বিএনপি-ভারত সম্পর্ক
ভারত
বিরোধিতার প্রশ্ন নাকচ করে দিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম
আলমগীর বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, তার দল ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশে ভারতের কোনো
বিচ্ছিন্নতাবাদীর আশ্রয় হবে না। এখানে তাদের কোনো অস্থিত্বই থাকবে না। তিনি
এটিও বলেছেনÑ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক বিশেষ করে তারা
সরকারে গেলে কী পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করবেন, সে বিষয়ে দিল্লিকে তারা লিখিত
জানিয়ে দিয়েছেন। ভারত সফরকারী দলটির প্রতিনিধিদলের মাধ্যমেই বিএনপির এ
বার্তা দিল্লির নেতৃত্বের কাছে স্পষ্ট করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন ফখরুল।
বিবিসি বাংলার লন্ডন স্টুডিওতে মির্জা ফখরুল সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে
তিনি দিল্লির সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের বিষয়গুলো স্পষ্ট করেছেন।
এদিকে ওই সম্পর্কের বিষয়ে বিবিসি বাংলা তাদের নিজস্ব অনুসন্ধানী রিপোর্টও প্রকাশ করেছে। তাতে বিএনপিকে নিয়ে দিল্লির নীতিনির্ধারকদের মনোভাবের প্রতিফলন উঠে এসেছে। বিবিসি বাংলার বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগই ভারতের পছন্দের দল, ভারত কোনাভাবে চায় না বিএনপি ক্ষমতায় ফিরুকÑ বাংলাদেশের রাজনীতিতে এমন একটি শক্ত ধারণা রয়েছে। বিবিসি বাংলার সঙ্গে আলাপে ভারতীয় সাবেক কূটনীতিক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা এ ‘ধারণা’র সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। বিশেষ করে বিএনপির আমলে ঢাকায় দায়িত্বপালনকারী ভারতীয় কূটনীতিক বিনা সিক্রি সরাসরি তা নাকচ করেন। তিনি মনে করেনÑ প্রতিবেশী অগ্রাধিকার প্রশ্নে দিল্লির যে বিদেশ নীতি রয়েছে তাতে শক্তিশালী এবং স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় ভারত। বিনা সিক্রি এটা স্বীকার করেন যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের আমলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক অনেক উন্নতি হয়েছে। তবে ভারত যে কোনো রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। তারা কথা বলতে প্রস্তুত। তবে তাদেরকে (বাংলাদেশের ওই রাজনৈতিক শক্তিকে) অবশ্যই দুই দেশের মধ্যে শন্তিপূর্ণ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহত রাখার নিশ্চয়তা দিতে হবে। কেবল বিনা সিক্রিই নয়Ñ বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করেন তাদের আরো অনেকের সঙ্গে কথা বলে বিবিসি বাংলা তাদের যে বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে তাতে মোটা দাগে কয়েকটি বিষয় ওঠে এসেছে। তা হলোÑ ভারতের নীতি নির্ধারকরা বিএনপিকে নিয়ে নতুন আগ্রহ দেখছেন এতে কোনো দ্বিমত বা ভিন্নমত নেই। তবে সেটি ইতিবাচক বা নেতিবাচক তা নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ হতে পারে। তাদের বিশ্লেষণে এটিও বলা হয়েছেÑ বিএনপি এখনও বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল। তারা যে কোনো সময় আবারও ক্ষমতায় ফিরতে পারে। ভারতীয় নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে বিবিসি এ ধারণাই পেয়েছে বলে তাদের রিপোর্টে প্রচার করা হয়।
ভারতীয় সাংবাদিক, লেখক এসএনএম অবদিং নামকরা সাময়িকী আউটলুকের সাবেক ডেপুটি এডিটর। তার মতে, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির প্রধান লক্ষ্য হলো আওয়ামী লীগ সরকারই যেন ক্ষমতায় ফিরে আসে। তিনি আবার এটাও বলছেন, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য ভারত একটি বিকল্প দৃশ্যপটের জন্য তৈরি। তার মতে, সেই বিকল্প দৃশ্যপট মাথায় রেখে বিএনপি, এরশাদ এমনকি জামায়াতে ইসলামীর মতো দলের সঙ্গেও কিন্তু ভারত যোগাযোগ রক্ষা করে। একটা প্রভাবশালী ভারতীয় মেইনস্ট্রিম উইকলিতে প্রকাশিত সাম্প্রতিক একটি লেখা লিখেছেন ভারতীয় দুজন বিশ্লেষক অপরূপা ভট্টাচার্য এবং সৌরিন। এতে তারা এ লেখায় সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন যদি বিএনপি নির্বাচনে জিতে বাংলাদেশে ক্ষমতায় ফিরে আসে তখন ভারত কি করবে? তাদের মত হচ্ছে শেখ হাসিনার প্রতি ভারতের সমর্থন অব্যাহত থাকলেও ভারতের উচিত হবে না বাংলাদেশের ক্ষমতার লড়াইয়ে খালেদা জিয়ার বিএনপিকে এখনই খরচের খাতায় লিখে ফেলা।
বিএনপির প্রতিনিধিদল যে ভারতে গিয়েছে সেটা কতটা বিএনপির আগ্রহে বা ভারতের আগ্রহে সেটা ঠিক স্পষ্ট নয়। তবে এটি যে, বিএনপির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক এবং যোগাযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যেই করা তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এ বিষয়ে মোটামুটি খোঁজখবর রাখেন এমন একজন ভারতীয় সাংবাদিক বলেছেন, কিছুদিন আগে বাংলাদেশ থেকে আওয়ামী লীগের একটি বড় প্রতিনিধিদল ভারতে গিয়েছিল ক্ষমতাসীন দল বিজেপি’র আমন্ত্রণে। তখন বিএনপি আমন্ত্রণ পায়নি। তবে এখন বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল ভারতে গিয়ে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কথাবার্তা বলছেন। তিনি বলছেন, এটা ভারসাম্য রক্ষার একটা চেষ্টা হিসেবে। ভারতের সঙ্গে যে বিএনপির সম্পর্কে দৃশ্যত উন্নতি ঘটছে, তার কিছু উদাহরণও তিনি দিয়েছেন। তার মতে, একদিকে যেমন বিএনপির ভারতীয় ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ছে, তেমনি বিএনপিও গত দু’বছরে তাদের ভারতবিরোধী কথাবার্তা অনেকটাই বন্ধ করে দিয়েছে।
বিবিসি: নির্বাচনের ব্যাপারে ভারতের কাছে ঠিক কী ধরনের সাহায্য চাইছেন আপনারা?
ফখরুল: আমরা যেটা চাই ভারতের কাছে, বাংলাদেশে একটা সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনে ভারত যেন সহায়তা করে। ভারত আমাদের প্রতিবেশী, প্রভাবশালী দেশ। তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ, ঘনিষ্ঠ। তাদের যথেষ্ট যোগাযোগ আছে বাংলাদেশের সঙ্গে। সেখানে অবশ্যই ভারতের একটা ভূমিকা আছে।
বিবিসি: কিন্তু কিভাবে ভারত সহায়তা করবে?
ফখরুল: যেকোনো দেশ যদি বড় হয় এবং তাদের যদি একটা ইনফ্লুয়েন্স থাকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং আঞ্চলিক বিষয়গুলোতে, সেক্ষেত্রে তারা অবশ্যই বলতে পারে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা তোমরা করো। আমরা কোনো সাহায্য চাচ্ছি না। আমরা একটা অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন চাচ্ছি, যেখানে সবাই ভোট দিতে পারে।
বিবিসি: ভারতের যদি বাংলাদেশের ওপর এরকম একটা প্রভাব থাকেও, তারা কেন সেটা করবে? বিশেষ করে যখন বর্তমান সরকারের সঙ্গে ভারতের এত ভালো সম্পর্ক এবং বিএনপির ব্যাপারে ভারতে অনেকের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে?
ফখরুল: এই সন্দেহ অনেকটাই অমূলক। কারণ বাংলাদেশে বিএনপি সরকার কখনোই ভারতের স্বার্থবিরোধী কোনো কাজ করেছে বলে আমার জানা নেই। আর দ্বিতীয়ত বাংলাদেশে একটা গণতান্ত্রিক সরকার, জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে এমন একটা সরকার ভারতের জন্যই খুব প্রয়োজনীয়। আর ভারতের সঙ্গে বিএনপির বৈরী সম্পর্ক যেগুলো প্রচার করা হয়, সেটা ঠিক নয়।
বিবিসি: কিন্তু বিভিন্ন দ্বিক্ষীয় বৈঠকে ভারত তো এমন অভিযোগ করে যে বিএনপির আমলে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিদ্রোহীরা বাংলাদেশে আশ্রয়-প্রশ্রয় পেয়েছে। দশ ট্রাক অস্ত্রের চালানের মতো বিষয় ঘটেছে, যেটা ভারতের কাছে খুবই স্পর্শকাতর বিষয়।
ফখরুল: এ ঘটনাগুলো কতটা সত্যি, কতটা তৈরি করা, তা কিন্তু এখনো পরিপূর্ণভাবে আমরা জানি না।
বিসিসি: কিন্তু ভারতের মধ্যে বিএনপির ব্যাপারে যে সন্দেহ, সেটা দূর করতে বিএনপির কোনো কৌশল কী আছে?
ফখরুল: অবশ্যই, আমরা তো সুনির্দিষ্টভাবে বলেছি যে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক হবে, সে সম্পর্কে আমরা একটা পেপারও দিয়েছি। সেখানে আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি, উই উইল হ্যাভ জিরো টলারেন্স এবাউট এনি ইনসারজেন্সি ইনসাইড বাংলাদেশ। তাদেরকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না। আমরা স্পষ্ট করে বলেছি তাদের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। স্পেস থাকবে না। এটা আমরা যদি সরকারে যাই, এটা আমরা অবশ্যই নিশ্চিত করবো।
বিবিসি: বাংলাদেশে বিএনপির ভাবমূর্তি একটি ভারতবিরোধী দল হিসেবে। এখন মানুষ যদি দেখে বিএনপিও ভারতের দ্বারস্থ হচ্ছে, সেটা কি বিএনপির রাজনৈতিক ভাবমূর্তির ক্ষতি করবে না?
ফখরুল: আপনারা এটাকে এমনভাবে দেখছেন কেন। আপনারা যেভাবে বলছেন তাতে এটা দাঁড়ায় যে এটা একটা প্রতিষ্ঠিত ইমেজ হয়ে গেছে। কিন্তু প্রশ্নটা সেখানে নয়। বিএনপি যেটা বিশ্বাস করে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। আর বিএনপিকে বাংলাদেশের স্বার্থ দেখতে হবে। সেই স্বার্থ দেখতে গিয়ে কেউ যদি বলে যে আমরা ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলছি সেটা কিন্তু সঠিক একটা অ্যানালিসিস নয় বলে আমি মনে করি। আমি মনে করি পারস্পরিক মর্যাদাবোধ, পারস্পরিক স্বার্থ এটা খুব জরুরি। ভারতের তো এটা দায়িত্ব যেন বাংলাদেশে তাদের বিরোধী মনোভাব বা ধারণা তৈরি না হয়। যেটা কিনা তাদের জন্যও ক্ষতিকর, আমাদের জন্যও ক্ষতিকর।
বিবিসি: দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে জেলখানায় রেখে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ একটি রাজনৈতিক দল বিএনপি আগামী নির্বাচনে যাবে কি না?
ফখরুল: এটা নির্ভর করছে সরকারের আচরণের ওপর। খালেদা জিয়ার মুক্তি আমাদের প্রথম ও প্রধান দাবি, তবে এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এখনও আসেনি। খালেদা জিয়াকে বর্তমান সরকার সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ মনে করে। এবং এ কারণেই তাকে নির্বাচন থেকে, রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখার প্রচেষ্টা সবসময়ই নেওয়া হচ্ছে। ওয়ান ইলেভেন সরকারের আমলেও এই একই চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু জনগণের চাপে তারা তখন সফল হতে পারেনি। আজকে আবার দুঃখজনকভাবে সেদিন যারা ‘মায়নাস টু’ তত্ত্বের শিকার হয়েছিল তারাই আবার চেষ্টা করছে ‘মায়নাস ওয়ান’ অর্থাৎ খালেদা জিয়াকে সরিয়ে দেয়ার জন্য।
বিবিসি: খালেদা জিয়াকে ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে কি না?
ফখরুল: নির্বাচনে যাবো কি যাবো না, সেটা সম্পূর্ণ রূপে নির্ভর করছে সরকারের আচরণের ওপরে। নির্ভর করবে দেশের মানুষের আচরণের ওপরে। সুতরাং এবিষয়ে এখনই সিদ্ধান্ত দেওয়ার সুযোগ আসেনি। দেশে যদি নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়, জনগণের ভোট দেয়ার অবস্থা তৈরি হয়, রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রচার প্রচারণা চালাতে দেয়া হয় তখন বিএনপি এবিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। নির্বাচনকালীন সরকারকে নিরপেক্ষ হতে হবে। বর্তমান পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে হবে। সরকারকে সেনা মোতায়েন করতে হবে এবং সকল দলকে সমান সুযোগ দিতে হবে। এসব তো শুধু আমাদের কথা নয়। সবাই বলছে। সকল রাজনৈতিক দলের কথা। ড. কামাল হোসেন, বি চৌধুরী, আ স ম আব্দুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না যারা আমাদের সঙ্গে জোটে নেই তারাও এই প্রস্তাবের কথা বলছেন। এবং মাঝে মাঝে তাদের লোক এরশাদ সাহেবও এ কথাগুলো বলছেন।
এদিকে ওই সম্পর্কের বিষয়ে বিবিসি বাংলা তাদের নিজস্ব অনুসন্ধানী রিপোর্টও প্রকাশ করেছে। তাতে বিএনপিকে নিয়ে দিল্লির নীতিনির্ধারকদের মনোভাবের প্রতিফলন উঠে এসেছে। বিবিসি বাংলার বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগই ভারতের পছন্দের দল, ভারত কোনাভাবে চায় না বিএনপি ক্ষমতায় ফিরুকÑ বাংলাদেশের রাজনীতিতে এমন একটি শক্ত ধারণা রয়েছে। বিবিসি বাংলার সঙ্গে আলাপে ভারতীয় সাবেক কূটনীতিক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা এ ‘ধারণা’র সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। বিশেষ করে বিএনপির আমলে ঢাকায় দায়িত্বপালনকারী ভারতীয় কূটনীতিক বিনা সিক্রি সরাসরি তা নাকচ করেন। তিনি মনে করেনÑ প্রতিবেশী অগ্রাধিকার প্রশ্নে দিল্লির যে বিদেশ নীতি রয়েছে তাতে শক্তিশালী এবং স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় ভারত। বিনা সিক্রি এটা স্বীকার করেন যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের আমলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক অনেক উন্নতি হয়েছে। তবে ভারত যে কোনো রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। তারা কথা বলতে প্রস্তুত। তবে তাদেরকে (বাংলাদেশের ওই রাজনৈতিক শক্তিকে) অবশ্যই দুই দেশের মধ্যে শন্তিপূর্ণ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহত রাখার নিশ্চয়তা দিতে হবে। কেবল বিনা সিক্রিই নয়Ñ বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করেন তাদের আরো অনেকের সঙ্গে কথা বলে বিবিসি বাংলা তাদের যে বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে তাতে মোটা দাগে কয়েকটি বিষয় ওঠে এসেছে। তা হলোÑ ভারতের নীতি নির্ধারকরা বিএনপিকে নিয়ে নতুন আগ্রহ দেখছেন এতে কোনো দ্বিমত বা ভিন্নমত নেই। তবে সেটি ইতিবাচক বা নেতিবাচক তা নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ হতে পারে। তাদের বিশ্লেষণে এটিও বলা হয়েছেÑ বিএনপি এখনও বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল। তারা যে কোনো সময় আবারও ক্ষমতায় ফিরতে পারে। ভারতীয় নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে বিবিসি এ ধারণাই পেয়েছে বলে তাদের রিপোর্টে প্রচার করা হয়।
ভারতীয় সাংবাদিক, লেখক এসএনএম অবদিং নামকরা সাময়িকী আউটলুকের সাবেক ডেপুটি এডিটর। তার মতে, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির প্রধান লক্ষ্য হলো আওয়ামী লীগ সরকারই যেন ক্ষমতায় ফিরে আসে। তিনি আবার এটাও বলছেন, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য ভারত একটি বিকল্প দৃশ্যপটের জন্য তৈরি। তার মতে, সেই বিকল্প দৃশ্যপট মাথায় রেখে বিএনপি, এরশাদ এমনকি জামায়াতে ইসলামীর মতো দলের সঙ্গেও কিন্তু ভারত যোগাযোগ রক্ষা করে। একটা প্রভাবশালী ভারতীয় মেইনস্ট্রিম উইকলিতে প্রকাশিত সাম্প্রতিক একটি লেখা লিখেছেন ভারতীয় দুজন বিশ্লেষক অপরূপা ভট্টাচার্য এবং সৌরিন। এতে তারা এ লেখায় সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন যদি বিএনপি নির্বাচনে জিতে বাংলাদেশে ক্ষমতায় ফিরে আসে তখন ভারত কি করবে? তাদের মত হচ্ছে শেখ হাসিনার প্রতি ভারতের সমর্থন অব্যাহত থাকলেও ভারতের উচিত হবে না বাংলাদেশের ক্ষমতার লড়াইয়ে খালেদা জিয়ার বিএনপিকে এখনই খরচের খাতায় লিখে ফেলা।
বিএনপির প্রতিনিধিদল যে ভারতে গিয়েছে সেটা কতটা বিএনপির আগ্রহে বা ভারতের আগ্রহে সেটা ঠিক স্পষ্ট নয়। তবে এটি যে, বিএনপির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক এবং যোগাযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যেই করা তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এ বিষয়ে মোটামুটি খোঁজখবর রাখেন এমন একজন ভারতীয় সাংবাদিক বলেছেন, কিছুদিন আগে বাংলাদেশ থেকে আওয়ামী লীগের একটি বড় প্রতিনিধিদল ভারতে গিয়েছিল ক্ষমতাসীন দল বিজেপি’র আমন্ত্রণে। তখন বিএনপি আমন্ত্রণ পায়নি। তবে এখন বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল ভারতে গিয়ে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কথাবার্তা বলছেন। তিনি বলছেন, এটা ভারসাম্য রক্ষার একটা চেষ্টা হিসেবে। ভারতের সঙ্গে যে বিএনপির সম্পর্কে দৃশ্যত উন্নতি ঘটছে, তার কিছু উদাহরণও তিনি দিয়েছেন। তার মতে, একদিকে যেমন বিএনপির ভারতীয় ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ছে, তেমনি বিএনপিও গত দু’বছরে তাদের ভারতবিরোধী কথাবার্তা অনেকটাই বন্ধ করে দিয়েছে।
বিবিসি: নির্বাচনের ব্যাপারে ভারতের কাছে ঠিক কী ধরনের সাহায্য চাইছেন আপনারা?
ফখরুল: আমরা যেটা চাই ভারতের কাছে, বাংলাদেশে একটা সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনে ভারত যেন সহায়তা করে। ভারত আমাদের প্রতিবেশী, প্রভাবশালী দেশ। তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ, ঘনিষ্ঠ। তাদের যথেষ্ট যোগাযোগ আছে বাংলাদেশের সঙ্গে। সেখানে অবশ্যই ভারতের একটা ভূমিকা আছে।
বিবিসি: কিন্তু কিভাবে ভারত সহায়তা করবে?
ফখরুল: যেকোনো দেশ যদি বড় হয় এবং তাদের যদি একটা ইনফ্লুয়েন্স থাকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং আঞ্চলিক বিষয়গুলোতে, সেক্ষেত্রে তারা অবশ্যই বলতে পারে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা তোমরা করো। আমরা কোনো সাহায্য চাচ্ছি না। আমরা একটা অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন চাচ্ছি, যেখানে সবাই ভোট দিতে পারে।
বিবিসি: ভারতের যদি বাংলাদেশের ওপর এরকম একটা প্রভাব থাকেও, তারা কেন সেটা করবে? বিশেষ করে যখন বর্তমান সরকারের সঙ্গে ভারতের এত ভালো সম্পর্ক এবং বিএনপির ব্যাপারে ভারতে অনেকের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে?
ফখরুল: এই সন্দেহ অনেকটাই অমূলক। কারণ বাংলাদেশে বিএনপি সরকার কখনোই ভারতের স্বার্থবিরোধী কোনো কাজ করেছে বলে আমার জানা নেই। আর দ্বিতীয়ত বাংলাদেশে একটা গণতান্ত্রিক সরকার, জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে এমন একটা সরকার ভারতের জন্যই খুব প্রয়োজনীয়। আর ভারতের সঙ্গে বিএনপির বৈরী সম্পর্ক যেগুলো প্রচার করা হয়, সেটা ঠিক নয়।
বিবিসি: কিন্তু বিভিন্ন দ্বিক্ষীয় বৈঠকে ভারত তো এমন অভিযোগ করে যে বিএনপির আমলে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিদ্রোহীরা বাংলাদেশে আশ্রয়-প্রশ্রয় পেয়েছে। দশ ট্রাক অস্ত্রের চালানের মতো বিষয় ঘটেছে, যেটা ভারতের কাছে খুবই স্পর্শকাতর বিষয়।
ফখরুল: এ ঘটনাগুলো কতটা সত্যি, কতটা তৈরি করা, তা কিন্তু এখনো পরিপূর্ণভাবে আমরা জানি না।
বিসিসি: কিন্তু ভারতের মধ্যে বিএনপির ব্যাপারে যে সন্দেহ, সেটা দূর করতে বিএনপির কোনো কৌশল কী আছে?
ফখরুল: অবশ্যই, আমরা তো সুনির্দিষ্টভাবে বলেছি যে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক হবে, সে সম্পর্কে আমরা একটা পেপারও দিয়েছি। সেখানে আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি, উই উইল হ্যাভ জিরো টলারেন্স এবাউট এনি ইনসারজেন্সি ইনসাইড বাংলাদেশ। তাদেরকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না। আমরা স্পষ্ট করে বলেছি তাদের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। স্পেস থাকবে না। এটা আমরা যদি সরকারে যাই, এটা আমরা অবশ্যই নিশ্চিত করবো।
বিবিসি: বাংলাদেশে বিএনপির ভাবমূর্তি একটি ভারতবিরোধী দল হিসেবে। এখন মানুষ যদি দেখে বিএনপিও ভারতের দ্বারস্থ হচ্ছে, সেটা কি বিএনপির রাজনৈতিক ভাবমূর্তির ক্ষতি করবে না?
ফখরুল: আপনারা এটাকে এমনভাবে দেখছেন কেন। আপনারা যেভাবে বলছেন তাতে এটা দাঁড়ায় যে এটা একটা প্রতিষ্ঠিত ইমেজ হয়ে গেছে। কিন্তু প্রশ্নটা সেখানে নয়। বিএনপি যেটা বিশ্বাস করে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। আর বিএনপিকে বাংলাদেশের স্বার্থ দেখতে হবে। সেই স্বার্থ দেখতে গিয়ে কেউ যদি বলে যে আমরা ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলছি সেটা কিন্তু সঠিক একটা অ্যানালিসিস নয় বলে আমি মনে করি। আমি মনে করি পারস্পরিক মর্যাদাবোধ, পারস্পরিক স্বার্থ এটা খুব জরুরি। ভারতের তো এটা দায়িত্ব যেন বাংলাদেশে তাদের বিরোধী মনোভাব বা ধারণা তৈরি না হয়। যেটা কিনা তাদের জন্যও ক্ষতিকর, আমাদের জন্যও ক্ষতিকর।
বিবিসি: দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে জেলখানায় রেখে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ একটি রাজনৈতিক দল বিএনপি আগামী নির্বাচনে যাবে কি না?
ফখরুল: এটা নির্ভর করছে সরকারের আচরণের ওপর। খালেদা জিয়ার মুক্তি আমাদের প্রথম ও প্রধান দাবি, তবে এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এখনও আসেনি। খালেদা জিয়াকে বর্তমান সরকার সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ মনে করে। এবং এ কারণেই তাকে নির্বাচন থেকে, রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখার প্রচেষ্টা সবসময়ই নেওয়া হচ্ছে। ওয়ান ইলেভেন সরকারের আমলেও এই একই চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু জনগণের চাপে তারা তখন সফল হতে পারেনি। আজকে আবার দুঃখজনকভাবে সেদিন যারা ‘মায়নাস টু’ তত্ত্বের শিকার হয়েছিল তারাই আবার চেষ্টা করছে ‘মায়নাস ওয়ান’ অর্থাৎ খালেদা জিয়াকে সরিয়ে দেয়ার জন্য।
বিবিসি: খালেদা জিয়াকে ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে কি না?
ফখরুল: নির্বাচনে যাবো কি যাবো না, সেটা সম্পূর্ণ রূপে নির্ভর করছে সরকারের আচরণের ওপরে। নির্ভর করবে দেশের মানুষের আচরণের ওপরে। সুতরাং এবিষয়ে এখনই সিদ্ধান্ত দেওয়ার সুযোগ আসেনি। দেশে যদি নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়, জনগণের ভোট দেয়ার অবস্থা তৈরি হয়, রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রচার প্রচারণা চালাতে দেয়া হয় তখন বিএনপি এবিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। নির্বাচনকালীন সরকারকে নিরপেক্ষ হতে হবে। বর্তমান পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে হবে। সরকারকে সেনা মোতায়েন করতে হবে এবং সকল দলকে সমান সুযোগ দিতে হবে। এসব তো শুধু আমাদের কথা নয়। সবাই বলছে। সকল রাজনৈতিক দলের কথা। ড. কামাল হোসেন, বি চৌধুরী, আ স ম আব্দুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না যারা আমাদের সঙ্গে জোটে নেই তারাও এই প্রস্তাবের কথা বলছেন। এবং মাঝে মাঝে তাদের লোক এরশাদ সাহেবও এ কথাগুলো বলছেন।
No comments