায়নি। তার মতে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা স্বাধীন ভারতে দুর্ভিক্ষ হতে দেয়নি।
মতিউর রহমান চৌধুরী আরো বলেন, দেশের উন্নয়ন ও ডিজিটাল যুগের প্রসারতায় আমরা খুশি। কিন্তু সেই খুশির আভা ফিকে হয়ে যেতে বাধ্য যদি আমরা অনুভব করি, আমাদের বাক-স্বাধীনতাকে আর স্বাগত জানানো হচ্ছে না। বিশ্বের সব যুগে সবকালে মুক্ত সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে নিয়ন্ত্রিত সংবাদ মাধ্যমের একটা টানাপড়েন লক্ষ্য করা গেছে। পরিণামে কিন্তু মুক্ত সংবাদ মাধ্যমই জয়ী হয়েছে।
তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য না সৌভাগ্য জানি না, এরশাদের জমানায় তার লেখা রিপোর্টের কারণে নতুন কথা, ইত্তেহাদ ও খবরের কাগজ নিষিদ্ধ হয়েছিল।
পত্রিকাটির ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মাহমুদুল হাসান মানিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক মাহবুবুল আলম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নতুন কথা সম্পাদক হাজেরা সুলতানা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের অব্যবহিত পর গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ সমাজতন্ত্রকে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর সামরিক ও স্বৈরাচারী শাসকরা রাষ্ট্রীয় মূলনীতিতে এমনকি সংবিধানেও কুঠারাঘাত করে। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা হয়। যা সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থি। রাষ্ট্রধর্ম ও ধর্মনিরপেক্ষতা একসঙ্গে চলতে পারে না। কার্যকর জাতীয় সংসদ ও বিরোধী দল ছাড়া গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে না।
নির্বাচন বর্জন, সংসদ বর্জন এবং জাতীয় সংসদকে একটি কার্যকর প্রতিষ্ঠানে রূপ না দেয়ায় রাষ্ট্রের অন্যান্য অঙ্গসমূহ যেমন বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ আজও জনবান্ধব হয়ে ওঠেনি।
অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর কিছু মানুষ তাদের ব্যক্তিস্বার্থ লাভের আশায় ব্যস্ত রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের নাম করে ভ্রান্ত ধারণা যেন আমাদের মধ্যে তৈরি না হয়। মনে রাখতে হবে এতে অকল্যাণ বয়ে আনবে।
আমাদের কল্যাণ রাষ্ট্রের কথা ভাবতে হবে। প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানেই মুক্তিযুদ্ধের কোটা থাকতে হবে- এমনটা না। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর এসে কোটা সংরক্ষণের প্রয়োজন আছে মনি করি না। অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, গণমাধ্যমের অগ্রসর হতে হবে মানুষের কল্যাণে এবং এই গণমাধ্যমেই মুক্তিযুদ্ধের প্রতিফলন ঘটবে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সম্মান যে জায়গাতে যাওয়া দরকার সেখানে নেই, এখানে গণমাধ্যমের বড় ভূমিকা থাকা দরকার। নানা কারণে আজ মুক্তিযুদ্ধের নামে অনেক কিছু ঘটছে যা আমাদের কাম্য নয়। গণমাধ্যম কি এসব জায়গা থেকে সরে যাচ্ছে সেটা দেখতে হবে। ড. আনিসুজ্জামান বলেন, নৃ-গোষ্ঠীর অধিকার কতটুকু বাস্তবায়ন, তারা কি তাদের মাতৃভাষায় কথা বলতে পারছেন। রাষ্ট্রের উচিত তাদের মাতৃভাষাকে সংরক্ষণ করা। সমাজের শুধু উন্নয়ন করলেই হবে না- এর বৈষম্য কমাতে হবে।
প্রবীণ সাংবাদিক কামাল লোহানী বলেন, বঙ্গবন্ধুই বলেছেন, ধর্মের নামে রাজনীতি করা যাবে না। অথচ আজ হেফাজতের পরামর্শে পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রগতিশীল ও মুক্তচিন্তার পথ রুদ্ধ করা হচ্ছে। ফলে সমাজে প্রতিক্রিয়াশীল সাম্প্রদায়িক ভাবধারা শেকড় গেড়ে বসেছে। ধর্মনিরপেক্ষতাকে নস্যাৎ করে মুক্তিযুুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। সম্প্রতি গণমাধ্যমও যেন তাদের সাহস হারিয়ে ফেলছে। তারা সরকার ও মালিকপক্ষের নিকট নতজানু হয়ে পড়ছে।
সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি বলেন, আজকের বাস্তবতায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জায়গায় গণমাধ্যম আছে কিনা সেটাও তাদের দেখতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সাইবার নিরাপত্তা জরুরি। কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কিছু ধারা রয়েছে যা অপপ্রয়োগ করা সহজ এবং হচ্ছেও তাই। ফলে গণমাধ্যম নিজেদের ওপর এক ধরনের ‘ সেল্ফ সেন্সর’ আরোপ করে রেখেছে। আজ আমরা ঋণখেলাপিদের টাকার অঙ্কটা জানি, কিন্তু তাদের নাম জানি না। গণমাধ্যম সামাজিক সাম্য, সমতা, ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা এবং বৈষম্য, দুর্নীতি, নিপীড়ন রোধে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
মানবজমিন-এর প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম আজ সেখান থেকে বিচ্যুতি ঘটেছে কিনা সেটাই আমাদের প্রধান প্রশ্ন, সব থেকে বড় উদ্বেগ। তিনি বলেন, অমর্ত্য সেন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। তার যে কথাটি আমরা অনেকেই উদ্ধৃত করি, সেটি আজও মিথ্যা হয়ে যায়নি। তার মতে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা স্বাধীন ভারতে দুর্ভিক্ষ হতে দেয়নি।
মতিউর রহমান চৌধুরী আরো বলেন, দেশের উন্নয়ন ও ডিজিটাল যুগের প্রসারতায় আমরা খুশি। কিন্তু সেই খুশির আভা ফিকে হয়ে যেতে বাধ্য যদি আমরা অনুভব করি, আমাদের বাক-স্বাধীনতাকে আর স্বাগত জানানো হচ্ছে না। বিশ্বের সব যুগে সবকালে মুক্ত সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে নিয়ন্ত্রিত সংবাদ মাধ্যমের একটা টানাপড়েন লক্ষ্য করা গেছে। পরিণামে কিন্তু মুক্ত সংবাদ মাধ্যমই জয়ী হয়েছে।
তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য না সৌভাগ্য জানি না, এরশাদের জমানায় তার লেখা রিপোর্টের কারণে নতুন কথা, ইত্তেহাদ ও খবরের কাগজ নিষিদ্ধ হয়েছিল।
পত্রিকাটির ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মাহমুদুল হাসান মানিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক মাহবুবুল আলম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নতুন কথা সম্পাদক হাজেরা সুলতানা।
No comments