সিটি করপোরেশনের কার্যালয়ের সামনের ফুটপাতই দখলে
ফুটপাতের অবৈধ দোকান উচ্ছেদের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। কিন্তু ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আঞ্চলিক কার্যালয়-৪-এর সামনের এবং আশপাশের ফুটপাতে শতাধিক দোকান গড়ে উঠেছে। স্থানীয় কাউন্সিলরের লোকজন এসব দোকান থেকে নিয়মিত টাকা নেন বলে দোকানদারেরা অভিযোগ করেছেন।
সড়ক ও ফুটপাত থেকে অবৈধ দখল সরিয়ে নিতে একাধিকবার নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছিলেন। ডিএনসিসির পাঁচটি অঞ্চলের কর্মকর্তারা মাঝেমধ্যেই অবৈধ হকার উচ্ছেদে এলাকাভিত্তিক অভিযান চালান বটে, কিন্তু তাতে অবস্থার বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। গতকাল শুক্রবার দেখা যায়, মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয়ের মূল ফটকের সামনের দুই পাশে গড়ে উঠেছে অনেক অবৈধ দোকান। পানিনিষ্কাশনের নালার ওপরে বাঁশের মাচা দিয়ে বানানো এসব দোকানে বিক্রি হচ্ছে প্যান্ট, শার্ট, জুতা। দোকানিদের ফেলা পলিথিন ও ময়লা-আবর্জনায় নালা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্য দিয়ে নাক চেপে, মুখ ঢেকে চলাচল করছেন সাধারণ পথচারীরা। ফুটপাত দখল হওয়ায় কেউ কেউ মূল সড়ক দিয়ে যাতায়াত করছেন। ব্যস্ত সড়কে যানবাহনের পাশ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলায় যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। এই পথে নিয়মিত চলাচলকারী আবদুল মান্নান বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত করার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। তাদের অফিসের আশপাশের ফুটপাতই দখলমুক্ত রাখতে পারে না, পুরো ঢাকা দখলমুক্ত করবে কীভাবে। সিটি করপোরেশনের লোকজন না চাইলে তো এভাবে দোকান বসতে পারার কথা না। ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয়সংলগ্ন মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউট হয়ে হোপ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল পর্যন্ত মূল সড়কের ফুটপাত দখল করেও গড়ে উঠেছে অসংখ্য দোকান। এসব দোকানের কারণে স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের চলাচলে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। অবৈধ হকারদের দখলে থাকা ফুটপাত দেখে মনে হয় মার্কেট। এই এলাকায় আছে বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
এভাবে ফুটপাতে দোকানপাট বসায় বিরক্ত শিক্ষার্থীরা। গত বছর ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয়ে মেয়রের সঙ্গে মতবিনিময়ে একাধিক শিক্ষার্থী ফুটপাতের এসব দোকানপাটের কারণে তাদের চলাচলে সমস্যার কথা জানায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্তত পাঁচজন দোকানদার বলেন, মেয়র আনিসুল হকের মিরপুরে আসার তারিখ নির্দিষ্ট থাকলে ডিএনসিসির কর্মচারীরা ওই দিন সকালে দোকান খুলতে মানা করেন। পরের দিন থেকেই আবার দোকান বসে যায়। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর থেকে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নাম বলে টাকা তোলা হয়। এ বিষয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী জহিরুল ইসলাম বলেন, মিরপুর ১০ নম্বর থেকে মূল সড়কের ফুটপাত দখল করে যেসব দোকান বসেছে, সেগুলো কয়েক দিন পরপর উচ্ছেদ করা হয়। তুলে দেওয়ার কয়েক দিন পরই দখলকারীরা আবার চলে আসে। তবে হোপ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সামনে লোকজনের চলাচলে বাধা হয় না—এমনভাবে শতাধিক হকারকে পরীক্ষামূলকভাবে বসতে দিয়েছে সিটি করপোরেশন। ডিএনসিসির মেয়র সড়ক ও ফুটপাত থেকে অবৈধ দখল সরিয়ে নিতে একাধিকবার নির্দেশ দিলেও কাজ হয়নি। হকারমুক্ত করতে ব্যর্থ হয়ে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট দিনে ও স্থানে হলিডে মার্কেট চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। তবে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ হলিডে মার্কেট বসানোর জায়গা এখনো নির্ধারণ করতে পারেনি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
No comments