আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ির চারপাশে সাংসদের দেয়াল
খুলনার পাইকগাছা উপজেলায় বিরোধপূর্ণ ৫০ শতক জমির চারপাশে উঁচু দেয়াল তুলেছেন স্থানীয় সাংসদ নূরুল হক। তাতে ওই দেয়ালের ভেতরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে সেখানে বসবাসকারী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা আবদুল আজিজ গোলদারের পরিবার। তারা এখন মই লাগিয়ে দেয়ালের ওপর দিয়ে এবং গর্ত খুঁড়ে দেয়ালের নিচ দিয়ে চলাচল করছে। পাইকগাছা পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সরল গ্রামের এই ঘটনা স্থানীয় প্রশাসন, থানা-পুলিশ সবাই জানলেও কোনো সুরাহা হচ্ছে না। অবরুদ্ধ আবদুল আজিজ গোলদারের অভিযোগ, বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করতেই এক বছরের বেশি সময় ধরে সাংসদ তাঁদের দেয়ালবন্দী করে রেখেছেন। সাংসদ সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, আজিজের বাড়ির চারপাশে ১০ ফুট উঁচু দেয়াল। দক্ষিণ পাশ দিয়ে একটি প্রবেশপথ আছে। সেখানে বড় লোহার ফটক রাখা। আবদুল আজিজ জানান, দেয়াল নির্মাণের পর সাংসদ এই দিক দিয়ে লোহার ফটক লাগিয়ে বন্ধ করে দিচ্ছিলেন। প্রশাসনের কাছে আবেদন করার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ওই লোহার দরজা আর লাগাতে দেয়নি। তবে আজিজের বাড়ির ভেতরে একটি টিনের ঘর তৈরি করেছেন সাংসদ। সেখানে একটি পরিবারকে থাকতে দিয়েছেন। এই পথ এখন ব্যবহার করে ওই পরিবার। আজিজের দাবি, এই পথ ব্যবহার করতে গেলে ওই পরিবারের লোকজন তাঁদের বাধা দেন, গালিগালাজ করেন। এ জন্য তাঁরা সুড়ঙ্গ পথে অথবা মই বেয়ে চলাচল করেন। আজিজ গোলদার প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ওই জমিতে তাঁরা ৪০ থেকে ৫০ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। জমির খাজনাও নিয়মিত পরিশোধ করছেন। কিন্তু গত বছরের জানুয়ারির প্রথম দিকে ওই জমি কিনেছেন বলে দাবি করেন সাংসদ। এ সময় গ্রামের শেখ আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে দেয়াল তোলার সরঞ্জামাদি আনা হয়। এতে বাধা দিলে তাঁদের পরিবারের সদস্যসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে শেখ আলাউদ্দিন বাদী হয়ে পাইকগাছা থানায় মামলা করেন। তখন গ্রেপ্তার এড়াতে তাঁরা পালিয়ে বেড়ান। এই সুযোগে সাংসদ ওই দেয়াল নির্মাণ করেন। আজিজের ছোট ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, এ জমি তাঁর বাপ-দাদার সম্পত্তি। এ নিয়ে তাঁরা পাইকগাছা থানায় দুটি মামলা করেছেন। মামলায় সাংসদের ছেলে শেখ মনিরুল ইসলামসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ অস্বীকার করে খুলনা-৬ আসনের সাংসদ নূরুল হক বলেছেন, ওই জমির প্রকৃত মালিকের কাছ থেকে তিনি পাওয়ার অব অ্যাটর্নি (আমমোক্তারনামা) করে জায়গা দখল নিয়েছেন। দেয়াল তুললেও সামনে ফটক খোলা রেখেছেন। কিন্তু আজিজের পরিবারের লোকজন নাটক করছেন। তাঁরা ওই ফটক ব্যবহার করছেন না। সাংসদ দাবি করেন, আজিজ গোলদার সেখানে অবৈধভাবে বসবাস করছেন। সামনে নির্বাচন, এ কারণে একটি পক্ষ আজিজকে প্ররোচনা দিচ্ছে।
সাংসদ নূরুল হক যাঁদের কাছ থেকে জমির স্বত্ব নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন, তাঁরা হলেন ঠাকুর দাস হালদার ও তাঁর ছোট ভাই অজিত হালদার। জানতে চাইলে ঠাকুর দাস হালদার বলেন, ৫০ শতক জমির মালিক তাঁর বাবা অমূল্য হালদার। জমিতে তাঁদের গোলপাতার একটি ঘর ছিল। ২০০১ সালের দিকে কে বা কারা ঘরটি আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এর আগে ১৯৯৩ সালের দিকে তাঁরা নূরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে জায়গাটি বর্গা দেন। পরে নূরুল ইসলামের মামাতো ভাই আজিজ ওই জমিতে ঘর তুলে বসবাস শুরু করেন। এরপর তাঁরা আর ওই জমির দখল বুঝে পাননি। এ কারণে নামমাত্র মূল্যে জমির স্বত্ব সাংসদ নূরুল হকের বড় ছেলে শেখ মনিরুল ইসলামকে দেন। জমির সব কাগজপত্র তাঁদের কাছে আছে বলেও দাবি করেন ঠাকুর দাস। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এস এম তৈয়বুর রহমান বলেন, এই জমির বিষয়ে উভয় পক্ষের আইনজীবীদের নিয়ে একাধিকবার সালিস হয়েছে। কোনো সুরাহা হয়নি। পৌর মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘ওই পরিবারকে দেয়াল দিয়ে অবরুদ্ধ করার বিষয়ে আমাকে কেউ কিছু জানায়নি।’ পাইকগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মারুফ আহম্মদ বলেন, জমি নিয়ে পাল্টাপাল্টি মামলা রয়েছে। তদন্ত চলছে। কিছুদিনের মধ্যেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হবে। বাড়ির চারপাশে দেয়াল দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আজিজ এ ব্যাপারে থানায় কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
No comments