তুরস্কের গণভোটে এরদোগানের জয়
তুরস্কের ঐতিহাসিক গণভোটে জনগণ প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগানের পক্ষেই রায় দিয়েছেন। রোববারের নির্বাচনে এরদোগানের ক্ষমতা বৃদ্ধির পক্ষে বেশিরভাগ ভোট পড়েছে। ফলে সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বাদ দিয়ে দেশটি প্রেসিডেন্ট শাসিত ব্যবস্থায় ফিরছে। গণভোটের এ ফলে দেশটিতে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদলু এজেন্সি জানায়, ৯৮ ভাগের বেশি ভোট গণনার পর দেখা যায় যে, সরকারের প্রস্তাবিত সংবিধান পরিবর্তন তথা ‘হ্যাঁ’ এর পক্ষে প্রায় ৫১.৩৬ ভাগ ভোট পড়েছে। অন্যদিকে না ভোট পড়েছে ৪৮.৬৪ ভাগ। নির্বাচনের এ ফল প্রত্যাশিতই ছিল। ২০০৩ সাল থেকে দল ক্ষমতায় আসার পর এরদোগান ১১টি নির্বাচনে- পাঁচটি সংসদ নির্বাচন, দুটি গণভোট, তিনটি স্থানীয় নির্বাচন ও একটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াই করেছেন এবং প্রতিটিতেই জয়ী হয়েছেন। মঞ্চে তিনি অতুলনীয়, তার বাগ্মিতার কৌশলও প্রায় অনন্য। রোববারের নির্বাচন ছিল এরদোগানের সামনে দ্বাদশ চ্যালেঞ্জ। তিনি সেটিতে জয়ী হয়েছেন।
হ্যাঁ ভোট জয়ী হওয়ায় তুরস্কের বর্তমান সংবিধানে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হবে। এর ফলে প্রেসিডেন্ট এরদোগান প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী হবেন। ২০২৯ সাল পর্যন্ত দেশটির ক্ষমতায় থাকতে পারবেন তিনি। ফলে মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের পর এরদোগানই হতে যাচ্ছেন তুরস্কের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও প্রভাবশালী নেতা। দেশজুড়ে ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৪০টি ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হয়। ভোটার ছিল ৫ কোটি ৫০ লাখ। ইস্তাম্বুলের একটি কেন্দ্রে ভোট দেয়ার পর সাংবাদিকদের এরদোগান বলেন, 'জনগণের গণতান্ত্রিক জ্ঞানের প্রতি আমার আস্থা আছে। আশা করি জনগণ দ্রুত উন্নতির পক্ষে রায় দেবেন। আমাদের দ্রুত প্রবৃদ্ধি ও পদক্ষেপ দরকার।' এ সময় তার স্ত্রী এবং নাতিরা তার সঙ্গে ছিলেন। স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে বিকাল ৫টায় শেষ হয়। দেশটির বহু কারাবন্দিও ভোট দিয়েছেন। কারাগারে স্থাপিত ৪৬৩টি বুথে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। ৭৮ হাজার ৮৯৪ কারাবন্দি ভোট দেয়ার যোগ্য ছিলেন। তবে যেসব অপরাধী ইচ্ছাকৃত অপরাধে দণ্ডিত হয়েছেন তারা এ সুযোগ পাননি। প্রবাসী নাগরিকদের ভোট গ্রহণ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। ভোটের আগের দিন শনিবার রাতে দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির জেলা পর্যায়ের এক নেতার গাড়িতে হামলা চালায় কুর্দি বিদ্রোহীরা। এতে ওই নেতার এক দেহরক্ষী নিহত ও আরেক রক্ষী আহত হয়েছেন বলে জানায় নিরাপত্তা বাহিনী। একটি ভোট কেন্দ্রের বাইরে সংঘাতে তিনজন নিহত হয়েছেন। তবে রাজনৈতিক বিরোধের জেরে নাকি জমিজমা নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তা স্পষ্ট নয়। গণভোটের রায়ের ফলে সংবিধান অনুমোদনের প্রস্তাব পাস হলে দেশটিতে চালু হবে পূর্ণ প্রেসিডেন্টশাসিত সরকার ব্যবস্থা। এতে নির্বাহী ক্ষমতার একচ্ছত্র মালিক হবেন প্রেসিডেন্ট। থাকবে না প্রধানমন্ত্রীর পদ। তবে এক বা অধিক ভাইস প্রেসিডেন্টের পদ তৈরি করা হবে।
প্রেসিডেন্ট মন্ত্রীদের নিয়োগ, বাজেট তৈরি, সিনিয়র বিচারপতিদের নিয়োগ দেবেন। এছাড়া ডিক্রি জারি করে কিছু বিষয়ে আইনও করতে পারবেন তিনি। তিনি একাই জরুরি অবস্থা জারি এবং পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে পারবেন। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠদের ভোটে এমপিরা প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবেন। এমপিদের সংখ্যা ৫৫০ থেকে বাড়িয়ে ৬০০ করা হবে। প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন একই দিনে হবে। প্রেসিডেন্ট দুই মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। এ গণভোটকে কেন্দ্র করে দেশটির মানুষ দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এরদোগান সমর্থকরা বলছেন, চলতি সংবিধান আরও উন্নত করার জন্য এ পরিবর্তন জরুরি। অপরদিকে বিরোধীরা বলছে, এ পদক্ষেপ দেশকে স্বৈরতন্ত্রের দিকে নিয়ে যাবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘হ্যাঁ’ জয়ী হওয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইইউয়ের সঙ্গে এক চুক্তির পর সিরিয়া ও ইরাক থেকে ইউরোপ অভিমুখী অভিবাসনপ্রত্যাশীদের স্রোতের লাগাম টেনে ধরে তুরস্ক। সম্প্রতি গণভোটের প্রচারণা নিয়ে ইউরোপের কয়েকটি দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক নাজুক হওয়ার পর ওই চুক্তি পুনর্বিবেচনার হুমকি দেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান। ধারণা করা হচ্ছে, গণভোটে জয়ী হোয়ার ফলে তিনি ওই হুমকি বাস্তবায়ন করতে পারেন।
No comments