দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানি খাত হচ্ছে ওষুধ by এম এম মাসুদ
দেশের
শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো এখন বিশ্বমানের ওষুধ উৎপাদন করছে। ওষুধ রপ্তানিকারক
দেশ হিসেবে বাংলাদেশ দিন দিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। বর্তমানে প্রধান
রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক। সাম্প্রতিক সময়ে ওষুধ রপ্তানির গতি বাড়ায় দ্বিতীয়
প্রধান রপ্তানি খাত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা
মনে করেন। এছাড়া এক সময় চাহিদার ৭০ শতাংশ ওষুধ বিদেশ থেকে আমদানি হতো। আর
এখন দেশের চাহিদার ৯৮ শতাংশ মিটিয়ে বিশ্বের ১২৭ দেশে বাংলাদেশের প্রস্তুত
ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে।
বিশ্বমানের ওষুধ এত কম দামে আর কোথাও পাওয়া যায় না। এ ছাড়া ওষুধ প্রযুক্তি ও কাঁচামাল সরবরাহকারী দেশগুলোর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরেই প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকার ওষুধের বাজার। আর বছরে প্রায় ১০০০ কোটি টাকার ওষুধ রপ্তানি হয়। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ও বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি (বিএএসএস)-এর প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
ওষুধ ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে দেশের দেড় শতাধিক প্রতিষ্ঠান ৫ হাজার ব্র্যান্ডের ৮ হাজারের বেশি ওষুধ উৎপাদন করছে, যার মধ্যে বড় ১০ কোম্পানি দেশের চাহিদার ৮০ শতাংশ মিটিয়ে থাকে। বড় ২০ কোম্পানি বিবেচনায় নিলে তারা মোট চাহিদার ৯০ শতাংশ সরবরাহ করছে। আর ৪০ কোম্পানি ১৮২টি ব্র্যান্ডের সহস্রাধিক রকমের ওষুধ রপ্তানি করছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ১ কোটি ৫৭ লাখ ডলারের ওষুধ রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ১৫.৬৩ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রপ্তানি হয়েছিল ১ কোটি ৩৬ লাখ ডলারের ওষুধ। আর গত বছর পুরো সময়ে আয় হয়েছে ৮ কোটি ২১ লাখ ডলার বা ৬৫০ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রথম তিন প্রান্তিকে দেশের ৬ কোটি ৯৬ লাখ ডলারের ওষুধ রপ্তানি হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। ২০১১-১২ অর্থবছরে ওষুধ রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৮২ লাখ ডলার। ২০১২-১৩ অর্থবছরে তা ছয় কোটি ডলারে গিয়ে পৌঁছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রায় সাত কোটি ডলারের, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৭ কোটি ২৬ লাখ ডলারের, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ৮ কোটি ২১ লাখ ডলারের ওষুধ বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছে।
উদ্যোক্তারা বলছেন, স্বল্প মূলধন ও ওষুধের গুণগত মান বজায় রাখায় বিদেশি বাজারে বাংলাদেশের ওষুধের চাহিদা বাড়ছে। এ ছাড়া অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের ওষুধের দাম অনেক কম। আগামী ১০ বছরের মধ্যে বিশ্বের ওষুধবাণিজ্যের ১০ শতাংশ দখল করা সম্ভব। এতে ওষুধ রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়াবে ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। একই সঙ্গে এ খাতে ২ লাখেরও বেশি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের ওষুধশিল্প সবদিক দিয়ে পরিপক্বতা অর্জন করেছে। মান বেড়েছে, সরকারের নিয়ন্ত্রণও উন্নত হয়েছে। এখন ওষুধশিল্প উড়াল দেয়ার পর্যায়ে রয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের ১০-১২টি কোম্পানি বিভিন্ন দেশে নিবন্ধন পেয়েছে। বিশ্বে ওষুধের রপ্তানি বাজার ১৭০ বিলিয়ন ডলারের। এর ১০ শতাংশ ধরা গেলে রপ্তানি আয় ১৭ বিলিয়ন ডলার হবে।
সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান আইএমসি ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টর নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টরে অর্থাৎ ওষুধ শিল্পখাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে শতকরা বত্রিশ ভাগ। পৃথিবীর খুব কম দেশেই এটি সম্ভব হয়েছে।
ওষুধশিল্প সমিতির মহাসচিব এসএম শফিউজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানিগুলো আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে উৎকৃষ্টমানের ওষুধ উৎপাদন করে যাচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওষুধ রপ্তানিতে অগ্রগামিতা অর্জনের মাধ্যমে আঞ্চলিক পর্যায়ে ওষুধ রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অন্যতম প্রধান দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, ওষুধ রপ্তানিতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই পোশাক খাতকে ধরতে পারবো। করণে ওষুধ রপ্তানি প্রতি বছরেই বাড়ছে। ফলে আমরা বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানি খাতে পরিণত হতে বেশি লাগবে না বলে আমরা আশা করছি। ২০৩০ সাল নাগাদ ওষুধ রপ্তানিতে বাংলাদেশ এক নম্বর দেশ হতে পারে, এমন সম্ভাবনা আছে। তিনি বলেন, মুন্সীগঞ্জের এপিআই পার্ক পূর্ণাঙ্গ চালু হলে ওষুধশিল্পের কাঁচামালের জন্য আর কারো মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না।
এদিকে সম্প্রতি তুরস্কে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের বিকাশে বিশাল সম্ভাবনা নিয়ে এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। তুরস্কের বাংলাদেশ দূতাবাস এবং বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে বেক্সিমকো ফার্মার সিইও এসএম রাব্বুর রেজা বাংলাদেশের ওষুধের গুণগত ও আন্তর্জাতিক মান, বহির্বিশ্বে এর চাহিদা এবং ওষুধ রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ওষুধের পরিসংখ্যানগত অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টর বাংলাদেশের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল একটি শিল্প খাত এবং ২৫৭টি ওষুধ কোম্পানির উৎপাদিত ওষুধের বর্তমান বাজার মূল্য বার্ষিক ২ বিলিয়নের উপরে।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বাংলাদেশ থেকে ৫৪টি ওষুধ রপ্তানিকারি প্রতিষ্ঠান ১২৭টি দেশে রপ্তানি করে থাকে। ২০১১ সালে রপ্তানিকারী দেশের সংখ্যা ছিল ৪৭টি। এর পর কয়েক বছর কোনো প্রতিষ্ঠান চালু হয়নি। কিন্তু ২০১৫ সালে কোম্পানির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১১৩টিতে। বর্তমানে ১২৭টিতে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে আমেরিকার উত্তর ও দক্ষিণের ২৫টি দেশে। ইউরোপের ২৬টি, অস্ট্রেলিয়ার ৫টি, আফরিকার ৩৪টি ও এশিয়ার ৩৭টি দেশে বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানি হয়।
দেশের শীর্ষস্থানীয় ওষুধ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ২০১৫ সালের জুন মাসে দেশের প্রথম ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি হিসেবে ইউএস এফডিএ কর্তৃক নিরীক্ষিত ও অনুমোদিত হয়। বর্তমানে কোম্পানিটি ৫০টিরও বেশি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে। বেক্সিমকো ফার্মা ইউএস এফডিএ, এজিইএস (ইইউ), টিজিএ অস্ট্রেলিয়া, হেলথ কানাডা, জিসিসি এবং টিএফডিএসহ বিশ্বের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক স্বীকৃত।
অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গেল কয়েক বছরের দেশ থেকে ওষুধ রপ্তানি উল্লেখ্যযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১১ সবমিলিয়ে ওষুধ রপ্তানি হয় ৪২৬ কোটি টাকা। ১২ সালে রপ্তানি হয়েছে ৫৫১ কোটি টাকা। ১৩ সালে ৬১৯ কোটি টাকা। ১৪ সালে ৭৩৩ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে রপ্তানি হয়েছে ৮৩২ কোটি টাকা। সর্বশেষ গত বছর ২০১৬ সাল পর্যন্ত দেশে থেকে ওষুধ রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।
অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, দেশে বিশ্বমানের ওষুধ পরীক্ষাগারের কাজ চলছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা চলছে। এসব কাজ শেষ হলে এ শিল্পের অবস্থান আরও দৃঢ় হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধপ্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, বাংলাদেশের ওষুধশিল্পের বিকাশ খুবই আশাব্যঞ্জক। বছর কয়েক আগেও জীবনরক্ষাকারী ৫০ শতাংশেরও বেশি ওষুধ আমদানি করতে হতো। এখন সেটি অনেক কমে এসেছে।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এখনো দেশের বেশিরভাগ ওষুধের কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। দেশে ওষুধের কাঁচামালের বাজার প্রায় ১২০০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের অগ্রযাত্রার মূল কারণ আমাদের ওষুধ নীতির যথার্থ বাস্তবায়ন। ১৯৮২ সালে এদেশে যে ওষুধ নীতি করা হয় তার সুফল এখন পাওয়া যাচ্ছে। দেশে ওষুধ প্রস্তুতের কাঁচামাল উৎপাদন বাড়াতে পারলে উৎপাদন ব্যয়ও কমবে, ওষুধের দামও মানুষের নাগালের মধ্যে রাখা সম্ভব হবে।
বিজিএমইএ’র তথ্যে দেখা গেছে, বিদায়ী অর্থবছরে ২,৮১৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। তার আগের ২০১৫-১৬ অর্থবছর ২,৮০৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০.১৪ শতাংশ।
বিশ্বমানের ওষুধ এত কম দামে আর কোথাও পাওয়া যায় না। এ ছাড়া ওষুধ প্রযুক্তি ও কাঁচামাল সরবরাহকারী দেশগুলোর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরেই প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকার ওষুধের বাজার। আর বছরে প্রায় ১০০০ কোটি টাকার ওষুধ রপ্তানি হয়। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ও বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি (বিএএসএস)-এর প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
ওষুধ ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে দেশের দেড় শতাধিক প্রতিষ্ঠান ৫ হাজার ব্র্যান্ডের ৮ হাজারের বেশি ওষুধ উৎপাদন করছে, যার মধ্যে বড় ১০ কোম্পানি দেশের চাহিদার ৮০ শতাংশ মিটিয়ে থাকে। বড় ২০ কোম্পানি বিবেচনায় নিলে তারা মোট চাহিদার ৯০ শতাংশ সরবরাহ করছে। আর ৪০ কোম্পানি ১৮২টি ব্র্যান্ডের সহস্রাধিক রকমের ওষুধ রপ্তানি করছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ১ কোটি ৫৭ লাখ ডলারের ওষুধ রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ১৫.৬৩ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রপ্তানি হয়েছিল ১ কোটি ৩৬ লাখ ডলারের ওষুধ। আর গত বছর পুরো সময়ে আয় হয়েছে ৮ কোটি ২১ লাখ ডলার বা ৬৫০ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রথম তিন প্রান্তিকে দেশের ৬ কোটি ৯৬ লাখ ডলারের ওষুধ রপ্তানি হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। ২০১১-১২ অর্থবছরে ওষুধ রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৮২ লাখ ডলার। ২০১২-১৩ অর্থবছরে তা ছয় কোটি ডলারে গিয়ে পৌঁছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রায় সাত কোটি ডলারের, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৭ কোটি ২৬ লাখ ডলারের, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ৮ কোটি ২১ লাখ ডলারের ওষুধ বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছে।
উদ্যোক্তারা বলছেন, স্বল্প মূলধন ও ওষুধের গুণগত মান বজায় রাখায় বিদেশি বাজারে বাংলাদেশের ওষুধের চাহিদা বাড়ছে। এ ছাড়া অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের ওষুধের দাম অনেক কম। আগামী ১০ বছরের মধ্যে বিশ্বের ওষুধবাণিজ্যের ১০ শতাংশ দখল করা সম্ভব। এতে ওষুধ রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়াবে ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। একই সঙ্গে এ খাতে ২ লাখেরও বেশি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের ওষুধশিল্প সবদিক দিয়ে পরিপক্বতা অর্জন করেছে। মান বেড়েছে, সরকারের নিয়ন্ত্রণও উন্নত হয়েছে। এখন ওষুধশিল্প উড়াল দেয়ার পর্যায়ে রয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের ১০-১২টি কোম্পানি বিভিন্ন দেশে নিবন্ধন পেয়েছে। বিশ্বে ওষুধের রপ্তানি বাজার ১৭০ বিলিয়ন ডলারের। এর ১০ শতাংশ ধরা গেলে রপ্তানি আয় ১৭ বিলিয়ন ডলার হবে।
সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান আইএমসি ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টর নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টরে অর্থাৎ ওষুধ শিল্পখাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে শতকরা বত্রিশ ভাগ। পৃথিবীর খুব কম দেশেই এটি সম্ভব হয়েছে।
ওষুধশিল্প সমিতির মহাসচিব এসএম শফিউজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানিগুলো আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে উৎকৃষ্টমানের ওষুধ উৎপাদন করে যাচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওষুধ রপ্তানিতে অগ্রগামিতা অর্জনের মাধ্যমে আঞ্চলিক পর্যায়ে ওষুধ রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অন্যতম প্রধান দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, ওষুধ রপ্তানিতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই পোশাক খাতকে ধরতে পারবো। করণে ওষুধ রপ্তানি প্রতি বছরেই বাড়ছে। ফলে আমরা বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানি খাতে পরিণত হতে বেশি লাগবে না বলে আমরা আশা করছি। ২০৩০ সাল নাগাদ ওষুধ রপ্তানিতে বাংলাদেশ এক নম্বর দেশ হতে পারে, এমন সম্ভাবনা আছে। তিনি বলেন, মুন্সীগঞ্জের এপিআই পার্ক পূর্ণাঙ্গ চালু হলে ওষুধশিল্পের কাঁচামালের জন্য আর কারো মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না।
এদিকে সম্প্রতি তুরস্কে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের বিকাশে বিশাল সম্ভাবনা নিয়ে এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। তুরস্কের বাংলাদেশ দূতাবাস এবং বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে বেক্সিমকো ফার্মার সিইও এসএম রাব্বুর রেজা বাংলাদেশের ওষুধের গুণগত ও আন্তর্জাতিক মান, বহির্বিশ্বে এর চাহিদা এবং ওষুধ রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ওষুধের পরিসংখ্যানগত অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টর বাংলাদেশের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল একটি শিল্প খাত এবং ২৫৭টি ওষুধ কোম্পানির উৎপাদিত ওষুধের বর্তমান বাজার মূল্য বার্ষিক ২ বিলিয়নের উপরে।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বাংলাদেশ থেকে ৫৪টি ওষুধ রপ্তানিকারি প্রতিষ্ঠান ১২৭টি দেশে রপ্তানি করে থাকে। ২০১১ সালে রপ্তানিকারী দেশের সংখ্যা ছিল ৪৭টি। এর পর কয়েক বছর কোনো প্রতিষ্ঠান চালু হয়নি। কিন্তু ২০১৫ সালে কোম্পানির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১১৩টিতে। বর্তমানে ১২৭টিতে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে আমেরিকার উত্তর ও দক্ষিণের ২৫টি দেশে। ইউরোপের ২৬টি, অস্ট্রেলিয়ার ৫টি, আফরিকার ৩৪টি ও এশিয়ার ৩৭টি দেশে বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানি হয়।
দেশের শীর্ষস্থানীয় ওষুধ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ২০১৫ সালের জুন মাসে দেশের প্রথম ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি হিসেবে ইউএস এফডিএ কর্তৃক নিরীক্ষিত ও অনুমোদিত হয়। বর্তমানে কোম্পানিটি ৫০টিরও বেশি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে। বেক্সিমকো ফার্মা ইউএস এফডিএ, এজিইএস (ইইউ), টিজিএ অস্ট্রেলিয়া, হেলথ কানাডা, জিসিসি এবং টিএফডিএসহ বিশ্বের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক স্বীকৃত।
অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গেল কয়েক বছরের দেশ থেকে ওষুধ রপ্তানি উল্লেখ্যযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১১ সবমিলিয়ে ওষুধ রপ্তানি হয় ৪২৬ কোটি টাকা। ১২ সালে রপ্তানি হয়েছে ৫৫১ কোটি টাকা। ১৩ সালে ৬১৯ কোটি টাকা। ১৪ সালে ৭৩৩ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে রপ্তানি হয়েছে ৮৩২ কোটি টাকা। সর্বশেষ গত বছর ২০১৬ সাল পর্যন্ত দেশে থেকে ওষুধ রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।
অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, দেশে বিশ্বমানের ওষুধ পরীক্ষাগারের কাজ চলছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা চলছে। এসব কাজ শেষ হলে এ শিল্পের অবস্থান আরও দৃঢ় হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধপ্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, বাংলাদেশের ওষুধশিল্পের বিকাশ খুবই আশাব্যঞ্জক। বছর কয়েক আগেও জীবনরক্ষাকারী ৫০ শতাংশেরও বেশি ওষুধ আমদানি করতে হতো। এখন সেটি অনেক কমে এসেছে।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এখনো দেশের বেশিরভাগ ওষুধের কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। দেশে ওষুধের কাঁচামালের বাজার প্রায় ১২০০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের অগ্রযাত্রার মূল কারণ আমাদের ওষুধ নীতির যথার্থ বাস্তবায়ন। ১৯৮২ সালে এদেশে যে ওষুধ নীতি করা হয় তার সুফল এখন পাওয়া যাচ্ছে। দেশে ওষুধ প্রস্তুতের কাঁচামাল উৎপাদন বাড়াতে পারলে উৎপাদন ব্যয়ও কমবে, ওষুধের দামও মানুষের নাগালের মধ্যে রাখা সম্ভব হবে।
বিজিএমইএ’র তথ্যে দেখা গেছে, বিদায়ী অর্থবছরে ২,৮১৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। তার আগের ২০১৫-১৬ অর্থবছর ২,৮০৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০.১৪ শতাংশ।
No comments