যেভাবে ধরা পড়েন ভারতের পাইলট
ভারতের
এক বৈমানিক পাকিস্তানের হাতে আটক হওয়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছে দেশটির
বিমানবাহিনী। ওই বৈমানিককে আটক করায় উল্লাস করেছে পাকিস্তানের বিমানবাহিনী।
পাকিস্তানভিত্তিক ডন অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের দুটি বিমান
ভূপাতিত করার পাশাপাশি একজন বৈমানিককে আটক করে চমকে দিয়েছে পাকিস্তান। ওই
বৈমানিক নিজেকে অভিনন্দন হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।
এ ঘটনায় পাকিস্তানে ‘হিরো’ হয়ে উঠেছেন স্কোয়াড্রন লিডার হাসান সিদ্দিকী। তাঁকে ঘিরে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ঘুরছে, যা দেশটিতে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। তিনিই ভারতের একটি যুদ্ধবিমানকে ভূপাতিত করেছেন। ভারতের ওই বিমানটি পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করেছিল।
পাকিস্তান দাবি করেছে, বুধবার সকালে তারা দিনের আলোতে ভারতের দুটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে। এর একটি পড়ে পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে, অন্যটি পড়ে ভারতীয় অংশে। এরপর একজন ভারতীয় বৈমানিককে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়। হাসান সিদ্দিকী করাচির বৈমানিক। সফলভাবে লক্ষ্য অর্জন করায় তাঁর বিমান মাটি ছুঁতেই উষ্ণ অভ্যর্থনা পান তিনি। অন্যদিকে অভিনন্দনকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
পাকিস্তানের ডন অনলাইনে ভারতের বৈমানিক অভিনন্দনের ধরা পড়ার কাহিনি প্রকাশিত হয়। এতে প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ রাজ্জাক চৌধুরী (৫৮) নামের এক ব্যক্তির বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে। রাজনৈতিক ও সমাজকর্মী রাজ্জাক নিয়ন্ত্রণরেখার ৭ কিলোমিটার ভেতরে পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বাসিন্দা। বুধবার সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে দুটি যুদ্ধবিমানের লড়াইয়ের শব্দ শোনেন তিনি। ধোঁয়াও দেখতে পান। দুটি বিমানেই আগুন লেগে গিয়েছিল। একটি নিয়ন্ত্রণরেখা ধরে এগিয়ে গেলেও আরেকটিতে আগুন লেগে দ্রুত নিচে নামতে থাকে। তাঁর বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে ওই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। এ সময় তিনি প্যারাস্যুট নিয়ে একজনকে নামতে দেখেন।
বিমানটি যেদিকে বিধ্বস্ত হয় তার উল্টো দিকে ওই প্যারাসুটে নামেন এক বৈমানিক। পরে তিনি দ্রুত একটি পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি কিছু কাগজ গিলে ফেলার ও কিছু কাগজ পানিতে ভিজিয়ে নষ্ট করে ফেলার চেষ্টা চালান। ওই পাইলট প্যারাসুটে নামার সময় নিরাপদ ও সুস্থ ছিলেন। এ সময় ওই বৈমানিককে ধরার জন্য স্থানীয় তরুণেরা ছুটে যান।
কিন্তু ওই বৈমানিকের কাছে পিস্তল ছিল। তিনি তরুণদের ওই জায়গাটি ভারত না পাকিস্তান তা প্রশ্ন করেন। একজন বলেন, এটা ভারত। তখন ওই বৈমানিক স্লোগান দেন। তবে কয়েকজন তরুণ উল্টো স্লোগান দেন। ওই বৈমানিক তখন নিজেকে আহত বলে জানান এবং পানি চান। কিন্তু কয়েকজন তরুণ ভারতীয় বৈমানিকের স্লোগান সহ্য করতে পারেননি। তাঁদের উল্টো স্লোগানে অভিনন্দন পিস্তল বের করেন। তখন ওই তরুণেরা পাথর হাতে তুলে নেন। অভিনন্দন দৌড়ে প্রায় আধা কিলোমিটার পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁকে যে তরুণেরা তাড়া করছিলেন, তাঁদের দিকে পিস্তল তাক করে শূন্যে গুলি ছোড়েন অভিনন্দন। পরে তিনি পুকুরে ঝাঁপ দেন। তরুণেরা তাঁকে অস্ত্র ফেলে দিতে বলেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। এ সময় এক তরুণ তাঁর পায়ে আঘাত করেন।
পরে এই বৈমানিক তাঁকে মেরে না ফেলার আহ্বান জানান। কয়েক তরুণ তাঁর দুই হাত ধরে ফেলেন। কয়েকজন তাঁর ওপর চড়াও হন। কয়েকজন তাঁদের থামানোর চেষ্টা করেন। এ সময় পাকিস্তানের সেনারা চলে আসে এবং তাদের হেফাজতে নেয়। পরে তাঁকে সেনাবাহিনীর গাড়িতে তুলে ভিমবার এলাকায় সেনা স্থাপনায় নেওয়া হয়।
ভারতীয় যুদ্ধবিমানের ওই বৈমানিককে আটকের পর তাঁর ভিডিও প্রকাশ করে পাকিস্তান। যদিও কিছুক্ষণ পরেই সেই ভিডিও মুছে ফেলা হয়। সেই ভিডিওতে একজন ব্যক্তিকে চোখ বাঁধা অবস্থায় দেখা যায়। শুরুতে ভারতের পক্ষ থেকে কোনো বৈমানিক ধরা পড়ার কথা অস্বীকার করা হলেও পরে একজন পাইলট নিখোঁজ হওয়ার কথা স্বীকার করে নেওয়া হয়।
বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়, পাকিস্তানের তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ওই ভিডিওচিত্রে একজন ব্যক্তিকে চোখ বাঁধা অবস্থায় দেখা যায়। সেই ব্যক্তিকে ভারতীয় যুদ্ধবিমানের পাইলট বলে দাবি করা হয়। তবে কিছু সময় পর মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে সেই ভিডিও মুছে ফেলা হয়। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর দাবি, যে দুটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা হয়েছে, তার একটির পাইলট ছিলেন ওই ব্যক্তি। ভিডিওতে ওই ব্যক্তির মুখমণ্ডলে রক্তের ছাপ দেখা যায়। তাঁকে উইং কমান্ডার অভিনন্দন বলে পরিচয় দেওয়া হয়।
তবে ভারতের ওই বৈমানিকের রক্তমাখা ছবি প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই ভারতের দুশ্চিন্তা বাড়তে থাকে। ভারতে নিযুক্ত পাকিস্তানের কার্যনির্বাহী হাইকমিশনারকে ডেকে তীব্র প্রতিবাদ করে নয়াদিল্লি। সেই প্রতিবাদপত্রে ভারতের আকাশসীমায় ঢুকে পাকিস্তানের হানার কড়া ভাষায় নিন্দা করা হয়। বলা হয়, ভারতীয় পাইলটের রক্তাক্ত অবস্থার ছবি কুৎসিতভাবে তুলে ধরছে পাকিস্তান। ভারত এ ঘটনার প্রতিবাদ করছে। এমন ঘটনায় আন্তর্জাতিক মানবতা আইন ও জেনেভা চুক্তি ভঙ্গ হয়েছে। পাকিস্তানকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, ভারতীয় বিমানবাহিনীর সদস্যের কোনো ক্ষতি যেন না হয়। পাকিস্তান তাঁকে দ্রুত ও নিরাপদে দেশে ফেরাবে বলে আশা করছে ভারত।
এদিকে ভারতীয় যুদ্ধবিমানের পাইলটের আরেকটি ভিডিও প্রকাশ করে পাকিস্তান। গতকাল বুধবার পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) প্রকাশিত ১ মিনিট ১৯ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ওই বৈমানিক চা পান করছেন আর নিজের নাম-পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলছেন।
পাকিস্তানের দৈনিক ডন অনলাইনে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, ওই ব্যক্তি নিজের নাম অভিনন্দন ও বাড়ি দক্ষিণ ভারতে বলে উল্লেখ করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘এখানে আমি সুচিকিৎসা পাচ্ছি।...ভারতেরও উচিত এমন পথ অনুসরণ করা।’
ভিডিওতে কেউ একজন বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করছেন আটক পাইলটকে। ওই ব্যক্তিকে পাইলট বলছেন, তিনি এখানে যে জবানবন্দি দিয়েছেন তা নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার পর হেরফের করবেন না। পাকিস্তানি সেনারা তাঁকে খুব ভালোভাবে দেখাশোনা করছেন। আটক পাইলট প্রশ্নকর্তাকে মাঝে মাঝে ‘মেজর’ বলে সম্বোধন করেন।
যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার পরমুহূর্ত সম্পর্কে ভারতীয় পাইলট বলছেন, ‘পাকিস্তানি সেনারা আমাকে বিমান বিধ্বস্তের স্থান থেকে উদ্ধার করে। এরপর সেনা কর্মকর্তাদের একটি ইউনিটে আমাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। আমি আমার সেনাদের কাছেও এমন আচরণ প্রত্যাশা করি। আমি পাকিস্তানি সেনাদের ব্যবহারে অভিভূত।’
এ ঘটনায় পাকিস্তানে ‘হিরো’ হয়ে উঠেছেন স্কোয়াড্রন লিডার হাসান সিদ্দিকী। তাঁকে ঘিরে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ঘুরছে, যা দেশটিতে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। তিনিই ভারতের একটি যুদ্ধবিমানকে ভূপাতিত করেছেন। ভারতের ওই বিমানটি পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করেছিল।
পাকিস্তান দাবি করেছে, বুধবার সকালে তারা দিনের আলোতে ভারতের দুটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে। এর একটি পড়ে পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে, অন্যটি পড়ে ভারতীয় অংশে। এরপর একজন ভারতীয় বৈমানিককে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়। হাসান সিদ্দিকী করাচির বৈমানিক। সফলভাবে লক্ষ্য অর্জন করায় তাঁর বিমান মাটি ছুঁতেই উষ্ণ অভ্যর্থনা পান তিনি। অন্যদিকে অভিনন্দনকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
পাকিস্তানের ডন অনলাইনে ভারতের বৈমানিক অভিনন্দনের ধরা পড়ার কাহিনি প্রকাশিত হয়। এতে প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ রাজ্জাক চৌধুরী (৫৮) নামের এক ব্যক্তির বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে। রাজনৈতিক ও সমাজকর্মী রাজ্জাক নিয়ন্ত্রণরেখার ৭ কিলোমিটার ভেতরে পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বাসিন্দা। বুধবার সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে দুটি যুদ্ধবিমানের লড়াইয়ের শব্দ শোনেন তিনি। ধোঁয়াও দেখতে পান। দুটি বিমানেই আগুন লেগে গিয়েছিল। একটি নিয়ন্ত্রণরেখা ধরে এগিয়ে গেলেও আরেকটিতে আগুন লেগে দ্রুত নিচে নামতে থাকে। তাঁর বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে ওই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। এ সময় তিনি প্যারাস্যুট নিয়ে একজনকে নামতে দেখেন।
বিমানটি যেদিকে বিধ্বস্ত হয় তার উল্টো দিকে ওই প্যারাসুটে নামেন এক বৈমানিক। পরে তিনি দ্রুত একটি পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি কিছু কাগজ গিলে ফেলার ও কিছু কাগজ পানিতে ভিজিয়ে নষ্ট করে ফেলার চেষ্টা চালান। ওই পাইলট প্যারাসুটে নামার সময় নিরাপদ ও সুস্থ ছিলেন। এ সময় ওই বৈমানিককে ধরার জন্য স্থানীয় তরুণেরা ছুটে যান।
কিন্তু ওই বৈমানিকের কাছে পিস্তল ছিল। তিনি তরুণদের ওই জায়গাটি ভারত না পাকিস্তান তা প্রশ্ন করেন। একজন বলেন, এটা ভারত। তখন ওই বৈমানিক স্লোগান দেন। তবে কয়েকজন তরুণ উল্টো স্লোগান দেন। ওই বৈমানিক তখন নিজেকে আহত বলে জানান এবং পানি চান। কিন্তু কয়েকজন তরুণ ভারতীয় বৈমানিকের স্লোগান সহ্য করতে পারেননি। তাঁদের উল্টো স্লোগানে অভিনন্দন পিস্তল বের করেন। তখন ওই তরুণেরা পাথর হাতে তুলে নেন। অভিনন্দন দৌড়ে প্রায় আধা কিলোমিটার পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁকে যে তরুণেরা তাড়া করছিলেন, তাঁদের দিকে পিস্তল তাক করে শূন্যে গুলি ছোড়েন অভিনন্দন। পরে তিনি পুকুরে ঝাঁপ দেন। তরুণেরা তাঁকে অস্ত্র ফেলে দিতে বলেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। এ সময় এক তরুণ তাঁর পায়ে আঘাত করেন।
পরে এই বৈমানিক তাঁকে মেরে না ফেলার আহ্বান জানান। কয়েক তরুণ তাঁর দুই হাত ধরে ফেলেন। কয়েকজন তাঁর ওপর চড়াও হন। কয়েকজন তাঁদের থামানোর চেষ্টা করেন। এ সময় পাকিস্তানের সেনারা চলে আসে এবং তাদের হেফাজতে নেয়। পরে তাঁকে সেনাবাহিনীর গাড়িতে তুলে ভিমবার এলাকায় সেনা স্থাপনায় নেওয়া হয়।
ভারতীয় যুদ্ধবিমানের ওই বৈমানিককে আটকের পর তাঁর ভিডিও প্রকাশ করে পাকিস্তান। যদিও কিছুক্ষণ পরেই সেই ভিডিও মুছে ফেলা হয়। সেই ভিডিওতে একজন ব্যক্তিকে চোখ বাঁধা অবস্থায় দেখা যায়। শুরুতে ভারতের পক্ষ থেকে কোনো বৈমানিক ধরা পড়ার কথা অস্বীকার করা হলেও পরে একজন পাইলট নিখোঁজ হওয়ার কথা স্বীকার করে নেওয়া হয়।
বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়, পাকিস্তানের তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ওই ভিডিওচিত্রে একজন ব্যক্তিকে চোখ বাঁধা অবস্থায় দেখা যায়। সেই ব্যক্তিকে ভারতীয় যুদ্ধবিমানের পাইলট বলে দাবি করা হয়। তবে কিছু সময় পর মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে সেই ভিডিও মুছে ফেলা হয়। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর দাবি, যে দুটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা হয়েছে, তার একটির পাইলট ছিলেন ওই ব্যক্তি। ভিডিওতে ওই ব্যক্তির মুখমণ্ডলে রক্তের ছাপ দেখা যায়। তাঁকে উইং কমান্ডার অভিনন্দন বলে পরিচয় দেওয়া হয়।
তবে ভারতের ওই বৈমানিকের রক্তমাখা ছবি প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই ভারতের দুশ্চিন্তা বাড়তে থাকে। ভারতে নিযুক্ত পাকিস্তানের কার্যনির্বাহী হাইকমিশনারকে ডেকে তীব্র প্রতিবাদ করে নয়াদিল্লি। সেই প্রতিবাদপত্রে ভারতের আকাশসীমায় ঢুকে পাকিস্তানের হানার কড়া ভাষায় নিন্দা করা হয়। বলা হয়, ভারতীয় পাইলটের রক্তাক্ত অবস্থার ছবি কুৎসিতভাবে তুলে ধরছে পাকিস্তান। ভারত এ ঘটনার প্রতিবাদ করছে। এমন ঘটনায় আন্তর্জাতিক মানবতা আইন ও জেনেভা চুক্তি ভঙ্গ হয়েছে। পাকিস্তানকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, ভারতীয় বিমানবাহিনীর সদস্যের কোনো ক্ষতি যেন না হয়। পাকিস্তান তাঁকে দ্রুত ও নিরাপদে দেশে ফেরাবে বলে আশা করছে ভারত।
এদিকে ভারতীয় যুদ্ধবিমানের পাইলটের আরেকটি ভিডিও প্রকাশ করে পাকিস্তান। গতকাল বুধবার পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) প্রকাশিত ১ মিনিট ১৯ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ওই বৈমানিক চা পান করছেন আর নিজের নাম-পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলছেন।
পাকিস্তানের দৈনিক ডন অনলাইনে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, ওই ব্যক্তি নিজের নাম অভিনন্দন ও বাড়ি দক্ষিণ ভারতে বলে উল্লেখ করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘এখানে আমি সুচিকিৎসা পাচ্ছি।...ভারতেরও উচিত এমন পথ অনুসরণ করা।’
ভিডিওতে কেউ একজন বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করছেন আটক পাইলটকে। ওই ব্যক্তিকে পাইলট বলছেন, তিনি এখানে যে জবানবন্দি দিয়েছেন তা নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার পর হেরফের করবেন না। পাকিস্তানি সেনারা তাঁকে খুব ভালোভাবে দেখাশোনা করছেন। আটক পাইলট প্রশ্নকর্তাকে মাঝে মাঝে ‘মেজর’ বলে সম্বোধন করেন।
যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার পরমুহূর্ত সম্পর্কে ভারতীয় পাইলট বলছেন, ‘পাকিস্তানি সেনারা আমাকে বিমান বিধ্বস্তের স্থান থেকে উদ্ধার করে। এরপর সেনা কর্মকর্তাদের একটি ইউনিটে আমাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। আমি আমার সেনাদের কাছেও এমন আচরণ প্রত্যাশা করি। আমি পাকিস্তানি সেনাদের ব্যবহারে অভিভূত।’
ভিডিওতে প্রশ্নকর্তা ও আটক পাইলটের কথোপকথন ছিল এমন—
প্রশ্নকর্তা: আপনার বাড়ি ভারতের কোথায়?
আটক পাইলট: দক্ষিণ ভারতে।
প্রশ্নকর্তা: আপনি বিবাহিত?
পাইলট: হ্যাঁ, বিবাহিত।
প্রশ্নকর্তা: আমার ধারণা, চা আপনার পছন্দ?
পাইলট: এই চা-টা খুবই চমৎকার, ধন্যবাদ।
প্রশ্নকর্তা: আপনি কোন এয়ারক্রাফট চালাচ্ছিলেন?
পাইলট: দুঃখিত মেজর, আমি এ বিষয়টি খোলাসা করতে পারছি না। তবে আমি নিশ্চিত আপনি বিমানের ধ্বংসাবশেষ দেখে ইতিমধ্যেই তা জেনেছেন।
প্রশ্নকর্তা: (এই বিমান হামলায়) আপনার কী উদ্দেশ্য (মিশন) ছিল?
পাইলট: দুঃখিত, আমাদের (সেনা) পক্ষে এ বিষয়টি (যুদ্ধসংক্রান্ত তথ্য) বলা সম্ভব নয়।
আটক পাইলটকে ফেরত দিতে পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ভারত। বুধবার রাতে নয়াদিল্লি থেকে দেওয়া বিবৃতিতে ওই সেনাকে নিরাপদে ভারতে ফেরত পাঠানোর কথা বলা হয়। এই আহ্বানের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানে ভারতীয় যুদ্ধবিমানের পাইলট আটকের বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে। বিমান ভূপাতিত করার প্রথম দিক থেকেই পাকিস্তান দাবি করে আসছিল তাদের সেনারা ভারতের এক পাইলটকে আটক করেছে। তবে শুরুতে ভারত বিষয়টি অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করে নেয়।
আজ বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠক হবে৷ পাকিস্তানে আটক পাইলটকে উদ্ধারের বিষয়ে আলোচনা হবে বলে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোতে উল্লেখ করা হয়েছে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় দুই দেশকেই ফের সেনা অভিযান না করার আবেদন জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ একই সঙ্গে জঙ্গি মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক জঙ্গিদের কালো তালিকায় আনার জন্য পাকিস্তানের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ৷ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স৷ মাসুদকে অস্ত্র বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে জাতিসংঘে৷ বিদেশযাত্রায়ও নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব জমা পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা নিয়ে গভীর চিন্তিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ আমরা উভয় পক্ষকেই বলছি, এই উত্তেজনা প্রশমনে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া হোক৷’
১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় দেশটির আধা সামরিক বাহিনীর গাড়িবহরে আত্মঘাতী হামলা হয়। এতে অন্তত ৪২ জন জওয়ান নিহত হন। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মুহাম্মদ এই হামলার দায় স্বীকার করে। পুলওয়ামা হামলার জবাব দিতেই পাকিস্তানের ভেতরে ঢুকে হামলা চালায় ভারত। এরপর ভারতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, হামলায় অন্তত ৩০০ জঙ্গি নিহত হয়েছে। এ ঘটনার পর নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে পাল্টা জবাব দেয় পাকিস্তান।
No comments