ফকির আলমগীরের জন্মদিনে
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মূল মিলনায়তনের সামনের দেয়ালে সাঁটানো অনেক ছবি। কিছু সাদাকালো, কিছু রঙিন। সেখানে ঝাঁকড়া চুলের এক যুবকের ছবি। তাঁর সামনে মাইক্রোফোন। তিনি একুশে পদকপ্রাপ্ত গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর। বাংলাদেশের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে সরব হয়ে ওঠে তাঁর সংগীত। গতকাল উদ্যাপন করা হলো তাঁর ৬৭তম জন্মবার্ষিকী। জাতীয় জাদুঘরের কর্মসূচির ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে ছিল এই আয়োজন। জাদুঘরের মূল মিলনায়তনে প্রিয় শিল্পীর গান শুনতে কানায় কানায় পূর্ণ দর্শক-শ্রোতায়। দুই পর্বের অনুষ্ঠানে ছিল আলোচনা ও গণসংগীতের আসর। অনুভূতি প্রকাশ করার সময় জানালেন, বক্তব্যে একটু গলাটার মহড়া করে নিচ্ছেন। কিছুক্ষণ পর তো গাইতে হবে তাঁকে। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ভরাট কণ্ঠের অধিকারী এই শিল্পী গান দিয়ে দেশের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। গণসংগীতের কথা উঠে এলে তাঁর নামই ভেসে ওঠে। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মুহাম্মদ সামাদ, অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান প্রমুখ। অনুভূতি জানান শিল্পীপত্নী সুরাইয়া আলমগীর। ফকির আলমগীরের উদ্দেশে পঠিত হয় অভিজ্ঞানপত্র। স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় জাদুঘরের সচিব শওকত নবী।
ধন্যবাদ জানান আজিজুর রহমান। নিজের জন্মদিনে অনুভূতি জানাতে গিয়ে ফকির আলমগীর বললেন গ্রামের কথা। গ্রামই তাঁর কাছে প্রিয়। আগামী জন্মদিনগুলো নগরে নয়, গ্রামেই কুমার নদের পাড়ে উদ্যাপন করতে চান তিনি। অনুষ্ঠানে গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের শিল্পীরা পরিবেশন করেন জাতীয় সংগীত এবং উদ্বোধনী সংগীত ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’। এরপর ‘আলো আমার, আলো ওগো, আলোয় ভুবন-ভরা’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ফকির আলমগীর গণসংগীত পরিবেশন করেন। তাঁর গানগুলোর মধ্যে ছিল দেশের গান, মাইজভান্ডারি, কীর্তন ও মুকুন্দ দাসের গান। গেয়ে শোনান ‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা’, ‘ভয় কি মরণে’, ‘মুজিব আমার স্বপ্ন সাহস’ ইত্যাদি গান। অনুষ্ঠানে তাঁর জীবন ও কাজ নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। জাতীয় জাদুঘরের লবিতে ছিল দেড় শতাধিক আলোকচিত্র প্রদর্শনী। তাঁর জীবন তুলে ধরা হয়েছে সেখানে। ফকির আলমগীর ১৯৫০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার কালামৃধা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। গণসংগীতশিল্পী হিসেবে ষাটের দশকে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে একজন শব্দসৈনিক হিসেবে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে সংগীত পরিবেশন করে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। সংগীতের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ফকির আলমগীর পেয়েছেন একুশে পদক।
No comments