গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত
দেশের
সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত বা গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষার
সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের
এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষার রোডম্যাপ
তৈরির লক্ষ্যে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং এ কমিটিকে
১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি
কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান যুগান্তরকে জানিয়েছেন, আপাতত
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা শুরু হলেও পরে প্রাইভেট
বিশ্ববিদ্যালয়ও এ কার্যক্রমের অধীনে আসতে পারে। এটি অবশ্যই একটি ভালো
সিদ্ধান্ত। আশা করা হচ্ছে, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী শিক্ষাবর্ষ অর্থাৎ
এপ্রিলে অনুষ্ঠেয় এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা পাবলিক
বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারবে। শিক্ষার্থীদের
ভোগান্তি কমাতে সমন্বিত বা গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা
হলেও, এমনকি খোদ রাষ্ট্রপতি এ ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করা সত্ত্বেও এতদিন তা
বাস্তবায়নে অগ্রগতি লক্ষ করা যায়নি। মূলত বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনাগ্রহের
কারণেই বিষয়টি আটকে ছিল। ধারণা করা হয়, এর পেছনের কারণ হল বিদ্যমান ভর্তি
পরীক্ষা পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বড় অঙ্কের অর্থ আয় হয়। ভর্তি বাণিজ্য ও
কোচিং-গাইড বাণিজ্যের জন্য অনেকেই গুচ্ছ পদ্ধতির বিরোধিতা করেন।
এ
পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হলে এ ধরনের অনৈতিক ব্যবসা নিরুৎসাহিত হবে।
সবচেয়ে বড় কথা, গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও
তাদের অভিভাবকদের দুর্ভোগ লাঘব হবে। উল্লেখ্য, বিদ্যমান পদ্ধতিতে
শিক্ষার্থীদের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদাভাবে ফরম কিনতে হয় এবং
আলাদাভাবে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়। এতে তাদের সময়, পরিশ্রম ও অর্থ ব্যয় বেশি
হয়। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের মনের ওপরও বাড়তি চাপ পড়ে। তারা নিরাপত্তাহীনতায়ও
ভোগে। আর বহিরাগতরা সুবিধা দেয়ার নাম করে ফায়দা লোটে। গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি
পরীক্ষার সবচেয়ে ভালো দিক হল, এতে কোনো শিক্ষার্থী হয়রানির শিকার হবে না।
প্রশ্নপত্র ফাঁস ও ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি বন্ধেও গুচ্ছ পদ্ধতি কার্যকর
ভূমিকা রাখতে পারবে। অর্থাৎ সব বিবেচনায়ই এ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার
সিদ্ধান্তটি ইতিবাচক। এখন এর যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করাটাই বড় বিষয়।
বর্তমানে শুধু মেডিকেল কলেজগুলোতে গুচ্ছভিত্তিক বা সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা
পদ্ধতি চালু আছে। অনেক আগে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির অধীনে কুয়েট,
চুয়েট ও রুয়েটে (সে সময় যথাক্রমে বিআইটি খুলনা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী নামে
এগুলো পরিচিত ছিল) একযোগে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো। সিলেটের
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা
হলেও পরে তা বাতিল হয়ে যায়। আমরা আশা করব, দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে
গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করতে সংশ্লিষ্টরা যথাযথ পদক্ষেপ
নেবেন। পরবর্তী সময়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও এ পথেই এগোতে হবে।
No comments