যাত্রাবাড়ীতে জুতার কারখানা ভস্মীভূত
যাত্রাবাড়ীর সামাদ নগরে ‘ক্ল্যাসিক শু-সোলস’ নামের একটি জুতার কারখানা আগুনে পুড়ে গেছে। গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে কারখানাটিতে আগুন লাগে। পরে এই আগুন পাশের আরেকটি কারখানাতেও ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যা পর্যন্ত আগুন পুরোপুরি নেভেনি। আগুনে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিস বলছে, কারখানাটি স্থাপনে তাদের অনুমোদন নেওয়া হয়নি।
কারখানাটিতে দাহ্য পদার্থ থাকলেও নিজস্ব কোনো অগ্নিনির্বাপণ-ব্যবস্থা ছিল না। তাই দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, সামাদ নগরে প্রায় সাত-আট বছর ধরে ‘ক্ল্যাসিক শু-সোলস’ কারখানাটি চলছে। এতে মূলত জুতার সোল তৈরি করা হয়। টিনের ছাউনির আধা পাকা কারখানাটিতে প্রায় ২৫০ জন শ্রমিক দুই পালায় কাজ করেন। গতকাল সকালে কারখানার উত্তর-পশ্চিম কোণ থেকে কালো ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। এর প্রায় ২০ মিনিট পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন। রাজিনা বেগম নামের কারখানার এক শ্রমিক বলেন, প্রায় এক মাস ধরে তিনি কারখানাটিতে কাজ করেন। গতকাল সকাল আটটায় তিনি কারখানায় আসেন। ১১টার দিকে সবাই আগুন আগুন বলে চিৎকার শুরু করলে কারখানায় ঢোকার মূল প্রবেশপথ দিয়ে তিনি বের হয়ে আসেন। কীভাবে আগুন লেগেছে, তিনি জানেন না। আনোয়ার হোসেন নামের আরেক শ্রমিক বলেন, সকাল আটটা থেকে রাত আটটা এবং রাত আটটা থেকে সকাল আটটা এই দুই পালায় কারখানায় কাজ হয়। দিনের পালায় অন্তত ১০০ শ্রমিক কাজ করছিলেন। আগুন লাগার পর সবাই দ্রুত কারখানা থেকে বের হয়ে আসেন। কারও আটকা পড়ার খবর তিনি পাননি। তিনি বলেন, কারখানাটিতে মোট ১২টি মেশিনে কাজ করা হয়। আটটিতে জুতার সোল তৈরির ছাঁচ তৈরি করা হয় ও বাকি চারটিতে সোল তৈরি করা হয়। গত শনিবার সোল তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জামসহ কয়েক লাখ টাকার মালামাল কারখানায় নিয়ে আসা হয়েছিল। আগুনে সব পুড়ে গেছে বলে তিনি জানান। আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে আনোয়ার বলেন, কারখানার ভেতরে মালামাল রাখার জন্য দ্বিতল একটি টিনের স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছিল। কয়েক দিন ধরে সেখানে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করা হচ্ছিল। গতকাল সকালে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করার সময় স্ফুলিঙ্গ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। তবে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগুনের সূত্রপাত ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। গতকাল দুপুরে ওই এলাকায় গিয়ে কারখানা ও তার পাশের আরেকটি কারখানা থেকে কালো ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কারখানার দেয়ালের কিছু অংশ ভেঙে আগুন নেভানোর কাজ করছিলেন।
জাহাঙ্গীর নামের স্থানীয় এক যুবক বলেন, ক্ল্যাসিক কারখানায় আগুন লাগার পর আগুন পাশের নাবিল নামের আরেকটি জুতা তৈরির কারখানায় ছড়িয়ে পড়ে। কারখানা দুটি দুই সহোদরের। এই দুটি কারখানায় প্রধানত বিভিন্ন কোম্পানির জুতা ও উপকরণ তৈরি করা হতো। এর পাশাপাশি স্থানীয় বাজারের জন্যও জুতা তৈরি করে বিক্রি করা হতো। কারখানার মালিককে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থল থেকে দুপুর সোয়া দুইটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট কাজ করে দুপুর দুইটায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রায় আড়াই ঘণ্টা সময় লাগার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, কারখানায় প্রবেশের রাস্তাটি এত সরু যে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি সেখানে ঢুকতে পারছিল না। কারখানায় নিজস্ব পানির ব্যবস্থা ও প্রশিক্ষিত জনবল নেই। এ ছাড়া কারখানায় প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক পদার্থ থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লেগেছে। তিনি বলেন, আগুনে হতাহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, কারখানাটি স্থাপনে ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন ছিল। এই এলাকায় এমন আরও কয়েকটি কারখানা আছে। ওই কারখানাগুলোর বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। সন্ধ্যা ছয়টায় ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে দায়িত্বরত কর্মকর্তা বেলাল হোসেন বলেন, আগুনে হতাহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
No comments