মিটফোর্ড হাসপাতালের দালালরা ‘স্বাগত’ জানায় রোগীদের by মারুফ কিবরিয়া
সকাল
সাড়ে ১১টা। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের ২নং
ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করছেন এক রোগীর স্বজন। টিকিট হাতে নিয়ে
ভেতরে যাওয়ার আগেই দুই ব্যক্তি তাকে ঘিরে ধরেন। একজন
জানতে চাইছেন কোথায় যাবেন।
অন্যজন হাত থেকে রোগীর টিকিটটি নিয়ে দেখছেন। কাছে গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসা নিতে আসা ওই রোগীর স্বজনকে চুপিসারে বলছেন, লাইনে দাঁড়াতে হবে না। ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করে দেয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন ওই দুই ব্যক্তি। এ সময় তার কাছে তারা ২শ’ টাকা দাবি করেন। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করার চেয়ে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করে বের হতে পারবেন এমনটা ভেবে রাজি হয়ে যান ওই রোগীর স্বজন।
এখানেই শেষ নয়, চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেয়ার কথা বলে টাকা নিয়ে হঠাৎ লাপাত্তা দুই ব্যক্তি। ওই রোগীর স্বজনের নাম তাসলিমা। তিনি এসেছিলেন কেরানীগঞ্জ থেকে। বৃদ্ধ খালুকে নিয়ে বেশ দূর থেকে হাসপাতালে আসেন। এসেই খোয়ান দুই শ’ টাকা। রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের এই চিত্র নিত্য দিনের।
বেশ কয়েকটি অসাধু চক্র হাসপাতালের চারপাশে ঘোরাফেরা করে। ভুক্তভোগী তাসলিমা বলেন, টিকিট নেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই লোক দুটি পিছু নেয়। পরে ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেয়ার কথা বলে কোথায় যেন চলে যায়। দুই শ’ টাকাও নিয়ে গেছে। এভাবে প্রতারকের খপ্পরে পড়বো ভাবতেই পারিনি। এখন লাইনে দাঁড়িয়েই ডাক্তার দেখাতে হবে। তাসলিমার মতো এমন অনেকেই প্রতিদিন হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে এসে প্রতারকের খপ্পরে পড়ছেন। আবার অনেকে টাকার বিনিময়ে ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করার সুযোগও করে দিচ্ছেন। পুরো হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, মিটফোর্ডের আনাচে কানাচে প্রকাশ্যে দালাল চক্রের নারী-পুরুষ সদস্যরা ঘোরাঘুরি করছে। এদের কারো উদ্দেশ্য লাইনে না দাঁড়িয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করে দেয়ার ব্যবস্থা করা, কারো নির্দিষ্ট সিরিয়াল ভেঙে বিভিন্ন পরীক্ষা করিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া, আবার কেউবা হাসপাতাল থেকে রোগীদের কম খরচে চিকিৎসার কথা বলে পাশের প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যায়। এদের মধ্যে আবার অনেকে আছেন যারা, হাসপাতালের ওয়ার্ডে ও কেবিনে ভর্তির জন্য তদ্বির করেন। সরজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালটির মোট চারটি প্রবেশ ফটক রয়েছে। এসব প্রবেশ ফটক দিয়ে হাজার হাজার রোগী আসা যাওয়া করেন। মেইন গেট থেকে ভিতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে এম এইচ নামে একটি ফার্মেসি। এখানে শখানেক রোগী ও স্বজনদের ভিড়। একাধিক রোগী ও অন্যদের স্বজনরা জানান, হাসপাতালের ডাক্তাররাই এই ফার্মেসি থেকে ঔষুধ কেনার পরামর্শ দেন। বাহিরের ফার্মেসি থেকে কিনলে তারা বেশি দাম ও ভেজাল ঔষুধ দিতে পারে বলে জানান তারা। এই দৃশ্য ছাড়া মিটফোর্ডের সবচেয়ে বেশি যে চিত্রটি চোখে পড়ে তাহলো- একটি দালাল চক্রের মাধ্যমে সিরিয়ালের বাইরে গিয়ে রোগীকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া।
হাবিব মোল্লাহ নামের এক রোগী বলেন, সকালে আসছি ডাক্তার দেখাতে। লম্বা লাইনে প্রায় ২ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে ডাক্তার দেখাতে পারছি। কিন্তু আমার পিছনে যারা সিরিয়ালে ছিল তাদের অনেকে আগে আগে ডাক্তার দেখাতে পারছে। তিনি জানান, ভেতরে ডাক্তারের সহকারীকে ৫০ অথবা ১০০ টাকা দিলেই তাড়াতাড়ি দেখানোর ব্যবস্থা করে দেয়। আবার অনেকে বাইরে থেকে এসে পাশে দাঁড়িয়ে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেয়ার প্রস্তাব করে। তারাও ওই সহকারীকে অর্ধেক টাকা দিয়ে দেয়। হাবিব মোল্লাহ বলেন, আমি এক টাকাও দিইনি। সময় লাগলে লাগুক। লাইনে দাঁড়িয়েই ডাক্তার দেখাইছি।
এদিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন বোরকা পরিহিত নারী দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তাদের কাজ কোনো নতুন রোগী এলেই তাকে ঘিরে ধরা। ওই রোগীকে টিকিট করিয়ে দেয়া থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা করে দেন। রোগী হিসেবে পরিচয় দিলে বোরকা পরা এক নারী এসে বলেন, ডাক্তার দেখাবেন আসেন ব্যবস্থা করে দেবো। এসময় ওই নারী একটি টিকিট কিনে নিয়ে আসেন। বলেন, আপনি অপেক্ষা করেন। আমাকে ২শ’ টাকা দেন। ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করাইয়া দেবো। কিভাবে ব্যবস্থা করবেন জানতে চাইলে আকস্মিক সেই জায়গা থেকে সটকে পড়েন ওই নারী। হাসপাতালের ফটকে বসে এক কলা বিক্রেতার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এরা একটা চক্র এখানে কাজ করে। ভেতরে ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করা, ওয়ার্ডে বেড ও কেবিন পাইয়ে দেয়ার কাজও করে। আবার অনেকে সদরঘাট থেকে হাসপাতাল পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে আসার কাজও করে। প্রতি কাজের জন্য একেক নারী আয় করেন ৩ থেকে চার শ’ টাকা। ওই কলা বিক্রেতা জানান, হাসপাতালের বাইরে থেকে ভেতরের কাজই বেশি করেন। অন্যদিকে সরজমিনে মিটফোর্ড হাসপাতালের ২নং ভবনের নিচতলায় গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসকের কক্ষে প্রবেশ করার জন্য লম্বা একটি লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন প্রায় শ’ খানেক রোগী। এর মধ্যে সিরিয়াল ভেঙে আধা ঘণ্টার ব্যবধানে তিন জন রোগী জলদি চিকিৎসকের কক্ষে যেতে পেরেছেন। সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন ডিউটি ডাক্তারের এক সহকারী।
রোগীরা অভিযোগ করেন, এই নিয়ে তিনজনকে টাকার বিনিময়ে ভেতরে নিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ওই সহকারী কথা বলার সময় নেই বলে এড়িয়ে যান। তবে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা রোগীরা জানান, ওই ব্যক্তিকে ৫০ বা তার বেশি কিছু টাকা দিলেই ভেতরে ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ করে দেন। এদিকে বংশাল থেকে আসা শারমিন আক্তার নামের এক রোগী বলেন, সকাল ১০টার দিকে এসেছি এক্সরে করাতে। কিন্তু লম্বা লাইন। এখনও দাঁড়িয়ে আছি। একজন এসে বললো ১শ’ টাকা দেন এক্সরে করিয়ে দেবো। আমি দিইনি। আমার পরিবারের অনেকেই এখানে আসেন ডাক্তার দেখাতে। সবসময় দালালরা গেট থেকে পিছু নেয়। যার কাছ থেকে যেভাবে নিতে পারে।
দালালের এসব চক্র সম্পর্কে জানতে চাইলে মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ব্রায়ান বঙ্কিম হালদার বলেন, এক ধরনের শ্রেণি-পেশার লোক আছে যারা এগুলো করেই জীবিকা নির্বাহ করে। আমার হাসপাতালে ২৪ থেকে ২৫ জন আনসার সদস্য। এই কয়জন দিয়ে তো আর পুরো হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। তবে যখনই এ ধরনের বিষয় আমাদের নজরে আসে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিই। শুধু দালাল চক্রের সদস্য না হাসপাতালে প্রচুর চোরও রয়েছে। দুইদিন আগেই একজনের গলার চেইন চুরি করে নেয়ার সময় আনসার সদস্যের হাতে ধরা পড়েছে। আমরা চোখে পড়লেই ব্যবস্থা নিই। আর হাসপাতালের গেটেই কিছু মানুষ ঘোরাঘুরি করে রোগী ভাগিয়ে নেয়ার জন্য। এর সব ব্যাপারই আমাদের অবগত। কিন্তু সব তো আমাদের একার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। তিনি বলেন, আমরা সামর্থ্য অনুযায়ী হাসপাতাল দালালমুক্ত রাখার চেষ্টা করছি।
জানতে চাইছেন কোথায় যাবেন।
অন্যজন হাত থেকে রোগীর টিকিটটি নিয়ে দেখছেন। কাছে গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসা নিতে আসা ওই রোগীর স্বজনকে চুপিসারে বলছেন, লাইনে দাঁড়াতে হবে না। ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করে দেয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন ওই দুই ব্যক্তি। এ সময় তার কাছে তারা ২শ’ টাকা দাবি করেন। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করার চেয়ে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করে বের হতে পারবেন এমনটা ভেবে রাজি হয়ে যান ওই রোগীর স্বজন।
এখানেই শেষ নয়, চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেয়ার কথা বলে টাকা নিয়ে হঠাৎ লাপাত্তা দুই ব্যক্তি। ওই রোগীর স্বজনের নাম তাসলিমা। তিনি এসেছিলেন কেরানীগঞ্জ থেকে। বৃদ্ধ খালুকে নিয়ে বেশ দূর থেকে হাসপাতালে আসেন। এসেই খোয়ান দুই শ’ টাকা। রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের এই চিত্র নিত্য দিনের।
বেশ কয়েকটি অসাধু চক্র হাসপাতালের চারপাশে ঘোরাফেরা করে। ভুক্তভোগী তাসলিমা বলেন, টিকিট নেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই লোক দুটি পিছু নেয়। পরে ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেয়ার কথা বলে কোথায় যেন চলে যায়। দুই শ’ টাকাও নিয়ে গেছে। এভাবে প্রতারকের খপ্পরে পড়বো ভাবতেই পারিনি। এখন লাইনে দাঁড়িয়েই ডাক্তার দেখাতে হবে। তাসলিমার মতো এমন অনেকেই প্রতিদিন হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে এসে প্রতারকের খপ্পরে পড়ছেন। আবার অনেকে টাকার বিনিময়ে ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করার সুযোগও করে দিচ্ছেন। পুরো হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, মিটফোর্ডের আনাচে কানাচে প্রকাশ্যে দালাল চক্রের নারী-পুরুষ সদস্যরা ঘোরাঘুরি করছে। এদের কারো উদ্দেশ্য লাইনে না দাঁড়িয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করে দেয়ার ব্যবস্থা করা, কারো নির্দিষ্ট সিরিয়াল ভেঙে বিভিন্ন পরীক্ষা করিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া, আবার কেউবা হাসপাতাল থেকে রোগীদের কম খরচে চিকিৎসার কথা বলে পাশের প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যায়। এদের মধ্যে আবার অনেকে আছেন যারা, হাসপাতালের ওয়ার্ডে ও কেবিনে ভর্তির জন্য তদ্বির করেন। সরজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালটির মোট চারটি প্রবেশ ফটক রয়েছে। এসব প্রবেশ ফটক দিয়ে হাজার হাজার রোগী আসা যাওয়া করেন। মেইন গেট থেকে ভিতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে এম এইচ নামে একটি ফার্মেসি। এখানে শখানেক রোগী ও স্বজনদের ভিড়। একাধিক রোগী ও অন্যদের স্বজনরা জানান, হাসপাতালের ডাক্তাররাই এই ফার্মেসি থেকে ঔষুধ কেনার পরামর্শ দেন। বাহিরের ফার্মেসি থেকে কিনলে তারা বেশি দাম ও ভেজাল ঔষুধ দিতে পারে বলে জানান তারা। এই দৃশ্য ছাড়া মিটফোর্ডের সবচেয়ে বেশি যে চিত্রটি চোখে পড়ে তাহলো- একটি দালাল চক্রের মাধ্যমে সিরিয়ালের বাইরে গিয়ে রোগীকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া।
হাবিব মোল্লাহ নামের এক রোগী বলেন, সকালে আসছি ডাক্তার দেখাতে। লম্বা লাইনে প্রায় ২ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে ডাক্তার দেখাতে পারছি। কিন্তু আমার পিছনে যারা সিরিয়ালে ছিল তাদের অনেকে আগে আগে ডাক্তার দেখাতে পারছে। তিনি জানান, ভেতরে ডাক্তারের সহকারীকে ৫০ অথবা ১০০ টাকা দিলেই তাড়াতাড়ি দেখানোর ব্যবস্থা করে দেয়। আবার অনেকে বাইরে থেকে এসে পাশে দাঁড়িয়ে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেয়ার প্রস্তাব করে। তারাও ওই সহকারীকে অর্ধেক টাকা দিয়ে দেয়। হাবিব মোল্লাহ বলেন, আমি এক টাকাও দিইনি। সময় লাগলে লাগুক। লাইনে দাঁড়িয়েই ডাক্তার দেখাইছি।
এদিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন বোরকা পরিহিত নারী দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তাদের কাজ কোনো নতুন রোগী এলেই তাকে ঘিরে ধরা। ওই রোগীকে টিকিট করিয়ে দেয়া থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা করে দেন। রোগী হিসেবে পরিচয় দিলে বোরকা পরা এক নারী এসে বলেন, ডাক্তার দেখাবেন আসেন ব্যবস্থা করে দেবো। এসময় ওই নারী একটি টিকিট কিনে নিয়ে আসেন। বলেন, আপনি অপেক্ষা করেন। আমাকে ২শ’ টাকা দেন। ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করাইয়া দেবো। কিভাবে ব্যবস্থা করবেন জানতে চাইলে আকস্মিক সেই জায়গা থেকে সটকে পড়েন ওই নারী। হাসপাতালের ফটকে বসে এক কলা বিক্রেতার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এরা একটা চক্র এখানে কাজ করে। ভেতরে ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করা, ওয়ার্ডে বেড ও কেবিন পাইয়ে দেয়ার কাজও করে। আবার অনেকে সদরঘাট থেকে হাসপাতাল পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে আসার কাজও করে। প্রতি কাজের জন্য একেক নারী আয় করেন ৩ থেকে চার শ’ টাকা। ওই কলা বিক্রেতা জানান, হাসপাতালের বাইরে থেকে ভেতরের কাজই বেশি করেন। অন্যদিকে সরজমিনে মিটফোর্ড হাসপাতালের ২নং ভবনের নিচতলায় গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসকের কক্ষে প্রবেশ করার জন্য লম্বা একটি লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন প্রায় শ’ খানেক রোগী। এর মধ্যে সিরিয়াল ভেঙে আধা ঘণ্টার ব্যবধানে তিন জন রোগী জলদি চিকিৎসকের কক্ষে যেতে পেরেছেন। সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন ডিউটি ডাক্তারের এক সহকারী।
রোগীরা অভিযোগ করেন, এই নিয়ে তিনজনকে টাকার বিনিময়ে ভেতরে নিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ওই সহকারী কথা বলার সময় নেই বলে এড়িয়ে যান। তবে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা রোগীরা জানান, ওই ব্যক্তিকে ৫০ বা তার বেশি কিছু টাকা দিলেই ভেতরে ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ করে দেন। এদিকে বংশাল থেকে আসা শারমিন আক্তার নামের এক রোগী বলেন, সকাল ১০টার দিকে এসেছি এক্সরে করাতে। কিন্তু লম্বা লাইন। এখনও দাঁড়িয়ে আছি। একজন এসে বললো ১শ’ টাকা দেন এক্সরে করিয়ে দেবো। আমি দিইনি। আমার পরিবারের অনেকেই এখানে আসেন ডাক্তার দেখাতে। সবসময় দালালরা গেট থেকে পিছু নেয়। যার কাছ থেকে যেভাবে নিতে পারে।
দালালের এসব চক্র সম্পর্কে জানতে চাইলে মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ব্রায়ান বঙ্কিম হালদার বলেন, এক ধরনের শ্রেণি-পেশার লোক আছে যারা এগুলো করেই জীবিকা নির্বাহ করে। আমার হাসপাতালে ২৪ থেকে ২৫ জন আনসার সদস্য। এই কয়জন দিয়ে তো আর পুরো হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। তবে যখনই এ ধরনের বিষয় আমাদের নজরে আসে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিই। শুধু দালাল চক্রের সদস্য না হাসপাতালে প্রচুর চোরও রয়েছে। দুইদিন আগেই একজনের গলার চেইন চুরি করে নেয়ার সময় আনসার সদস্যের হাতে ধরা পড়েছে। আমরা চোখে পড়লেই ব্যবস্থা নিই। আর হাসপাতালের গেটেই কিছু মানুষ ঘোরাঘুরি করে রোগী ভাগিয়ে নেয়ার জন্য। এর সব ব্যাপারই আমাদের অবগত। কিন্তু সব তো আমাদের একার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। তিনি বলেন, আমরা সামর্থ্য অনুযায়ী হাসপাতাল দালালমুক্ত রাখার চেষ্টা করছি।
No comments