জোটের শীর্ষ বৈঠক, মিডিয়ার সাফল্য ও ফৌজদারহাট by সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীক
নতুন
বছর ২০১৮-এর তৃতীয় কলাম এটি। ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি সোমবার সন্ধ্যায়
গুলশানে অবস্থিত বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ
নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকটি ছিল ২০১৮ সালের প্রথম বৈঠক। ২০১৭ সালের
শেষ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায়। নভেম্বরের ওই বৈঠকটি ছিল
২০ দলীয় জোটনেত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপারসন প্রায় তিন মাস দীর্ঘ লন্ডন সফর
থেকে ফেরত আসার পর প্রথম বৈঠক। আমি ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারিনি অনিবার্য
কারণে।
২০ দলীয় জোটের শীর্ষ বৈঠক
৮ জানুয়ারির মিটিংটি সুনির্দিষ্ট আলোচ্য বিষয় নিয়েই আহ্বান করা হয়েছিল। সুনির্দিষ্ট আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে একটি ছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মেয়র পদের প্রার্থিতা নিয়ে আলোচনা। আরেকটি ছিল চলমান বা বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সম্ভাব্য পার্লামেন্ট নির্বাচন। তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য সূচি ছিল বেগম জিয়ার ওপর আরোপিত অন্যায্য ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলাগুলোর রাজনৈতিক তাৎপর্য ও সম্ভাব্য বিহিত। ওই দিন সন্ধ্যায় মিটিংয়ের শুরুতে আমরা সবাই আমাদের মরহুম সহকর্মী ‘জাগপা’র মরহুম সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের অনুপস্থিতি নতুন করে অনুভব করলাম। ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে আলোচনা শুরুর সময় সচরাচর আমরা সবাই মিলে শফিউল আলম প্রধানকে আলোচনার সূচনা করার অনুরোধ করতাম। তিনি অতি সুন্দর বিশ্লেষণ করতেন, অতি সুন্দর উপস্থাপন করতেন এবং অন্যদের আলোচনার জন্য ক্ষেত্রটি প্রস্তুত করতেন। ৮ জানুয়ারি সকালেই বলাবলি করলাম, আজকের আলোচ্য সূচি শুরু করার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি হতেন জনাব প্রধান। যেহেতু তিনি আমাদের মধ্যে নেই সেহেতু আরেকজনকে করতে হচ্ছে। শফিউল আলম প্রধানের সুযোগ্য স্ত্রী, তৎকালীন তুখোড় ছাত্রনেতা এবং বর্তমানে জাগপার সভাপতি অধ্যাপিকা রেহানা প্রধান আমাদের মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন। যা হোক, কেউ না কেউ আলোচনা শুরু করতেই হবে, তাই ন্যাশনাল পিপলস পার্টি তথা এনপিপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ডক্টর ফরিদুজ্জামান ফরহাদ আলোচনা শুরু করেন। অতঃপর আরো পাঁচজন আলোচনায় অংশ নেন। ওই ছয়জনের আলোচনার সারবস্তু ছিল দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ওপর আরোপিত মামলাগুলো নিতান্তই রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক করা হয়েছে বেগম জিয়াকে নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে বাইরে রাখার কূটকৌশল হিসেবে। ওই ছয়জনের পক্ষ থেকে উপস্থাপিত বা আলোচিত দ্বিতীয় বিষয়টি ছিল মেয়র প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রার্থী ও প্রার্থিতা প্রসঙ্গে। তাদের বক্তব্য ছিল, জোটের পক্ষ থেকে যেন একক প্রার্থী দেয়া হয়। অতীতের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করা হয় এবং সেই অভিজ্ঞতার আলোকে আলোচনা করা হয় যে, একক প্রার্থী না হলে ভোট ভাগাভাগি হয়ে যাবে। আলোচনা সভায় ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা আবদুল হালিম এবং ছয়জনের আলোচনার সময় এ কথাটি উঠে আসে, জামায়াতে ইসলামী যদিও মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করে ফেলেছে, তবুও জোটের পক্ষ থেকে একক প্রার্থী দেয়ার স্বার্থে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন। ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের অতীতের মিটিংগুলোর অলিখিত রেওয়াজ মোতাবেক আমি আরেকটু পরে বলার সুযোগ নিলেও চলত। এবার, অর্থাৎ ৮ জানুয়ারি সন্ধ্যায় আমি ছয়জনের বক্তব্যের পর আমার বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য সুযোগ গ্রহণ করি। আমি মেয়র প্রার্থিতা নিয়ে আলোচনাটিকে আরেকটু সুনির্দিষ্ট করে ফেলি। আমি বলি, কয়েক সপ্তাহ ধরে পত্রপত্রিকায় ২০ দলীয় জোটের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে ছবিসহ মিডিয়ায় আলোচনা হচ্ছে। যাদের নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তাদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে বেশি আলোচনা হচ্ছে দুইজনকে নিয়ে, যথা- তাবিথ আউয়াল ও আন্দালিব রহমান পার্থ। আমি আরো বলি, তিন-চার দিন (অর্থাৎ ৮ জানুয়ারি ২০১৮ থেকে পেছনের দিকে তিন-চার দিন) ধরে তুলনামূলকভাবে আলোচনা জনাব তাবিথের প্রসঙ্গেই বেশি হচ্ছে। জনাব পার্থ ও তাবিথ উভয়েই বাংলাদেশের তরুণসমাজের কাছে সুপরিচিত গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি এবং ভোটারদের ৬০ শতাংশের বেশি ভোটার তরুণ।
২০ দলীয় জোটের শীর্ষ বৈঠক
৮ জানুয়ারির মিটিংটি সুনির্দিষ্ট আলোচ্য বিষয় নিয়েই আহ্বান করা হয়েছিল। সুনির্দিষ্ট আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে একটি ছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মেয়র পদের প্রার্থিতা নিয়ে আলোচনা। আরেকটি ছিল চলমান বা বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সম্ভাব্য পার্লামেন্ট নির্বাচন। তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য সূচি ছিল বেগম জিয়ার ওপর আরোপিত অন্যায্য ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলাগুলোর রাজনৈতিক তাৎপর্য ও সম্ভাব্য বিহিত। ওই দিন সন্ধ্যায় মিটিংয়ের শুরুতে আমরা সবাই আমাদের মরহুম সহকর্মী ‘জাগপা’র মরহুম সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের অনুপস্থিতি নতুন করে অনুভব করলাম। ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে আলোচনা শুরুর সময় সচরাচর আমরা সবাই মিলে শফিউল আলম প্রধানকে আলোচনার সূচনা করার অনুরোধ করতাম। তিনি অতি সুন্দর বিশ্লেষণ করতেন, অতি সুন্দর উপস্থাপন করতেন এবং অন্যদের আলোচনার জন্য ক্ষেত্রটি প্রস্তুত করতেন। ৮ জানুয়ারি সকালেই বলাবলি করলাম, আজকের আলোচ্য সূচি শুরু করার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি হতেন জনাব প্রধান। যেহেতু তিনি আমাদের মধ্যে নেই সেহেতু আরেকজনকে করতে হচ্ছে। শফিউল আলম প্রধানের সুযোগ্য স্ত্রী, তৎকালীন তুখোড় ছাত্রনেতা এবং বর্তমানে জাগপার সভাপতি অধ্যাপিকা রেহানা প্রধান আমাদের মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন। যা হোক, কেউ না কেউ আলোচনা শুরু করতেই হবে, তাই ন্যাশনাল পিপলস পার্টি তথা এনপিপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ডক্টর ফরিদুজ্জামান ফরহাদ আলোচনা শুরু করেন। অতঃপর আরো পাঁচজন আলোচনায় অংশ নেন। ওই ছয়জনের আলোচনার সারবস্তু ছিল দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ওপর আরোপিত মামলাগুলো নিতান্তই রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক করা হয়েছে বেগম জিয়াকে নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে বাইরে রাখার কূটকৌশল হিসেবে। ওই ছয়জনের পক্ষ থেকে উপস্থাপিত বা আলোচিত দ্বিতীয় বিষয়টি ছিল মেয়র প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রার্থী ও প্রার্থিতা প্রসঙ্গে। তাদের বক্তব্য ছিল, জোটের পক্ষ থেকে যেন একক প্রার্থী দেয়া হয়। অতীতের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করা হয় এবং সেই অভিজ্ঞতার আলোকে আলোচনা করা হয় যে, একক প্রার্থী না হলে ভোট ভাগাভাগি হয়ে যাবে। আলোচনা সভায় ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা আবদুল হালিম এবং ছয়জনের আলোচনার সময় এ কথাটি উঠে আসে, জামায়াতে ইসলামী যদিও মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করে ফেলেছে, তবুও জোটের পক্ষ থেকে একক প্রার্থী দেয়ার স্বার্থে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন। ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের অতীতের মিটিংগুলোর অলিখিত রেওয়াজ মোতাবেক আমি আরেকটু পরে বলার সুযোগ নিলেও চলত। এবার, অর্থাৎ ৮ জানুয়ারি সন্ধ্যায় আমি ছয়জনের বক্তব্যের পর আমার বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য সুযোগ গ্রহণ করি। আমি মেয়র প্রার্থিতা নিয়ে আলোচনাটিকে আরেকটু সুনির্দিষ্ট করে ফেলি। আমি বলি, কয়েক সপ্তাহ ধরে পত্রপত্রিকায় ২০ দলীয় জোটের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে ছবিসহ মিডিয়ায় আলোচনা হচ্ছে। যাদের নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তাদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে বেশি আলোচনা হচ্ছে দুইজনকে নিয়ে, যথা- তাবিথ আউয়াল ও আন্দালিব রহমান পার্থ। আমি আরো বলি, তিন-চার দিন (অর্থাৎ ৮ জানুয়ারি ২০১৮ থেকে পেছনের দিকে তিন-চার দিন) ধরে তুলনামূলকভাবে আলোচনা জনাব তাবিথের প্রসঙ্গেই বেশি হচ্ছে। জনাব পার্থ ও তাবিথ উভয়েই বাংলাদেশের তরুণসমাজের কাছে সুপরিচিত গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি এবং ভোটারদের ৬০ শতাংশের বেশি ভোটার তরুণ।
অতএব, তরুণ ভোটারদের কাছে সুপরিচিত একজন তরুণ প্রার্থী দিলে
সুবিধা হতে পারে। এরপর আমি বলি, তাবিথ আউয়াল একটি অতিরিক্ত অ্যাডভান্টেজ বা
সুবিধাসংবলিত; সেটি হলো তিনি গত মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী থাকার কারণে
অভিজ্ঞ। আমার নিবেদন দেশনেত্রী একটি সিদ্ধান্ত নেবেন; যথাসম্ভব এ দুইজনের
মধ্য থেকেই দেবেন। আমার নিবেদনের চূড়ান্ত বক্তব্য হলো যাকেই তিনি মনোনয়ন
দেন, তাকে আমরা সবাই মিলে সমর্থন দেবো এবং তার জন্য সবাই পরিশ্রম করব।
আমাদের যে দায়িত্ব দেয়া হবে, আমরা সেই দায়িত্ব পালন করব। সম্মানিত পাঠক,
নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন, ওই আলোচনা সভায় ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল বিজেপি
বা বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির সভাপতি ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ
উপস্থিত ছিলেন। বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে আমি
প্রাধান্য দিই দেশের ও ২০ দলীয় জোটের স্বার্থকে। ওই পরিপ্রেক্ষিতেই আমার
বক্তব্যে আমি অন্য যে প্রসঙ্গটি তুলে ধরি সেটি হলো আলেম-ওলামা প্রসঙ্গ।
হাস্যোচ্ছলে বা হালকা পরিবেশনায় বা রাজনৈতিক রসোচ্ছলে এটা বলি, অনেকেই
হাটহাজারীকে ‘হেফাজতে ইসলামের রাজধানী’ বলে সম্বোধন করেন। আমার বাড়ি
চট্টগ্রামের ওই হাটহাজারীতে এবং ওই হাটহাজারী হলো কওমি মাদরাসা শিক্ষার
অন্যতম বৃহৎ কেন্দ্র। হাটহাজারীতেই অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ
ঐতিহ্যবাহী কওমি মাদরাসা ‘দারুল উলুম মইনুল ইসলাম’; যার মহাপরিচালক হলেন
আল্লামা আহমদ শফী। হাটহাজারীতে একাধিক তাৎপর্যপূর্ণ ও প্রসিদ্ধ কামিল
মাদরাসাও আছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো ‘ছিপাতলী জামেয়া গাউছিয়া মূঈনীয়া কামিল
(এমএ) অনার্স মাদরাসা’। হাটহাজারীতে কওমি লাইনে শিক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব ও
তাদের অনুসারীরা এবং সরকারি কামিল মাদরাসায় আলিয়া লাইনে শিক্ষাপ্রাপ্ত
ব্যক্তিত্বদের উজ্জ্বল প্রাধান্য সমানভাবে লক্ষণীয়। হাটহাজারীতে উভয়
চিন্তাধারার জ্ঞানী ব্যক্তি ও তাদের অনুসারীদের শান্তিপূর্ণ মর্যাদাপূর্ণ
সহাবস্থান প্রশংসনীয় ও লক্ষণীয়। সেই সুবাদেই আমি আমার বক্তব্যের দ্বিতীয়
অংশের আলোচনাটি এগিয়ে নিয়ে যাই। আমার নিবেদন ছিল, আলেম-ওলামাদের সাথে ২০
দলীয় জোটের সম্পর্ককে অধিকতর সুসংহত করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
আলেম-ওলামাগণ বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ
এবং তাৎপর্যপূর্ণ অংশীদার; আংশিকভাবে চালিকাশক্তিও বটে। এখন শীতকাল, শুকনো
মওসুম এবং সে জন্যই বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জ ও শহর-বন্দরে বিভিন্ন প্রকার
ধর্মীয় মাহফিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এসব মাহফিলে আলেম-ওলামাগণ বিভিন্ন
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। অতীতকালে বেশ কিছু বছর আগে
আলেম-ওলামাগণের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ ছিল সমালোচকদের মুখে মুখে যে, তারা
আসমানের ওপরের কথা ও মাটির নিচের কথা বেশি আলোচনা করেন; পৃথিবীতে চলমান
জীবনঘনিষ্ঠ বা সমাজসংশ্লিষ্ট বিষয়ে কম আলোচনা করেন। ওইরূপ সমালোচনার দিন
শেষ।
আলেম-ওলামাগণ এখন সমাজের নারী-পুরুষের সমস্যা, অত্যাচার-অনাচার, শিশু ও
নারীর ওপর অত্যাচার, বৃক্ষরোপণ, মানবকল্যাণ ইত্যাদি প্রসঙ্গে ইতিবাচক কথা
বলেন। তারা দুর্নীতি, লুটপাট, ঘুষ খাওয়া, হারাম খাওয়া ইত্যাদির বিরুদ্ধে
সচেতনতামূলক কথা বলেন। সর্বোপরি এটা উল্লেখযোগ্য যে, তিন-চার দশক ধরে একটু
একটু করে তথা ক্রমান্বয়ে আলেম-ওলামাগণ প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে জড়িত
হয়েছেন। এ প্রেক্ষাপটে আমি মনে করেছিলাম এবং এখনো মনে করি যে, তারা সমাজে
সাধারণ মানুষের চোখে সম্মানিত গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়। অতএব, ২০ দলীয় জোটের
শীর্ষ নেত্রীর সাথে এবং ২০ দলীয় জোটের সাথে সার্বিকভাবে সম্মানিত
আলেম-ওলামাগণের সম্পর্ক গভীরতর হওয়া প্রয়োজন এবং যেকোনো প্রকারের ভুল
বোঝাবুঝি থাকলে বা দূরত্ব সৃষ্টিকারী কোনো কারণ থাকলে, সেগুলো দূর করে
সম্পর্ক সুসংহত করা প্রয়োজন। আমি বক্তব্য শেষ করার পর জমিয়তে ওলামায়ে
ইসলামের সভাপতি মুফতি ওয়াক্কাস এবং অতঃপর ইসলামী ঐক্যজোটের সভাপতি মাওলানা
অ্যাডভোকেট আবদুর রকিব বক্তব্য রাখেন। অতঃপর বক্তব্য রাখেন এলডিপি
চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি তথা এলডিপির মহাসচিব মুক্তিযোদ্ধা রেদোয়ান আহমেদ ও
জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি তথা মহাসচিব মোস্তফা
জামাল হায়দার। এরপর বক্তব্য রাখার প্রয়োজনীয় সুযোগটি নেন বিজেপি চেয়ারম্যান
ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ; তারপর বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর
আমিরের প্রতিনিধি মাওলানা আবদুল হালিম। ব্যারিস্টার আন্দালিব তার বক্তব্যে
অত্যন্ত সুন্দর ও প্রাঞ্জলভাবে তার অবস্থান পরিষ্কার করেন। মাওলানা আবদুল
হালিম তার দলের অবস্থান তুলে ধরেন এবং অন্যদের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে
সমন্বয় প্রসঙ্গে শক্তিশালী গঠনমূলক ইশারা প্রদান করেন। যেহেতু জামায়াতে
ইসলামীর পক্ষ থেকে মেয়র নির্বাচনের প্রার্থী ও প্রার্থিতা ইতোমধ্যে (তথা ৮
জানুয়ারির দু-তিন দিন আগে) মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে এবং যেহেতু সব আলোচক
জোটের পক্ষ থেকে একক প্রার্থী দেয়ার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছিলেন, সেহেতু
আবদুল হালিমের পক্ষ থেকে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান পরিষ্কার করা প্রয়োজন
ছিল। তিনি সেই চেষ্টা করেন। রাত সোয়া ৯টায় শুরু হয়ে রাত সোয়া ১১টায় আলোচনা
সভা শেষ হয়। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে আমি ধরেই নিয়েছি, ওই রাতেই অনেক অনলাইন
পত্রিকায় ২০ দলীয় জোটের বৈঠকের খবর তথা কী আলোচনা হলো, কী সিদ্ধান্ত হলো
এগুলো আসবে; ৯ তারিখ সকালের দৈনিক পত্রিকাগুলোতে তো অবশ্যই আসবে। ৯ তারিখ
দিনে একাধিক পত্রিকা ঘেঁটে দেখলাম খবর বেরিয়েছে। দু-একটি গুরুত্বপূর্ণ
পত্রিকায় আমার নাম উল্লিখিত হয়েছে। আমার নাম উল্লেখ করার প্রসঙ্গটি হলো,
আমি দুইজন সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীর নাম উল্লেখ করে চেয়ারপারসনের সামনে
উপস্থাপন করেছি। পত্রিকাগুলোতে ২০ দলীয় জোটের আরো কয়েকজন শীর্ষ নেতার নাম
সংবাদের মাঝখানে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে উপস্থাপিত হয়েছে। নামগুলো উল্লেখ হতেই
পারে, এটা স্বাভাবিক। যেটা অস্বাভাবিক সেটা হলো ২০ দলীয় জোটের মিটিংয়ের
আলোচনা ও সিদ্ধান্তের খবরগুলো বা বিস্তারিত বিবরণ মিডিয়ার সামনে
অংশগ্রহণকারীদের মাধ্যমে যেন না যায় সেরূপ একটি অনুরোধ দীর্ঘ দিন ধরে বহাল
আছে; তবুও ৮ তারিখের সন্ধ্যার খবর ও বিবরণ ৯ তারিখের পত্রিকায় এবং ১০
তারিখের দু-একটি পত্রিকায় মোটামুটি নিখুঁতভাবে, প্রাঞ্জলভাবে এসেছে; এটা
মিডিয়াকর্মীদের সাফল্য। এ সাফল্যের ইতিবাচক দিক আছে, অর্থাৎ শীর্ষ নেতারা
কী আলোচনা করছেন সেটা সম্পর্কে অবহিত থাকলেন। তার জন্য মিডিয়াকে আমার পক্ষ
থেকে ধন্যবাদ। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কয়েকজন বিভিন্ন রকম
আলোচনা-সমালোচনা করেন এবং পুরো আলোচনা বা ঘটনা না জেনেই তারা আক্রমণাত্মক
মনোভাব নিয়ে কলম ধরেন। সভায় সভাপতিত্ব করেছেন ২০ দলীয় জোটনেত্রী ও বিএনপি
চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তার অনুমতিতেই রেওয়াজ মোতাবেক সভা সঞ্চালন
করেছেন জোটের সমন্বয়ক বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পুরো
আলোচনাটি সভার সভাপতির আহ্বানে আলোচ্য সূচি মোতাবেক হয়েছে। সাত-আট দিন আগে
মেয়র নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হয়েছে, তফসিল ঘোষণার বেশ আগেই আওয়ামী লীগের
সম্ভাব্য প্রার্থী আতিকের পক্ষ থেকে অনেক বড় বড় পোস্টার-জাতীয় বিলবোর্ড
আমরা লক্ষ করেছিলাম। তিনি ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী বা এ মুহূর্তের আলোচনার
জন্য সম্ভাব্য প্রার্থী। শুরুতেই খেলার মাঠে তিনি খেলা শুরু করে দিয়েছেন;
যেটা সম্ভব হয়েছে সরকারি আনুকূল্যে। ইতোমধ্যে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা
ফরম কিনেছেন এবং সেই প্রার্থীদের মধ্য থেকে চূড়ান্ত প্রার্থী মনোনয়নের
প্রক্রিয়া অগ্রসরমান; আমি এই কলাম লিখছি সোমবার ১৫ জানুয়ারি ২০১৮ রাত ৮টায়।
অতএব, এর থেকে বেশি আপটুডেট বা হালনাগাদ খবর দিতে পারছি না।
নবতিথি
ছোটকালে ব্যাকরণে সন্ধি পড়েছি। নব যোগ অতিথি সন্ধি করলে হবে নবোতিথি অথবা নবাতিথি। উচ্চারণ প্রায় একই রকম, কিন্তু অর্থ একটু ভিন্ন প্রকৃতির এ রকম একটি শব্দ বা নামের সাথে পরিচিত হলাম ১২ জানুয়ারি। হাটহাজারী উপজেলায় দক্ষিণ-পূর্ব মেখলে তরুণদের একটি সামাজিক সংগঠন বা ক্লাব আছে যার নাম নবতিথি ক্লাব। শীতকাল ব্যাডমিন্টন খেলার সিজন। ১২ তারিখ সন্ধ্যায় তিন ঘণ্টা উপস্থিত থেকে খেলা দেখলাম এবং পুরস্কার বিতরণীতে অংশগ্রহণ করলাম। কনকনে শীতের মধ্যেও চার শতাধিক তরুণ ও প্রবীণ উপস্থিত ছিলেন এবং এটা দেখে আমি আশান্বিত হয়েছি যে, মানুষ এখনো খেলাধুলা পছন্দ করে। ওই ক্লাবটিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অনুসারী আছেন; কিন্তু ক্লাবের কোনো কর্মকাণ্ডে কোনো প্রকার প্রভাব তারা ফেলেন না। স্বাগতিকদের মধ্যে যারা গুরুত্বপূর্ণ তাদের জিজ্ঞেস করলাম, এই নামটা কেন বেছে নিয়েছিলেন? তারা ব্যাখ্যা করেছিলেন- নব মানে নতুন এবং তিথি মানে সময় বা সুযোগ। প্রত্যেক কিশোর বা কৈশোরোত্তীর্ণ তরুণ নিজেকে প্রস্ফুটিত ও বিকশিত করার এবং নিজেকে উপস্থাপন করার সুযোগ খোঁজে। এলাকার কিশোর ও কিশোরোত্তীর্ণ তরুণদের সেই সুযোগ দেয়ার জন্য ১৯৯৬ সালে দক্ষিণ-পূর্ব মেখলে নবতিথি নামের ক্লাবটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। নতুন সুযোগ বলি বা নবতিথি বলি, এরূপ একটি সন্ধিক্ষণ প্রত্যেকের জীবনে আসে এবং সে সুযোগটিকে কাজে লাগানো প্রত্যেকের কর্তব্য। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম ও প্রতীক্ষার পর ঢাকা উত্তর মহানগরের মেয়র নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ২০ দলীয় জোট সেই সুযোগ গ্রহণ করবে, এটাই স্বাভাবিক।
ফৌজদারহাট
নবতিথি বা নতুন সুযোগের প্রসঙ্গ এলো বলেই উল্লেখ করছি আমার জীবনের প্রথম ও দ্বিতীয় সুযোগের কথা। ১৯৫৭ সালে আট বছর বয়সে গ্রাম থেকে এসেছিলাম চট্টগ্রাম বন্দর উত্তর কলোনিতে, বাবার সরকারি বাসায়। ১৯৬২ সালের জুন মাস পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি চট্টগ্রাম বন্দর প্রাইমারি স্কুলে এবং চট্টগ্রাম বন্দর হাইস্কুলে। সেই ১৯৬২ সালের প্রথমার্ধে পরীক্ষা দিয়ে ক্যাডেট কলেজে ঢোকার সুযোগ পেয়েছিলাম। ওই আমলে, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে একমাত্র ক্যাডেট কলেজ ছিল ‘দি ইস্ট পাকিস্তান ক্যাডেট কলেজ’। যার অবস্থান ছিল তৎকালীন চট্টগ্রাম শহর থেকে ১০-১১ মাইল উত্তরে ফৌজদারহাট নামক স্থানে পাহাড়ের পাদদেশে। ওই কলেজটি প্রতিষ্ঠার তারিখ ২৮ এপ্রিল ১৯৫৮। ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আরো তিনটি ক্যাডেট কলেজ স্থাপিত হয়েছিল। ফলে আমাদের কলেজটির নাম পাল্টে করা হয়েছিল ‘ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ’। সেই ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে পুনর্মিলনী হবে ১৮, ১৯ ও ২০ জানুয়ারি ২০১৮। ওই ঐতিহ্যবাহী কলেজের প্রবীণ বা প্রাচীন ছাত্রদের মধ্যে একজন আমি নিজেও। কলেজের প্রতি চট্টগ্রামবাসীর শুভেচ্ছা ও দেশবাসীর শুভেচ্ছা অতীতে যেমন ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
লেখক : মেজর জেনারেল (অব.); চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টিwww.generalibrahim.com
নবতিথি
ছোটকালে ব্যাকরণে সন্ধি পড়েছি। নব যোগ অতিথি সন্ধি করলে হবে নবোতিথি অথবা নবাতিথি। উচ্চারণ প্রায় একই রকম, কিন্তু অর্থ একটু ভিন্ন প্রকৃতির এ রকম একটি শব্দ বা নামের সাথে পরিচিত হলাম ১২ জানুয়ারি। হাটহাজারী উপজেলায় দক্ষিণ-পূর্ব মেখলে তরুণদের একটি সামাজিক সংগঠন বা ক্লাব আছে যার নাম নবতিথি ক্লাব। শীতকাল ব্যাডমিন্টন খেলার সিজন। ১২ তারিখ সন্ধ্যায় তিন ঘণ্টা উপস্থিত থেকে খেলা দেখলাম এবং পুরস্কার বিতরণীতে অংশগ্রহণ করলাম। কনকনে শীতের মধ্যেও চার শতাধিক তরুণ ও প্রবীণ উপস্থিত ছিলেন এবং এটা দেখে আমি আশান্বিত হয়েছি যে, মানুষ এখনো খেলাধুলা পছন্দ করে। ওই ক্লাবটিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অনুসারী আছেন; কিন্তু ক্লাবের কোনো কর্মকাণ্ডে কোনো প্রকার প্রভাব তারা ফেলেন না। স্বাগতিকদের মধ্যে যারা গুরুত্বপূর্ণ তাদের জিজ্ঞেস করলাম, এই নামটা কেন বেছে নিয়েছিলেন? তারা ব্যাখ্যা করেছিলেন- নব মানে নতুন এবং তিথি মানে সময় বা সুযোগ। প্রত্যেক কিশোর বা কৈশোরোত্তীর্ণ তরুণ নিজেকে প্রস্ফুটিত ও বিকশিত করার এবং নিজেকে উপস্থাপন করার সুযোগ খোঁজে। এলাকার কিশোর ও কিশোরোত্তীর্ণ তরুণদের সেই সুযোগ দেয়ার জন্য ১৯৯৬ সালে দক্ষিণ-পূর্ব মেখলে নবতিথি নামের ক্লাবটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। নতুন সুযোগ বলি বা নবতিথি বলি, এরূপ একটি সন্ধিক্ষণ প্রত্যেকের জীবনে আসে এবং সে সুযোগটিকে কাজে লাগানো প্রত্যেকের কর্তব্য। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম ও প্রতীক্ষার পর ঢাকা উত্তর মহানগরের মেয়র নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ২০ দলীয় জোট সেই সুযোগ গ্রহণ করবে, এটাই স্বাভাবিক।
ফৌজদারহাট
নবতিথি বা নতুন সুযোগের প্রসঙ্গ এলো বলেই উল্লেখ করছি আমার জীবনের প্রথম ও দ্বিতীয় সুযোগের কথা। ১৯৫৭ সালে আট বছর বয়সে গ্রাম থেকে এসেছিলাম চট্টগ্রাম বন্দর উত্তর কলোনিতে, বাবার সরকারি বাসায়। ১৯৬২ সালের জুন মাস পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি চট্টগ্রাম বন্দর প্রাইমারি স্কুলে এবং চট্টগ্রাম বন্দর হাইস্কুলে। সেই ১৯৬২ সালের প্রথমার্ধে পরীক্ষা দিয়ে ক্যাডেট কলেজে ঢোকার সুযোগ পেয়েছিলাম। ওই আমলে, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে একমাত্র ক্যাডেট কলেজ ছিল ‘দি ইস্ট পাকিস্তান ক্যাডেট কলেজ’। যার অবস্থান ছিল তৎকালীন চট্টগ্রাম শহর থেকে ১০-১১ মাইল উত্তরে ফৌজদারহাট নামক স্থানে পাহাড়ের পাদদেশে। ওই কলেজটি প্রতিষ্ঠার তারিখ ২৮ এপ্রিল ১৯৫৮। ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আরো তিনটি ক্যাডেট কলেজ স্থাপিত হয়েছিল। ফলে আমাদের কলেজটির নাম পাল্টে করা হয়েছিল ‘ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ’। সেই ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে পুনর্মিলনী হবে ১৮, ১৯ ও ২০ জানুয়ারি ২০১৮। ওই ঐতিহ্যবাহী কলেজের প্রবীণ বা প্রাচীন ছাত্রদের মধ্যে একজন আমি নিজেও। কলেজের প্রতি চট্টগ্রামবাসীর শুভেচ্ছা ও দেশবাসীর শুভেচ্ছা অতীতে যেমন ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
লেখক : মেজর জেনারেল (অব.); চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টিwww.generalibrahim.com
No comments