পানি আসে, খাওয়া যায় না, ধোয়া যায় না
টেপে
পানি আসে ঠিকই। কিন্তু সেই পানি ফুটিয়েও পান করা যায় না। গোসল, ধোয়া মুছার
কাজও করা যায় না। কখনো পানির সঙ্গে কাদা ময়লা আসে। আছে দুর্গন্ধও।
রাজধানীর অনেক এলাকায় পানিতে এমন সমস্যা। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন ওইসব এলাকার
বাসিন্দারা। ভুক্তভোগীরা বলছেন, এসব এলাকার সমস্যা পুরনো।
ওয়াসার স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও কোনো প্রতিকার মেলেনি। যদিও ওয়াসা বলছে, তাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। হোল্ডিং নম্বরসহ অভিযোগ দেয়া হলে পানি পরীক্ষা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গতকাল পুরান ঢাকার নয়াবাজার, তাঁতী বাজার, ইংলিশ রোড, বাগডাসা লেন, জিন্দাবাহার, টিবি গোজ স্ট্রিট, কসাই টুলি, সমসাবাদ, শান্তিনগর, রামপুরা, মগবাজার, মধুবাগ, উলনসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বাসিন্দাদের কাছ থেকে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।
খাবার পানির জন্য পুরান ঢাকার মানুষ পঞ্চায়েতের গভীর নলকূপ বা সরকারি বেসরকারি গভীর নলকূপের উপর নির্ভরশীল। অন্যান্য এলাকার বাসিন্দাদের ভরসা বাইরে থেকে কেনা পানির জারের উপর।
পুরান ঢাকার কয়েকটি এলাকায় সরজমিনে গিয়ে বিস্তর অভিযোগ পাওয়া গেছে বাসিন্দাদের কাছ থেকে। নয়াবাজার এলাকার বাসিন্দা নাজিম উদ্দিন নাজু বলেন, ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ। পানি হাতে নিয়ে নাকের কাছে নিলেই বোঝা যায়। ৬/৭ বছর ধরে এমন দুর্গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এই পানি দিয়ে গোসল আর ধোয়া মোছা ছাড়া কিছুই করা যায় না। যাদের টাকা আছে তারা পানির জার কিনে আনে। বাকিরা পঞ্চায়েতের ডিপ টিউবওয়েলের পানির উপর ভরসা করে। আমি প্রতিদিন বড় একটি পাত্রে পানি ভরে আনি। সেটা দিয়েই সারাদিন চলে। পুরান ঢাকার বাগডাসা লেন এলাকার মজিবর রহমান মানবজমিনকে বলেন, ওয়াসার লাইনে আসা পানিতে দুর্গন্ধ। সঙ্গে বালি আর পাথর আসে। কয়েকদিন পর পর পানির মিটার ব্লক হয়ে পানি আসা বন্ধ হয়ে যায়। তখন মিটার খুলে পরিষ্কার করে দিলে আবার পানি আসে। পানি খাওয়ার জন্য ফিল্টার মেশিন কিনে নিয়েছি। মেশিন দিয়ে রিফাইন করে পান করি। এছাড়া ওয়াসার পানি দিয়ে গোসল ও ধোয়া মুছার কাজ ছাড়া আর কিছু করা যায় না। জিন্দাবাহার এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হামিদ বলেন, এদের পানিতেও গন্ধ। এখানে স্যুয়ারেজের লাইনও বন্ধ। পানি যায় না।
কসাই টুলি এলাকার বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, ওয়াসার পানিতে মাঝে মাঝে ময়লার বড় বড় খন্ড পাওয়া যায়। শ্যাওলা আসে। এরপরও জীবন বাঁচাতে এই পানিই খেতে হয়। অভয়দাস লেন, সমসাবাদ লেন, আরমানিটোলা, বংশাল নাজিরা বাজার, তাতীবাজার, ইংলিশ রোডসহ আশপাশের এলাকায়ও ওয়াসার পানির একই অবস্থা। এসব এলাকায় ঢাকা ওয়াসার পানি পান করার অনুপোযোগী। পানি এতই খারাপ যে এই পানি অ্যাকুরিয়ামে দিলে মাছ মরে যায়। শুধু গোসল ও ধোয়া মোছা ছাড়া কোনো কাজ করা যায় না। এ পানি দিয়ে গোসল করতে গিয়ে বাচ্চাদের চোখ জ্বলে। সমসাবাদ লেনের কয়েকজন ভাড়াটিয়া জানান, এই এলাকার পানিতে দুর্গন্ধের কারণে বাসিন্দারা পান করার জন্য পঞ্চায়েতের গভীর নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহ করেন। কখনো নলকূপ নষ্ট হয়ে গেলে বোতলের পানি কিনতে হয়। শাহ জালাল বলেন, পানি দিয়ে মুখ ধুতে গিয়ে চোখের ভেতর পানি ঢুকে গেলে এতই জ্বালা করে, মনে হয় বিষাক্ত কোনো গ্যাস গেছে ভেতরে।
কদমতলির রায়েরবাগ এলাকার ১৭৩৪ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা আবুল হাশেম বলেন আজ প্রায় দুই মাস যাবৎ পানি কোনো কাজেই ব্যবহার করা যাচ্ছে না। পানিতে প্রচুর দুর্গন্ধ। খাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি পানিতে ময়লা থাকায় হাঁড়ি পাতিলও ধোয়া যায় না।
মগবাজার ওয়ারলেস রেলগেট এলাকার ৭০ স্বরলিপি সোনালীবাগের বাসিন্দা এজাজ রসুল সোহেল বলেন, পানিতে প্রচুর দুর্গন্ধ। ওয়াসার পানি দিয়ে মুখ ধুলে চোখ জ্বলে। ৩৬৪/বি মধুবাগের বাসিন্দা নার্গিস আক্তার জানান, লাইন দিয়ে ঘোলা পানি তো আসেই, পানির সঙ্গে প্রায় ময়লা আসে। ট্যাবের মুখে প্লাস্টিকের ছাকনি ব্যবহার করতে হয়। দুই সপ্তাহ পরই ছাকনিগুলো আর ব্যবহার উপযোগী থাকে না। তিনি বলেন, লাইনের পানি ফুটানোর পর ফিটকিরি দিলেও পরিষ্কার এবং দুর্গন্ধমুক্ত হয় না। তারপরও আমাদের প্রতিদিন সে পানি পান ও নিত্য ব্যবহার করতে হয়।
রাজধানীর রামপুরা উলন এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, গ্রীষ্মকাল এলেই এই এলাকায় পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। এলাকাবাসী পানির জন্য হাহাকার করে। শীতকালে এই সমস্যা কিছু কম হলেও বিশুদ্ধ পানির অভাবে দুঃসহ জীবন। ঘোলাটে, দুর্গন্ধ আর ময়লা পানি পান করা তো দূরের কথা অন্যান্য কাজ করারও উপযোগী থাকে না।
সাউথ পয়েন্ট স্কুলের শিক্ষিকা মনিরা তমা জানান, দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিম রামপুরার উলন এলাকায় বসবাস করছেন তিনি। গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে খুব একটা স্বস্তিতে নেই। বাসায় ময়লা-দুর্গন্ধযুক্ত পানিই এই অস্বস্তির কারণ। এই পানি পান করা তো দূরের কথা অন্য কাজও করা যায় না। মনিরা তমা বলেন, গত এক বছর ধরেই এই সমস্যা। ঘোলা পানি। আর দুর্গন্ধ তো আছেই। খাওয়ার জন্য বাইরে থেকে ফিল্টার করা পানির জার কিনতে হয়। একদিকে ওয়াসার বিল দিচ্ছি আবার আলাদা করে খাওয়ার জন্য টাকা দিয়ে পানি কিনতে হচ্ছে। এটা শুধু আমার বাসায় নয় আশপাশে অনেকেই এ সমস্যায় জর্জরিত। একই সমস্যা রামপুরার আশপাশের এলাকাতেও।
উলন, মীরবাগ, মীরের টেক, মধুবাগ, মগবাজার ওয়্যারলেস ও সোনালী বাগ এলাকায় সরজমিনে বাসিন্দাদের দুর্ভোগের চিত্র দেখা গেছে। এসব এলাকার বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরেই পানির এই সংকটে ভুগছেন। জানা যায়, গত বছর সুয়ারেজের কাজ করার পর থেকে পানির এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এসব নিয়ে বারবার ঢাকা ওয়াসা বরাবর জানানো হলেও কোনো প্রতিকার পাননি বাসিন্দারা। ভুক্তভোগীদের অনেকে জানান, নিয়মিত সরবরাহ থাকলেও যে পানি পাইপে আসে তা ব্যবহার অযোগ্য। ময়লা আর দুর্গন্ধ থাকায় স্পর্শও করা যায় না। রামপুরার উলনের বাসিন্দা নাসরিন সুলতানা বলেন, ওয়াসার লাইন থেকে ঘোলা পানি পাচ্ছি। লাইনে কালো পানি আসছে। এগুলো দিয়ে কোনো কাজই করা যায় না। তিনি বলেন, আমার বাবার বাসা বাড্ডায়। ব্যবহারের জন্য সেখান থেকে পানি আনতে হয়। পানির অভাবে খুব কষ্টে আছি আমরা। উলন রোডের আরেক বাসিন্দা ওমর ফারুক বলেন, আমাদের এখানে পানি ঠিকমত আসে। কিন্তু যে পানি পাচ্ছি তা খাওয়া যায় না।
ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত। খাবার তো দূরের কথা বাসাবাড়ির অন্য কাজেও ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। মাস ছয়েক আগে পাশের একটি রাস্তায় স্যুয়ারেজের কাজ করা হয়েছে। সেই থেকে এলাকার মানুষ পানির এই সমস্যায় আছেন। অনেকে বিভিন্ন জায়গা থেকে কিনে এনে খাবার পানির ব্যবস্থা করে। মীরবাগ এলাকায় গিয়েও একই অবস্থার অবস্থা লক্ষ্য করা যায়। এই এলাকার আসিফুল হক নামের এক বাসিন্দা খাওয়ার জন্য দোকান থেকে ফিল্টার করা পানির জার কিনছিলেন। এ সময় মানবজমিনকে তিনি বলেন, এভাবে পানির জার কিনে খাচ্ছি অনেক দিন থেকেই। বাসায় পানি আছে। তারপরও কিনে পানি খেতে হয়। তিনি বলেন, আমরা পানির অভাবে অতিষ্ঠ। একই এলাকার নূর মোহাম্মদ নামের এক দোকানি বলেন, আমার বাসা এই গলিতেই। ভাত কয়দিন না খেয়ে থাকা যায়। কিন্তু পানি ছাড়া বাঁচা যায় না। খাওয়ার জন্য আমাদের পানি কিনতে হয়। ওয়াসার পানি দিয়ে গোসলও করা যায় না।
একই এলাকার বাসিন্দা সোহেল জানান, এই এলাকার পানির অবস্থা খারাপ। নাকের কাছেও নেয়া যায় না। আমরা এই সমস্যার দ্রুত প্রতিকার চাই। পানির সংকট শান্তিনগরেও। এই এলাকার বাসিন্দা সুলতান মাহমুদ বলেন, বাসার পানির অবস্থা খুবই খারাপ। ময়লা আসে। রান্নাবান্না বা গোসলের কাজও করা যায় না। ফিল্টারের পানির মাধ্যমে কাজ সেরে নিতে হয়।
বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকদের অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার এমডি প্রকৌশলী তাকসিম এ খান মানবজমিনকে বলেন, এইসব এলাকা থেকে আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। হোল্ডিং নম্বরসহ তথ্য দিলে ওয়াসা পানি পরীক্ষা করে ব্যবস্থা নেবে।
ওয়াসার স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও কোনো প্রতিকার মেলেনি। যদিও ওয়াসা বলছে, তাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। হোল্ডিং নম্বরসহ অভিযোগ দেয়া হলে পানি পরীক্ষা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গতকাল পুরান ঢাকার নয়াবাজার, তাঁতী বাজার, ইংলিশ রোড, বাগডাসা লেন, জিন্দাবাহার, টিবি গোজ স্ট্রিট, কসাই টুলি, সমসাবাদ, শান্তিনগর, রামপুরা, মগবাজার, মধুবাগ, উলনসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বাসিন্দাদের কাছ থেকে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।
খাবার পানির জন্য পুরান ঢাকার মানুষ পঞ্চায়েতের গভীর নলকূপ বা সরকারি বেসরকারি গভীর নলকূপের উপর নির্ভরশীল। অন্যান্য এলাকার বাসিন্দাদের ভরসা বাইরে থেকে কেনা পানির জারের উপর।
পুরান ঢাকার কয়েকটি এলাকায় সরজমিনে গিয়ে বিস্তর অভিযোগ পাওয়া গেছে বাসিন্দাদের কাছ থেকে। নয়াবাজার এলাকার বাসিন্দা নাজিম উদ্দিন নাজু বলেন, ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ। পানি হাতে নিয়ে নাকের কাছে নিলেই বোঝা যায়। ৬/৭ বছর ধরে এমন দুর্গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এই পানি দিয়ে গোসল আর ধোয়া মোছা ছাড়া কিছুই করা যায় না। যাদের টাকা আছে তারা পানির জার কিনে আনে। বাকিরা পঞ্চায়েতের ডিপ টিউবওয়েলের পানির উপর ভরসা করে। আমি প্রতিদিন বড় একটি পাত্রে পানি ভরে আনি। সেটা দিয়েই সারাদিন চলে। পুরান ঢাকার বাগডাসা লেন এলাকার মজিবর রহমান মানবজমিনকে বলেন, ওয়াসার লাইনে আসা পানিতে দুর্গন্ধ। সঙ্গে বালি আর পাথর আসে। কয়েকদিন পর পর পানির মিটার ব্লক হয়ে পানি আসা বন্ধ হয়ে যায়। তখন মিটার খুলে পরিষ্কার করে দিলে আবার পানি আসে। পানি খাওয়ার জন্য ফিল্টার মেশিন কিনে নিয়েছি। মেশিন দিয়ে রিফাইন করে পান করি। এছাড়া ওয়াসার পানি দিয়ে গোসল ও ধোয়া মুছার কাজ ছাড়া আর কিছু করা যায় না। জিন্দাবাহার এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হামিদ বলেন, এদের পানিতেও গন্ধ। এখানে স্যুয়ারেজের লাইনও বন্ধ। পানি যায় না।
কসাই টুলি এলাকার বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, ওয়াসার পানিতে মাঝে মাঝে ময়লার বড় বড় খন্ড পাওয়া যায়। শ্যাওলা আসে। এরপরও জীবন বাঁচাতে এই পানিই খেতে হয়। অভয়দাস লেন, সমসাবাদ লেন, আরমানিটোলা, বংশাল নাজিরা বাজার, তাতীবাজার, ইংলিশ রোডসহ আশপাশের এলাকায়ও ওয়াসার পানির একই অবস্থা। এসব এলাকায় ঢাকা ওয়াসার পানি পান করার অনুপোযোগী। পানি এতই খারাপ যে এই পানি অ্যাকুরিয়ামে দিলে মাছ মরে যায়। শুধু গোসল ও ধোয়া মোছা ছাড়া কোনো কাজ করা যায় না। এ পানি দিয়ে গোসল করতে গিয়ে বাচ্চাদের চোখ জ্বলে। সমসাবাদ লেনের কয়েকজন ভাড়াটিয়া জানান, এই এলাকার পানিতে দুর্গন্ধের কারণে বাসিন্দারা পান করার জন্য পঞ্চায়েতের গভীর নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহ করেন। কখনো নলকূপ নষ্ট হয়ে গেলে বোতলের পানি কিনতে হয়। শাহ জালাল বলেন, পানি দিয়ে মুখ ধুতে গিয়ে চোখের ভেতর পানি ঢুকে গেলে এতই জ্বালা করে, মনে হয় বিষাক্ত কোনো গ্যাস গেছে ভেতরে।
কদমতলির রায়েরবাগ এলাকার ১৭৩৪ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা আবুল হাশেম বলেন আজ প্রায় দুই মাস যাবৎ পানি কোনো কাজেই ব্যবহার করা যাচ্ছে না। পানিতে প্রচুর দুর্গন্ধ। খাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি পানিতে ময়লা থাকায় হাঁড়ি পাতিলও ধোয়া যায় না।
মগবাজার ওয়ারলেস রেলগেট এলাকার ৭০ স্বরলিপি সোনালীবাগের বাসিন্দা এজাজ রসুল সোহেল বলেন, পানিতে প্রচুর দুর্গন্ধ। ওয়াসার পানি দিয়ে মুখ ধুলে চোখ জ্বলে। ৩৬৪/বি মধুবাগের বাসিন্দা নার্গিস আক্তার জানান, লাইন দিয়ে ঘোলা পানি তো আসেই, পানির সঙ্গে প্রায় ময়লা আসে। ট্যাবের মুখে প্লাস্টিকের ছাকনি ব্যবহার করতে হয়। দুই সপ্তাহ পরই ছাকনিগুলো আর ব্যবহার উপযোগী থাকে না। তিনি বলেন, লাইনের পানি ফুটানোর পর ফিটকিরি দিলেও পরিষ্কার এবং দুর্গন্ধমুক্ত হয় না। তারপরও আমাদের প্রতিদিন সে পানি পান ও নিত্য ব্যবহার করতে হয়।
রাজধানীর রামপুরা উলন এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, গ্রীষ্মকাল এলেই এই এলাকায় পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। এলাকাবাসী পানির জন্য হাহাকার করে। শীতকালে এই সমস্যা কিছু কম হলেও বিশুদ্ধ পানির অভাবে দুঃসহ জীবন। ঘোলাটে, দুর্গন্ধ আর ময়লা পানি পান করা তো দূরের কথা অন্যান্য কাজ করারও উপযোগী থাকে না।
সাউথ পয়েন্ট স্কুলের শিক্ষিকা মনিরা তমা জানান, দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিম রামপুরার উলন এলাকায় বসবাস করছেন তিনি। গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে খুব একটা স্বস্তিতে নেই। বাসায় ময়লা-দুর্গন্ধযুক্ত পানিই এই অস্বস্তির কারণ। এই পানি পান করা তো দূরের কথা অন্য কাজও করা যায় না। মনিরা তমা বলেন, গত এক বছর ধরেই এই সমস্যা। ঘোলা পানি। আর দুর্গন্ধ তো আছেই। খাওয়ার জন্য বাইরে থেকে ফিল্টার করা পানির জার কিনতে হয়। একদিকে ওয়াসার বিল দিচ্ছি আবার আলাদা করে খাওয়ার জন্য টাকা দিয়ে পানি কিনতে হচ্ছে। এটা শুধু আমার বাসায় নয় আশপাশে অনেকেই এ সমস্যায় জর্জরিত। একই সমস্যা রামপুরার আশপাশের এলাকাতেও।
উলন, মীরবাগ, মীরের টেক, মধুবাগ, মগবাজার ওয়্যারলেস ও সোনালী বাগ এলাকায় সরজমিনে বাসিন্দাদের দুর্ভোগের চিত্র দেখা গেছে। এসব এলাকার বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরেই পানির এই সংকটে ভুগছেন। জানা যায়, গত বছর সুয়ারেজের কাজ করার পর থেকে পানির এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এসব নিয়ে বারবার ঢাকা ওয়াসা বরাবর জানানো হলেও কোনো প্রতিকার পাননি বাসিন্দারা। ভুক্তভোগীদের অনেকে জানান, নিয়মিত সরবরাহ থাকলেও যে পানি পাইপে আসে তা ব্যবহার অযোগ্য। ময়লা আর দুর্গন্ধ থাকায় স্পর্শও করা যায় না। রামপুরার উলনের বাসিন্দা নাসরিন সুলতানা বলেন, ওয়াসার লাইন থেকে ঘোলা পানি পাচ্ছি। লাইনে কালো পানি আসছে। এগুলো দিয়ে কোনো কাজই করা যায় না। তিনি বলেন, আমার বাবার বাসা বাড্ডায়। ব্যবহারের জন্য সেখান থেকে পানি আনতে হয়। পানির অভাবে খুব কষ্টে আছি আমরা। উলন রোডের আরেক বাসিন্দা ওমর ফারুক বলেন, আমাদের এখানে পানি ঠিকমত আসে। কিন্তু যে পানি পাচ্ছি তা খাওয়া যায় না।
ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত। খাবার তো দূরের কথা বাসাবাড়ির অন্য কাজেও ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। মাস ছয়েক আগে পাশের একটি রাস্তায় স্যুয়ারেজের কাজ করা হয়েছে। সেই থেকে এলাকার মানুষ পানির এই সমস্যায় আছেন। অনেকে বিভিন্ন জায়গা থেকে কিনে এনে খাবার পানির ব্যবস্থা করে। মীরবাগ এলাকায় গিয়েও একই অবস্থার অবস্থা লক্ষ্য করা যায়। এই এলাকার আসিফুল হক নামের এক বাসিন্দা খাওয়ার জন্য দোকান থেকে ফিল্টার করা পানির জার কিনছিলেন। এ সময় মানবজমিনকে তিনি বলেন, এভাবে পানির জার কিনে খাচ্ছি অনেক দিন থেকেই। বাসায় পানি আছে। তারপরও কিনে পানি খেতে হয়। তিনি বলেন, আমরা পানির অভাবে অতিষ্ঠ। একই এলাকার নূর মোহাম্মদ নামের এক দোকানি বলেন, আমার বাসা এই গলিতেই। ভাত কয়দিন না খেয়ে থাকা যায়। কিন্তু পানি ছাড়া বাঁচা যায় না। খাওয়ার জন্য আমাদের পানি কিনতে হয়। ওয়াসার পানি দিয়ে গোসলও করা যায় না।
একই এলাকার বাসিন্দা সোহেল জানান, এই এলাকার পানির অবস্থা খারাপ। নাকের কাছেও নেয়া যায় না। আমরা এই সমস্যার দ্রুত প্রতিকার চাই। পানির সংকট শান্তিনগরেও। এই এলাকার বাসিন্দা সুলতান মাহমুদ বলেন, বাসার পানির অবস্থা খুবই খারাপ। ময়লা আসে। রান্নাবান্না বা গোসলের কাজও করা যায় না। ফিল্টারের পানির মাধ্যমে কাজ সেরে নিতে হয়।
বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকদের অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার এমডি প্রকৌশলী তাকসিম এ খান মানবজমিনকে বলেন, এইসব এলাকা থেকে আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। হোল্ডিং নম্বরসহ তথ্য দিলে ওয়াসা পানি পরীক্ষা করে ব্যবস্থা নেবে।
No comments