কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব নিলেন রাহুল গান্ধী
ভারতের
প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ
করেছেন রাহুল গান্ধী। আনুষ্ঠানিকভাবে মা সোনিয়া গান্ধীর কাছ থেকে শনিবার
দায়িত্ব বুঝে নিলেন তিনি। ভারতের রাজধানী নয়াদিলি্লর ২৪ আকবর রোডে কংগ্রেস
পার্টির সদর দফতরে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন
রাহুল। সভাপতির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করে রাহুল
গান্ধী বলেন, 'আমরা ভারতকে একুশ শতকে নিয়ে এসেছি। কিন্তু দেশকে মধ্যযুগে
ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বিজেপি।' সভাপতি হিসেবে বিদায়ী ভাষণে আবেগাপ্লুত হয়ে
পড়েন সোনিয়া গান্ধী। খবর এনডিটিভির। সোনিয়া গান্ধী প্রায় ২০ বছর ধরে ১৩২
বছরের পুরনো এ রাজনৈতিক দলটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন।
নেহেরু-গান্ধী পরিবারের পঞ্চম প্রজন্মের সদস্য ৪৭ বছর বয়সী রাহুল গান্ধী।
এর আগে তাকে একজন 'অনাগ্রহী রাজনীতিক' হিসেবে দেখতেন পর্যবেক্ষকরা। কিন্তু
চলতি গুজরাট বিধানসভার নির্বাচনে দলীয় প্রচারণায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে
তিনি সেই ইমেজ ভেঙে বেরিয়ে আসার চষ্টো করেছেন বলে ধারণা পর্যবেক্ষকদের।
রাহুলের অভিষেক অনুষ্ঠান শুরুর আগে সকাল থেকেই কংগ্রেস কার্যালয়ে উত্সবের
আবহ ছড়িয়ে পড়ে। ড্রামের শব্দের পাশাপাশি লোকনৃত্য শিল্পীরা পতাকা ও
ব্যানার নিয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে মিছিল করে আসা দলীয় কর্মীদের
স্বাগত জানাতে থাকেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে রাহুল
বলেন, বহু ভারতীয়র মতোই আমি একজন আদর্শবাদী। কংগ্রেসপ্রধান হিসেবে দেয়া
প্রথম বক্তৃতায় আক্রমণাত্মক ভাষায় প্রধানমন্ত্রী মোদির সমালোচনা করেন
রাহুল। তিনি বলেন, 'বিদ্বেষের আগুনকে একমাত্র কংগ্রেসই নিভিয়ে ফেলতে পারে।
তারা (বিজেপি) ধ্বংস করে, আমরা সংস্কার করি। তারা জ্বালিয়ে দেয়, আমরা
নিভিয়ে ফেলি। তারা ক্ষুব্ধ হয়, আমরা ভালোবাসি।
আমি আপনাদের বলতে চাই গোটা
কংগ্রেস দল আমার পরিবার।' তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশকে পেছনে নিয়ে
যাচ্ছেন। ভারতকে একুশ শতকে নিয়ে এসেছে কংগ্রেস। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী
আমাদের মধ্যযুগে ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এর আগে নতুন সভাপতি রাহুলকে শুভেচ্ছা
জানান বিদায়ী সভাপতি সোনিয়া গান্ধী। বিদায়ী ভাষণ দেয়ার সময় সোনিয়া
বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। আবেগাপ্লুত সোনিয়া বলেন, 'বিশ বছর আগে এমনই একদিনে
সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছিলাম আমি। আজ কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে আমি শেষ ভাষণ
দিচ্ছি। আপনাদের সামনে এক নতুন যুগ, নতুন নেতৃত্ব অপেক্ষা করছে।' এ
কথাগুলো বলার পর সোনিয়ার কণ্ঠস্বর নিচু হয়ে আসে। এ সময় কিছুক্ষণ নীরব
ছিলেন তিনি। তখনই মঞ্চে মা সোনিয়ার পাশে এসে দাঁড়ান পুত্র রাহুল। মায়ের
কপালে একটি চুমু এঁকে দেন তিনি। সোনিয়া গান্ধী বলেন, 'রাহুল আমার ছেলে,
তার প্রশংসা করা আমার উচিত নয়। আমি শুধু এটাই বলতে চাই যে, সে শৈশব থেকে
সহিংসতার প্রকোপে পড়েছে। রাজনীতিতে যোগ দেয়ার পরে তাকে ব্যক্তিগতভাবে
কঠোর আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে। আমি তাকে এক শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে
উপস্থাপন করেছি। কোটি কোটি দেশবাসী ও যেসব কংগ্রেস কর্মী আমাকে
ভালোবেসেছেন, এতদিন ধরে আমার সঙ্গ দিয়েছেন, তাদের সবাইকে আন্তরিকভাবে
ধন্যবাদ জানাচ্ছি।' গুরুত্বপূর্ণ এ সন্ধিক্ষণে দাঁড়ানো কংগ্রেস নতুন
নেত্বত্বে এগিয়ে যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। ১৯৯৮ সাল থেকে
কংগ্রেসপ্রধানের দায়িত্বে থাকা ৭১ বছর বয়সী সোনিয়া গান্ধী শুক্রবার
রাজনীতি থেকে অবসর নেয়ার কথা বলেন। এনডিটিভিকে এক সাক্ষাত্কারে বলেন, এখনই
অবসরে যাওয়ার সময়। অসুস্থতার কারণে সমপ্রতি দলীয় সমাবেশ ও দলের অন্যান্য
কর্মসূচিতে কমই উপস্থিত হয়েছেন তিনি। কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদ্বীপ
সূর্যেওয়ালা বলেন, 'সোনিয়া দলের সভাপতিত্ব থেকে অবসর নিচ্ছেন, রাজনীতি
থেকে নয়।' সোনিয়া কংগ্রেস দলের পার্লামেন্টারি অংশের নেতৃত্ব দেবেন বলে
ধারণা পর্যবেক্ষক মহলের। তবে সোনিয়া আবারও নির্বাচনে লড়বেন বলে জানিয়েছেন
তার মেয়ে প্রিয়াংকা গান্ধী ভদ্র। তিনি বলেন, 'আমি নই, রায়েরবেরেলি থেকে মা
আবার লড়বেন। আমার দেখা নারীদের মধ্যে মা সবচেয়ে সাহসী।' ২০০৪ সাল থেকে ওই
আসনে জয়ী হয়ে আসছেন সোনিয়া। রাহুল গান্ধী দলীয় সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণ
করায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা মনমোহন সিং বলেন,
'কংগ্রেসের জন্য এটি এক ঐতিহাসিক দিন। রাহুল দেশবাসীর সমস্যা জানেন। আমি
আশা করছি রাহুলের নেতৃত্বে কংগ্রেস এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।' কংগ্রেসের
জ্যেষ্ঠ নেতা গুলাম নবী আজাদ বলেন, 'আমি নিশ্চিত যে তিনি দলীয় সভাপতি
হিসেবে প্রমাণিত হবেন। দেশ যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে তিনি তার মোকাবেলা
করতে সক্ষম হবেন।' কংগ্রেসের মুখপাত্র সূর্যেওয়ালা বলেন, 'রাহুল গান্ধীর
নেতৃত্বে কংগ্রেসকে আবারও রাষ্ট্র নির্মাণের নতুন ভূমিকায় দেখা যাবে।'
No comments