নাগরিক তালিকাকে ঘিরে শঙ্কায় আসামের বাংলাভাষী মুসলিমরা by ফাহমিদা উর্ণি
চূড়ান্ত
নাগরিক তালিকা প্রকাশকে ঘিরে আসামে বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা। সোমবার দুপুর
বারোটা থেকে সেখানে দ্বিতীয় ধাপের জাতীয় নাগরিকত্ব নিবন্ধন তালিকা
উন্মুক্ত করা হবে। প্রথম ধাপে ১ কোটি ৯০ লাখ অধিবাসীকে তালিকায় অন্তর্ভূক্ত
করা হলেও বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার সেখান থেকে দেড় লাখ অধিবাসীকে বাদ
দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। তাদের পাশাপাশি প্রথম ধাপে তালিকায় স্থান না
পাওয়া ১ কোটি ৩৯ লাখ অধিবাসীর ভাগ্যও নির্ধারিত হতে যাচ্ছে চূড়ান্ত ওই
তালিকা প্রণয়নের মধ্য দিয়ে। ২২ লাখ পৃষ্ঠার এই নাগরিক তালিকাকে ঘিরে
অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ তুঙ্গে। প্রধম ধাপে প্রণীত তালিকার অভিজ্ঞতায় নাম বাদ
পড়ার শঙ্কায় ভুগছেন বিপুল সংখ্যক বাংলাভাষী মুসলিম অধিবাসী।
মুসলিম জনসংখ্যার দিক থেকে আসামের অবস্থান ভারতে দ্বিতীয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ২০১৬ সালে আসামে সরকার গঠন করে। বিজেপি সরকার আসার পরেই বাংলাদেশি শরণার্থী উৎখাতে উদ্যোগী হয় আসাম সরকার। কে বাংলাদেশ থেকে এসেছে আর কে অসমের বাসিন্দা এই নিয়ে চলছে টানাপড়েন। অনুপ্রবেশকারীরা স্থানীয় হিন্দুদের কর্মসংস্থান নষ্ট করছে দাবি করে ‘অবৈধ’ মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার শপথ নিয়েছিল তারা। এরই ধারাবাহিকতায় একটি আদমশুমারি চালানো হয়। ১৯৫১ সালের পর এটিই আসামে পরিচালিত প্রথম আদমশুমারি। ওই আদমশুমারির ভিত্তিতে গত ৩১ ডিসেম্বর আসামে জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) তালিকার প্রথম খসড়াটি প্রকাশ হয়। প্রকাশিত খসড়া তালিকায় স্থান পায়নি প্রায় ১ কোটি ৩৯ লাখ বাসিন্দা। যাচাই বাছাই শেষে তাদের নাম পরবর্তী ধাপের তালিকায় যুক্ত করা হবে বলে জানায় রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। বলা হয়, পূর্ণাঙ্গ নাগরিক তালিকায় যাদের নাম থাকবে না তাদেরকে ‘অবৈধ’ অভিবাসী হিসেবে বিবেচনা করা হবে। সে পূর্ণাঙ্গ তালিকাটি প্রকাশিত হচ্ছে সোমবার (৩০ জুলাই)।
তালিকা প্রকাশকে সামনে রেখে আগামি ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তাদের যাবতীয় ছুটি বাতিল করা হয়েছে। মোতায়েন হয়েছে আধা সামরিক কেন্দ্রীয় বাহিনীর ২০ হাজারেরও বেশি সদস্য। নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বাংলাদেশ সীমান্তে। আসামের সঙ্গে মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম, মনিপুর এবং পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তেও নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজেপি হিন্দুত্ববাদী প্রচারণায় জোর দিচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, আসামে নাগরিকত্বের পরীক্ষাসহ বিভাজনমূলক কর্মসূচি এরইমধ্যে জাতিগত ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সোমবার (৩০ জুলাই) প্রকাশ হতে যাওয়া এনসিআর-এর খসড়া তালিকাটি নতুন করে সহিংসতা উসকে দেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত কয়েক দশক ধরে বাঙালি ভাষাভাষীদের সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। যার ফলে ‘বাঙালি বনাম অসমীয়’র মতো বিভাজনমূলক ধারণা আসামের রাজনীতিতে গেড়ে বসেছে। অনেক বছর ধরেই আসামে ‘বহিরাগতদের’ বিরুদ্ধে প্রবল আন্দোলন চলছে। প্রাথমিকভাবে ওই আন্দলোনের লক্ষ্য ছিল নৃতাত্ত্বিকভাবে যারা অসমীয় নয় তাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু এখন ‘বহিরাগত’ বলতে ‘বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অভিবাসী’ বোঝানো হচ্ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এই ‘বহিরাগতবিরোধী’ প্রচারণাকে ব্যবহার করেই ২০০৬ সালে রাজ্যটিতে ক্ষমতাসীন হয়। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ‘বহিরাগতদের’ কারণে আসামের পরিচয় ‘বিনষ্ট’ হওয়া রুখতে তারা জাতীয় নাগরিকত্বের তালিকা হালনাগাদ করবে। আর হয়েছেও তাই। প্রথম ধাপে হালনাগাদ করা তালিকায় নাম নেই অনেক বাংলাভাষী মানুষের। কয়েক প্রজন্ম ধরে আসামে বসবাসকারীদেরও নাগরিকত্বের তালিকায় নাম ওঠেনি। দেখা গেছেয়, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী বাংলাভাষী তিনটি প্রশাসনিক এলাকার বেশিরভাগ আবেদনকারী তালিকাভুক্ত হননি। তালিকা থেকে সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রীসহ কয়েকজন পরিচিত মুসলিম নেতা বাদ পড়েছেন। কয়েকজন হিন্দু নেতাও তালিকাভুক্ত হতে পারেননি। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ভারতের বাইরে থাকা উলফাসহ কয়েকটি বিদ্রোহী সংগঠনের সদস্যরা তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। বাদ পড়াদের মধ্যে বেশিরভাগই বাংলা ভাষাভাষী। রাজ্য সরকারের দাবি, বাদপড়া আবেদনকারীদের উত্তরাধিকার সংক্রান্ত তথ্যে ‘অসামঞ্জস্যতা’ পেয়েছেন তারা। তবে আসামের বাংলা ভাষাভাষী মুসলিমদের আশঙ্কা ১৯৮২ সালে মিয়ানমারে প্রণীত নাগরিকত্বের আইন যেভাবে রোহিঙ্গাদের রাষ্ট্রহীন করেছে, আসামেও তাই ঘটতে যাচ্ছে।
ভারতে ‘ইলিগ্যাল মাইগ্রেন্টস ডিটারমিনেশন বাই ল’ বা আইএমডিটি নামের অবৈধ অভিবাসী সংক্রান্ত আগের যে আইনটি ছিল তাতে বলা হয়েছিল, যতক্ষণ না পর্যন্ত অবৈধ হিসেবে প্রমাণিত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত নাগরিকত্ব বহাল থাকবে। তবে ২০০৫ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ওই আইনের সেই ধারাটি উল্টে দিয়েছে, যার ভিত্তিতে চালু থাকা জাতীয় নাগরিকত্ব হালনাগাদ প্রকল্প এখন লাখ লাখ মানুষের ঘর ছাড়া হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। অবৈধ অভিবাসী সংক্রান্ত নতুন আইনে বলা হয়েছে, যাদের নাগরিকত্ব নিয়ে সরকার নিশ্চিত নয়, তাদের নিজেদেরই নাগরিকত্বের প্রমাণ হাজির করতে হবে। ভারতীয় নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পেতে হলে আসামের সকল বাসিন্দাকে প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে যে তারা ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে থেকে সেখানে আছে। তবে বাংলাদেশি মুসলিমদের কেউ কেউ বলছেন, তাদের পূর্বসূরীরা এসব প্রমাণ বা নথি সংরক্ষণ করার কথা বুঝতে পারেননি। এই অবস্থায় নাগরিক প্রমাণের মতো যথেষ্ট কাগজপত্র অনেকের নেই। সুবহান জানান, তিনি ও তার বাবা দুইজনই আসামে জন্মগ্রহণ করেছেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে মাটি মাখানো একটি হলুদ রংয়ের নথি দেখান তিনি। সেখানে দেখা যায়, আসামের ১৯৬৫ সালের ভোটার তালিকায় তার বাবার নাম রয়েছে। এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনও ব্যক্তির ঘটনাকে নিয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে স্থানীয় সীমান্ত পুলিশ। তবে তাদের দাবি, সন্দেহভাজন অবৈধ অভিবাসীদের উপস্থাপনকৃত সব কাগজপত্র বৈধ নয়। সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, সন্দেহজনক নাগরিকের সংখ্যা ১ লাখ ১৩ হাজার। ইতোমধ্যেই বিদেশি ঘোষিত হয়েছেন প্রায় ৯০ হাজার। এদের ৬টি শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
আসামে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীর আইনবিষয়ক উপদেষ্টা শান্তনু ভারালি দাবি করেন, আসামের জনগণ যেন নিজেদেরকে সুরক্ষিত ভাবতে পারে তা নিশ্চিত করতেই এ এনআরসি তালিকা প্রকাশিত হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এটি নৈতিক জয়। জাতিগত আসামিজরা সবসময় অভিযোগ করে আসছে এখানে বিদেশিদের উপস্থিতি রয়েছে। এ তালিকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে তা প্রমাণ পাবে।’ তবে বিরোধী দল কংগ্রেস পার্টি ও মানবাধিকারকর্মীদের অভিযোগ, বিজেপি ছাড়া অন্য দলগুলোকে ভোট দেওয়ার কারণে বৈধ ভারতীয় মুসলিম নাগরিকদেরকেও লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। কংগ্রেস পার্টির আইন প্রণেতা রিপুন বোরা অভিযোগ করেন, ‘এনআরসির মধ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করাই হলো বিজেপির একমাত্র লক্ষ্য।’ অবশ্য, বিজেপি ও এনআরসি কর্তৃপক্ষ বরাবরই সে অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
মুসলিম জনসংখ্যার দিক থেকে আসামের অবস্থান ভারতে দ্বিতীয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ২০১৬ সালে আসামে সরকার গঠন করে। বিজেপি সরকার আসার পরেই বাংলাদেশি শরণার্থী উৎখাতে উদ্যোগী হয় আসাম সরকার। কে বাংলাদেশ থেকে এসেছে আর কে অসমের বাসিন্দা এই নিয়ে চলছে টানাপড়েন। অনুপ্রবেশকারীরা স্থানীয় হিন্দুদের কর্মসংস্থান নষ্ট করছে দাবি করে ‘অবৈধ’ মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার শপথ নিয়েছিল তারা। এরই ধারাবাহিকতায় একটি আদমশুমারি চালানো হয়। ১৯৫১ সালের পর এটিই আসামে পরিচালিত প্রথম আদমশুমারি। ওই আদমশুমারির ভিত্তিতে গত ৩১ ডিসেম্বর আসামে জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) তালিকার প্রথম খসড়াটি প্রকাশ হয়। প্রকাশিত খসড়া তালিকায় স্থান পায়নি প্রায় ১ কোটি ৩৯ লাখ বাসিন্দা। যাচাই বাছাই শেষে তাদের নাম পরবর্তী ধাপের তালিকায় যুক্ত করা হবে বলে জানায় রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। বলা হয়, পূর্ণাঙ্গ নাগরিক তালিকায় যাদের নাম থাকবে না তাদেরকে ‘অবৈধ’ অভিবাসী হিসেবে বিবেচনা করা হবে। সে পূর্ণাঙ্গ তালিকাটি প্রকাশিত হচ্ছে সোমবার (৩০ জুলাই)।
তালিকা প্রকাশকে সামনে রেখে আগামি ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তাদের যাবতীয় ছুটি বাতিল করা হয়েছে। মোতায়েন হয়েছে আধা সামরিক কেন্দ্রীয় বাহিনীর ২০ হাজারেরও বেশি সদস্য। নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বাংলাদেশ সীমান্তে। আসামের সঙ্গে মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম, মনিপুর এবং পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তেও নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজেপি হিন্দুত্ববাদী প্রচারণায় জোর দিচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, আসামে নাগরিকত্বের পরীক্ষাসহ বিভাজনমূলক কর্মসূচি এরইমধ্যে জাতিগত ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সোমবার (৩০ জুলাই) প্রকাশ হতে যাওয়া এনসিআর-এর খসড়া তালিকাটি নতুন করে সহিংসতা উসকে দেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত কয়েক দশক ধরে বাঙালি ভাষাভাষীদের সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। যার ফলে ‘বাঙালি বনাম অসমীয়’র মতো বিভাজনমূলক ধারণা আসামের রাজনীতিতে গেড়ে বসেছে। অনেক বছর ধরেই আসামে ‘বহিরাগতদের’ বিরুদ্ধে প্রবল আন্দোলন চলছে। প্রাথমিকভাবে ওই আন্দলোনের লক্ষ্য ছিল নৃতাত্ত্বিকভাবে যারা অসমীয় নয় তাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু এখন ‘বহিরাগত’ বলতে ‘বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অভিবাসী’ বোঝানো হচ্ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এই ‘বহিরাগতবিরোধী’ প্রচারণাকে ব্যবহার করেই ২০০৬ সালে রাজ্যটিতে ক্ষমতাসীন হয়। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ‘বহিরাগতদের’ কারণে আসামের পরিচয় ‘বিনষ্ট’ হওয়া রুখতে তারা জাতীয় নাগরিকত্বের তালিকা হালনাগাদ করবে। আর হয়েছেও তাই। প্রথম ধাপে হালনাগাদ করা তালিকায় নাম নেই অনেক বাংলাভাষী মানুষের। কয়েক প্রজন্ম ধরে আসামে বসবাসকারীদেরও নাগরিকত্বের তালিকায় নাম ওঠেনি। দেখা গেছেয়, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী বাংলাভাষী তিনটি প্রশাসনিক এলাকার বেশিরভাগ আবেদনকারী তালিকাভুক্ত হননি। তালিকা থেকে সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রীসহ কয়েকজন পরিচিত মুসলিম নেতা বাদ পড়েছেন। কয়েকজন হিন্দু নেতাও তালিকাভুক্ত হতে পারেননি। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ভারতের বাইরে থাকা উলফাসহ কয়েকটি বিদ্রোহী সংগঠনের সদস্যরা তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। বাদ পড়াদের মধ্যে বেশিরভাগই বাংলা ভাষাভাষী। রাজ্য সরকারের দাবি, বাদপড়া আবেদনকারীদের উত্তরাধিকার সংক্রান্ত তথ্যে ‘অসামঞ্জস্যতা’ পেয়েছেন তারা। তবে আসামের বাংলা ভাষাভাষী মুসলিমদের আশঙ্কা ১৯৮২ সালে মিয়ানমারে প্রণীত নাগরিকত্বের আইন যেভাবে রোহিঙ্গাদের রাষ্ট্রহীন করেছে, আসামেও তাই ঘটতে যাচ্ছে।
ভারতে ‘ইলিগ্যাল মাইগ্রেন্টস ডিটারমিনেশন বাই ল’ বা আইএমডিটি নামের অবৈধ অভিবাসী সংক্রান্ত আগের যে আইনটি ছিল তাতে বলা হয়েছিল, যতক্ষণ না পর্যন্ত অবৈধ হিসেবে প্রমাণিত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত নাগরিকত্ব বহাল থাকবে। তবে ২০০৫ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ওই আইনের সেই ধারাটি উল্টে দিয়েছে, যার ভিত্তিতে চালু থাকা জাতীয় নাগরিকত্ব হালনাগাদ প্রকল্প এখন লাখ লাখ মানুষের ঘর ছাড়া হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। অবৈধ অভিবাসী সংক্রান্ত নতুন আইনে বলা হয়েছে, যাদের নাগরিকত্ব নিয়ে সরকার নিশ্চিত নয়, তাদের নিজেদেরই নাগরিকত্বের প্রমাণ হাজির করতে হবে। ভারতীয় নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পেতে হলে আসামের সকল বাসিন্দাকে প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে যে তারা ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে থেকে সেখানে আছে। তবে বাংলাদেশি মুসলিমদের কেউ কেউ বলছেন, তাদের পূর্বসূরীরা এসব প্রমাণ বা নথি সংরক্ষণ করার কথা বুঝতে পারেননি। এই অবস্থায় নাগরিক প্রমাণের মতো যথেষ্ট কাগজপত্র অনেকের নেই। সুবহান জানান, তিনি ও তার বাবা দুইজনই আসামে জন্মগ্রহণ করেছেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে মাটি মাখানো একটি হলুদ রংয়ের নথি দেখান তিনি। সেখানে দেখা যায়, আসামের ১৯৬৫ সালের ভোটার তালিকায় তার বাবার নাম রয়েছে। এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনও ব্যক্তির ঘটনাকে নিয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে স্থানীয় সীমান্ত পুলিশ। তবে তাদের দাবি, সন্দেহভাজন অবৈধ অভিবাসীদের উপস্থাপনকৃত সব কাগজপত্র বৈধ নয়। সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, সন্দেহজনক নাগরিকের সংখ্যা ১ লাখ ১৩ হাজার। ইতোমধ্যেই বিদেশি ঘোষিত হয়েছেন প্রায় ৯০ হাজার। এদের ৬টি শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
আসামে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীর আইনবিষয়ক উপদেষ্টা শান্তনু ভারালি দাবি করেন, আসামের জনগণ যেন নিজেদেরকে সুরক্ষিত ভাবতে পারে তা নিশ্চিত করতেই এ এনআরসি তালিকা প্রকাশিত হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এটি নৈতিক জয়। জাতিগত আসামিজরা সবসময় অভিযোগ করে আসছে এখানে বিদেশিদের উপস্থিতি রয়েছে। এ তালিকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে তা প্রমাণ পাবে।’ তবে বিরোধী দল কংগ্রেস পার্টি ও মানবাধিকারকর্মীদের অভিযোগ, বিজেপি ছাড়া অন্য দলগুলোকে ভোট দেওয়ার কারণে বৈধ ভারতীয় মুসলিম নাগরিকদেরকেও লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। কংগ্রেস পার্টির আইন প্রণেতা রিপুন বোরা অভিযোগ করেন, ‘এনআরসির মধ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করাই হলো বিজেপির একমাত্র লক্ষ্য।’ অবশ্য, বিজেপি ও এনআরসি কর্তৃপক্ষ বরাবরই সে অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
No comments