গুম আর জোর করে গুম এক নয় by মাইকেল সাফি
বাংলাদেশের
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বৃটেন ও যুক্তরাষ্ট্রেও নিরাপত্তা
রক্ষাকারীদের হাতে মানুষ গুম হয়। তিনি বলেন, প্রতি বছর বৃটেনে দুই লাখ ৭৫
হাজার মানুষ নিখোঁজ হন।
বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান হারে গোপন, রাষ্ট্রীয় মদতপুষ্ট অপহরণের বিরুদ্ধে সম্প্রতি সতর্কতা উচ্চারণ করেছে মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপ ও জাতিসংঘ। প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল যখন ক্ষমতায় তখন তাদের বিরুদ্ধে বিরোধী রাজনীতিক ও সমালোচকদের অপহরণের অভিযোগ আছে। ঢাকাভিত্তিক মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপ অধিকার দাবি করেছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ২০০৯ সাল থেকে কমপক্ষে ৪০২ জন মানুষ নিখোঁজ (ডিজঅ্যাপিয়ার) হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পার্লামেন্টে বলেছেন, অবশ্যই নিজের জনসাধারণকে রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব।
কিন্তু বাংলাদেশই একমাত্র দেশ নয়, যেখানে নাগরিকরা মাঝেমধ্যে লাপাত্তা হয়ে যান। ২০০৯ সালের এক পরিসংখ্যান মতে, দু’লাখ ৭৫ হাজার বৃটিশ নাগরিক নিখোঁজ হয়েছেন। এখনো জানা যায়নি তার মধ্যে ২০ হাজার মানুষ কোথায়। যদি আপনি আমেরিকার কথা বলেন, সেখানকার পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রায় ১৬ কোটি মানুষের উন্নয়নশীল দেশ বাংলাদেশ। সে তুলনায় বৃটেনের জনসংখ্যা ৬ কোটি ৫০ লাখ। তাই যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় আমাদের অবস্থা ভালো। যখনই কোনো নিখোঁজের ঘটনা ঘটে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেই।
বৃটেন সম্পর্কে তিনি যে পরিসংখ্যান দিয়েছেন তা দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টে প্রকাশিত হয়েছিল ২০০৯ সালে। এ রিপোর্টে কোনো ইঙ্গিত নেই যে, কোনো একটি নিখোঁজের সঙ্গে বৃটিশ সরকার জড়িত।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক মিনাক্ষী গাঙ্গুলি। তিনি বলেন, নিখোঁজ ব্যক্তি আর জোর করে গুম করে দেয়াকে এক করে দেখছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের আইন জোর করে গুম করে দেয়াকে স্বীকৃতি দেয় না। এ রকম কোনো রীতিও নেই। তবে এখানে কেউ গুম (ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স) হলে তার আত্মীয়-স্বজনকে শুধু নিখোঁজ (মিসিং) দেখিয়ে অভিযোগ দায়ের করতে দেয়া হয়। এমনকি যখন পরিবারের সদস্যরা বলেন যে, তাদের নিকটজনকে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা তুলে নিয়ে গেছেন, তারা এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করলেও তাদের অভিযোগ নেয়া হয় না।
পরে যখন অপহৃত ব্যক্তিকে নিরাপত্তা হেফাজতে দেখানো হয় তখনো তাদেরকে অপহরণের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ সরকার।
এ মাসের শুরুতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, ব্যক্তিগত কারণে অথবা সরকারকে বিব্রত করতে লোকজন গুমের ভুয়া অভিযোগ করে। অনেক মানুষ নিখোঁজ হয়ে যান। কারণ, তারা ঋণ শোধ করতে পারেন না। আবার কেউ কেউ নিখোঁজ হয়ে যান সামাজিক কারণে। অনেকে জানে তারা গুরুতর অপরাধ করেছে, আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের লোকজন তাদের খুঁজছে- এমন ব্যক্তিরা মাঝে মাঝে নিখোঁজ হয়ে যান।
তবে সুপরিচিত ব্যক্তিদের মধ্যে সর্বশেষ নিখোঁজ হয়েছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোবাশ্বের হাসান। শীর্ষ স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জার্নালে সন্ত্রাস নিয়ে তার অনেক গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে।
মোবাশ্বের হাসানের পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, তারা তার কথা শুনতে পেয়েছেন সর্বশেষ ৭ই নভেম্বর। তখন তিনি ঢাকায় জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিটিং করছিলেন। তারপর থেকে আর তার সঙ্গে কথা বলতে পারেন নি তারা। তার বন্ধুরা ভারতীয় মিডিয়াকে বলেছেন, তারা সন্দেহ করেন মোবাশ্বের হাসানকে ধরে নিয়েছে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এ অভিযোগ অস্বীকার করছে কর্তৃপক্ষ।
ফরহাদ মজহার একজন কলামনিস্ট ও কবি। এ বছরের জুলাই মাসে নিখোঁজ হওয়ার ১২ ঘণ্টারও পরে তার দেখা মেলে। তিনি অভিযোগ করেছেন, তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল অস্ত্রধারী একটি গ্রুপ। কিন্তু তার অভিযোগে সন্দেহ প্রকাশ করেছে পুলিশ। এ মাসের শুরুর দিকে তারা বলেছে, মিথ্যা বক্তব্য দেয়ার জন্য তার বিরুদ্ধে তারা মামলা করবে।
বাংলাদেশে বিশেষ আধাসামরিক বাহিনীর অভিজাত ইউনিট র্যাব। বেশির ভাগ গুমে তারা জড়িত বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো। এপ্রিলে সুইডিশ ন্যাশনাল রেডিও একটি গোপন রেকর্র্ডিং প্রচার করে। এতে তারা বলে, একজন র্যাব কর্মকর্তা বেশ কিছু খুনের কথা স্বীকার করেছেন।
২০১৪ সালে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নিম্ন পর্যায়ের এক নেতার নির্দেশে জোরপূর্বক গুম ও হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে জানুয়ারিতে এ বাহিনীর ২৬ জনের একটি গ্রুপ থেকে সাবেক ১৫ জন সদস্যকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়া হয়।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জুলাই মাসের রিপোর্ট বলছে, ২০১৬ সালে গোপনে আটক করা হয় ৯০ জনকে। কিন্তু তার মধ্যে ২১ জনকে পরে পাওয়া গেছে মৃত অবস্থায়। কমপক্ষে ৯ জন রয়েছেন নিখোঁজ। অধিকার বলছে, এ বছর এখন পর্যন্ত প্রায় ৭৪ জন গুম হয়েছেন। এ অভিযোগ নিশ্চিত করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
ফেব্রুয়ারিতে জোরপূর্বক বা স্বেচ্ছায় গুম বিষয় নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ নিজের নাগরিকদের অপহরণ ও গোপনে আটক রাখা বন্ধ করতে আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি।
বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান একেএম শহিদুল হক এ মাসের শুরুর দিকে বলেছেন, গোপনে অপহরণ হলো দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির একটি পুরোনো রীতি। বৃটিশ ঔপনিবেশিকতার যুগ থেকেই জোরপূর্বক গুমের ঘটনা ঘটে আসছে।
এ বিষয়ে শেখ হাসিনার অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল তাদের মন্তব্যের জন্য।
(অনলাইন গার্ডিয়ানে প্রকাশিত লেখার অনুবাদ)
বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান হারে গোপন, রাষ্ট্রীয় মদতপুষ্ট অপহরণের বিরুদ্ধে সম্প্রতি সতর্কতা উচ্চারণ করেছে মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপ ও জাতিসংঘ। প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল যখন ক্ষমতায় তখন তাদের বিরুদ্ধে বিরোধী রাজনীতিক ও সমালোচকদের অপহরণের অভিযোগ আছে। ঢাকাভিত্তিক মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপ অধিকার দাবি করেছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ২০০৯ সাল থেকে কমপক্ষে ৪০২ জন মানুষ নিখোঁজ (ডিজঅ্যাপিয়ার) হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পার্লামেন্টে বলেছেন, অবশ্যই নিজের জনসাধারণকে রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব।
কিন্তু বাংলাদেশই একমাত্র দেশ নয়, যেখানে নাগরিকরা মাঝেমধ্যে লাপাত্তা হয়ে যান। ২০০৯ সালের এক পরিসংখ্যান মতে, দু’লাখ ৭৫ হাজার বৃটিশ নাগরিক নিখোঁজ হয়েছেন। এখনো জানা যায়নি তার মধ্যে ২০ হাজার মানুষ কোথায়। যদি আপনি আমেরিকার কথা বলেন, সেখানকার পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রায় ১৬ কোটি মানুষের উন্নয়নশীল দেশ বাংলাদেশ। সে তুলনায় বৃটেনের জনসংখ্যা ৬ কোটি ৫০ লাখ। তাই যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় আমাদের অবস্থা ভালো। যখনই কোনো নিখোঁজের ঘটনা ঘটে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেই।
বৃটেন সম্পর্কে তিনি যে পরিসংখ্যান দিয়েছেন তা দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টে প্রকাশিত হয়েছিল ২০০৯ সালে। এ রিপোর্টে কোনো ইঙ্গিত নেই যে, কোনো একটি নিখোঁজের সঙ্গে বৃটিশ সরকার জড়িত।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক মিনাক্ষী গাঙ্গুলি। তিনি বলেন, নিখোঁজ ব্যক্তি আর জোর করে গুম করে দেয়াকে এক করে দেখছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের আইন জোর করে গুম করে দেয়াকে স্বীকৃতি দেয় না। এ রকম কোনো রীতিও নেই। তবে এখানে কেউ গুম (ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স) হলে তার আত্মীয়-স্বজনকে শুধু নিখোঁজ (মিসিং) দেখিয়ে অভিযোগ দায়ের করতে দেয়া হয়। এমনকি যখন পরিবারের সদস্যরা বলেন যে, তাদের নিকটজনকে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা তুলে নিয়ে গেছেন, তারা এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করলেও তাদের অভিযোগ নেয়া হয় না।
পরে যখন অপহৃত ব্যক্তিকে নিরাপত্তা হেফাজতে দেখানো হয় তখনো তাদেরকে অপহরণের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ সরকার।
এ মাসের শুরুতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, ব্যক্তিগত কারণে অথবা সরকারকে বিব্রত করতে লোকজন গুমের ভুয়া অভিযোগ করে। অনেক মানুষ নিখোঁজ হয়ে যান। কারণ, তারা ঋণ শোধ করতে পারেন না। আবার কেউ কেউ নিখোঁজ হয়ে যান সামাজিক কারণে। অনেকে জানে তারা গুরুতর অপরাধ করেছে, আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের লোকজন তাদের খুঁজছে- এমন ব্যক্তিরা মাঝে মাঝে নিখোঁজ হয়ে যান।
তবে সুপরিচিত ব্যক্তিদের মধ্যে সর্বশেষ নিখোঁজ হয়েছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোবাশ্বের হাসান। শীর্ষ স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জার্নালে সন্ত্রাস নিয়ে তার অনেক গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে।
মোবাশ্বের হাসানের পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, তারা তার কথা শুনতে পেয়েছেন সর্বশেষ ৭ই নভেম্বর। তখন তিনি ঢাকায় জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিটিং করছিলেন। তারপর থেকে আর তার সঙ্গে কথা বলতে পারেন নি তারা। তার বন্ধুরা ভারতীয় মিডিয়াকে বলেছেন, তারা সন্দেহ করেন মোবাশ্বের হাসানকে ধরে নিয়েছে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এ অভিযোগ অস্বীকার করছে কর্তৃপক্ষ।
ফরহাদ মজহার একজন কলামনিস্ট ও কবি। এ বছরের জুলাই মাসে নিখোঁজ হওয়ার ১২ ঘণ্টারও পরে তার দেখা মেলে। তিনি অভিযোগ করেছেন, তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল অস্ত্রধারী একটি গ্রুপ। কিন্তু তার অভিযোগে সন্দেহ প্রকাশ করেছে পুলিশ। এ মাসের শুরুর দিকে তারা বলেছে, মিথ্যা বক্তব্য দেয়ার জন্য তার বিরুদ্ধে তারা মামলা করবে।
বাংলাদেশে বিশেষ আধাসামরিক বাহিনীর অভিজাত ইউনিট র্যাব। বেশির ভাগ গুমে তারা জড়িত বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো। এপ্রিলে সুইডিশ ন্যাশনাল রেডিও একটি গোপন রেকর্র্ডিং প্রচার করে। এতে তারা বলে, একজন র্যাব কর্মকর্তা বেশ কিছু খুনের কথা স্বীকার করেছেন।
২০১৪ সালে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নিম্ন পর্যায়ের এক নেতার নির্দেশে জোরপূর্বক গুম ও হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে জানুয়ারিতে এ বাহিনীর ২৬ জনের একটি গ্রুপ থেকে সাবেক ১৫ জন সদস্যকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়া হয়।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জুলাই মাসের রিপোর্ট বলছে, ২০১৬ সালে গোপনে আটক করা হয় ৯০ জনকে। কিন্তু তার মধ্যে ২১ জনকে পরে পাওয়া গেছে মৃত অবস্থায়। কমপক্ষে ৯ জন রয়েছেন নিখোঁজ। অধিকার বলছে, এ বছর এখন পর্যন্ত প্রায় ৭৪ জন গুম হয়েছেন। এ অভিযোগ নিশ্চিত করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
ফেব্রুয়ারিতে জোরপূর্বক বা স্বেচ্ছায় গুম বিষয় নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ নিজের নাগরিকদের অপহরণ ও গোপনে আটক রাখা বন্ধ করতে আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি।
বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান একেএম শহিদুল হক এ মাসের শুরুর দিকে বলেছেন, গোপনে অপহরণ হলো দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির একটি পুরোনো রীতি। বৃটিশ ঔপনিবেশিকতার যুগ থেকেই জোরপূর্বক গুমের ঘটনা ঘটে আসছে।
এ বিষয়ে শেখ হাসিনার অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল তাদের মন্তব্যের জন্য।
(অনলাইন গার্ডিয়ানে প্রকাশিত লেখার অনুবাদ)
No comments