ইরানের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের একের পর এক মিথ্যাচারের স্বরূপ: পর্ব-এক
মার্কিন
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ৮মে ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের
স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর চুক্তিকে কেন্দ্র করে
আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা
যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বহুবার পরমাণু সমঝোতাকে এক ধরনের মিথ্যাচার ও
সবচেয়ে খারাপ চুক্তি বলে অভিহিত করেছেন। তিনি শুধু যে পরমাণু সমঝোতা থেকে
বেরিয়ে গেছেন তাই নয় একই সঙ্গে ইরানের বিরুদ্ধেও মিথ্যা অভিযোগ আরোপ
করেছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার একদিন পর এক প্রতিক্রিয়ায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন, "ট্রাম্পের বক্তব্য খুবই হাল্কা ও অপরিপক্ক এবং তিনি অন্তত ১০টি মিথ্যা বলেছেন। ট্রাম্প ইরানকে দেখে নেয়ারও হুমকি দেন।" ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আরো বলেছেন, "ট্রাম্পের এ মুর্খতাপূর্ণ আচরণ আমাদের কাছে অপ্রত্যাশিত নয় এবং আমেরিকার আগের প্রেসিডেন্টদের মধ্যেও এ ধরণের আচরণ লক্ষ্য করা গেছে।"
প্রকৃতপক্ষে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অজুহাতে পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তবে ট্রাম্পের এই মিথ্যাচারের স্বরূপ উন্মোচিত হওয়া দরকার। খোদ পাশ্চাত্যের গণমাধ্যমগুলো পরমাণু ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মিথ্যাচারিতার প্রতিবাদ জানিয়েছে। মার্কিন স্কাই নিউজ টিভি চ্যানেলের ওয়েব সাইটে লেখা হয়েছে, "প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হয়তো এ জন্য গর্ববোধ করেন যে, কোনো কিছু যেভাবে আছে সেভাবেই তিনি বলেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, প্রায় প্রতিদিনই তিনি এমনসব কথাবার্তা বলছেন যার সাথে বাস্তবতার মিল নেই।"
নানা বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এরই মধ্যে মিথ্যাবাদী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছেন এবং একের পর এক তার মিথ্যাচারিতা ও আক্রমণাত্মক কথাবার্তা সবাইকে চিন্তিত করে তুলেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্যকে মিথ্যাচারিতা, বাড়াবাড়ি কিংবা ভুল যাই বলা হোক না কেন আমেরিকার মতো বৃহৎ ও প্রভাবশালী একটি দেশের প্রেসিডেন্টের এমন আচরণ কাঙ্ক্ষিত নয় এবং তা সবার জন্যই অত্যন্ত বিপদজনক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ দানিয়েল দালি তার টুইটার বার্তায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কি পরিমাণ মিথ্যা কথা বলেছেন তার একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, "ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত এক হাজার ৪৮৬টি মিথ্যা কথা বলেছেন।"
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে ইরানের সক্ষমতা বজায় থাকার দাবি করে বলেছেন, "পরমাণু সমঝোতা ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত রাখার সুযোগ করে দিয়েছে এবং দেশটি মারণাস্ত্র তৈরির কাছাকাছি পৌঁছে যাবে বলে তিনি দাবি করেছেন।" এটা ঠিক যে, পরমাণু সমঝোতার কারণে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত রাখতে পারছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই এবং ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ইরান মারণাস্ত্র তৈরির কাছাকাছি চলে যাবে বলে দাবি করেছেন। অথচ ইরান পরমাণু সমঝোতায় উল্লেখিত সীমাবদ্ধতাগুলো মেনে নিয়েছে এবং পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য যেসব চুল্লি বা অবকাঠামো দরকার তা ইরান তৈরি করেনি। আমেরিকার সাবেক জ্বালানিমন্ত্রী ও পরমাণু আলোচক আর্নেস্ট মিউনিজ বলেছেন, "পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়নের কারণে ইরানের মারণাস্ত্র তৈরির সক্ষমতা দুই মাস, তিন মাস কিংবা অন্তত এক বছর পিছিয়ে গেছে।"
অথচ আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএ বহুবার ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণ বলে ঘোষণা দিয়েছে। পরমাণু সমঝোতার আগে থেকেই আন্তর্জাতিক পরিদর্শক দল নিয়মিত ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোর ওপর নজরদারি করত। কিন্তু তারা কখনই পরমাণু ক্ষেত্রে ইরানের বিচ্যুতির কোনো প্রমাণ পায়নি। এ কারণে ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে বলে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে দাবি করছেন তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। ইরানের কর্মকর্তারা বহুবার বলেছেন, ধর্মীয় বিধি-নিষেধ এবং সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর ফতোয়া অনুযায়ী পরমাণু অস্ত্র তৈরির কোনো ইচ্ছা তাদের নেই। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার হারাম বলে যে ফতোয়া দিয়েছেন ২০১১ সালে তেহরানে অনুষ্ঠিত পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তার পুনরাবৃত্তি করে বলেছেন, "পরমাণুসহ জীবাণু ও রাসায়নিকের মতো যে কোনো মারণাস্ত্র যা কিনা মানবতার জন্য মারাত্মক হুমকি তা ব্যবহার করা হারাম বলে আমরা বিশ্বাস করি।"
পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরেকটি যে বড় ধরণের মিথ্যাচার করেছেন তা হচ্ছে, তিনি দাবি করেছেন, "ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ওপর যে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে তা যথেষ্ট নয়।" অথচ পরমাণু সমঝোতার নীতিমালার দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ট্রাম্পের এ সংক্রান্ত দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা। কেননা ইরানের সেন্ট্রিফিউজের সংখ্যা ২০ হাজার থেকে পাঁচ হাজারে নামিয়ে আনা হয়েছে। ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের পরিমাণ ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে তিন দশমিক ৬৭ ভাগে নামিয়ে আনা হয়েছে। এ ছাড়া, পরমাণু সমঝোতা অনুযায়ী ইরান বহুসংখ্যক সেন্ট্রিফিউজের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ার পাশাপাশি আরাক হেভিওয়াটার প্রকল্পের নক্সায়ও পরিবর্তন আনার বিষয়টি ইরান মেনে নিয়েছে। এ ধরণের আরো বহু সীমাবদ্ধতা ইরান মেনে নিয়েছে। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান ইউকিয়া আমানো বলেছেন, "ইরানের পরমাণু কার্যক্রমের অতি ক্ষুদ্র তৎপরতাও তাদের কঠিন নজরদারির মধ্যে রয়েছে।" আমেরিকা দাবি করছে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ওপর আইএইএ'র নজরদারি ব্যর্থ হয়েছে অথচ আইএইএ এ পর্যন্ত তিন হাজার দিবস পর্যবেক্ষণ চালিয়েছে ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোর ওপর।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মিথ্যাচারিতার আরেকটি দৃষ্টান্ত হচ্ছে, তিনি দাবি করেছেন, "পরমাণু বোমা তৈরির চেষ্টা থেকে ইরানকে বিরত রাখতে ব্যর্থ হয়েছে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দল।" তিনি এও বলেছেন, "পরমাণু সমঝোতার মতো একটি অকার্যকর চুক্তি দিয়ে ইরানের পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা ঠেকানো সম্ভব হবে না এবং এ ক্ষেত্রে ইরানকে বিরত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি যোগ্যতাও আইএইএ'র নেই।" এমনকি ইরানের সামরিক স্থাপনা পরিদর্শন করার সুযোগ চুক্তিতে রাখা হয়নি বলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন।
অথচ পাশ্চাত্যের শীর্ষ নেতারা ও কূটনীতিকরা ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ওপর নজরদারি করার জন্য পরমাণু সমঝোতাকে সবচেয়ে উপযুক্ত ও কার্যকর একটি ব্যবস্থা বলে মনে করছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে তার অভিযোগগুলো প্রমাণের জন্য দখলদার ইসরাইলের দাবিকে দলিল হিসেবে ব্যবহার করেছেন। পরমাণু সমঝোতা থেকে ট্রাম্পের বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার কয়েক দিন আগে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু কিছু ছবি ও সিডি দেখিয়ে ইরানকে মিথ্যাবাদী হিসেবে প্রমাণ করার জন্য তিনি দাবি করেছিলেন দেশটি মারণাস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছ।
আইএইএ'র প্রধান ইউকিয়া আমানো বলেছেন, ২০০৯ সালের পর ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে বিচ্যুতির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে বলে আমেরিকা ও ইসরাইল যে দাবি করে আসছে তেহরান বরাবরই তা প্রত্যাখ্যান করে এসেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার একদিন পর এক প্রতিক্রিয়ায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন, "ট্রাম্পের বক্তব্য খুবই হাল্কা ও অপরিপক্ক এবং তিনি অন্তত ১০টি মিথ্যা বলেছেন। ট্রাম্প ইরানকে দেখে নেয়ারও হুমকি দেন।" ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আরো বলেছেন, "ট্রাম্পের এ মুর্খতাপূর্ণ আচরণ আমাদের কাছে অপ্রত্যাশিত নয় এবং আমেরিকার আগের প্রেসিডেন্টদের মধ্যেও এ ধরণের আচরণ লক্ষ্য করা গেছে।"
প্রকৃতপক্ষে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অজুহাতে পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তবে ট্রাম্পের এই মিথ্যাচারের স্বরূপ উন্মোচিত হওয়া দরকার। খোদ পাশ্চাত্যের গণমাধ্যমগুলো পরমাণু ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মিথ্যাচারিতার প্রতিবাদ জানিয়েছে। মার্কিন স্কাই নিউজ টিভি চ্যানেলের ওয়েব সাইটে লেখা হয়েছে, "প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হয়তো এ জন্য গর্ববোধ করেন যে, কোনো কিছু যেভাবে আছে সেভাবেই তিনি বলেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, প্রায় প্রতিদিনই তিনি এমনসব কথাবার্তা বলছেন যার সাথে বাস্তবতার মিল নেই।"
নানা বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এরই মধ্যে মিথ্যাবাদী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছেন এবং একের পর এক তার মিথ্যাচারিতা ও আক্রমণাত্মক কথাবার্তা সবাইকে চিন্তিত করে তুলেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্যকে মিথ্যাচারিতা, বাড়াবাড়ি কিংবা ভুল যাই বলা হোক না কেন আমেরিকার মতো বৃহৎ ও প্রভাবশালী একটি দেশের প্রেসিডেন্টের এমন আচরণ কাঙ্ক্ষিত নয় এবং তা সবার জন্যই অত্যন্ত বিপদজনক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ দানিয়েল দালি তার টুইটার বার্তায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কি পরিমাণ মিথ্যা কথা বলেছেন তার একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, "ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত এক হাজার ৪৮৬টি মিথ্যা কথা বলেছেন।"
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে ইরানের সক্ষমতা বজায় থাকার দাবি করে বলেছেন, "পরমাণু সমঝোতা ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত রাখার সুযোগ করে দিয়েছে এবং দেশটি মারণাস্ত্র তৈরির কাছাকাছি পৌঁছে যাবে বলে তিনি দাবি করেছেন।" এটা ঠিক যে, পরমাণু সমঝোতার কারণে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত রাখতে পারছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই এবং ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ইরান মারণাস্ত্র তৈরির কাছাকাছি চলে যাবে বলে দাবি করেছেন। অথচ ইরান পরমাণু সমঝোতায় উল্লেখিত সীমাবদ্ধতাগুলো মেনে নিয়েছে এবং পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য যেসব চুল্লি বা অবকাঠামো দরকার তা ইরান তৈরি করেনি। আমেরিকার সাবেক জ্বালানিমন্ত্রী ও পরমাণু আলোচক আর্নেস্ট মিউনিজ বলেছেন, "পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়নের কারণে ইরানের মারণাস্ত্র তৈরির সক্ষমতা দুই মাস, তিন মাস কিংবা অন্তত এক বছর পিছিয়ে গেছে।"
অথচ আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএ বহুবার ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণ বলে ঘোষণা দিয়েছে। পরমাণু সমঝোতার আগে থেকেই আন্তর্জাতিক পরিদর্শক দল নিয়মিত ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোর ওপর নজরদারি করত। কিন্তু তারা কখনই পরমাণু ক্ষেত্রে ইরানের বিচ্যুতির কোনো প্রমাণ পায়নি। এ কারণে ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে বলে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে দাবি করছেন তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। ইরানের কর্মকর্তারা বহুবার বলেছেন, ধর্মীয় বিধি-নিষেধ এবং সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর ফতোয়া অনুযায়ী পরমাণু অস্ত্র তৈরির কোনো ইচ্ছা তাদের নেই। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার হারাম বলে যে ফতোয়া দিয়েছেন ২০১১ সালে তেহরানে অনুষ্ঠিত পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তার পুনরাবৃত্তি করে বলেছেন, "পরমাণুসহ জীবাণু ও রাসায়নিকের মতো যে কোনো মারণাস্ত্র যা কিনা মানবতার জন্য মারাত্মক হুমকি তা ব্যবহার করা হারাম বলে আমরা বিশ্বাস করি।"
পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরেকটি যে বড় ধরণের মিথ্যাচার করেছেন তা হচ্ছে, তিনি দাবি করেছেন, "ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ওপর যে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে তা যথেষ্ট নয়।" অথচ পরমাণু সমঝোতার নীতিমালার দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ট্রাম্পের এ সংক্রান্ত দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা। কেননা ইরানের সেন্ট্রিফিউজের সংখ্যা ২০ হাজার থেকে পাঁচ হাজারে নামিয়ে আনা হয়েছে। ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের পরিমাণ ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে তিন দশমিক ৬৭ ভাগে নামিয়ে আনা হয়েছে। এ ছাড়া, পরমাণু সমঝোতা অনুযায়ী ইরান বহুসংখ্যক সেন্ট্রিফিউজের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ার পাশাপাশি আরাক হেভিওয়াটার প্রকল্পের নক্সায়ও পরিবর্তন আনার বিষয়টি ইরান মেনে নিয়েছে। এ ধরণের আরো বহু সীমাবদ্ধতা ইরান মেনে নিয়েছে। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান ইউকিয়া আমানো বলেছেন, "ইরানের পরমাণু কার্যক্রমের অতি ক্ষুদ্র তৎপরতাও তাদের কঠিন নজরদারির মধ্যে রয়েছে।" আমেরিকা দাবি করছে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ওপর আইএইএ'র নজরদারি ব্যর্থ হয়েছে অথচ আইএইএ এ পর্যন্ত তিন হাজার দিবস পর্যবেক্ষণ চালিয়েছে ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোর ওপর।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মিথ্যাচারিতার আরেকটি দৃষ্টান্ত হচ্ছে, তিনি দাবি করেছেন, "পরমাণু বোমা তৈরির চেষ্টা থেকে ইরানকে বিরত রাখতে ব্যর্থ হয়েছে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দল।" তিনি এও বলেছেন, "পরমাণু সমঝোতার মতো একটি অকার্যকর চুক্তি দিয়ে ইরানের পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা ঠেকানো সম্ভব হবে না এবং এ ক্ষেত্রে ইরানকে বিরত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি যোগ্যতাও আইএইএ'র নেই।" এমনকি ইরানের সামরিক স্থাপনা পরিদর্শন করার সুযোগ চুক্তিতে রাখা হয়নি বলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন।
অথচ পাশ্চাত্যের শীর্ষ নেতারা ও কূটনীতিকরা ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ওপর নজরদারি করার জন্য পরমাণু সমঝোতাকে সবচেয়ে উপযুক্ত ও কার্যকর একটি ব্যবস্থা বলে মনে করছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে তার অভিযোগগুলো প্রমাণের জন্য দখলদার ইসরাইলের দাবিকে দলিল হিসেবে ব্যবহার করেছেন। পরমাণু সমঝোতা থেকে ট্রাম্পের বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার কয়েক দিন আগে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু কিছু ছবি ও সিডি দেখিয়ে ইরানকে মিথ্যাবাদী হিসেবে প্রমাণ করার জন্য তিনি দাবি করেছিলেন দেশটি মারণাস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছ।
আইএইএ'র প্রধান ইউকিয়া আমানো বলেছেন, ২০০৯ সালের পর ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে বিচ্যুতির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে বলে আমেরিকা ও ইসরাইল যে দাবি করে আসছে তেহরান বরাবরই তা প্রত্যাখ্যান করে এসেছে।
No comments